নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্যস্ত শহরের এক নির্বাক নিঃসঙ্গ শব্দ শ্রমিক আমি!

Muhammad Amdad

আমি কেউ নই।

Muhammad Amdad › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্ত (১ম পর্ব)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৩৯

ভয়টা তখনি পেলাম যখন দেখলাম আনিকার শাড়ির আঁচলে রক্ত লেগে আছে। ঠিক বুঝতে উঠতে পারলাম না, যে ওর শাড়িতে রক্ত কিভাবে আসল! মেয়েটা তো এখনও ঘুমেই আছে। ওর কি কোথাও কেটে গেল?

ততক্ষণে মনে হল, কাটবে কিভাবে? ওতো এখনও ঘুমেই আছে। কোনো কিছু দিয়ে যে কাটবে তারও কোনো চান্স নেই। তাহলে রক্ত কোথা থেকে আসল?

আনিকা হল আমার স্ত্রী। ওর সাথে বিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ মাসের মত হয়েছে। মেয়েটা অনেক ভালবাসে আমায়। আমি আফরান, একটা ব্যাংকে জব করছি।

আমার মস্তিষ্কে ঠিক ঢুকছে না এই রক্তের বিষয়টা।
আনিকা কে এখনও ডেকে তোলা হয়নি। ডাকব কি না এটাই বুঝতে পারছি না।

ভয়ের মাত্রাটা ক্রমশে বেড়ে চলছে।
আমি আনিকা কে ডেকে তুললাম। মেয়েটা ঘুম ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

- তোমার শাড়ির আঁচলে রক্ত কিসের?
- কি?

আনিকা এমন ভাবে ভয়ে উঠেছে, যেন এ বিষয়ে সে কিছু জানে না। তার আঁচলের দিকে তাকিয়ে নিজেই অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এই রক্তটা আসল কোথা থেকে। সেইসাথে আনিকার আঁচলে রক্ত আর সে জানে না, তার কারণ কি? না কি এগুলা রক্ত না।

ওর আঁচলটা আমি হাতে নিয়ে ভালভাবে দেখলাম। না, এগুলা আসলেই রক্ত। আঁচলে হাত দিতেই রক্ত আমার হাতে লাগল না। তারমানে রক্ত গুলা অনেক আগেই লেগেছে।

আমি আনিকা কে বললাম " তোমার কোথাও কেটেছে কি না দেখ? সেখান থেকেই মনে হয় রক্ত পরেছে।

- না। কোথাও কাটছে বলে তো দেখছি না।
- তাহলে রক্ত আসল কোথা থেকে?
- সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।

খুব অদ্ভুত এক রহস্য মস্তিষ্কে রেখে আজকের সকালটা শুরু। আনিকার দিকে তাকিয়ে দেখি সে, নিজেই অনেকটা ঘাবড়ে গেছে। ঠিক বুঝতে পারছে না এই রক্ত আসল কোথা থেকে।
আমি উঠে জানাল খোলে দিলাম। তখনি চোখ পড়ল, জানালায় থাকা কাপড়ের দিকে। সেখানেও রক্ত লেগে আছে।
....

অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠল। দরজা খুলেই দেখি প্রফেসর হেলাল সাহেব। উনি নিচতলায় থাকেন। একটা কলেজের প্রফেসর তিনি।

- আফরান কিছু শুনেছ?
- কি স্যার?
- তিন তলার আবুল সাহেবের ছেলেকে কে যেন মেরে ফেলেছে।
- বলেন কি ওই আশফাক ছেলেটা ?
- হ্যা। পুরোটা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে। ওর শরীর থেকে সবটুকু রক্ত বের করে ফেলেছে।
- কিভাবে কি হল?
- কিছুই জানিনা। আবুল সাহেব তো বলছেন তিনি সকালে উঠেই এই অবস্থা দেখেছেন।

আনিকার দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারি ভয় পেয়ে গেছে।
এইরকম একটা ঘটনা ভয় পাবারই।
অফিসের ব্যাগ কাঁধে আমি আনিকা আর প্রফেসর সাহেব তিন তলার দিকে অগ্রসর হলাম। আমি বুঝতে পারছি না আজকের ঘটনা গুলা। প্রথমে আনিকার শাড়িতে রক্ত। তারপর এই আবুল সাহেবের ছেলের খুন।
আমি যতদূর জানি ছেলেটা একটু বখাটে টাইপের। কিন্তু তারজন্য যে কেউ তাকে মেরে ফেলবে, এটা আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।

আবুল সাহেবের ছেলের লাশের দিকে একবার তাকালে দ্বিতীয়বার আর তাকানো সম্ভব না। এতটা নির্মম ভাবে একে মেরেছে। ওর সমস্ত শরীরটাই রক্তে লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছিল রক্ত দিয়ে গোসল করেছে। লাশটা দেখে মনে হচ্ছে কেউ তার উপর প্রতিশোধ নিয়েছে।

পুলিশ খুব ভাল করেই লাশের চারিপাশ খুঁজছে, কোনো প্রমাণের জন্য। যখন ওর শার্টের কাপড়টা খুলেছিল , তখনি আমার চোখে পড়ল একটা জিনিস। ওর বুকের মধ্যে খুব ছোট করে কিছু একটা লিখে গেছে। কিন্তু রক্ত সমস্ত শরীরে থাকায় ঠিক বুঝা যাচ্ছে না, যে কি লেখা।
....

অফিসে এসেছি একটু আগেই। আনিকা বারবার নিষেধ করেছে না আসার জন্য। মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে। ভয় আমি নিজেই পেয়েছি। এইরকম একটা লাশ দেখার পর ভয় না পেয়ে উপায় নেই।
কাজে মনযোগ দিতে পারছি না। চোখের মধ্যে বারবার আশফাকের লাশটা ভেসে উঠে। মন হয় এই আমার সামনেই বুঝি লাশ পরে আছে।

অফিস শেষ করেই আজ আর দেড়ি করলাম না। অফিস থেকে বের হয়েই সোজা বাসায় চলে আসলাম।
কলিংবেল চাপতেই আনিকা এসে দরজা খুলে দিল।
মেয়েটাকে অনেক নার্ভাস দেখাচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতেছে। আমাকে দেখে অনেকটা শান্তি পেয়েছে মনে হচ্ছে।

- এত দেড়ি করলে কেন?
- কোথায় দেড়ি করলাম। আমি তো ঠিক একই সময় প্রতিদিন আসি। এত নার্ভাস লাগছে কেন?
- ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আছে। কি করে যে এত সময় একা ছিলাম, আল্লাহ্‌ জানেন।
- হ্যা, ভয় তো আমারও হচ্ছে।
- আমিতো এখন শুধু ওই লাশটাই দেখি।

আশফাকের লাশটা দেখে ভয় পাবারই কথা। সেইসাথে আনিকার শাড়িতে থাকা রক্তও আমাকে অনেকটা চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছি না এই দুটোর মধ্যে কোনো কানেকশন আছে কি না।

বুঝতে পারছি না, এই দুটো ঘটনা আমি একত্র করছি কেন? এসব তো করার কথা না।

- কি চিন্তা করছ?

আনিকার কথায় ভাবনাচিন্তা দূর হল। কিন্তু মস্তিষ্ক ঠিক কাজ করছে না। কি হচ্ছে না হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।

- কি হল?
- না, কিচ্ছু না। রান্না কি শেষ?
- আমি না আজ কিছুই রান্না করিনি, ভয়ে।
- তাহলে রাতে খাব কি?
- জানিনা।
- তাহলে এখন কি হবে?
- কিছুই না, আজ আমরা না খেয়ে ঘুমাব।
- মানে কি?

রাতে না খেয়ে ঘুমানো মানে আমার অবস্থা নাজেহাল।
এমনিতেই ভাত খেয়েদেয়, রাত ১২টার দিকে সিঙ্গারা খাওয়া লাগে। নাইলে আমার ঘুম হয়না। এখন কি করি।

- আনিকা?
- কি?
- আমি বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসি?
- ঠিক আছে। কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবে?
- আচ্ছা।

দরজা খোলে বের হতেই পুলিশ ইন্সপেক্টর নাজমুল হক, ও দুজন কনস্টেবলের দেখা মিলল। উনারা আবুল সাহেবের ফ্লাটে যাচ্ছেন। আমি উনাদের পিছন পিছন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। দেখি এই খুন সম্পর্কে কিছু জানা যায় কি না। এমনিতেই এই মার্ডার এই চার তলা বাসাটা কে কেমন নিরব নির্জন করে ফেলেছে।
...

আবুল সাহেব ছেলের লাশের পাশে নির্বাক পাথরের মত বসে আছেন। চোখ দিয়ে দুইএক ফোটা জল বেয়ে পরছে। ইন্সপেক্টর আবুল সাহেবের স্ত্রীর সাথে কথা বলছেন কিছু জানার জন্য।

ইন্সপেক্টর নাজমুলের হাতে একটা ছবি রয়েছে। মনে হচ্ছে আশফাকের ছবিই হবে।
ততক্ষণে আমার মস্তিষ্কে একটা জিনিস চলে আসল। আশফাকের বুকের মধ্যে কিছু একটা লেখা ছিল, ওটা সম্পর্কে কিছু জানা যায় কি না। কোনো তথ্য হয়ত পাওয়া যাবে।
আমি একটু এগিয়ে গেলাম ইন্সপেক্টর নাজমুলের দিকে।

- স্যার, ছবিটা একটু দেখি?
- হ্যা, এই নিন!

আমি ভালভাবে ছবিটা দেখলাম। আশফাকের বুকের ডানপাশে কয়েকটা ★ স্টার দেয়া। তাও ছুড়ি দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি গুণে দেখলাম, প্রায় সাতটা স্টার, মানে সেভেন স্টার দেয়া। ঠিক বুঝলাম না এই সেভেন স্টার কেন এর বুকের মধ্যে আঁকা। আর কেইবা আঁকল।
এই সেভেন স্টারের মধ্যে কি কোনো রহস্য আছে। হয়ত বা আছে।

ততক্ষণে ইন্সপেক্টর নাজমুলের আবুল সাহেবের স্ত্রীর সাথে কথা বলা শেষ হয়েছে। আমি নাজমুল স্যারের সাথে কথা বললাম।

- স্যার লাশের বুকে সেভেন স্টার?
- হ্যা, আফরান।
- এর মানে কি স্যার?
- বুঝতে পারছি না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কাল পাব। তারপর কিছুটা জানা যাবে। কিন্তু এই সেভেন স্টারের রহস্যটা ঠিক আমি নিজেই বুঝতে পারছি না।

না, ঠিক মস্তিষ্কে এটা ঢুকছে না যে খুনি লাশের শরীরে এই সেভেন স্টার কেন এঁকেছে। এটা তো একমাত্র সেই বলতে পারে, যে এই খুনটা করেছে।
...
ইন্সপেক্টর নাজমুলের সাথে আবুল সাহেবের বাসায় এসে খাবারের কথা ভুলে গেছি। আবুল সাহেবের ওখান থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। মস্তিষ্কে দুটো বিষয় খেলা করছে,
১. আনিকার শাড়ির আঁচলে থাকা রক্ত।
২. আশফাকের বুকে সেভেন স্টার।

এই দুটো বিষয়ের পিছনের রহস্যটা আমি বের করতে পারছি না।

কলিংবেল বাজাতেই আনিকা এসে দরজা খোলে দিল।
মনে হচ্ছে আমার অপেক্ষাতেই ছিল। রুমে ডোকেই দেখি টেবিলে নানানরকম খাবার সাজানো। আনিকা তো বলল রান্না করেনি, তাহলে?
মেয়েটা কি আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে। হতেই পারে। এর মতিগতি ঠিক বুঝতে পারিনা, কখন কি করে।

চলবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.