![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ECNEC, Executive Committee of National Economic Council বা একনেক’ বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি।
পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়,
যেখানে আপনার একটা স্বপ্ন আছে।
সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।
আমাদের একটা পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় আছে। আমাদের দেশে একটা পরিকল্পনা কমিশন আছে। তার চারপাশ এখন দেশের তাবৎ উন্নয়নের ফিরিস্ত আর আমাদের সব স্বপ্নের আর অদুর ভবিষ্যতে সেইসব স্বপ্নপূরণের ছবিতে ভরপুর। আর কতো কতো যে বাহারি সব শ্লোগান! আমি আগেই বলেছি, আমাদের একটা পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় আছে। এই মন্ত্রনালয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রীও আছেন। দেশের পরিকল্পনা কমিশনে কাজ করেন দেশের খ্যাতনামা আর জাদরেল সব অর্থনীতিবিদগন। এই কমিশনের সদস্য আছেন কয়েকজন, ভাইস চেয়ারম্যান দেশের অর্থমন্ত্রী এবং এই কমিশনের চেয়ারম্যান দেশের প্রাধানমন্ত্রী। দেশের যত উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হোকনা কেন, আমাদের এই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের, বা এই একনেকের অনুমোদন ছাড়া দেশের যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। দেশের যেকোনো উনন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের, বিশেষকরে, (ECNEC, বা Executive Committee of National Economic Council) বা বেশি ব্যবহৃত শব্দ ‘একনেক’ বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়।
একটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী আবার কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বস্তবায়ন করে থাকে। কখনো কখনো এই উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ‘পঞ্চাবার্ষিকী’ পরিকল্পনাও বলা হয়ে থাকে। কিন্ত এই পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে হচ্ছেটা কি? এই প্রশ্ন এখন দেশের আমজণতার। কারণ, একটা দেশের রাজধানীর কথাই যদি বলি, তাহলে অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ করছি যে, এখানে এই গেল কয়েক বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে তাতে আমরা কি লক্ষ্য করছি? শুধু সীমাহীন অপচয় আর অপচয়। আর প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধির নামে ভাগবাটোয়ারা আর লুন্ঠনের এক মহোৎসব চলছে যেন!
একটা দেশর রাজধানীর রাস্তায় ফ্লাইওভার হবে, এটা একটা স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকান্ড। এসব জরুরী জণগুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্পগুলো আরো বিশ-ত্রিশ বছর আগে কেন হয়নি সেটাই বরং আমাদের জিজ্ঞাস্য। রাজধানীতে ছয় শতাংশ বিত্তবান মানুষ ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলা ফেরা করে, তাদের সুবিধার কথ বিবচনা করা হবেনা তো আমাদের মত গরিব মধ্যবিত্ত গরিষ্ঠদের কথা বিবেচনা করা হবে? তা হোকনা দশবিশটা ফ্লাইওভার, উড়াল সেতু বা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে! আমরা কি আর নিষেধ করছি? এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে, আমরা যারা রাস্তায় চলাফেরা করি, তাদের জন্যও তো একেবারে কম সুযোগ হবেনা! আমরা যানযটের কবল থেকে মুক্তি পাব; চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ আসবে এবং সময়ের অপচয় কম হবে।
আমরা কি করলাম, নকসা তৈরি করে আনলাম বিদেশ থেকে; আমরা এমনই এক জাতি যে, বিদেশ ছাড়া আমরা কিছু ভাবতেই পারিনা। আমরা তাদের দিয়ে ফ্লাইওভারের নকশা তৈরি করে নিয়ে এলাম যে দেশে গাড়ি চলে রাস্তার ডানদিক দিয়ে। আমাদের রাস্তায় কি আমরা রাস্তার ডানদিক দিয়ে গন্তব্যে যাই? না, রাস্তার ডানদিক দিয়ে গাড়ি চালাই? তবে ঐ নকসার প্রায় অনেকটা বাস্তবায়ন করার পরে, দেখা গেল যে এটা মারাত্নক ভুল। তখন কি আর করা, ভাঙ্গো, আবার অনেক কোটি টাকা খরচ করে ভাঙ্গতে হোল। দেশে পরিকল্পনা কমিশন থাকতে, মন্ত্রনালয় থাকতে, প্রকল্প বাবাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা থাকতে এতগুলো পর্যায় অতিক্রম হয়ে, প্রকল্পের একটা বিশাল অংশের কাজ শেষ হবার পরে, এটা ধরা পড়ে কী করে? তাহলে এতগুলো সংস্থার দায় দায়ীত্ব কি? এরা আছে কী করতে? আমরা লন্ডন আমেরিকায় বৃষ্টি হলে, এখানে ছাতা ধরতে যে অভ্যস্থতায় নিজেদেরে তৈরি করেছি, তা কি আমরা কমাতে পারব না? আমি জানিনা, এরকম মারাত্নক ভুল শুধু নয়, এটা একধরণের অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই অপরাধ আর রাষ্ট্রের বিশাল অর্থের অপ্রয়োজনীয় অপচয়ের জন্য কারো কোনো জবাবদিহি করতে হয়েছে বা কারো চাকরি গেছে বা কেউ আইনের আওতায় এসেছে বলে আমার জানা নেই। তাহলে দেশটা চলছে কিভাবে? এই দেশটাকে কি সৃষ্টিকর্তা নিজেই হয়তো যেনতেন প্রকারে চালিয়ে নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদ থেকে শুনে আসছি মেট্রোরেল/উরাল রেলের কথা। ২০০১ সালের নির্বচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়াতে সেই মেট্রোরেলের কাজ আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিজয়ী হবার পরে মেট্রোরলের প্রকল্পের ব্যপারে মানুষ আবার আশাবাদী হয়ে ওঠে। উত্তরা থেকে মতিঝিলে মেট্রোরেলের ধারণা আজ থেকে পনের/বিশ বছরেরও পুরানো বিষয়। এই রাজধানীতে যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আছে তার মধ্যে রোকেয়া স্মরণি অন্যতম। সেই রোকেয়া স্মরণি সহ মিরপুরের রাস্তাঘাটের বিপুল উন্নয়ন করা হোল, টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে। কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করা হোল। ঢাকা শহরের অন্যান্য অঞ্চলের লোকজন মিরপুরের রাস্তাঘাট দেখে তারা তাজ্জব বনে গেল; কেউ কেউ। লোকে বলতে লাগল মিরপুর না কি সিংগাপুর? শুধু ঢাকা নয়, রোকেয়া স্মরণিকে তৈরি করা হোল দেশের শ্রেষ্ঠ একটা রাস্তা হিসেবে। তারপর কি হোল? সেই বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই মেট্রোরেলের মাটি পরীক্ষার নামে শুরু হোল আবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং সেই সুন্দর ঝকঝকে মসৃণ রাস্তাটাকে কেঁটে বসানো হোল ১৩৩ কেভির অত্যন্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মহামূল্যবান বিদ্যুতের তার। বিদ্যুতের সেই তার বসানোর পরে রাস্তার সেই ক্ষত সারানো হলেও রাস্তাটা আর আগের মত রইলো না। বছর যেতে না যেতেই রাস্তাটা দেবে গেল অনেকটা।
বর্তমানে এই রাস্তাটার দুই পাশেই বিপুল উদ্দমে আবার চলছে খোঁড়াখুঁড়ি আর নানান সংস্থার কাজ। কেউ পাইপ বসাচ্ছে, কেউ বসাচ্ছে আবার সেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের তার এবং নতুন করে আবার। মাত্র অল্প কিছুদিন আগে যে অত্যন্তমূল্যবান বিদ্যুতের তার এখানে এই রাস্তা কেঁটে বসানো হয়েছিল তা না কি এবারে পরিত্যাক্ত।
এরপরে আসি এই শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বিষয়ে সেটা হচ্ছে মগবাজার থেকে মালিবাগে দিকে। ফ্লাইওভার তৈরি করতে গিয়ে এই রাস্তাটি দির্ঘদিন ধরেই ঢাকা শহরের এক নম্বরের ভোগান্তির নাম বলতে ছিল এই সড়কটি। ফ্লাইওভারের কাজ শেষে নিচের রাস্তাটা নতুনকরে তৈরির ১১ দিনের মাথায় আবার শুরু হোল সেই তৈরি সড়কে নতুন খোঁড়াখুঁড়ি। দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি আবার খোঁড়াখুঁড়িই করতে হয়, তাহলে ঐ রাস্তা তৈরি করা হোল কেন? এর জবাব কি? দেশের ট্যাক্সপেয়ারদের টাকার এই অপচয়ের জবাবদিহিতা কি আদৌ কারো নেই?
জবাবদিহিতা ছাড়া উন্নয়ন বা গনতন্ত্র হয়না। উন্নয়নের নামে, প্রকল্পব্যয়বৃদ্ধির নামে, অপ্রয়োজনীয় এই খোঁড়াখুঁড়ির নামে যে অপচয় আর লুন্ঠন আর ভাগাভাগি চলছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের গরিষ্ঠ মানুষকেই। আমি এজন্যই বলি, উন্নয়নের নামে, প্রকল্পব্যয়বৃদ্ধির নামে, অপ্রয়োজনীয় এই খোঁড়াখুঁড়ির নামে যে অপচয় আর লুন্ঠন চলছে এটা যদি চলতেই থাকে তাহলে আমাদের পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের কী ইবা প্রয়োজন? দেশের মধ্যে চলমান দুর্ণীতি কমিয়ে আনা গেলে, নানাভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশেই বিণিয়োগ করা গেলে, দেশের চারকোটি বেকার তরুণের কর্মসংস্থান করা গেলে, এই ধরনের ভুল পরিকল্পনা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বৃদ্ধি এবং নানান সংস্থার কাজের সমন্বয় করা গেলে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করাও অসম্ভব নয়। কিন্তু তা করবে কে? মানে, সেই পুরানো গল্প, ‘বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?’
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবার ক্ষমতা শুধু একজনেরই আছে, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু তাঁরওতো সামর্থের একটা সীমাবদ্ধতা আছে! একজন মানুষ কতদিকে নজর রাখতে পারেন?
শেখ হাসিনাকে আজ আমার মনে হয় একজন নিঃসঙ্গ শেরপা। একলা মানুষ কোনদিকে যাবেন আর কোনদিক সামলাবেন? দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর মত তিনি তাঁর প্রাণ দিতেও যেখানে প্রস্তুত, সেখানে আমরা এই অভাগা জাতি শুধু খাই খাই করেই আমরা আমাদের সম্ভাবনাময় সকল সুযোগকে নষ্ট করছি। আমার মনে হয় এক অযোগ্য আর অকৃতজ্ঞ জাতিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আক্ষেপ করে একদিন যেমনটা বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, হীরের খনি তেলের খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। কাকে কী বলব? যেদিকে তাকাই আমার লোক’। এই ভূখন্ডের সব মানুষকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। যেকারণেই গাদ্দারদের হাতে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি বলতেন, ‘আমার মানুষেরা যেন কষ্ট না পায়!’ যে কারণে তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, আমি আমর মানুষের অধিকার চাই’।মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে একজন মানুষ একথা বলতে পারে! আমরা সেই অকৃতজ্ঞ জাতি যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু একটা স্বাধীন দেশ তৈরি করে দিয়েগেছেন। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু অকৃতজ্ঞ অনুপযুক্ত বা ভুল মানুষের জন্য স্বাধীনতা এনেদিয়েছিলেন, যারা আদৌ স্বাধীনতার যোগ্য নয়।
আমি প্রায়ই বলি, গাঙ্গেয় এই বদ্বীপ পলিমাটির উর্বর ভূমিতে তিনটি জিনিস খুব ভালো জন্মায়, এক) অতি অল্প বা প্রায় বিনা পরিশ্রমে সোনার ফসল, দুই) ঘরে ঘরে মানুষ আর তিন)যুগে যুগে গাদ্দার। এদেশে সিরাজউদ্দৌলা শেখ মুজিব যেমন জন্মায়, তেমনি মীরজাফর জগৎশেঠরা আবার মোস্তাক জিয়ারাও জন্মায়। তবে এই পলিমাটি এই গাদ্দারদের খুব বেশিদিন সহ্য করেনা।
আওয়ামী লীগের শাসন ভালো, নেতাদের ভাষন ভালো, উন্নয়ন উন্নতি ভালো তারপরেও তাদের ক্ষমতার শেষ সময়টা ভালো হয়না। আর আওয়মী লীগের বড় দুর্বলতা হচ্ছে তাদের স্বচ্ছতা একটু বেশি। আর ক্ষমতায় গেলে তৃণমূলের কর্মীদেরকে নেতারা আর চেনেনা। তখন অর্থের বিণিময়ে হাইব্রিডরা হয়ে যায় সবকিছুর নিয়ন্তা। আর ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে এমনভাবে খাই খাই শুরু হয় যে, দেশ, দল, দলের নেতা এবং যাবতীয় কিছুই খেয়ে ফেলতে চায় এই সর্বগ্রাসী রাক্ষুসে স্বভাবটা তারা আর থামাতে পারেনা।
©somewhere in net ltd.