নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খেরোখাতা

ফাতেমা তুজ জোহরা (মুনা)

ফাতেমা তুজ জোহরা (মুনা) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কফি এবং এর উপকারিতা ও সাইড ইফেক্ট

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ ভোর ৬:০৮

কফি পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে চায়ের পর কফির অবস্থান। বতর্মানে আমাদের দেশে কফির জনপ্রিয়তা অতীতের থেকে অনেক বেড়েছে। আমরা শহরে চায়ের টং দোকানের মতো কফির দোকানও দেখতে পাই যদিও পরিমানে কম, কিন্তু আগের থেকে বেশি।
কফি আমার অনেক পছন্দের পানীয়।কিন্তু আমাদের দেশে অনেকের ধারণা যে কফি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই কফি এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে লিখব।

কফি
কফি সাধারণত কফি বীন থেকে তৈরি হয়। coffea জেনাসের গাছের ফল থেকে যে বীজ পাওয়া যায় তাকেই কফিবীন বলে। এই কফি বীন সংগ্রহ করে এগুলোকে রোস্ট করে তারপর গুড়ো করা হয়। আর এভাবেই কফি তৈরি হয়।
কফির উৎপত্তিস্থল উত্তরপূর্ব আফ্রিকা। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে আসে ১৫ শতকের দিকে। কফি এ্যরাবিকা(এরাবিক কফি) ও কফি রোবাস্টা (আফ্রিকা) এই দুই টাইপের কফি বীন সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়।

কফির মূল উপাদান হলো ক্যাফেন। তাছাড়া এতে আছে ক্যাফেস্টল, কাহওয়েল, ক্লোরোজেনিক এসিড ও আরো নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট।

Fig: Chemical structures of major biologically active compounds in coffee.
কফির প্রকারভেদঃ
চা এর মতো কফিও দুই ধরণের হয়ে থাকে। অর্থাৎ কফিবীন থেকে দুই রকমের কফি তেরী হয়।
১. রেগুলার কফি বা রোস্টেড কফি।
২. গ্রীন কফি
আমরা রেগুলার কফির সম্মন্ধে আগে থেকে জানি। তবে গ্রীণ কফি টার্মটা আমাদের কাছে নতুন। আজ আমি দুই ধরনের কফি নিয়েই আলোচনা করব।
১.রেগুলার কফি
রেগুলাট কফি বা রোস্টেড কফি হলো আমরা সবসময় যে কফি দেখে আসছি তা। এটা সাধারনত কফি ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে তা রোস্ট করে বানানো হয়। রোস্টেড কফির জনপ্রিয়তা বহু বছর ধরে চলে আসছে। তবে আমাদের দেশে আমরা যে কফি কিনে খেয়ে থাকি তা সাধারনত ইন্সট্যান্ট কফি।

উপকারিতা বা হেল্থ বেনিফিটসঃ
*রোস্টেড কফিতে ক্যাফেইনের পরিমান অনেক বেশি থাকে। ক্যাফেইন আমাদের এনার্জি লেভেলকে বুস্ট করে। এটা আমাদের মেটাবোলি রেট বাড়িয়ে দেয় যা এ্যডরেলিন হরোমনকে রিলিজ করতে সাহায্য করে এবং এর ফলে এনার্জি রিলিজ হয়।
* ক্যাফেইন আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
* টাইপ-টু ডায়বেটিকস এক জন্য উপকারী। পলিফেনোলিক কফি কম্পাউন্ড ইনসুলিন ও গ্লুকোজ মেটাবোলিজমে ভালো প্রভব ফেলে।
* নিয়মিত যারা কফি পান করে তাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের রিস্ক কমে যায়।
* মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের রিস্ক ও কমায়।
* কফির ক্যাফেইন ও অন্যান্য পলিফেনোলিক কম্পাউন্ড মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পজেটিভ প্রভাব ফেলে।
*নিয়মিত এক কাপ কফি পারর্কিনসন ডিজিজের ঝুঁকি কমায়।

সাইড ইফিক্টঃ
যে কোন কিছুই অতিরিক্ত গ্রহন করা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
* অতিরিক্ত পরিমানে কফি পানে অনিদ্রা, এ্যংজাইটি, নার্ভাসনেস বেড়ে যায়।
* গর্ভাবস্তায় কফি এবং ক্যাফেইন গ্রহন বাচ্চার জন্য বিরূপ প্রভব ফেলতে পারে। যেমন- লো বার্থ ওয়েট, প্রেগনেন্সি লস, চাইল্ডহুড লিউকেমিয়া ইত্যাদি।
* অতিরিক্ত কফি পান লাং এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
* যারা একেবারেই কফি পান করেন না তারা যদি হঠাৎ রেগুলার কফি পান শুরু করেন তবে তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
* অতিরিক্ত কফি পান হৃদরোগের ঝুকি বাড়ায়।
২. গ্রীন কফিঃ
সাধারনত কফি ফল থেকে যে বীজটা পাওয়া যায় এবং যে বীজ বা কফিবীনটা রোস্ট করা হয় না তাকেই গ্রীন কফি বলে। গ্রীন কফির ঘ্রাণ খুবই হালকা হয় রেগুলার কফির থেকে।
এর টেস্ট অনেকটা হার্বাল চা বা গ্রীন টি এর মতো। কিন্তু এটা রেগুলার কফির থেকে এসিডিক বেশি।
গ্রীন কফিতে ক্লোরোজেনিক এসিড রোস্টেড কফির তুলনায় বেশি। গ্রীন কফিতেও ক্যাফেইন থাকে তবে রোস্টেড কফির, চা, গ্রীন টি থেকে পরিমানে কম থাকে। গ্রীন কফিতে ২৫-৫০% ক্যাফেইন থাকে।

গ্রীন কফির উপকারীতাঃ
* গ্রীন কফিতে ক্লোরোজেনিক এসিড এর পরিমান বেশি থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটা শরীরের ব্লাড সুগার আর মেটাবোলিজম নিয়ন্ত্রন করে।
* গ্রীন কফি স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
* গ্রীন কফি কিডনীর জন্যও উপকারী।
* গ্রীন কফিতে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা লীভার ও রক্ত ডিটক্সিফাই করতে সাহাজ্য করে।
* ক্লোরোজেনিক এসিড লিভারে জমা হওয়া চর্বিও কমাতে সাহায্য করে।
* যেহেতু এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে তাই এটা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকে রিংকেল পড়া কমায়, ত্বককে স্মুথ করে। গ্রীন কফি এক্সট্রাক্ট ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় যার ফলে ত্বক আরো স্মুথ হয়।
* গ্রীন কফি চুল পড়া রোধে সাহাজ্য করে, চুলের গ্রোথ বাড়ায় ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।

গ্রীন কফির সাইড ইফেক্ট:

* পেটে ব্যাথা হতে পারে।
* হৃদস্পন্দনের হার বাড়ায়।
* ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
*ঘুমের সমস্যা হয়
*অস্থিরতা বাড়ায়
গ্রীন কফি ও রেগুলার কফির ভেতর কোনটা বেশি উপকারীঃ
গ্রীন কফি ও রেগুলার কফি যদিও একই গাছ থেকে উৎপাদন করা হয় তারপরও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গ্রীন কফির ভূমিকা বেশি। এটার প্রধান কারণ হলো রোস্টেড কফি বীন পোড়ানোর জন্য এর মধ্যে থাকা বেশিরভাগ নিউট্রিয়েন্ট, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফার্মাকোলোজিকাল্লি একটিভ কম্পাউন্ডগুলো চলে যায়।

কফি একটি রিফ্রেশিং পানিয় যা আপনাকে সতেজ থাকতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। গ্রীন কফি এবং ব্লাক কফি এই দুই ধরনের কফিই উপকারী, যদিও গ্রীন কফি ব্লাক কফির থেকে কম টেস্টি, তবে এর উপকারিতা বেশি। এটা একজনের নিজস্ব পছন্দে উপর নির্ভর করে যে সে কোন ধরনের কফি পান করবে। পরিমিত পরিমানে কফি নিয়মিত পান করলে দুই ধরনের কফিই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত যে কোনকিছুই সেবন শরীরের জন্য খতিকারক, সেই দিক থেকে এই দুই ধরনের কফিরই কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। পরিশেষে, এক কাপ কফি একটি সতেজ, ভালো ও উদ্যমী দিন শুরু করার জন্য যথেষ্ট।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩২

"আহসান" বলেছেন: সুন্দর লেখা। কফি নিয়ে অনেক কিছু জানা গেল।

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫৯

ফাতেমা তুজ জোহরা (মুনা) বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:২৬

ডার্ক ম্যান বলেছেন: গ্রিন কফির কথা আজকেই প্রথম শুনলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.