নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আ\'ম এভরিথিং ইউ ক্যান ইম্যাজিন!

মাহির মুনিম

পাশে নেই তাতে কি হয়েছে, কথা গুলোর স্পর্শ পাচ্ছি- এই তো জরুরি খবর!!

মাহির মুনিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শর্ত

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪২

বলার কি খুব বেশি জরুরী ছিলো? না বললেই কি এমন হতো? কিছুই হতো না। যে রকম চলছে সেই ভাবে চলতো। অনেক কিছু কিন্তু না বলে থাকাটার যে এক রকম ব্যাখ্যা থাকে না শুধুই আমি জানি আর যদি থেকেও থাকে সেই ব্যাখ্যা আমার কাছে অর্থহীন। যেটা অর্থহীন তার বর্ণনায় যাওয়াও একটা মূর্খ মুখোশ দাবী প্রায় আমার কাছে। সেটা থেকে দূরে থাকাই আমার জন্য যেমন ভালো তেমন ফাম্মীর ও।

ফাম্মীর মা গত মাসে মারা গেছেন। এখন ফাম্মী আর তার বাবা থাকে মস্ত বড় এক বাড়িতে দুই রোম জুড়ে। বিশাল বাড়িতে মানুষ নেই তারা দুইজন পরে। খুব একা বাড়ি থাকে যখন ফাম্মীর বাবা অফিসে চলে যান তখন স্বাভাবিক ভাবে ফাম্মীও একা থাকে বাড়িতে, ভার্সিটির পর ঠিক একা বাড়ির মতো।

ফাম্মীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো প্রথম ফোনে। তখন ভার্সিটি কোচিং করতেছি ক্লাসে সীট দেওয়া হয়েছিলো একটা তখন আমার কাছে সবাইকে কপি করে দিতে। সীট দেবার পর থেকে আমি কোচিং এ যাচ্ছি না হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গিয়ে ছিলাম। বিপদে প্রায় পড়েছি আমি। সীট দেবার সময় বলা হয়েছিলো সাপ্তাহের শেষে এই সীটের উপর পরিক্ষা নেয়া হবে কিন্তু সীট আমার কাছে কেউ পায় নি এখনো। এমনও অবস্তা কারো ফোন নাম্বার নেই যে একটা ফোন দিয়ে বলতে- কেউ সীটটা নিয়ে যা। আমি আসতে পাচ্ছি না আমি খুবই খুবই অসুস্থ। হঠাৎ মনে হলো আমার কলেজের একটা মেয়ে আমার সাথে কোচিং এ ভর্তি হয়েছে। মনে হলে কি হবে নাম্বার তো মনে নেই। একদিন ফোন দিয়েছিলো কোচিং কবে থেকে শুরু জানতে কিন্তু নাম্বার সেইভ করি নি তবে নাম্বার খুব সোজা ছিলো। কিছু কিছু মনে আসছে শুধু লাস্ট নাম্বার নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। ৬৭ হবে না ৭৬ হবে। ভাবলাম দুইটা থেকে একটা হবে ফোন দিয়েই দেখি।

_হ্যালো কে ফাম্মী?
; হে ! কে?
_ ফাহমি আমি। তুমি এক কাজ করো আমি চৌহাট্টা পয়েন্টে, একটু আসো।
; কেনো ?
_ আমার কাছে কোচিং এর একটা সীট আছে। ওটা নিতে হবে তোমায় আমি ডাক্তারের কাছে আসছি আমার শরীর খারাপ। তাই কাউকে দিতে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি এসে ফোন দাও। ওকে রাখি।
; হ্যালো... হ্যালো...
হ্যালো হ্যালো শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু ইচ্ছে করেই ফোনটা রেখে দিয়েছি। কেননা, মেয়েতো বলবে কাজ আছে, বাসা থেকে আসতে দেবে না অথবা অন্য রকম কিছু একটা বলবে তাই বুদ্ধি করেই রেখেই দিয়েছি। মনে হচ্ছে আসবেই। কেননা, এটা না পেলে পরিক্ষা দিতে পারবে না। আর কোচিং এ যদি বলেন স্যার- ঠিক আছে তুমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলা তাইলে অন্য কাউকে তো ফোন করে দিতে পারতে। এখন কোন সমস্যা নাই যদি এমনটা স্যার বলেন তাহলে বলব যে ফাম্মীকে ফোন করে বলেছিলাম কিন্তু ও নেয় নি। দোষ’টা একটু না হলে কমে যাবে। আমি সাধারণদের মধ্যে একটু অসাধারণ তাই সবার মাঝে এতো সহজে মিশতে পারি না। মিশতে পারি সবার সাথে খুব গভীর ভাবে কিন্তু হুট করে পারি না তবে সেটা ধীরে ধীরে। কোচিং এ প্রায় ১৫ দিন হয়ে গিয়েছে কিন্তু কাউকে চিনি না ভালো করে নামও জানি না। ফাম্মী ফোন দিলো----

; হ্যালো... আপনি কোথায় আছেন?
_ হুম... আমি সেন্ট্রাল ফার্মেসীতে আছি ওষুধ নিচ্ছি।
; আমি তো সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছি। আপনি কোথায়?
_ হালকা খটকা লাগলো কি বলে মেয়েটা? (মেয়েটা তুমি করে বলতো, তুমি থেকে আপনি তে এসে গেলো। তাছাড়া আমাকে চিনবে না কেনো? আমার মুখ কি এমন যে দুই দিন আগে কেউ দেখলে ভুলে যাবে? দূর সালার) আমি তো নীল টি সার্ট পড়ে আছি দ্যাখতে পাচ্ছো না?
; না দ্যাখতে পাচ্ছি না। আপনি এক কাজ করেন ভিড় থেকে একটু নামুন। তাহলে দ্যাখতে পারবো।
_ আচ্ছা । দ্যাখা যাচ্ছে?
; নীল টি সার্ট? হাতে সাদা ঘড়ি? ছেঁড়া মার্কা প্যান্ট পড়ে আছেন এটা?
_ হাহাহাহাহাহা হে হে ছেঁড়া মার্কা প্যান্ট পড়ে আছি। আসো।

চমকে গেলাম যখন বলল ভাই কিসের সীট? আপনাকে তো আমি চিনি না আর আমার নাম নাম্বার জানলেন কি ভাবে? কোথায় পেলেন? তার উত্তর দেবো কি করে আমিও চমকে গেলাম কদিনের মধ্যে কেউ নাম্বার নাম পরে মুখ ও বদলে যায় আশ্চর্য।
_ জ্বী আসলে আমি তো ফাম্মীকে ফোন করেছি। আপনি কে?
; আমিই ফাম্মী। আমাকেই তো ফোন করেছেন? ফাইলামি করেন মিয়াঁ?
_ জ্বী না ম্যাডাম আমি করতেছি না আপনারা বোধয় করতেছেন। দয়া করে ফাম্মীকে ডাকুন আমার শরীর খারাপ আমি দাঁড়াতে পাচ্ছি না।
; আশ্চর্য ব্যাপার আমিই তো ফাম্মী। কাকে আবার ডাকবো? আপনার শরীর খারাপ তো আমি কি করবো? কি চান আপনি?
_ দাঁড়ান তো মশাই। উত্তেজিতো হচ্ছেন কেন? দাঁড়ান।
ব্যাপার টা কেমন ধুঁয়া ধুঁয়া টাইপের লাগতেছে। দুইজন ঠাণ্ডা মাথা করে কথা বললাম। শেষে বুঝলাম আমার কলেজের যে মেয়েটা পড়তো সেই ওই ফাম্মী না সে আরেক ফাম্মী। ফাম্মীকে সরি বললাম এবং একটা হেল্প করতে বললাম- এতো কষ্ট করে, ভুল করে আমি আপনাকে এখানে আনিয়েছি একটা কারণে এবং সমস্যা একটা সমাধানের জন্য। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওই সীটটা কোচিং এ পৌঁছে দিতে পারবেন? জানি ভাবছেন কি? কিন্তু বিপদে আছি বুঝতে তো পাচ্ছেন সেহেতু বলেছি আপনাকে দেবেন? মেয়েটি কি ভেবে বলল আচ্ছা দেন। কোচিং এর নাম বললাম যে স্যারের হাতে দেবে সেটাও বললাম। আচ্ছা ঠিক আছে বলে চলে গেলো। পেছনে আর তাকালোই না। ভাবলাম, দিবে কি না? কে জানে? যদি দেয়ও বা জানবো কি করে ওর নাম্বার মানে ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। মনে মনে বললাম যাহ্‌ সালার যা হবার হবে।

দুই সাপ্তাহ পরে গেলাম কোচিং এ। গিয়ে দেখলাম সবাই গত সাপ্তাহের পরিক্ষা দিচ্ছে। এই পরিক্ষা হয় নি স্যার নাকি চলে গিয়েছেন দেশের বাইরে। সেই জন্য এই ক্লাস বন্ধ ছিলো। তবে গত কাল থেকে শুরু হয়েছে। অবাক হলাম মেয়েটার কান্ড দেখে মেয়েটা কথা রেখেছে কিন্তু জানায় নি কিছুই। কোচিং এর ফাম্মীকে সব খুলে বললাম ফাম্মী শুনে হাসি বন্ধ করতে পাচ্ছে না। পেটে ব্যথা করতেছে বলে আরো হাতেছে। মনে মনে ভাবলাম কিছু মানুষ আছে যে তারা হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যেতে প্রস্তুত কিন্তু তারা বুঝতে পারে না তারা শহীদ হয়ে যাচ্ছে, কোচিং এর ফাম্মীটা সে টাইপের। কোচিং শেষে বাসায় ফিরতেছি নতুন ফাম্মীর কথা ভেবে মনে বিরাট কৌতূহল নিয়ে। নতুন ফাম্মীকে যে আমি সীটের কথা বললাম সে কি ভেবে আসলো ??

নতুন ভার্সিটি। বিশাল আকারের ক্যাম্পাস। দেখে মন জুড়ে যাচ্ছে আমি এখন দেশের নাম করা একটা ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে গেছি। সত্যিই ভালো লাগছে দীর্ঘ ১২ বছরের একটা শ্রেষ্ট উপহার আমার জীবনের এটা।

নয়ন ভরে ক্যাম্পাস দেখার পর ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। হঠাৎ লক্ষ করলাম একটা মেয়ে আমার দিকে চেয়ে হাসতেছে। বুঝলাম না হাসির রহস্য। কিছুটা আন্তাজ করলাম আমার একটা সমস্যা আছে যেটা দেখলে সবাই হাসে এবং শুনলে। বাথরুমে গেলাম গিয়ে দেখলাম প্যান্টের চেইন লাগানো আছে। আমি প্যান্টের চেইন লাগাতে ভুলে যাই কিনা আমি নিজেই জানি না। হতে পারে এমন ধীরে ধীরে নেমে যায়। এই সমস্যার জন্য অনেক জায়গায় অনেক লজ্জা ভোগ করতে হয়েছে। কথায় আছে ভোগে সুখ নাই ত্যাগে সুখ- কিন্তু আমার এই ব্যাপার এমন অবস্থা ভোগ করাটাই গ্রহণীয় ত্যাগ করার কোন রাস্তা নাই। তাই বেশি চিন্তা না করেই ডুকলাম ক্লাসে। ক্লাস শুরু হলো। ইন্ট্রডিউস চলতেছে। সবাই নিজেদের নাম,ঠিকানা, কোথা থেকে এসেছে এই সব। হঠাৎ শুনলাম ফাম্মী, সিলেট রায়নগর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ। মাথাটা ঘুরালাম সেই মেয়েটা যে আমাকে দেখে হাসছিলো এবং হাসির রহস্য বুঝলাম সেই চৌহাট্টার নতুন ফাম্মী। এখন আমার ক্লাসমীট হয়ে গিয়েছে।

ধীরে ধীরে ফাম্মীর সাথে বন্ধুত্ব হলো গভীর বন্ধুত্ব। ভার্সিটিতে আজ দুই বছর হলো আমাদের কিন্তু ফাম্মী সেই পুরনো কাহিনী’টা নিয়ে এখনো হাসতে থাকে। মাঝে মাঝে ওকে আমি বকা দেই বোকা বলে। জানতে চাইলাম আমার সেই দিনের রহস্যটা যে ফাম্মী কেন আসলো আমার ফোনে কি ভেবে? তখন ফাম্মী বলে সেই দিন সে ভার্সিটি কোচিং এ ভর্তি হয়েছিলো। তাই সে ভাবছিলো কোচিং থেকে কেউ ফোন দিয়েছে সীট নিতে এটা ভেবে এসেছিলো। তারপর এসে এই ঝামেলাটায় পড়তে হলো।

গতকাল ফাম্মীর আম্মু ফোন করেছেন উনাদের বাসায় যেতে বলেছেন। ভাবছি কিসের জন্য বললেন যে ভাবেই হোক যেতে এরকম আগে তিনি বলেন নি। আজ ফাম্মী ভার্সিটিতে আসে নি ফোনও বন্ধ। ভাবলাম কিছু একটা হয়েছে। তাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিকশা ডাকলাম...............

বাসায় আসলাম। এসে দেখি ফাম্মী তার বাবা মা বসার ঘরে বসে আছেন। ফাম্মীকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য অনেক কেঁদেছে। তার দুচোখ লাল হয়ে আছে এবং আমাকে দেখা মাত্র বুঝতে পারলাম তার ভেতর আঁতকে উঠলো। কেন এমন করলো বুঝতে পাচ্ছি না। ফাম্মীর বাবা আমাকে দেখে বললেন বাবা তুমি এসেছো আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি। এই কথা শুনতে পেয়ে আরো ভয় লাগলো উত্তরে- জ্বী আমি বেশ ভালোই বুঝতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই কোন বিশাল কারণ ঘটিয়েছে ফাম্মী আর সেটার প্রধান আসামী বোধয় আমাকে করেছে। ফাম্মীর মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। মনে হচ্ছে আমি হরিণ উনি বাঘ কোন দিক থেকে শিকার করবেন বুঝতে পাচ্ছেন না। ফাম্মীর চোখ বরাবর গিয়ে বসলাম। ফাম্মীর দিকে তাকিয়ে ইশারা-ইংগিত করলাম কি সমস্যা ঘাড়ে ঝুলিয়েছে জানতে। এই ইশারা-ইংগিত ফাম্মীর বাবার চোখে পড়ে গেলো সাথে সাথে উনি গলা হাঁকি দিলেন। বুঝাতে চাইলেন আমরা সামনে বসে আছি বাছাধনরা। ফাম্মীর মা একটু গম্ভীর গলায় বললেন- ফাহমি তোমার ফিউচার প্ল্যান কি? উত্তরে বললাম না পেঁচিয়ে আমি আল্লাহ্‌ বিশ্বাস করি। ফাম্মীর মা হুম সূচক শব্দ করে বললেন, আচ্ছা তোমাদের পড়াশুনা প্রায় শেষ পর্যায়ে তো শেষ করে কি করবে ভেবেছো? সেটারও উত্তর না পেঁচিয়ে বললাম, এখন নিশ্চিত বলতে পারবো না তবে রেজাল্টের উপর নির্ভরশীল আমি, তখন রেজাল্ট বলে দেবে কি করবো কি না। কিছুটা বিরক্তিবোধ করতেছেন ফাম্মীর মা সঙ্গে চোখ কুচকাচ্ছেন মুখও বাঁকা করতে চাইছেন কিন্তু পুরা হচ্ছেনা কেননা আমি সামনে থাকায় পারতেছেন না। মনে মনে ভাবলাম হয়তো ভাবছেন “ছেলেটা যদি আমার হতো কানের নিচে এক চড় আর পাছায় লাত্থি দুতিনটা মেরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন” কিন্তু তিনি নিরুপায় শতকরে হোক মেয়ের বন্ধুর সঙ্গে তো এমন করা যায় না। তাই চিন্তা করলাম রসিকতা আর না এবার ভদ্র ছেলে। ফাম্মীর বাবা বললেন তোমার বাবা কি করেন? তোমরা “ক” ভাই বোন? উত্তরে বললাম, বাবা বাবার কাজ করেন, জানতে ইচ্ছে হয় তবে ভয় হয় বাবা যদি বলে ফেলেন তোমার জানার বয়স হয় নি আর ভাই বোন সেটা এখনও বুঝতে পাচ্ছি না(শুনে ফাম্মী সহ তার বাবা মা’র চোখ কপালে)চার ভাইয়ের জন্মের বিশাল গ্যাপ তাই বলতে পাচ্ছি না আর সিউর করে বলতে পারতেছি না, দুঃখিত। ভাবতেই অবাক লাগে এটা শুনে ফাম্মী গালে চড় বসালো কেন? আর চড় বসালই ভালো কথা কিন্তু এতো জোরে শব্দ হলো কেন? আগে তো অনেক মেরেছে এরকম শব্দ হয় নি? ফাম্মীর বাবা মা আর কোন প্রশ্ন করলেন না। শুধু বললেন বাবা চা নাস্তা করো। তোমার সাথে কথা বলে এই প্রথম খুব ভালো লাগলো। জ্বী ধন্যবাদ। ভালো থেকো বাবা বলে চলে গেলেন সঙ্গে ফাম্মীর মা ও। আমি চা নাস্তা খেলাম। খাওয়া প্রায় শেষ দেখি ফাম্মীর মা বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্ষণিকের জন্য কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তখন ফাম্মীর বাবা মা বললেন- শোনো বাবা তোমাকে ফাম্মী ভালোবাসে জানো? উত্তরে, না তো আর বাসলে আমি কি করবো, আমি ওকে ভালোবাসি না। আর ওর মতো বোকা মেয়ে আর অল্প কিছুতে কান্না করা মেয়ে অসম্ভব। ভালো লাগা অবধি যাওয়া যেতে পারে ভালোবাসা অবধি নয়। তাছাড়া আমি প্রেম ট্রেম করবো না। কোনও অ্যামেরিকান মেয়ের আঁচল ধরে সেখানে চলে যাবো। কি যে বলেন আপনারা। চলি ভালো থাকবেন।

দুদিন হয়ে গেলো ভার্সিটিতে ফাম্মীর কোনও হদিশ নাই। মেয়েটা মরে গেলো নাকি? কি আবোল তাবোল বলছি আমার জন্য মেয়ে মরবে সেই রকম ছেলে হতে হলে হাজারবার জন্মাতে হবে। ফাম্মীর খুব ভালো বন্ধু রিয়া। জিজ্ঞাসা করলাম ফাম্মীর কথা। রিয়া বলল ফাম্মী এখন থেকে কোনও ক্লাস করবে না। শুধু ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। শুনে ভাবলাম চিন্তাতে পড়লাম------

ফাম্মীকে আমি আমার জীবনের চেয়ে যাকে এক কথায় বলে ভালোবাসি। তার চোখে আমি কাঁদি, হাসি। তার একগাদা কথা কারণে অকারণের মুখ বুজে শুনার শ্রোতা। তাঁকে নিয়ে রাত জেগে কত কবিতা তারিখ দিন ক্ষন রচনা করে লেখা আছে আমার টেবিলের ডায়ারে, দেওয়া হয় নি ফাম্মীকে চমকাবার জন্য। কিন্তু আমি ফাম্মীকে জানাতে ও বলতে পারি না যে, ধর তোঁকে আমার মতো কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিলো সেটার উত্তর “হ্যাঁ” অথবা “না” কোনটা হবে? এটা বলাও হচ্ছে না বলবো বলবো করে। তুই আমার পৃথিবী, তুই আমার সূর্য, তুই আমার রাতের ফ্রী আলো দেওয়া চাঁদ, তুই আমার তারা, তুই আমার নিঃশ্বাস, তোর ভেতর আমার, চলা, বলা, মেনে নেওয়া তোর আজাইরা আবদার, ঝগড়ার ক্ষণ, নেহাৎ ঠোঁট ফুলিয়ে রাখার পণ, এগুলো হেরে যাওয়া মানে তুই মিথ্যা, ঈশ্বরের সৃষ্টি মিথ্যা, আমিও এক মিথ্যা গল্পের মিত্যুক।

ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েকমাস আগে। কিন্তু পরীক্ষায় ফাম্মীর সাথে দেখা হয় নি- নিজেকে আমার চোখে আড়াল করে যাচ্ছিলো কিন্তু ও জানেনা তার গন্ধে আমার শরীর মন্ধির।

অনেক অপেক্ষা করেছি আর না। এতো দিন হয়ে গেলো এখনো কোনও ফোন আসে নি। কারণ তো নিশ্চয়ই আছে। আজ যাবো বাড়িতে দেখা করতে এবং তাঁকে কিছু সত্য বলে চমকে দিতে। ভাবছি এই সত্য জানলে চড় বসাবে না তো? ফাম্মীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম-----------

গিয়ে দেখি বাড়ি পুরাই ফাঁকা। ফাম্মীর বাবা বারান্দায় বসে মর্জিনাকে বলতেছেন চা দিতে এক কাপ। মর্জিনা হচ্ছে তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে। আমাকে অনেক ভয় পায় দেখলে। একদিন রাতে ফাম্মীকে নিয়ে যাচ্ছিলাম কনসার্টে তখন সবাই ঘুমে শুধু মর্জিনা পরে। আমাদের বের হতে দেখে চেঁচাতে শুরু প্রায় করবে করবে বলে তখন আমি গলা চেপে ধরি এবং বলেছিলাম- যদি কাম কইরালাই, কইরা বাইগা যাই তখন কি কেউ বিশ্বাস করবো আমি এই মহান কামটা করছি। এই বলাটা যে এতো কাজে দেবে জীবনেই ভাবি নাই। এরপর যতদিন এই ভাবে গিয়েছি সে আরো উল্টা হেল্প করতো। বারান্দায় ফাম্মীর বাবা বসেছিলেন আমাকে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন বুঝলাম না আর বুঝার চেষ্টা করার দরকার বা উদ্দেশ্য মনে করলাম না। সোজা বললাম ফাম্মীর আম্মু কোথায়? উনি আমাকে পরীক্ষা শেষ হবার পর মানে, পরের দিন ফোন দেওয়ার কথা। ফোন দেন নি, কই উনি? ফাম্মীর বাবা জানতে চাইলেন ফাম্মীর মা কেনো তোমাকে ফোন দেওয়ার কথা বলেছেন? উত্তরে বললাম এটা না জানলে হবে আপনার। ডাকেন উনাকে? উত্তরে বাবা ফাম্মীর মা তো কয়েক মাস পূর্বে মারা গেছেন। কেন বাবা তোমাকে ফাম্মী কিছু বলে নি। উত্তরে সোজা না বললাম। ফাম্মীর বাবা দেখতেছি ইমোশনাল হয়ে আসছেন কিন্তু আমি সেই সুযোগ দিলাম না। ফাম্মীর মা মারা গেছেন শুনে তেমন একটা খারাপ লাগলো না। কেননা, মৃত্যু স্বাভাবিক। জীবন মৃত্যু তার নিয়মে ধরাবাঁধা। ফাম্মীর বাবাকে বললাম ফাম্মী কোথায়? ও কেমন আছে? সেই যে এখান থেকে ফিয়েছিলাম আর দেখা হয় নি, ওকে ডাকুন অনেকদিন দেখি নাই? ফাম্মীর বাবার হাবভাব দেখে ভালো মনে হচ্ছে না। সোজা বললাম কুয়াশা সরিয়ে কথা বলুন- উত্তরে, আসলে বাবা ফাম্মীতো গত মাসে অ্যামেরিকায় চলে গেছে। তোমাকে একটা চিঠি দিতে বলেছে দাঁড়াও নিয়ে আসছি।

হাতে চিঠি নিয়ে ফাম্মীর বাড়ি ছাড়লাম। মেয়েটা এতো অভিমানী যাওয়ার আগে একবার বলার প্রয়োজন মনে করলো না। ফাম্মীকে নিয়ে প্রতিদিন যেখানে বসতাম সেখানে গিয়ে একা আজ বসলাম এবং চিঠিটা বের করলাম--------

প্রিয় ফাহমি
হুম তুই ভালো তো থাকার কথা। জানি তুই বাড়িতে আসবি আমার খুঁজে, এটা বুঝে এই বোকা মেয়েটা আর তোর সামনে দাঁড়ালাম না। তুই বলতে প্রেম ভালোবাসা এসব বিধাতার দান। এগুলো স্বর্গের অভ্যাগত পুরুটাই। তোর এই কথা গুলা বুঝতে গেলাম যখন তখন বুঝলাম তোর আমার রহস্যময় দেখা, চলাফেরা, তোর ভেতর বাহিরের খবর যেমন আমি রাখতে আগ্রহী তেমনি, তুইও। বুদ্ধির জোরে নয় মনে মনে ভেবেছিলাম এটাই হয়তো স্বর্গের আসা তোর আমার প্রণয় খেলা, যে খেলায় আমরা মেতেছিলাম। কিন্তু না সেই খেলাকে ভুল প্রমান করলি তুই, যে এটা স্বর্গ থেকে আসা নয় এটা চোখের ভালোলাগা।

ভালোবাসা কি আমি জানি না আর বুঝিও না। শুধু এটাই জানতাম ও বুঝতাম তোর কষ্টের সেই ক্ষতটা আমার। বন্ধুর ভাব নিয়ে তোঁকে জড়িয়ে ধরতাম যখন তখন মনে হতো তোর বুকে জড়িয়ে থাকলে স্বয়ং বিধাতার ক্ষমতা নেই তোঁকে আমার কাছ থেকে আলাদা করার। হাসচিস বোধয় বোকা মেয়েটা কি যে বলে, বলে। নারে সত্যি বলছি যদি বিধাতা ছিনিয়ে নিতে চাইতেন অবশ্যই বলতাম তোর আমার ভালোবাসা স্বর্গের আভ্যাগত নয়। কি আশ্চর্য ব্যাপার দেখ বিধাতা ছিনিয়ে নেবার আগে তুই সরে আমাকে সরিয়ে দিলি।

চিঠিতে তো আর সব কিছু বলা যায় না ইচ্ছে করলে। একটা বাহান বলা যায় চিঠি। কি করবো বল তারপরও কিছু লিখতে বসেছিলাম তোঁকে ঘিরে কিন্তু লেখতে পাচ্ছি না। সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিস তোর সঙ্গে আমার কি কি নিয়েছিস তা তুই তো জানিস না আমিও নিজেই জানি না। তবে একটা বিষণ্ণতার ক্ষণ দিয়ে গিয়েছিস সেটা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারতাম এখনও পাচ্ছি। আর কি নিয়েছিস সেটা আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। হয়তো মনে মনে ভাবছিস বেহায়া, লাজ লজ্জা নেই এতো শুনিয়েছিস তারপরও চিঠি লিখতেছে। কি করবো বল মানুষ তো প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারে না। এটার প্রমান এখন আমি নিজেই।

মা মারা যাবার পূর্বে আমার বিয়ে ঠিক করেন আমার এক অচেনা ছেলের সাথে। তোর জন্য তো বাবা মার কাছে অবাধ্য মেয়ের রুপ নিলাম। দিন রাত এক করেছি তোর সঙ্গ নিয়ে। তাই মায়ের শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করে নিলাম। তোর কাছে তো জীবনে কিছুই চাই নি। শুধু ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটাও সত্যি হলো না। দোআ করিস যাতে বাকিটা জীবন এই বোকা মেয়েটা সুখে থাকে, সেই মানুষটারও তোর মতন একটু স্বভাবের হয়।
“ভালো থাকিস
ক্ষমা করিস
একটি ভুলের”।
ফাম্মী

চিঠিটা পড়তে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। অনেক সময় ভেবেছি থাক বাকিটুকু পড়বো কি পড়বো না কিন্তু ফেলে রাখা স্বভাবের ছেলে আমি নই সেটা ফাম্মী খুব ভালো করে জানে।
মন থেকে দোআ করি ফাম্মীর জন্য। ঈশ্বর আমার বোকা টাইপের পছন্দের মেয়েটাকে সারা জীবন সুখে রাখেন যে কোনও কিছুর বিনিময়ে। দোআ করি ফাম্মীর মাকেও বিধাতা স্বর্গের প্রথম স্তর দেন। শুধু ফাম্মীর মার দেওয়া আমার কাছে একটা “শর্ত” আজীবন শুধুই আমার কাছে গোপন থেকে গেলো। বলতে পারবো না জানি ফাম্মীর মাকে কিন্তু নিজের কাছে বলছি যখন কারো প্রিয় কেউ থাকে না তখন নিজের কাছে নিজেকে বড় আপন লাগে - কি লাভ হলো আপনার? ঠিকিই তো পরীক্ষা দিলাম দুজন। পাসও করলাম কিন্তু শর্ত ছিলো সেই অভিনয়টা ফাম্মীর ভালোর জন্য ভালো রেজাল্টের জন্য ও ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতের কথা মাথায় ঢুকিয়ে ফাম্মীর সাথে সেই ক্ষণিকের অভিনয়টা করালেন সেই ভবিষ্যৎ আজ কোথায়? সেই শর্ত ফলাফল কোথায়? আমি তো করেছি আমার জায়গা থেকে যতটুকু পেরেছি আপনি কি করলেন? যে অন্ধকারের ভয় পাচ্ছিলেন ফাম্মীর মা আমাকে আর ফাম্মীকে ঘিরে, সেই অন্ধকারের অন্ধকার কাঁটার সূত্রই যে ফাম্মী ছিলো তখন তিনি বুঝলেন না।
ভালোবাসা ক্ষমা করিস
তাঁর চোখে এঁকে দিস
বিনিময় চাই নি আশা করেছিলাম।

২০/০৯/২০১৪ইং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.