নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আ\'ম এভরিথিং ইউ ক্যান ইম্যাজিন!

মাহির মুনিম

পাশে নেই তাতে কি হয়েছে, কথা গুলোর স্পর্শ পাচ্ছি- এই তো জরুরি খবর!!

মাহির মুনিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিমান এবং পরী

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৮

-তোমার কাছে কবেই গোলাপমালা পাঠিয়েছিলাম অর্ঘ্য ভেবে নয়- এই আশাতে তোমার সঙ্গ পেতে।
গোলাপমালার শুকানোর ভয় নেইতো???
-সরি। আমি তোমাকে বন্ধু ভাবি। এর থেকে বেশী কিছুই ভাবতে পারবো না।
-মানচিত্রে হোক্‌ আঁকা পৃথিবীর পর পৃথিবী- চলো আমাদের হোক্‌ একটি নিজস্ব পৃথিবী। প্রত্যেকের একটি, এবং দুজনের একটিই পৃথিবী।
-সরি। এতো মানুষের ভিরে যে পৃথিবীতে আছি নিজেই জানি না কেনো আছি। আর......
-তোমার নির্দয় তাচ্ছিল্যে যখন মারা যাবো আমি। হে ঘাতক নারী, নিজেকে মুক্ত ভেবো না। আমি চাইবো, যন্ত্রণায় অনুতাপে দগ্ধ হও তুমি।
-হাহাহাহা এতো ভালোবাসো এখন অভিশাপ দিচ্ছো। আচ্ছা ঠিক আছে।
-চুপ একটাও কথা বলবে না। তোমার সামনে জীবনেও আর আসবো না। তুমিও আসবে না আমার সামনে।
.
পরী’কে সেই কলেজ লাইফ থেকেই চিনি। আমাদের বাসা থেকে পাঁচটা বাসা পর ওর বাসা।
আজ ও অফিসে যাবার পথেই আটকে কফি খাবার জন্যে নিয়ে এসেছিলাম। কলেজ লাইফ, ভার্সিটি লাইফ সব শেষ। এখন চাকরি করে। কিন্তু তার মাঝে যে সাত বছর ওকে কতোবার প্রপোজ করেছি নিজেই জানি না। আর প্রপোজ করবো না। ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়েই করে নেবো।

খুব শান্ত ও নরম মনের মেয়ে। গোপনীয়তার শ্রেষ্ঠ অধিকারী। একা একা থাকে। হয়তো ওর একা থাকাটা ভালো লাগে। তাই বলে কি প্রেম করবে না। হ্যাঁ আমি ওকেই ভালোবাসি। কিন্তু পরী আমাকে ভালোবাসে না কেনো কি জানি? তবে এটা শিউর যে পরীর কোনো বয় ফ্রেন্ড নেই। কিন্তু কেনো যে ও ভালবাসতে ভয় পায় বুঝি না। অবশ্য ভয় পায় তা হবে না। অন্য কোনো কারণ হতে পারে যা আমি ধরতে পারছি না।
.
সকাল দশটা। ফোন আসলো আমার মুঠোফোনে। পরীর ফোন। আমি কি ভুল দেখছি নাকি স্বপ্ন দেখছি।
-হ্যালো...
-তুমি কি একটু ফ্রী হবে আগামীকাল।
-অবশ্যই। কি করতে হবে?
-কিছু না। আমাকে একটু এয়ারপোর্টে ড্রপ করে দিতে পারবে?
-কখন?
-সকাল ৭টার দিকে।
-ওকে।

ওকে বলে দিলাম। এখন সকাল ৭টার দিকে উঠবো কি করে? ঘুমাই তো চারটা পাঁচটার দিকে। এখন কি হবে। পরী বোধয় অফিসের কাজে আবার কোথাও যাচ্ছে। অবশ্য দেশের বাহিরে না। আর দেশের বাইরে গেলেই বা আমার কি!

ঠিকঠাক টাইমে আমি পোঁছে গেলাম পরীর বাসার গেইটের সামনে। দুজনই রওনা দিলাম এয়ারপোর্টের দিকে। হটাৎ করে গাড়িতে ফোন আসলো আমার বোনের। রিসিভ করলাম-

-ভাইয়া আমার গাড়ি কোথায়?
-আপু দেখো না ঘরের সামনেই আছে।
-ভাইয়া মিথ্যা বলবে না। সত্যি করে বলো। অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
-আপু দেরী হয়ে যাচ্ছে তো কি হয়েছে। একদিন বাসে করে গেলে কি হবে এমন।
-মানে??

ফোনটা কেটে দিলাম। লক্ষ্য করলাম। কথা বলার সময় পরী আমার কথা শুনছে চোখ বড়ো বড়ো করে। এবং হাসতেছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম হাসছো কেনো?

-মিথ্যা বললে কেনো?
-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছো।
-আচ্ছা একটা জিনিস মাথায় ঢুকতেছে না।
-কী?
-তুমি ফোনে তোমার বোনকে আপু বলছো আবার তোমার আপু তোমাকে ভাইয়া বলতেছে। বুঝলাম না।
-আহাহাহা! আসলে আমাদের জোড়ে জন্ম হয়েছে। সে জন্য কে কার বড়ো আর কে ছোট জানি না। এটা নিয়ে আমাদের প্রতিদিনই ঝগড়া হতেই থাকে। সে জন্য ও আমাকে বড়ো বলে আমি ওকে বড়ো বলি।

পরী হাসতে লাগলো আমার কথা শুনে। এবং আমরা পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টে। পরীকে বললাম ভালো থেকো। পরী হুম বললও সঙ্গে তুমিও।

-আচ্ছা নয়ন, তোমার বোনকে বলতে পারবে আরো ৫/৬ দিন বাসে করে অফিস যেতে।
-পরীর কথা শুনে মনে হলো কথা গুলো মাথার উপর দিয়ে গেলো। আমি বললাম কেনো?
-আসলে আমি একা যাচ্ছি না। আমি তোমারও টিকেট কেটে ফেলেছি। তোমাকে জিজ্ঞেস না করে। আসলে অফিসের কাজে প্রথমবার যাচ্ছি। একা ভয় লাগতেছে। যাবে...
-ওকে নো প্রব...... বলে নিছের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার পড়নে থ্রিকোয়াটার। এভাবে কিভাবে যাবো?
-পরী হেসে হেসে বললও সমস্যা নাই।
-মানে আমি কোনো কাপড় আনি নাই তো। আগে বললে ঘুছিয়ে নিয়ে আসতাম।
-সমস্যা নেই। ব্যবস্তা হয়ে যাবে।
.
পাঁচ দিন পর আমরা আবার ফিরলাম। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা পরী চলে গেলো অফিসের দিকে। আমি বাসার পথে। খুব ভালো সময়টা গেলো। চিটাগাং এ। প্রথমে মনে হয়েছিলো গিয়ে বউরিং হবো আসলে তা হইনি। পরী যথার্থ সময় দিয়েছিলো। যা আশা করার চাইতেই বেশী।
.
সাপ্তাহ খানিক চলে গেলো পরীর কোনো খবর নেই। ফোনও বন্ধ। আজব মেয়েটা।
নিশিকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম যে পরীরা তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। নিশি পরীর খুব ভালো ফ্রেন্ড। নিশি বললো-

-কেনো কি হয়েছে?
-আসলে কয়েকদিন ধরে ওর ফোন অফ। যোগাযোগ করতে পারতেছি না।
-ওহ। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তো তাই হয়তো ফোন অফ করে রেখে দিয়েছে।
-আরেহ কি যাতা বলছো। বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে মানে কি?
-হ্যাঁ বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। গত সাপ্তাহে।
-নিশি আমার সাথে দেখা করো প্লিজ।
-ওকে।
.
মাথায় কাজ করছে না। এটা কিভাবে সম্ভব। তাছাড়া পাঁচ দিন ওর সাথে ছিলাম একবারও ওর বিয়ের কথা কখনো বলে নি।
নিশি চলে আসলো। কি ব্যাপার? কি হয়েছে? পরীতো কিছুই বলে নি এসব?

আসলে তোমরা চিটাগাং থেকে ফিরেছিলে। সেদিন পরী অফিস থেকে বাসায় গিয়ে দেখে ওর ফুফু এসেছে ওদের বাসায়। পরীর বাবাও এসেছেন ২০ বছর পর দেশে। তাই সবাই গ্রামে চলে গেলেন। আর সেখানে গিয়েই পরীর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ওর ফুফুতো ভাইয়ের সাথে। অ্যামেরিকায় থাকে ওর ফুফুতো ভাই।

-পরীর কী বিয়েতে মত আছে?

নিশি হাসি দিয়ে আবার হাসলো না। হাসিটা নাক দিয়ে শ্বাসের সাথে শব্দ করে বেরিয়ে হাওয়ায় ভেসে গেলো। পরীর মতামতের কোনো প্রশ্নই নেই সেখানে। ছোটবেলা থেকেই পরীর পরিবারের সবাই আলাদা ভাবে থাকে। পরীর বাবা দেশের বাইরে পরীর জন্মের পর থেকেই। এবং তিনি এই নিয়ে চার বার দেশে এসেছেন। পরীর দাদা’রা গ্রামে থাকে। পরী ওর মা এবং ওর ভাই তাঁরা শহরে থাকে।

পরীর ছোটবেলা থেকেই একটা রাগ জমে আছে ওর বাবার উপর। জন্মদিনে, স্কুলের প্রথম দিনে কিংবা যখন কেউ বলে তোমার বাবা কোথায়? কি করেন? সে কিছুই বলতে পারতো না। ধীরে ধীরে বাবার প্রতি তার ঘৃণা জন্মে গেলো। কোনো কথাবার্তা হয় না, শুধু ওর বাবা আর ভাই ছাড়া কারো সাথে। মেয়েটার সব কিছুই থেকেই যেন কিছুই নেই। কারো কাছে কিছু চায় না। কারো কথাও ফেলে না। পরিবারের সব কথা শুনতে হয় ওকে। কিন্তু ও কেনো যে কিছু বলতে পারে না সেটা ও নিজেই বুঝতে পারে না।

কথা শেষ করার আগেই নিশিকে নিয়ে রওনা দিলো নয়ন। পরীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। নিশিকে নিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পরীর বন্ধু নিশি সে ক্ষত্রে নয়ন ও বন্ধু হয়ে যাবে পরীর বাড়িতে।
.
পরীর চোখ বিশ্বাস হচ্ছে না। নয়নের মতো ঠিকই কিন্তু নয়ন আসার কথা না। তবে সব কৌতূহল ভাঙলো পরীর, নিশিকে সঙ্গে দেখে। ধীরে ধীরে সবার সাথে নয়নের পরিচয় হলো। তবে পরীর বড়ো ভাই পাবেল নয়ন’কে দেখে কেমন জানি চমকে গেলো। নয়ন সেটা আন্দাজ করতে পেরেছে তবে মূল কাহিনী কি ধরতে পারতেছে না।
.
পরীর বিয়ের আর মাত্র চার দিন বাকি। এর মধ্যে নয়ন সবাইকে নিজের মতো করে নিয়েছে তেমনই নয়নকেও সবাই পরিবারের একজন করে নিয়েছে। বিয়ের সমস্ত কাজ কর্ম সব কিছু যেন নয়নের দায়ভার।

নিশি অবাক হয়ে যাচ্ছে নয়নে কর্মকাণ্ড দেখে দিনের পর দিন।
নয়ন এতো ব্যস্ত যে নিশির সাথেও কথা বলার সময় হয় না। আজ নয়ন নিশিকে নিয়ে গল্প করতেছে। অবশ্য নিশি বুঝতে পাচ্ছে কিছু একটা নিশ্চয় হবে বা হচ্ছে।

-নিশি কাল তো পরীর জন্মদিন!
-তো এখন কি ব্যানার লাগাবো ওর ছবি দিয়ে।
-এভাবে বলছো কেনো?
-তুমি এমন ভাবে বলছো যেমন আমি জানি না।
-আমি ওকে গিফট দিতে চাই।
-দাও না তো কি হয়েছে?
-কিছুই হয় নি। কি গিফট দেবো বুঝতে পাচ্ছি না। দেইনি তো কোনো দিন কাউকে।
-কিছু একটা দিয়েই দাও।
-মানে কি? কিছু একটা মানে কি?
-ধরো ও যদি তোমার প্রেমিকা হতো তাইলে বলতাম গলার চেইন টাইপের কিছু দিতে। কিন্তু ও তো তোমার প্রেমিকা না...
-ধরবো কেনো? ওই তো আমার প্রেমিকা। ও মেনে নিলে নেবে- না নিলে নাই। থাঙ্কিউ।
-থাঙ্কিউ কেনো।
-আগেই দিয়ে রাখলাম। কোনো কাজে লাগতে পারো আমার সে জন্যই।

পাঁচ মিনিট পর পরীর জন্মদিন। ছাদে একা পরী বসে আছে। হয়তো আকাশ দেখছে। কিন্তু মেঘলা আকাশ তাঁরা নেই। কি জানি কি দেখে। আমি গেলাম। আমাকে দেখা মাত্রই পরী চলে যেতে চাইলো-

-পরী...। পেছন থেকে ডাক দিলাম।
ঘুরে তাকায় নি। দাঁড়িয়ে আছে।

যখন আমাদের বয়স বাড়বে আশেপাশের মানুষ গুলো বদলে যাবে বদলাবার প্রয়োজনে। অবস্তাও বদলাবে। এ পৃথিবী বদলাবে। কিন্তু একটা জিনিস কখনোই বদলাবে না। আর সেটা হলো তোমার জন্যে আমার ভালোবাসা। এটাই বেড়েই চলবে।
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে পরী। ও চোখের রহস্য উন্মোচন করলাম না।

-হ্যাপি বার্থডে পরী।
-থাঙ্কিউ।

সেই অশুভ হাসি। যতোবার আমি প্রপোজ করেছি তারপর যেটা দেখতাম সেই হাসি দিয়ে চলে গেলো।
এ হাসির রহস্য কি????
.
আজ পরীর জন্য কেনাকাটা করতে সবাই শহরে যাবে। সবাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরীর বাবা যাবেন না। তিনি দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে রেখেছেন। অবশ্য এটা ঘরের সবাই জানেন যে পরীর বাবা যাবেন না।

কিন্তু নয়ন তো যেই সেই ছেলে নয়। পরীর খুশি কি সে ভালো করেই জানে। সবাই বাহিরে গাড়িতে নয়নের জন্য অপেক্ষা করতেছে। কিন্তু নয়ন কোথায়?

-আসতে পারি আঙ্কেল?
-নয়ন হ্যাঁ এসো বাবা।
-আঙ্কেল ছোট মুখে বড়ো কথা বলতে চাচ্ছি। মাফ করবেন। আপনার মেয়েকে আপনি কতোটা ভালোবাসেন সেটা আমি জানি। কিন্তু আজ পরীর বিয়ের কেনাকাটা হবে। কিন্তু পরী যে খুশি না সেটা জানেন?
-কেনো বাবা আমি তো সব বলে রেখেছি কোনো সমস্যা হবে না।
-আসলে আঙ্কেল সেটা কোনো বিষয় না। আজ যদি আপনি পরীর সাথে থাকেন ওর বিয়ের কেনাকাটাতে তাহলে এটা সারা জীবন পরীর মনে থাকবে যে, ওর বিয়ের কেনাকাটাতে আপনি ওর বাবা সাথে ছিলেন। আর এই মূহুর্তটা আর কোনো দিন আসবে না আপনার জীবনে। তাই ভেবে দেখুন কি করবেন।
-চলো। হাসি দিয়ে বললেন পরীর বাবা।

সবার চোখ কপালে উঠে গেলো। নয়নের সাথে পরীর বাবাকে দেখে। পরীও খুশি। হাসি মুখে নয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িতে সামনে নয়ন আর পেছনে পরী, তার বাবা ও পরীর দাদা বসে আছেন। কিন্তু পরীর বাবার অস্বস্তি লাগছে। অবশ্যই উনার বাবা পাশে বসে আছেন বলে। নয়ন আন্দাজ করতে পারলো। কিন্তু পরীর মুখে এখনো হাসি লেগেই আছে।

কেনাকাটা চলছে। কিন্তু পরীর পছন্দ কী অপছন্দ কেউ জিজ্ঞাস করছে না। ফুফু আর পরীর মা পছন্দ করে সব পেকিং করে নিচ্ছেন। এর মধ্যে নয়ন এসে বললো পেকিং করবেন না।
সবার চুপ হয়ে নয়নের দিকে তাকিয়ে রইলো।
পরীর মা বললেন কি হয়েছে নয়ন?
-আসলে আন্টি আপনারা যে পেকিং করে ফেলতেছেন। এগুলো কি পরীর পছন্দ হয়েছে?
-আমরা তো ওর সামনেই পছন্দ করলাম।

নয়ন কথা না বাড়িয়ে পরীকে জিজ্ঞাস করলো।
-তোমার কি পছন্দ হয়েছে এগুলো?
-পরীর কোনও উত্তর নেই...
-তোমার কি এগুলো পছন্দ হয়েছে? আবার নয়ন বললো।
-না। পরী বললো।

পরীর মা এবং ফুফু লজ্জা পেয়ে গেলেন। পরীর মা বললেন পছন্দ হচ্ছে না বলো নি কেনো? পরী কে।
পরীর ফুফু কথা না বাড়িয়ে বললেন। ঠিক আছে পরীর যা পছন্দ হয় আমারা তাই দেবো।
.
কেনাকাটা করে বাসায় সবাই ফিরে এলো।
রাতের খাবার খেতে নয়ন বসলো। কিন্তু টেবিলে শুধু- নয়ন, পরী, আর পরীর বড়ো ভাই। নয়ন পরীর মাকে প্রশ্ন করলো। দাদা, আঙ্কেল আসেন না কেনো?
উত্তরে পরীর মা বললেন। উনারা নিজের রুমে খান।
নয়ন পরীর মাকে বললো- দাদা কোথায় এখন?
উপরে বসে আছেন। নিজের ঘরে।

নয়ন টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো পরীর দাদার রুমের দিকে। গিয়ে দেখলো বুড়ো মিয়াঁ একা একা মদ খাচ্ছেন। নয়ন’কে দেখে-
-কি মিয়াঁ চলবে নাকি?
-অপমান করলেন দাদা সাহেব। এটা কিন্তু ঠিক হলো না।
-হকচকিত হয়ে গেলেন দাদা নয়নের কথা শুনে। এবং সরি বললেন।
-সরি কিসের। গ্লাস একটা দিয়ে আপনিই খাচ্ছেন। আবার বলছেন চলবে। আমি কি দিয়ে খাবো। সেটা ভেবে বললাম অপমান করতেছেন।
-ওহ সরি সরি ভুল হয়ে গিয়েছে। আসো বসো। হাসতে হাসতে বললেন দাদা।

নয়ন দাদার সাথে গল্প শুরু করতে লাগলো। হঠাৎ করে নয়ন বললও
-আচ্ছা দাদা আপনারা সবাই এমন কেনো? সবাই এক সাথে থাকছেন অথচ কেউ কারো সাথে কথা বলেন না। খাবার টেবিলে আসেন না। কি সমস্যা আপনাদের?
-কি বলবো ভাই। একটা কথা বলার জন্য আজ এমন অবস্থা আমাদের। অনেক দিনের কথা কষ্টে চেপে রেখে দিয়েছিলেন কষ্ট করে মুখে এনে বললেন।
-কি হয়েছে দাদা????

১৯৮৬ সাল। পরীর জন্ম হলো। আমি বড়ো হতাশ হলাম। পরীর ওপর না পরীর বাবার ওপর। পরিবারে মানুষ পাঁচ জন। আমার উপার্জনে পরিবার চলতো। শফিক কোনো কাজ কর্ম করতো না (পরীর বাবার নাম শফিক)। পরীর জন্মের খবর পেয়ে বলেছিলাম। আমার কপালে আরেকজন বোঝা হয়ে আসলো। এই কথা টা শফিকের কানে চলে গেলো আমি খেয়াল করি নি ও যে ঘরে ছিলো। ব্যাস তারপর হুট করে একদিন শফিক দেশের বাহিরে চলে গেলো। কাউকে কিছু না বলে। শুধু সফিক তার বোনকে বলেছিলো-

আজ বাবা আমার মেয়ের জন্মের পর এমন বলেছে। কাল যখন আমার ছেলে মেয়ে বড়ো হবে ওদের সামনে এরকম কথা বলবে না তার কি কোনো ভরসা আছে। আমার সন্তানদের কারোর উপর বোঝা করে রাখতে চাই না।

আড়াল থেকে পরী, আর পরীর ভাই শুনে কাঁদতে লাগলো। তাদের মনে যে রাগ অভিমান ছিলো বাবাকে নিয়ে- সেটার কারণ জানতে পারলো।

এদিকে নয়ন এটা শুনে দাদা কে। পড়িয়ে নিলো। ঘরের বড়োরা যখন ভুল করে তখন বড়োদের কি করা উচিৎ......

দাদা ছুটলেন শফিক, শফিক বলে পরীর বাবার ঘরের দিকে।
কিন্তু পরীর বাবা শুনে না শুনার ভাণ করেই যাচ্ছেন।
এই আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না। দাঁড়া। পরীর বাবা দাঁড়িয়ে গেলেন।
কি হয়েছে তোর এতো রাগ বাবার ওপর। তোর ওপর রাগ করে ভুলে মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিলো কথা গুলো। আর সেই থেকে আমার মুখের দিকেও তাকাস না। এতোটা খারাপ আমি। আমি আর পারছি না। আমাকে ক্ষমা করে দেয় বাবা। আমি তোর পা.........

পরীর বাবা, দাদাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন।

সবাই রাতের খাবার খেলো এক সাথে। খাবার টেবিলে সবার হাসি খুশি মুখ। কিন্তু পরী চোখ শুধু নয়নের দিকে।
.
নিশি নয়নকে জিজ্ঞাস করলো-
-আচ্ছা নয়ন তুমি এখানে কিসের জন্য এসেছো? পরীর বিয়ে খেতে নাকি পরীর বিয়ে ভাঙতে?
-আসলে নিশি আমি নিজেই জানি না। আমি কি করছি বা কি করবো। তবে এখনো মনে বিশ্বাস আছে যে আমি পরীকে ভালোবাসি। এবং আমার ভালোবাসায়।
-কাল পরীর বিয়ে। আর এখনো বিশ্বাস নিয়ে আছো।
-জানি না। বলে চলে এলো নয়ন।
.
পরীর বাবা বসে আছেন একা। নয়ন দেখে এগিয়ে গেলো। জিগ্যেস করলো এখানে একা বসে আছেন কেনো আঙ্কেল মন খারাপ নাকি?
-না মন খারাপ না। এটা পরীর পছন্দের জায়গা। এখানে পরী সারাদিন খেলতো, বসে থাকতো। এখানে এসে যখন বসি মনে হয় আমার মেয়ে আমার পাশে বসে আছে।
-তাহলে পরীকে ডেকে নিয়ে আসি......
-না। ও আসবে না।
-কেনো আঙ্কেল আসবে না কেনো???

আসলে আমি পরীর পছন্দের সব কিছু দিতে চেয়েছি। এবং আমি দিতে পেরেছি হয়তো। তাই জীবনে এতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েও এই জায়গা কখনো বেচার নাম নেই নি। আমি আমার বাবাকে কখনো খুশি রাখতে পারি নি। কিন্তু আমার ছেলে মেয়েদের খুশি রাখার জন্য যা করতে হয় তাই করেছি। ওদের থেকে দূরে থেকে ওদের সুখ, শান্তি দিতে পেরেছি কিন্তু তাদের পাশে এসেছি যখন তাদের ভালোবাসা যে আমার প্রতি আমি দেখি না ওদের চোখে। আমি বুঝি আমার প্রতি তাদের যে অভিমান। কিন্তু আমার কি করার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা জীবনদের কিছু দিতে হলে কিছু হারাতে হয়।

পরীর বিয়ে। এই বিয়েটা সারাজীবন আমার কাছে স্বপ্নের মতো। পরীর বিয়ে হয়ে গেলে আমার ওপর থেকে এক বড়ো কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পরী আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। মাত্র একদিন বাকি। একদিন পর পরী এ ঘর আর আমাদের ছেড়ে চলে যাবে সারাজীবনের জন্যে অন্যের ঘরে। কিন্তু আমি চাই আমার পরী যাবার আগে আমার সাথে অন্তত একবার হলেও মন খুলে ওর যা কথা আছে সব আমার সাথে বলে নির্ভয়ে। ওই সব সকল কথা যা আজ পর্যন্ত ওর বাবার সাথে কথা বলে নি। যদি পরী ওর ইচ্ছে মতো কাউকে বিয়ে করতো তাহলে আমার কোনো চিন্তা হতো না। কিন্তু ও এমন করে নি। হতে পারে আমার ইজ্জতের কথা ভেবে। ওর যে আগামীকাল বিয়ে কিন্তু ও এখনো কিছুই বলে নি বিয়েটা সম্পর্কে। পছন্দ-অপছন্দ, হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলে নি। জানি না, আমার মেয়ে যদি কাউকে ভালোবাসে। যদি ভালোবেসেই থাকে। তাহলে আমার সারাজীবনে যে ইচ্ছা ছেলেমেয়েদের খুশি রাখার সেটা আর পূরণ হবে না।

বিয়ের পর মেয়েরা বৌ হয়ে অন্য ঘরে চলে যায়। জানি না কেনো এমন নিয়ম দুনিয়াতে। যিনি বানিয়েছেন উনি হয়তো জানেন- প্রত্যেক বাবার একটাই চিন্তা যে, মেয়েটা অন্য ঘরে গিয়ে কারো বোঝা হয়ে যাবে না তো??
মনের জমে থাকা কথা গুলো বললে নাকি কষ্ট কম হয়ে যায়। আর যদি এই কষ্টের কথা আপন কাউকে বলা যায় তাহলে হালকা লাগে। জানি না, তোমাকে কেনো এ কথা গুলো বলে ফেললাম।

পরীর বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে চলে গেলেন।
আমি একা বসে রইলাম। লক্ষ্য করলাম পেছনে কে কাঁদছে। হ্যাঁ পরী কাঁদছে। আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম। জিগ্যেস করলাম কাঁদছও কেনো?
কিছু না বলে পরী আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো কাঁদতে লাগলো।
তারপর চলে গেলো।

পরীকে আমি যতবার বলেছি ভালোবাসি ততবার না করে দিয়েছে। কিন্তু আজ পরী আমাকে প্রথম জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। জানি না কেনো এমন করলো।

পরীর ভাই নবীন। প্রথম যখন দেখেছিলাম। তখন ও আমাকে দেখে চমকে গিয়েছিলো। তার কারণ আজ বুঝতে পারলাম। আপুর নাম্বার ওর মোবাইলে “লাইফ” দিয়ে সেইভ করা। আপুকে একটা ফোন দিয়ে কি বলা যায়-
-কি করো আপু?
-না কিছু না। তুমি কি করো ভাইয়া?
-এইতো বসে আছি।
-তোমার কি খবর পরীর বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে?
-মানে??
-না কিছু না।
-এতক্ষণ তো সন্দেহ করেছিলাম। দাঁড়াও আসছি বাসায় দেখি কিভাবে তোমার বিয়ে হয়।।

কেটে দিলাম ফোন। কাল পরীর বিয়ে। পরীর কোনোদিন বলেনি আমাকে ভালোবাসে। অথচ আমি ওকে ভালোবেসেছি। পরী যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে এতো দিনে কিছু একটা বলতো। কিন্তু কিছুই বলে নি!
চলে যাবো এখন। ভালোবাসি যাকে তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আর তার বিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা সেটা দেখার ক্ষমতা আমার নেই।
.
শফিক সাহেব একা বসে আছেন ছাদের ওপরে। কি ভাবছেন? কে জানে। হঠাৎ দেখলেন পরী উনার দিকে আসছে। দেখেই চোখে পানি চলে আসলো উনার। এই প্রথমবার পরী আমার কাছে আসছে। কিছু বলুক আর না বলুক। আসছে তো।

-কিরে মা কিছু বলবি? পরীর বাবা পরীকে বললেন।
-জ্বী।
-তাহলে বলো। দাঁড়িয়ে কেনো বস এখানে।

আপনি এটা ভাব্বেন না যে, আমি বিয়েটা ভেঙে নয়নকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। আপনি বলেছেন আপনি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন, সেদিন আমি শুনেছিলাম নয়নের সাথে যখন আপনি গল্প করেন তখন। কিন্তু আজকে আমি আপনাকে বলবো আমি নয়নকে কতোটা ভালোবাসি। অবশ্য নয়ন এটা জানে না যে ওকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু আপনার এটা জানা জরুরী। জানতাম মেয়েদের সাথে বাবাদের বন্ডিংটা ভালো হয়। আমি ছোটবেলা থেকে আপনার সাথে থাকতে, ঘুরতে বা অন্য সব মেয়েদের মতো কথাবার্তা বলতে চাইতাম। কিন্তু আপনাকে আমার খুশি বা দুঃখের সময় কাছে পাই নি। কিন্তু আজ আমি নয়নের সাথে থাকতে চাই। ওর জন্য আমি আজ হাসতে পারি সবার ভিড়ে কিংবা একা একা, নিজেকে খুশি রাখতে বা নিজেকে খুশি ভাবতে পারি, ওর জন্য ভালোবাসা, রাগ-ক্ষুভ, খুনসুটি, এবং কষ্ট কি বুঝতে পারি, আবার কষ্ট ভুলতে পারি, ওর কাছ থেকে আমি বাঁচার আশ্বাস এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনটা জানতে পেরেছি। শুধু এটুকুই নয়। আজ আপনার সামনে কথা বলার যে সাহস পেয়েছি এটা শুধু ওর ভালোবাসার জন্যই। ওকে ছেড়ে বাঁচার কথা ভাবতেই যেন মনে মরে গিয়ে বেঁচে থাকার মতো। আমি কী চাই- আমি নিজে বলতে পারতাম না। এটা আমার কমজোরি। কিন্তু ও আমার না বলা কথা গুলো সব বুঝে যায়। জানি না কেমন করে! ওর মতো ছেলের সাথে যদি থাকি যে আমাকে আমার থেকে বুঝতে পারে- না অন্য কারো সাথে আমাকেই সবসময় এডজাস্ট করে থাকতে হবে। আমি বুঝতেই পারতেছি না কি করবো। নয়ন আমাকে এতো খুশি দিয়েছে যে ওর জন্য মরেই যাই এটাও কম হয়ে যাবে। ওকে ছেড়ে বেঁচে থাকবো এটা আমি ভাবনাতেই আনতে পারবো না। শুনেছি কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভুলতে পারা অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ আমি জানতে পেরেছি ওই অসম্ভবটা কী এবং কেমন! ও প্রত্যেক সময় আমার ভেতর বাহির জুড়ে থাকে। কেননা আমি ওর মধ্যে আপনাকে দেখি বাবা। যদি আমি ওকে ভালবাসতাম তাহলে ছেড়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু এখন নয়ন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। নয়নকে ছেঁড়ে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব না।

পরী এগুলো বলে চলে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে।।

শফিক সাহেব, কাঁদছেন। এটা আনন্দের কান্না। মেয়েটার মনে সব কথা তিনি শুনেছেন। মেয়েটা নির্ভয়ে ওর ভালোবাসার কথা বলেছে। উনার কর্তব্য পূর্ণ করবেন।

নয়ন কোথায়??????

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.