![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ তথা সমগ্র উপমহাদেশে সংখ্যাজনিত সমস্যার সাথে আমাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনোভাবে পরিচয় আছে। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি নয়, বরং এক ধরনের সমাজ-সংস্কৃতিগত প্রবণতা, যার শিকড় আমাদের শিক্ষা, প্রশাসন, পরিবার ও ইতিহাসে বিস্তৃত
আমাদের অনেকেরই দুটি জন্মদিন আছে—একটি সত্যিকার জন্মদিন, অন্যটি সনদের জন্মদিন। স্কুলে ভর্তি করানোর সময় অনেক সময় ইচ্ছেমতো বয়স নির্ধারণ করা হতো। কারণও ছিল বাস্তবসম্মত—বয়স কম দেখালে সরকারি চাকরির জন্য বয়সসীমা অনুযায়ী সুবিধা পাওয়া যায়। এ যেন এক সাংগঠনিক চুক্তি—পরিবার, শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান মিলে একটি সুবিধাজনক সংখ্যা দাঁড় করিয়ে দেয়। কেউ হয়তো সাত-আট বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেও এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাড়ে ১৪ বছর বয়সে, যদিও প্রকৃত বয়স আরও বেশি। এটি নিছক ব্যক্তিগত নয়; এ এক সামাজিক চর্চা।
এই সংখ্যাজাল শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়। রাষ্ট্রীয় স্তরে সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা এক ধরনের ক্ষমতার অনুশীলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, জ্বালানী উৎপাদনের পরিসংখ্যান বা বিদ্যুৎ ঘাটতির হিসাব—বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এমন সংখ্যা প্রকাশ করে যা সুবিধাজনক narrative গড়ে তোলে। ২০১৩ সালের “লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশ” ঘোষণার পরেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন ছিল। বাস্তবতা আড়াল করে সংখ্যা উপস্থাপন করাটাই যেন norm হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, কোনো কোনো সময় ইতিহাসে ব্যক্তি বিশেষের অনুভূতিকে পরিসংখ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে Forbes বা Bloomberg Billionaires Index-এর মতো তালিকা তৈরি হয় যেখানে সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী ধনীদের র্যাংকিং প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কারা ধনী, তাঁদের সম্পদের পরিমাণ কত—তা নিয়ে কোনো স্বচ্ছতা নেই। কারণ হয়তো কর ফাঁকি, অপ্রদর্শিত আয় বা রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ এই তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। অথচ এই অদৃশ্য ধনীরা ব্যাংক, শিল্প, জমি এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও সংখ্যা নিয়ে এই ধোঁয়াশা ব্যাপক। সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি বা নির্বাচনকালীন সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা, গুম-খুন, কিংবা দাঙ্গার প্রকৃত চিত্র কখনো প্রকাশ পায় না। সরকার বলবে এক সংখ্যা, বিরোধী দল বলবে আরেক, এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলবে তৃতীয় কিছু। যেমন, ২০১৯ সালে ভারতের দিল্লি দাঙ্গার সময় নিহতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি হিসাব ও মানবাধিকার সংস্থার হিসাবের মধ্যে বিরাট ফারাক ছিল।
এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো রাজনৈতিক সুবিধা, আমলাতান্ত্রিক অলসতা কিংবা গণতন্ত্রের দুর্বল সংস্কৃতির মধ্যে নিহিত। যখন তথ্যপ্রকাশের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, যখন সংখ্যাকে যাচাই-বাছাই করার কোনও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান কাজ করে না, তখন সংখ্যা হয়ে ওঠে একপ্রকার হাতিয়ার—সত্য প্রকাশের নয়, বরং সত্য আড়াল করার।
সংখ্যা কোনো নিরীহ বিষয় নয়। এটি সত্যকে বোঝার একটি পথ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি হাতিয়ার। কিন্তু যখন সংখ্যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত হয়, তখন তা সমাজকে বিভ্রান্ত করে, ইতিহাসকে বিকৃত করে, এবং একটি দেশের নীতি ও উন্নয়নকে ভুল পথে পরিচালিত করে। উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা যতদিন না তথ্যভিত্তিক ও স্বচ্ছ হয়, ততদিন এই ‘সংখ্যার ভাপলা’ চলতেই থাকবে।
০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫৩
মুনতাসির বলেছেন: তাহলে অনুমেয় যে আপনার বয়স কম
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আমার কোনো ঘাপলা নাই। সব জায়গায় একই রকম।