নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেরপা

দেখতে চাই ধরনী

মুনতাসির

আমি পাহাড়ে চড়ি,সাগরে ডুবি, পৃথিবী আমার প্রেম

মুনতাসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক বিলিয়ন ডলার দান: আমাদের মেডিকেল অ্যালামনাই কোথায়?

৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৮:০৯

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ডাক্তারদেরও আয় অনেক — এটা নতুন কোনো তথ্য নয়, বরং একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। চিকিৎসা পেশাটি দেশে শুধু সম্মানজনক নয়, বরং আয়ের দিক থেকেও অন্যতম শীর্ষে। এর একটি বড় কারণ হলো, বেশিরভাগ ডাক্তার এখনো ভিজিট ফি নগদে নেন। ফলে তাদের প্রকৃত আয়ের বিপরীতে কর প্রদানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যায়। কর না দিলে হাতে যে অর্থ বেশি থেকে যায়, তা প্রকৃত করদাতাদের তুলনায় অনেক সময় বেশি হয়। সব মিলিয়ে বলা যায় — বাংলাদেশে ডাক্তারদের আয়ের সুযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।



এই কথাগুলো বলার পেছনে কারণ একটি ছবি ও সংবাদ, যা সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের। হলটির মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সরতে বাধ্য হয়েছেন পাশের ভবনে।

দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন করুণ চিত্র না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, বাথরুমে পোকামাকড়ের উপদ্রব, জানালায় মরিচা আর শোবার ঘরে নেই ন্যূনতম নিরাপত্তা — সব মিলিয়ে এক নির্মম বাস্তবতা।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়াই যেমন কঠিন, এখান থেকে পাশ করাও তেমনি পরিশ্রমসাধ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়াশোনা মানেই বছরের পর বছর একনিষ্ঠ অধ্যয়ন, সীমাহীন ধৈর্য ও প্রখর স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা। আমি নিজে প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনার চাপ আরও কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী।

তাই প্রশ্ন জাগে — দেশের সেরা মেধাবীরা যেখান থেকে ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে আসছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের আবাসনের অবস্থা এত শোচনীয় কেন? এত বছরের অ্যালামনাইদের কেউ তো কোটিপতি হয়েছেন, কেউ কেউ বিদেশে পিএইচডি করেছেন, অনেকে আবার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক। তাহলে তারা কোথায়?

ঢাকা মেডিকেলের কোনো প্রাক্তন ছাত্র সমিতি কি নেই? থাকলে তারা কী করছে? তাদের কি কোনো দায় নেই বর্তমান ছাত্রদের ন্যূনতম আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা করার? নাকি আমরা ধরে নিয়েছি — সব দায়িত্ব সরকারের?

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থিত অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের একজন সাবেক অধ্যাপক ও ট্রাস্টি রুথ গোটেসম্যান — তার প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুদান দেন ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এই বিশাল অনুদানের ফলে কলেজটি ঘোষণা দেয় — এখন থেকে তাদের সব মেডিকেল শিক্ষার্থীর টিউশন ফি আজীবনের জন্য মওকুফ। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, গোটা বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রে এক দৃষ্টান্ত। কারণ এই দান কেবল অর্থদানের মধ্যে সীমিত নয় — এটা একটি প্রজন্মকে ঋণমুক্ত করে মানবসেবার পথে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশেও অনেক বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন গড়েছেন। যেমন নটর ডেম কলেজের অ্যালামনাই ক্লাব রয়েছে, যেখানে সদস্য হতে হলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ফি। বন্যা, দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার সময় এসব সংগঠনের দান-খয়রাতের খবর আমরা মাঝেমধ্যে দেখি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো — কয়টা সংবাদের শিরোনাম হয়েছে এই বলে যে, কোনো অ্যালামনাই সংগঠন তাদের সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি আধুনিক গ্রন্থাগার তৈরি করেছে? কয়টা ছাত্রাবাস বা গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রাক্তনদের অর্থায়নে?

এটা কি আমাদের সাংস্কৃতিক সংকট? নাকি আমরা একবার প্রতিষ্ঠান পেরোলেই ভুলে যাই — কোথা থেকে এসেছিলাম?

ঢাকা মেডিকেলের মতো একটি প্রতিষ্ঠান — যেটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র, তার ছাত্রাবাস যদি নিজেই অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকে, তাহলে সেটা আমাদের জাতিগত অবহেলার চিত্রকে স্পষ্ট করে?

যেখানে চিকিৎসা শেখানো হয়, সেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্যকর পরিবেশটুকুও নেই — এটা যেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখে থুতু দেওয়ার মতো।

এই চিত্র বদলাতে কোটি টাকা নয়, দরকার কিছুটা ঔদার্য্য ও সংবেদনশীলতা, খানিকটা দায়িত্ববোধ। যারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে ডাক্তার হয়ে বের হয়েছেন — তাদের অনেকেই আজ অর্থে, ক্ষমতায়, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তারা যদি একটু ফিরে তাকান, তাহলে পোকায় ভরা বাথরুম, মরিচাধরা জানালা, আর ধসে পড়া পলেস্তরার নিচে আরেকটি প্রজন্মকে ন্যূনতম মর্যাদায় বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব।

একটি দেশ শুধু বাজেট দিয়ে চলে না। রাষ্ট্রের দৌড় যেখানে থেমে যায়, সেখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত নাগরিক দায়িত্বের।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজের সেই ১ বিলিয়ন ডলারের অনুদান আমাদের কেবল ঈর্ষার খোরাকই নয়, আত্মজিজ্ঞাসায় হাতুড়ির বাড়ি হতে পারে।

আমরা কী পারিনি, নাকি চেষ্টাই করিনি? নাকি আমরা অতীতের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেই নিচের ধাপগুলো ভুলে গেছি?

Published : 29 Jun 2025, 08:23 PM Updated : 29 Jun 2025, 10:04 PM
on bdnews24.com view this link

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৮:২২

ওমর খাইয়াম বলেছেন:





ঢাকা মেডিক্যালে ডাক্তার, নাকি ডাকাত বানানো হয়?

২| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৫৯

কলাবাগান১ বলেছেন: বাংলাদেশে বড়লোকরা মা/বাবার নামে মাদ্রাসা/মসজিদ/কলেজ বানাতেই বেশী আগ্রহী.... আখেরাত নিয়েই বেশী আগ্রহ...।আমার হাসি পায় আফগানিস্হানে মেয়েদের কে পড়তে দেয় না...। আবার নিজের স্ত্রীকে পুরুষ ডাক্তার কাছে যেতে দিবে না..মেয়ে ডাক্তার চায়!!!!!

৩| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ডাক্তারেরা আরেকটু কম টাকা ভিজিট নিলেই পারে।
আমাদের দেশে ডাক্তারেরা কত টাকা ভিজিট নেবে এই বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই??

৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫

মুনতাসির বলেছেন: আমার কোনো ধারনা নেই নীতিমালার ব্যপারে। এটা সত্যি ডাক্তাররা আরেকটু আন্তরিক হতে পারেন বা আরেকটু বেশি সময় দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অনেকে দেন আবার অনেকে দেন না। আমার লেখার উদ্দেশ্য তাদের প্রাকটিস নিয়ে যদিও নয়। প্রাক্তনীদের অবদানের কার্যত বেশি উদাহরণ দেখা যায় না - এটা সর্বাগ্রে, সবার জন্য, সকল প্রতিষ্টানের জন্যে সত্যি।

৪| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২১

কামাল১৮ বলেছেন: আমাদের ডাক্তাররা চিকিৎসা কতটা শিখে জানি না,কিন্তু নীতি নৈতিকতা মোটেই শিখে না।

৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩৬

মুনতাসির বলেছেন: এটার জন্য বিদ্যালয়ের থেকে কি পরিবারের দায় বেশি নয়? আমরা সবসময় পূর্বপুরুষের মতন হয়ে থাকি বিশেষ করে আমাদের নৈতিকতা, চরিত্রের মতন ব্যপারগুলো। জেনেকিক্স।

৫| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০০

কামাল১৮ বলেছেন: পরিবার থেকে সমাজের দায় কম না।সমাজ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখি।

৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০১

মুনতাসির বলেছেন: একদম সত্যি তবে আমরা পরিবার থেকে শেখা শুরু করি। সে বিচারে পরিবার আগে আসে। আমাদের সব কিছু গোড়াপত্তন পরিবার।

৬| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ডাক্তারেরা আরেকটু কম টাকা ভিজিট নিলেই পারে।

৭| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

নূর আলম হিরণ বলেছেন: ডাক্তার কেনো এদেশের বেশিরভাগ মানুষ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করতে চায় না। মসজিদ মাদরাসা, মাজারে দান করে।

৮| ৩০ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: পশ্চিমাদেশে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রম উৎসাহিত করার জন্য মোটা অংকে দান করে কিন্তু আমাদের দেশে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের এমন নজির নেই বললেই চলে; এরা আরো কীভাবে জনগনের রক্তচোষা যাবে সে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে। উল্লেখ্য যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তার মানবিক নয় তারা ব্যবসায়ী।

৩০ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

মুনতাসির বলেছেন: এর রেওয়াজ ছিল। অন্তত একটা উদাহরণ আছে - ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতাল। ফার্ম গেটে। তাও অনেক আগের। আরও আছে বা থাকবে হয়তো। আকিজের কিছু আছে। তবে দানের ব্যপারে অনেক অনেক স্কুলের, কলেজের এমনকি ঢাকার নবাব পরিবারের দান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির খবর পাওয়া যায়। যা বলা হলো, সব আগের। অনেক আগের। বর্তমানের নজির আমার জানা নেই। কিন্তু বেসরকারি সংস্থা বেড়েছে। বেড়েছে ব্যবসা। বাড়ানি সামাজিক দায়ব্ধতার ব্যপারগুলো।

৯| ৩০ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মাকে একজন ডাক্তার দেখাই।
উনার সিরিয়াল পেতে, যে লোক সিরিয়াল লেখে তাকে এক হাজার বিশ টাকা বিকাশ করে দিতে হয়। এই টাকা না দিলে সিরিয়াল পেতে দেড় দুই মাস সময় লাগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.