![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রায় এক দশক আগে আমরা কয়েকজন মিলে ঢাকায় একটা ছোট্ট কাজ শুরু করেছিলাম—একটা ‘বাস মানচিত্র’ বানানোর চেষ্টা। ভাবছিলাম, ঢাকায় চলাচল কতটা কষ্টকর, অথচ শহরজুড়ে লাখো মানুষ প্রতিদিন বাসে চড়ে কোথাও না কোথাও যাচ্ছেন। কিন্তু কোথা থেকে বাস পাবেন, কোন রুটে যাবেন—সেটা জানার কোনো সহজ উপায় ছিল না।
আমি তখন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়াশোনা করি। আমার মাস্টার্স থিসিসের জন্য একটা এমন শহর খুঁজছিলাম, যেখানে গণপরিবহন নিয়ে কাজ করলে সত্যিই মানুষের উপকারে আসবে। ঢাকার নাম আগে শুনেছি, কিন্তু ২০১০ সালের এক হরতালের দিনে যখন ঢাকায় নামলাম, বুঝে গেলাম—এই শহরেই কাজটা করা দরকার
ঢাকায় আমার সঙ্গে যোগ দিলেন মুনতাসির মামুন—একজন প্রকৌশলী ও সংগঠক, যিনি তাঁর অলাভজনক সংস্থা কেওক্রাডংয়ের মাধ্যমে শহরটাকে অনেক কাছ থেকে চিনতেন। ছিলেন সাদ বিন হোসেন—একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, যিনি এ বিশৃঙ্খল পরিবহনব্যবস্থার প্রতিদিনের ভুক্তভোগী। আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন গাইড ও সহায়ক, অধ্যাপক ক্রিস জেগ্রাস।
আমরা একসঙ্গে ঠিক করলাম, ঢাকার জন্য একটা বাস মানচিত্র বানাব। এটা যেন শুধু দরকারি না হয়, সুন্দরও হয়—ঠিক নিউইয়র্ক বা টোকিওর মতো। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। ঢাকায় তখন বাসের শুধু নাম আর একটা নম্বর ছিল। বাসস্টপ নির্দিষ্ট ছিল না, রুটগুলো চালক ও কন্ডাক্টরের মুখে মুখে চলত। একজন যাত্রী কোথায় নামবেন, কীভাবে যাবেন—নিজ দায়িত্বে শিখে নিতে হতো।
তাই আমরা শুরু করলাম রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসে চড়ে রুট লগ করতাম, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতাম। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা একটা মোবাইল অ্যাপ বানালাম। তখনো ঢাকায় হাতে হাতে স্মার্টফোন খুব একটা চোখে পড়ত না। আমরা কিছু ফোন নিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করলাম। কত ঘণ্টা যে বাসে কাটিয়েছি, বলতেই পারব না। ক্লান্তিকর ছিল, কিন্তু কাজে লেগেছিল।
এসব তথ্য থেকে আমরা জানলাম, ঢাকায় বাসে যাতায়াতের গতি ঘণ্টায় মাত্র ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার—মানে হাঁটার চেয়ে একটু বেশি! আরও জানতে পারি, বাসে ভিড় যত বাড়ে, নারী যাত্রীর সংখ্যা তত কমে যায়। এতে এটা স্পষ্ট করে দেয়, শহরের পরিবহনব্যবস্থা কতটা পুরুষপ্রধান।
আমাদের স্বপ্ন ছিল এমন একটা মানচিত্র তৈরি করা, যেটা সবাই বুঝতে পারবেন, ব্যবহার করতে পারবেন এবং দেখলে মনে হবে, ‘এই শহরটাকেও কেউ গুরুত্ব দেয়’। আমার এমআইটির সহপাঠী স্টিফেন কেনেডি মানচিত্রটা ডিজাইন করে ফেললেন। দেখতে এত সুন্দর যে কেউ প্রথম দেখায় বিশ্বাস করতেন না, এটা ঢাকার মানচিত্র। কেউ কেউ বলতেন, ফন্টটা বাংলা না হলে মনে হতো মানচিত্রটা বার্লিনের!
মানচিত্রটি ছাপা হলো। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ মোড়ের চায়ের দোকানে থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত এটি নিয়ে আলোচনা করছিলেন তখন। স্মার্টফোন যেহেতু সহজপ্রাপ্য ছিল না, তাই কাগজের মানচিত্রটাই হয়ে উঠেছিল শহরের এক অদ্ভুত আশার প্রতীক।
কিন্তু গল্পটা এখানেই থামেনি।
আমরা তখনো ভাবতে পারিনি আরও পরে এ মানচিত্র অনেক দূরের শহরগুলোকে অনুপ্রাণিত করবে! মেক্সিকো শহর, জর্ডানের রাজধানী আম্মান, সুদানের রাজধানী খার্তুম—সব জায়গায় মানুষ নিজের শহরের বাসের জন্য এমন মানচিত্র বানাতে শুরু করলেন। কারণ একটাই, সব শহরের ভেতরে লুকিয়ে থাকে এমন এক ‘অদৃশ্য’ পরিবহনব্যবস্থা, যা চলে কন্ডাক্টর, যাত্রী আর অভ্যস্ত চোখের ওপর—কোনো অ্যাপ বা প্রযুক্তিতে নয়।
এ বছর আমাদের সেই ছোট্ট মানচিত্রই জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প উৎসব—ভেনিস বিয়েনালেতে। সেই বিশাল হলে, যেখানে আগের রাতে ধনকুবের জেফ বেজোস বিয়ের পার্টি করেছেন। আমাদের সাদামাটা বাস মানচিত্রটি দাঁড়িয়ে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বার্তা নিয়ে—যে উদ্ভাবন শুধু টাকাপয়সা দিয়ে হয় না, মানুষের সম্মিলিত চেষ্টাতেও হয়।
মানচিত্রটি যেন ফিসফিস করে বলছিল, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি হলো—যত্ন, ধৈর্য আর একসঙ্গে কাজ করার জ্ঞান।’
এটা শুধু একটা মানচিত্র নয়। এটা ঢাকার প্রতিদিনের যাত্রা, সাধারণ মানুষের শ্রম, আর একসঙ্গে ভালো কিছু করার আশার প্রতীক।
অনুবাদ: মুনতাসির মামুন
প্রকাশিত : https://www.prothomalo.com/lifestyle/rnzu9zza6s
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মুনতাসির বলেছেন: ব্যপারটা অনেক আগের। যাদের দেয়া হয়েছিল, তারা তখন বেশ সমাদর করেছিলেন। ২০১০ সালে যে কটা বাস উত্তরা - মতিঝিল, মিরপুর - মতিঝিল যেতো তাদের ম্যাপে রাখা হয়েছিল প্রথমে। পরে তো রাউট অনেক বেড়েছিল বা বেড়েছে।
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: জাস্ট গ্রেট।
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭
মুনতাসির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:২৭
রবিন_২০২০ বলেছেন: চমৎকার একটা কাজ হয়েছে। মানচিত্রটার ডিজিটাল কপি দেখলাম। যদিও পূর্ণাঙ্গ নয় তারপরও সত্যিই অসাধারণ।
সাধারণ মানুষ কি ‘বাস মানচিত্র’ প্রাত্যহিক জীবনে ব্যাবহারে অভ্যস্ত হয়েছে?