| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিয়া হায়দার রহমান এই নামটা ক’দিন ধরে হঠাৎ এদিক-সেদিক থেকে কেমন করে যেন কান খাড়া করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি যেন এক বিস্মৃত তারকার পুনরাগমনের মতো উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। পরিচিতজনদের সংগে ফেসবুকে ভিডিও টিডিও করছেন। ঢাকার নামী-দামী বইয়ের দোকানে তার সাথে "হঠাৎ দেখা" পাওয়ারও সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে। বলুন তো, এ আবার কেমন অবস্থা! কারও কারও মতো আমিও প্রথমে হতবাক, উনি কে? আবার ঠিক পরেই আরেক ধাক্কা, উনি এই হংস-কুক্কুটের দেশে কি করছেন?
ঘটনা খুলে বলি।
দশ বছর আগের কথা। ইংরেজি শেখার ধান্ধায় `ইন দা লাইট অফ হোয়াট উই নো' বইটা হাতে নিলাম। লেখকের নাম দেখে চোখ কপালে উঠল। আরে, দেশি ছেলে এমন ব্রেন ব্লোয়িং থিসিস নভেল লিখেছে? মনে হলো, এ তো আমাদের জাতীয় গর্ব। গুগল করে দেখি, লন্ডন, কেমব্রিজ, নিউ ইয়র্ক, যেন গ্লোবট্রটারের ডায়েরি। উনি বিশ্বনাগরিক, আর আমরা? গরমে ঘামে ভেজা, ডাল-ভাত খাওয়া উপনিবেশিক ফসিল। বই ধরার আগেই আমি সোল্ড, মানে, ফ্যান হয়ে গেলাম।
কিন্তু পড়া শুরু করতেই ধাক্কা। বাংলাদেশ তো উনার বইয়ে যেন একটা ফুটনোট, যেটা পড়তে গেলে চশমা লাগে, কিন্তু কেউ পড়ে না। ট্রেন চলছে অক্সফোর্ডের গার্ডেন, লন্ডনের সোয়ানকি পার্টি, ওয়াল স্ট্রিটের মিটিং আর আফগান যুদ্ধ, যেটা তো পশ্চিমের ফটোশপড ভার্সন। বাংলাদেশ? ওহ, সেটা তো শুধু একটা পাসিং রেফারেন্স, যেন ট্রেনের জানালা থেকে দেখা ধুলোয় ধূসর গ্রাম। আমি ভাবলাম, এ তো আমাদের লেভেলের বই নয়। উনার মস্তিষ্ক যেন বাংলাদেশ থেকে বহু আগেই ইমিগ্রেট করে গেছে, ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট নিয়ে। তবু মুগ্ধ হলাম। ভাবলাম, উনি বাংলাদেশকে গ্লোবাল কনটেক্সট দেবেন। যেন আমরা আগে কখনো ম্যাপে ছিলাম না।
তারপর লিট ফেস্টিভ্যালে এসে বোমা ফাটালেন। বাংলাদেশ হলো ইন্টেলেকচুয়াল ডেজার্ট। ওয়াও, কী শার্প তীর। আমরা তো ধোয়া তুলসীপাতা। সবাই মিলে উনাকে ব্যান করলাম (শোনা কথা, প্রুভ করার দরকার কী? এ দেশে গুজবই ইতিহাস)। কিন্তু আমি? আমি তো সুপারফ্যান। আহা, এমন বোল্ড কথা যে বলতে পারে, সে তো আমার সোলমেট।
টুইটারে ফলো করলাম। দেখি, উনি অ্যাকটিভ। কিন্তু টুইটগুলো যেন কোয়ান্টাম ফিজিক্সের থিসিস। ভাবলাম, স্বাভাবিক। উনি যে পশ্চিমের প্রিন্স, সেখানকার টপিক নিয়েই লিখবেন। সম্মান বাড়তে থাকল।
কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে বুঝলাম, উনার কৌতূহল কিন্তু বাংলাদেশে ফের জেগে উঠছে। ফেসবুকে আবার নতুন অ্যাকাউন্ট, ভিডিও টিডিও, বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি নিয়ে বহুবিধ বিশ্লেষণ। উনার দেশপ্রেম যেন জিনি বোতল থেকে বেরিয়ে এল।
এই লোক যিনি একসময় বাংলায় কোন টুইট করতেন না এখন কেমন যেন হরিহর আত্মা হয়ে উঠেছেন। এ যেন এক নতুন অবতার। এতদিন পরে এই নবপ্রেম কেন? নিয়ম তো সিম্পল। প্রথমে দূর থেকে গালি দাও, পরে হিরো হয়ে ফিরে এসো। সেলিব্রিটি ফর্মুলা। এতদিনের নীরবতার পর হঠাৎ করে জিয়া হায়দার রহমানের বাংলাদেশের প্রতি অতিরিক্ত প্রেম আমাকে অদ্ভুত দেজা ভু এর মতো মনে করিয়ে দিল। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সিন্ড্রম।
এ যেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত সিন্ড্রমের রিবুট। ছোটবেলায় স্যার শিখিয়েছিলেন, মধুসূদন ইংরেজ হতে চেয়েছিলেন, শেষে দেশে ফিরে কষ্টে ক্লেশে মারা গেলেন। শিক্ষা, গরিব দেশ কঠিন দেশ, শেষমেশ সব হাই ফ্লাইয়ার কেই মাটিতে নামতে হয়। জিয়া হায়দারকেও আজ তেমনই লাগছে।
বিদেশে প্রতিষ্ঠিত, গর্বিত হাই ব্রাউ ইনটেলেকচুয়াল, হঠাৎ বাংলাদেশ নিয়ে মাতামাতি। এটাকে কি ইগো ডিপ্লিশন বলব? নাকি স্পটলাইট ফেডিং সিন্ড্রম? ওয়েস্টার্ন সার্কিটে তার স্টারডম ম্লান হচ্ছে? ইংরেজিতে নতুন বই? গুগল করেও পেলাম না, যেন মিসিং ইন অ্যাকশন।
হঠাৎ বাংলার প্রতি এই প্রেম জাগা কাকতালীয়? না না, এ তো স্ট্র্যাটেজিক মুভ। এ দেশে জনপ্রিয় হওয়া সহজ। গালিবাজি করো, হাততালি পাও। বুদ্ধিজীবী বাজার তো এখন বুমিং। একটা পোস্ট দিলে হাজার লাইক। আজ বিডি নিউজ ২৪ ডট কম এ মূল পাতায় তার করা কড়া উক্তি হেড লাইন হইয়েছে। পথ ঠিক আছে। তাই কি এই ঘরগতি প্রেম?
জানি না।
আমার সন্দেহ হয়, মধুসূদনের মতোই হয়তো একসময় ঘরগতি মানুষ হলে দেশটাকে নতুনভাবে দরকার পড়ে। এই দেশে এসে জনপ্রিয় হওয়া সহজ, গালিবাজি করলে হাততালি মেলে, আবার এখন বুদ্ধিজীবী বাজারও বেশ চাঙ্গা।
তাই কি হঠাৎ এই বাংলার প্রতি আকুলতা?
জানি না।
তবে একটা জিনিস পরিষ্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্যারকে আবার খুলে পড়তে হবে। হয়তো সেখানেই এই রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে।
২|
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: উনার কি ঘটনা ?
৩|
১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৩২
শ্রাবণধারা বলেছেন: ইংরেজি শেখার জন্য "ইন দ্যা লাইট অব হোয়াট ইউ নো" বইটা হাতে নিলে তো মহা মুশকিল! কেননা বইটার ভাষাশৈলী বেশ কঠিন। তবু ভাল যে আপনি বলেননি, ইংরেজি শেখার জন্য জেমস জয়েসের "ইউলিসিস" হাতে নিয়েছিলেন! ![]()
আসলে জিয়া হায়দার রহমানের এই বইটা খুবই ভাল। বাংলাদেশের এক গ্রাম থেকে উঠে আসা এক ছেলের গল্প - যার বাবা অক্সফোর্ড পড়ুয়া ছেলের মুসলিম বন্ধুকে আসসালামু আলাইকুম ছাড়া আর কি কথা বলতে হবে সেটা জানেন না বা বলতে পারেন না। সেই ছেলের দেখা জগৎ, আফগানিস্তান যুদ্ধের মত জগতের ভীষণ বৈপরিত্য, তার নিজের জীবন ও ক্যারিয়ারকে বোঝার প্রয়াস নিয়ে এটা একটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস। তার এই জীবন অন্বেষায় সে প্রখ্যাত গণিতবিদ, প্রিন্সটনে আইনস্টাইনের বন্ধু কুর্ট গ্যোডেলের সমীকরণ দিয়ে নিজের জীবন অর্থ খুঁজতে চায়। এই মোটের উপর বইটির উপজীব্য। মনে আছে, জাফর ছোটবেলায় দেশে বেড়াতে গিয়ে একবার ট্রেনে সিলেটে যাওয়ার সময় তার সহযাত্রী এক সমবয়সী ছেলে তাকে একটা আম খেতে দিয়েছিল, আর জাফর তাকে বিনিময়ে একটা পোলো চকলেট খেতে দিয়েছিল।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সঙ্গে জিয়া হায়দার রহমানের কোনো তুলনাই চলে না। ইংরেজি কবি ও কাব্যের প্রতি অনুরাগে মাইকেল বেশভূষায় যতই ইউরোপীয় হয়ে উঠুন না কেন, তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালি কবি। অনন্য প্রতিভার অধিকারী, যিনি বাংলা কাব্যের নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছেন। মেঘনাদ বধ এর মাইকেল সীমাহীন প্রতিভাবান অনন্য অসাধারণ এক ট্রাজিক কবি। নাট্যকার মাইকেলের মেজাজ আবার ভিন্ন। তিনি সমাজের ক্রিটিক। মাইকেল ছিলেন বাঙালি-বিদেশি। অন্যদিকে জিয়া হায়দার রহমান বিদেশি বাংলাদেশি। তিনি বিশেষ বাংলা বলেন বলে মনে হয় না। তিনি আত্মঅন্বেষী অভিবাসী। একজন ওভারঅ্যাচিভার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি, যিনি ঘটনাক্রমে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তার সাথে ঝুম্পা লাহিড়ি বা ভিএস ন্যায়পলের তুলনা চলতে পারে।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৫
মুনতাসির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। যারা বইটা পড়েননি বা শেষ করতে পারেননি, তারা হয়তো আপনার থেকে কিছুটা উপকৃত হবে।
ব্যপার হলো আমিতো জিয়া সাহেবকে দত্ত সাহেবের সাথে তুলনা করিনি। আমার লেখায় কি সে ভাবটা প্রকাশ পেয়েছে? পেয়ে থাকলে খুব বাজে হয়েছে। আমাদের গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে - কোথায় শেখ সাদী, আর কোথায় বরকির লাদি। না, দুই জনের তুলনা কোন ভাবেই হয়ে না। হবার কোন সম্ভবনাও নাই। তবে উননাসিকতার কিছু মিল খুজে পাওয়া যায়। ক্যপটিভ ল্যডি ও অনেকে ধরেননি বা আমরা পড়ি নাই। সেই বাংলাতেই দ্ত্ত সাহেবকে আসতে হলো, যেমন না জিয়া সাহবে করছেন।
এটাই ![]()
৪|
১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভদ্রলোকের সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছি। অন্যদের আলোচনা দেখে বুঝলাম উনিই সেই ব্যক্তি। জানাশোনা লোক মনে হলো।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৫
সৈকত৭১ বলেছেন: কয়েকদিন ধরে উনাকে নিয়ে ভালো হাইপ দেখলাম। ব্রাত্য রাইসুর পোস্টসূত্রে জানলাম উনার অনুবাদকে প্রোগ্রামে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।
উনার বইয়ের রিভিউ দিয়েন।