নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুর্তজা হাসান খালিদ

ইসলাম একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, এটা অস্বীকার করার মতো বোকামি ধার্মিকরা করতে পারেনা

মুর্তজা হাসান খালিদ

পৃথিবীতে মানুষ কাউকে ভালোবেসে নেতৃত্ব দিতে চায় কিন্তু জোর করে কারো নেতা হওয়া মেনে নেয় না

মুর্তজা হাসান খালিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

• একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ •

১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪

আমাদের দেশে ধুমপান নিরোধের জন্যে আইন করা হলো, শাস্তির বিধান করা হলো, কিন্তু ধুমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতনতার জন্যে কোনো সামাজিক সাংস্কৃতিক ও এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম দেশব্যাপী চালাতে ব্যর্থ হলো। আর তাই শাস্তির ভয়ে ধুমপান বন্ধ তো হলোই না বরং বাড়তেই থাকলো ক্রমাগত।



- ঠিক তেমনি, মানুষের মাঝে একটি মতাদর্শের কল্যাণের দিকগুলো স্পষ্টভাবে সাবলীল ব্যাখ্যায় তুলে ধরে সচেতন না করে সেই মতাদর্শ যদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আইন করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় তবে তা বুমেরাং হতে বাধ্য।



• প্রথমে বুঝতে হবে যে বর্তমান সরকার একটি সেক্যুলার সরকার, ইসলামি শরিয়ার আকিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো আইন বা নীতিমালা বাস্তবায়ন করবেনা এটা স্পষ্ট



- সুতরাং ইসলামি শরিয়ার দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের জন্যে একটা সেক্যুলার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা কতোটা যৌক্তিক?



• নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা : একজন নারী অথবা পুরুষ যে ইসলামি শরিয়ার বিধানগুলো স্পষ্টভাবে যেনে বুঝে সেটাকে নিজের জন্যে কল্যাণকর নয় মনে করে তা প্রত্যাখ্যান করলো, এখন আইন করে তাকে ইসলামি শরিয়ার বিধান মেনে চলতে বাধ্য করা কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়। আল্লাহর রসূল মানুষের কাছে দীনের কল্যাণের দাওয়াত পৌঁছিয়ে গেছেন, যখন মানুষ একটা বুঝতে পেরেছে ইসলাম তাদের মুক্তির পথ তখন তারা ইসলামের গন্ডির মধ্যে এসেছে এবং দীনের বিধানবলীকে নিজের জীবনে পূর্ণভাবে মানার জন্যে বায়াত গ্রহণ করেছে।



পর্দা : এ ব্যাপারে কুরআনের সিস্টেম হচ্ছে পরিবার প্রধান তার সদস্যদের সচেতন করবেন, দীনের মৌলিক বিষয়গুলো পালনে অভ্যস্ত করে তুলবেন। এ ক্ষেত্রেও ইসলাম পর্দার কল্যাণের দিকটি সুন্দরভাবে তুলে ধরবে, যে এ সম্পর্কে না জেনে তা পালন করছেনা তার সামনে। এখন জেনেও যদি কেউ তা পালন করতে না চায় তবে তাকে তার মতোই থাকতে দেয়া উচিত।



- স্বাধীন চিন্তাশীল বিবেক সম্পন্ন মানুষের উপর সব ধরণের মতাদর্শ বিবেচনা করে তা নিজের জীবনের জন্যে গ্রহণ করার এখতিয়ার আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। এখন সে মুমিন-মুসলিম হবেনা, ইসলামের বাইরে অন্য আদর্শকে বেছে নেবে সেটা ব্যক্তির উপরই নির্ভরশীল, তবে ইসলাম তার কল্যাণময় সুমহান আদর্শ প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।



- সুতরাং ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজের বড় ভুল হচ্ছে দীনের তাবলীগ পূর্ণভাবে না করে, মানুষের মধ্যে দীনের খুটিনাটি বিষয় স্পষ্ট ধারণা না দিয়ে তারা মানুষের উপর দীনকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছে।



- আমাদের দেশের মানুষের মাঝে ইসলামের ব্যাপারে সংবেদনশীলতা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে ইসলাম সম্পর্কে জানার অভাব, আর এই জানার তাবলীগেরই বড় অভাব



- দেশে প্রচলিত যে তাবলীগ আছে, তাদের দাওয়াতে রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সামাজিক উন্নয়ন চিন্তাধারা, শরিয়া আইন, জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এইগুলো সম্পূর্ণভাবেই অনুপস্থিত, যার জন্যে ইসলাম যে একটি জীবন ব্যবস্থা এটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়না।



এই দেশে জুমআর নামাজের খুতবায় বা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বা বিভিন্ন ঘরোয়া তাবলীগ বা তাফসীর বৈঠকে বা বিভিন্ন ইসলামী পত্রিকায় বা অন্যান্যভাবে প্রচুর লেখালেখি হয় ইসলামের নানান বিষয়ে। মানে ইসলামে কি কি কেন করতে হবে এগুলো মোটের উপর অনেকেই জানে, আবার বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কিছুটা কম জানে, কারণ আজকাল তাদের বাব-মায়েরা সেভাবে ধর্মীয় শিক্ষাগুলো দেন না। অন্যদিকে ইসলামের বিষয়গুলো যারা বেশি করে জানে, তারা জীবনে তা প্রতিফলিত করেনা, এটাই বেশি সমস্যা যে সবাই অনেক অনেক জানে, কিন্তু মানতে চায় কম। এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো আমাদের ভোগবিলাসী মন, চারপাশে ইসলামী পরিবেশের অভাব, চর্চার অভাব, অলসতা ইত্যাদি। আরো রয়েছে ইসলামী নেতা-কর্মীরা দেশের অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুগুলোতে তেমন জোরালোভাবে অংশ নেয় না, কেবল ধর্ম নিয়েই চিন্তা করে, কথা বলে। তাই এরকম শুধু একপেশে কথা মানুষ আর শুনতে চায় না। জাতীয় সমস্যাগুলোতে বা জাতীয় ইস্যুগুলোর ব্যাপারে ইসলামিস্টদের নির্লিপ্ততা ইসলামি রাজনীতির প্রতি মানুষকে আগ্রহি করে তুলতে প্রতিবন্ধক। ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বলেন ঠিক যে, ''দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র বা খামার'' কিন্তু দুনিয়ার জীবনকে পরকালের জন্যে গুরুত্বদিয়ে সাজান না । বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দুর্নীতি দমনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ সার্বিকভাবে জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো থেকে ইসলামিস্টদের এড়িয়ে চলা স্বভাবটা জনগণকে ইসলামি জীবন ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলেনা।



- ইসলামি ভাবধারার দল বা সংঘগুলোর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে : জনগণের সাথে তাদের উঠাবসা, একাত্ম হওয়া, পারস্পরিক যোগাযোগ, সামাজিক কাজে সম্পৃকতার মানসিকতা, মিশনারী কার্যক্রমের খুব বড় ধরনের অভাব ও গ্যাপ রয়েছে। ফলে মানুষ ইসলামকে কল্যাণকর বিধান হিসেবে বুঝতে পারছে এবং জীবন ইসলামি আদর্শে সাজাতে পারছেনা বলে আমরা হতাশা প্রকাশ করছি। এ বিষয়গুলোর উত্তরণ ঘটলেই কেবল জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মানুষ ইসলামকে বেছে নেবে।



আদর্শিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশের কমিউনিস্টরাও পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন, এরা এখনো জনমানুষকে বুঝাতে পারেনি কমিউনিজমের কল্যাণকর দিক, এরাও চাইছে ভুঁইফোড় নেতা হয়ে জনতাকে নেতৃত্ব দিতে, এতে করে তারা বুঝতে পারছেনা জনগণ কি চাইছে আর তাদের আন্দোলন কোন পথে এগুচ্ছে। ফলাফল মানুষ অপশাসন আর দুর্নীতির আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে, বেরিয়ে আসার বিকল্প পথ খুঁজে পাচ্ছেনা।



সুতরাং জনগণের নেতৃত্ব নিতে চাইলে জনগণের সাথে সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে, বড় ধরণের লংমার্চ শোডাউন কোনো কাজে দেয়া শুধু সাময়িক বাহবা ছাড়া। সাধারণ মানুষ কাউকে ভালোবেসে নেতৃত্ব দিতে চায় কিন্তু জোর করে কারো নেতা হওয়া মেনে নেয় না !

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:২৩

নীল-দর্পণ বলেছেন: বিশ্লেষণ ভালই। তবে একটা ব্যাপার হল। আমরা ফজরের নাজামে উঠতে পারিনা ঘুমের জন্যে, কিন্তু যদি অফিস/পরীক্ষা/ অন্য কাজের জন্যে উঠতে হয় ঠিকই উঠবো আমরা....কোন কিছু চাপিয়ে না দিলে আমাদের হয় ন....

১৪ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

মুর্তজা হাসান খালিদ বলেছেন: এই চাপটা ছোট বেলায় ফ্যামিলি তো দেয়ই, তবে বড় হয়ে গেলে স্বাধীন হয়ে যায় নিজের মতাদর্শ বাছাইয়ের সিদ্ধান্তে। এক্ষেত্রে ছেলেবেলার পারিবারিক শিক্ষাটা কাজে লাগে।

আমরা আল্লাহর দাস হিসেবে যদি মনের মধ্যে এই ভয় সর্বক্ষণ জাগরুক রাখি যে দাসত্বের ব্যাপারে গাফলতি হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তবেই কেবল চাপটা অনুভব করবো।

ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১৬ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

সোহানী বলেছেন: বিশ্লেষণ অবশ্যই সঠিক। ধর্ম কি চাপিয়ে দেয়ার জিনিস? আমি বিস্বাস করি যত বেশী ধর্ম চাপিয়ে দিবেন তত বেশী ধর্ম সম্পর্কে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে যা আমাদের মোল্লারা করছেন। তা না করে আমাদের এই চমৎকার ধর্মকে যদি ভালোভাবে প্রচার করা যেত তাহলে তা অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য হতো্ । আর হা পরিবার ও বিশাল ফ্যাক্টর কারন শুরুটা হয় পরিবার থেকে।

১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

মুর্তজা হাসান খালিদ বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ

প্রতিটি মানব সন্তান ইসলামের ফিতরতের উপর জন্ম লাভ করে কিন্তু তাদের মাতা পিতার কারনে পরে তারা আস্তিক নাস্তিক মুর্তিপূজারী বা ইহুদী নাসারা হয়। মুসলিম বাবা মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুই আজন্ম ইসলামী ফিতরত ধারণ করে। যদিও বয় প্রাপ্তির পরে বিভিন্ন কারনে কেউ কেউ সঠিক আমল করেনা এমনকি কেউ কেউ নাস্তিক মোরতাদও হয়ে যায়। তবে তাদের সংখ্যা হতে গোনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.