নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সমালোচক,তবে তা সংশোধনরে জন্য। আবার একজন প্রশংসাকারিও বটে, তবে তোষামোদকারি নয়।জানতে চাই অনেক কিছু।হতে চাই কালের সাক্ষী।

মুসাফির নামা

সত্যানুসন্ধানী

মুসাফির নামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ পলোনিয়াম 21

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৫৮






ডাঃ পিটার একজন সাইকিয়াট্রিস্ট।দেশের প্রথম সারির কয়েকজন মনোচিকিৎসকের মধ্যে উনার যথেষ্ট খ্যাতি।অনেক জটিল মানসিক রোগীকে উনি সুস্থ করেছেন।কিন্তু ইদানিং তিনি নিজেই জটিল ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছেন।নিজের চিকিৎসক জীবনকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।রাতে প্রায় বই পুস্তুক নিয়ে ঘাটাঘাটিও করছেন,বিভিন্ন বিখ্যাত ডাক্তারের কেস স্ট্যাডিতে এরকম কোন রোগী পড়ছে কিনা? তারা কিভাবে সমাধানে পৌঁচ্ছেন? কিন্তু এরকম অনেক কেস স্ট্যাডি পেয়েছেন এবং সেগুলো মনোবিজ্ঞানের সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে গেছে।তাহলে এখানে সমস্যাটা কি?

মার্ক যোহন,৩০বছরের যুবক।আজকে ১৮ বছর যাবৎ তিনি তার চিকিৎসা করছেন অথচ ফলাফল শূন্য।এমনকি তাকে দেখলে বা তার কোন আচরণে তাকে মানসিক রোগী মনে হয়না।কিন্তু সব সময় রুমের দরজা বন্ধ করে থাকে আর বাইরে যেতে বললে বলে; আমায় পুলিশে সোপর্দ করো,আমি একজন খুনি।

মার্ক যোহন যখন খুব ছোট,তখন তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে।মার্ক যোহন কার কাছে থাকবে, এনিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়।শেষ পর্যন্ত আদালত সিদ্ধান্ত অনুযারী ১২ বছর বয়স পর্যন্ত যোহন তার মায়ের কাছেই থাকবে কিন্তু এর পরে বাবার কাছে।তবে তারা যদি সমঝোতায় পৌঁছে তবে সে যখন যার কাছে ইচ্ছা থাকতে পারবে আর ১৮ বছর পর সে পুরো স্বাধীন।তার মা কিছুতে তার একমাত্র ছেলেকে ছাড়তে রাজি ছিল না।একসময় তার বাবা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যায় যোহনকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।যোহনও তার মাকে খুবই ভালবাসত,তার ইচ্ছা ছিল মায়ের কাছেই থাকার।কিন্তু যখন সে বুঝল বাবা মায়ের কারণে সে আর সম্পদ নয় বরং সম্পত্তি হয়ে গেছে এবং আদালত এনিয়ে একটা রায়ও দিয়ে দিছে।যোহন বুঝল, তার চাওয়া না চাওয়া এখানে মূল্যহীন।

কিন্তু তার মা এনিয়ে ঐদিন তার বাবার সাথে ব্যাপক তর্কে লিপ্ত হয়,এতে তার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে যায় আর তখনই কিংকর্তব্যবিমূঢ় যোহন তার বাবাকে একটা ধাক্কা মারে,আর এতে তার বাবা মারা যায়।সে থেকে যোহনের ধারণা হয় তার আঘাতেই তার বাবা মৃত্যু হয় এবং সে থেকে যোহন মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

যদিও ফরেনসিক রিপোর্ট এবং সকল তদন্তেই প্রমাণ হয় অতিরিক্ত মদ্যপান এবং উত্তেজতি হওয়ার ফলে তার ব্রেইনের স্ট্রোক হয় আর এতে তার মৃত্যু হয়।কোন রিপোর্টে কোন আঘাতের চিহৃ আসেনি।আদালত শুধুমাত্র মদ্যপ ব্যক্তির সাথে অসংযত ব্যবহারের জন্য তার মাকে মৃদু ভৎসনা করেন।

ডাঃ পিটার গত ১৮ বছরে যোহনের সাথে অনেকবার কাউন্সিলিং করেছেন এবং সে তাতে সায়ও দিয়েছেন, সুস্থভাবে কথা বলেছেন।রাতে আবার তার মা ফোন দিয়ে বলল,যোহনতো আবার পাগলামী শুরু করেছে।

বিরক্ত পিটার একবার তার মাকে প্রস্তাবই দিয়ে বসলেন,ওকে পুলিশে সোর্পদ করি।আর আদালত যখন ওকে বেকুসুর খালাস দিবে,তখন ওর ভুল ভেঙ্গে যাবে।আর এতে তো যোহনের মা রেগে মেগে আগুন।বললেন,ডাক্তার আপনি না পারলে ছেড়েদেন,কিন্তু এ ধরনের কথা বলবেন না।পিটার কিছুটা বিব্রত হলেন কিস্তু রোগী ছাড়ারতো প্রশ্নই আসে না,এতে উনার এত দিনের সকল সুনাম একরোগীতে নষ্ট হয়ে যাবে।

এই ১৮ বছরে কত হাজার হাজার রোগী উনি সুস্থ করেছেন আর এক যোহনই তার রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে।পিটার ব্যর্থ এটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।নিজেকে এখন মাঝে মাঝে মানসিক রোগী মনে হয়।নিজের সাথে নিজে অনেক কাউন্সেলিং করেছেন।তিনি হারতে পারেন না।তাই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।যোহনের উপর এন্টি কাউন্সেলিং প্রয়োগ করবেন, যোহনকে তিনি দুনিয়ার থেকে সরিয়ে দিবেন।

যোহনের সামনে পিটার বসে আছেন।পিটার যোহন কে বললেন,আজ আটার বছর যাবৎ আমি তোমার চিকিৎসা করছি।ডাঃ হিসাবে রোগীদের অনেক গোপন তথ্য আমাকে গোপন করতে হয়।অনেক সিরিয়াল খুনের আসামী,কয়েক ডজন ধর্ষনকারী রোগীকে আমি চিকিৎসা করেছি,তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে এবং অনেক কল্যাণমূলক কাজ করছে।তোমার ক্ষেত্রে তোমার মা সঠিক কথা বলেননি,তাই তোমার চিকিৎসা সঠিকভাবে হয়নি।তাই আমি আমার শেষ চিকিৎসা তোমার উপর প্রয়োগ করব।আশা করি, তুমিও শান্তি পাবে আমিও শান্তি পাব।

ডাক্তার তার ব্যাগ থেকে ঔষুধটা বের করে সিরিঞ্জের ভিতরে টুকাতে যাবেন,তখনই যোহন ডাক্তারের হাত ধরে ফেলেন।যোহন বললেন,ডাক্তার পৃথিবীতে অন্ধ কোন জিনিসই ভালো নয়; অন্ধ ভালবাসা,অন্ধ মোহ,অন্ধ সম্মান।ডাক্তার কিছুটা বিচুলিত হয়ে উঠলেন।বললেন,যোহন আমাকে আমার কাজ করতে দেয়।আমাকে আপনি যে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন,তা আমার পাপ্য নয়।তাও আমি সে শাস্তি ভোগ করছি তা ভালবাসার ঋণ পরিশোধে।ডাক্তার কিছুটা ঘর্মাক্ত হয়ে উঠলেন।বললেন,তুমি এসব কি বলছ? হ্যাঁ, আমার শাস্তির আর একসপ্তাহ বাকী।

ডাক্তার একেবারে চুপ মেরে গেলেন।যোহন বলল,আপনি আমার ঔষধের সাথে যে ক্যামিকেলটা মিশাতে যাচ্ছেন তা পলোনিয়াম 21।আর এতে আমি সামান্য উত্তেজিত হলেই স্ট্রোক করে মারা পড়ব।আর এই পলোনিয়াম 21 যে কোন ক্যামিক্যালের সাথে মিশালে তা এমনভাবে মিশে যায় যে,উচ্চমাত্রার ফরেনসিক রিপোর্টেও তা ধরা পড়ে না।তবে বেশ কিছুদিন পর তা আবার আলাদা হতে থাকে।তবে তার আগেই সব খতম,সকল তদন্তও কমপ্লিট।পিটার স্তব্দ হয়ে যোহনের দিকে তাকিয়ে আছেন।তার মনে হচ্ছিল,সেই রোগী আর যোহন তার ডাক্তার।

যোহন বলল,রোগীর সকল তথ্যই গোপন রাখা আপনাদের পেশার কমিটমেন্ট।পিটার মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ এবং আমি সে কমিটমেন্ট রক্ষার ১ম শ্রেণির একজন।তাহলে সত্যটা শুনন,আমার বাবাকে খুন করেছে আমার মা।যেদিন বাবা আসেন সেদিন মা বাবার জন্য অনেক মদের আয়োজন করে,আর তার সাথে গোপনে পোলোনিয়াম 21 মিশ্রিত করে দেয়।আমার মা একজন কেমিষ্ট,তিনি খুব ভাল করে এর সম্পর্কে জানতেন।পরে বাসার পিছনে একটি ছোট শিশি আমার নজরে আসে যাতে লেখা পলোনিয়াম 21।ব্যাপক কৌতুহল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এর সম্পর্কে জানি।এই ক্যামিকেলের এই ধরণের আচরণের কারণে এটি নিয়ে বিজ্ঞানের জগত নিরব,কারণ অনেকে এটার মিস ইউজ করতে পারেন এবং পলোনিয়ামের এই আইসোটোপটা সংগ্রহ করা বলা যায় দুরহ।বিজ্ঞান ও গভেষণা জগতের রেজিষ্টার্ড লোকজনই শুধু এটা সংগ্রহ করতে পারে।মা আমাকে পচন্ড ভালবাসে কিন্তু আমি তার এই ভালোবাসার অন্ধ আক্রোশ মেনে নিতে পারিনি।আমাদের দেশে যেহেতু মৃত্যুদন্ড নেই তাই বিচারের তার যাবৎজীবন অর্থাৎ ১৮ বছরের জেল হত।আর তার ভালবাসার সে ঋণ আমি পরিশোধ করছি নিজেকে বন্দি করে। ১৮বছরের আর একসপ্তাহ বাকী।

এতক্ষণে পিটারের চোখে জল চলে আসল।নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হচ্ছিল তার।তার অক্ষমতা স্বীকার করে নিয়ে বিদায় নিল।

একসপ্তাহ পরে ডাঃ পিটারের কাছে আবার যোহনের মায়ের ফোন আসে।তার মা জানায়,যোহন গত এক সপ্তাহ পুরো ভাল ছিল কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ,এখন সে তার মৃত্যুদন্ড দাবী করছে। ডাঃ বিনয়ের সহিত জানায়,আপনার ছেলের কেসটা আমি ছেড়ে দিয়েছি।





ছবিসূত্রঃনেট

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৪

তাসলিমা কাজি বলেছেন: বাহ। বেশ ভালো একটা গল্প পড়ার সুযোগ করে দিলেন। ধন্যবান

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ,ভালো থাকবেন।

২| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:২৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুবই সময় উপযোগী একটি বিষয়এর উপর লিখা গল্পটি খুবই ভাল লাগল । Improper medication এই মহুর্তে একটি বিশাল সমস্যার জম্ম দিচ্ছে । গল্পচ্ছলে এ সমস্যাটিকে পাঠক সমাজে উপস্থাপন একটি অতি প্রয়াসসাধ্য কাজ । এই বিশেষ কৃতির জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা থাকল ।

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

মুসাফির নামা বলেছেন: ধারণা করা হয়,ইয়াসিন আরাফাতকে পলোনিয়াম দিয়ে হত্যা করা হয়।তবে তার আইসোটপ ছিল-পলোনিয়াম২১০। আমারটি কাল্পনিক।

৩| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:২৯

সুমন কর বলেছেন: গোছানো লেখা এবং বর্ণনাও ভালো লাগল।

ভালো লাগা রইলো।

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

মুসাফির নামা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ,সুমন ভাই।

৪| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১:০৩

মিজানুর রহমান মিরান বলেছেন: সুন্দর গল্প।

১৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭

মুসাফির নামা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ , ভাই।

৫| ১৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩০

জেন রসি বলেছেন: আরেকটু জমাতে পারতেন।

প্লটটা ভালো লেগেছে।

১৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮

মুসাফির নামা বলেছেন: আমারও মনে হয়েছে,তবে সময় পাচ্ছি কম। ধন্যবাদ,জন রেসি ভাই।

৬| ১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

স্বশিক্ষিত উন্মাদ বলেছেন: শেষ প্যারাটা বুঝি নাই :/

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪১

মুসাফির নামা বলেছেন: গল্পটা রহস্য ধাচের।রহস্য গল্পের সব ব্যাখ্যা হয় না।আসলে সে প্রকৃতই একজন মানসিক রোগী।

৭| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২৯

কালনী নদী বলেছেন: অসাধারণ ছোটগল্প হয়েছে ভাইয়া +++

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪২

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ,ভালো থাকবেন।

৮| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৩৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: চমৎকার হয়েছে প্লটটা।

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ,ভালো থাকবেন।

৯| ১৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:২৮

মহেড়া বলেছেন: আপনি খুব ভালো লিখেছেন। অহমিকার ভুল ভাঙতে হয় সত্যিই।

১৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ,ভালো থাকবেন।

১০| ১৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
বেশ লাগলো পড়ে:)

+++

১৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

মুসাফির নামা বলেছেন: শ্রদ্ধেয় ভৃগু ভাই,
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। ভাল থাকবেন।

১১| ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ইন্টারেস্টিং গল্প।

২০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মুসাফির নামা বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫০

পুলহ বলেছেন: আমারো শেষের দিকে একটু কনফিউজিং লেগেছে।
বাই দ্য ওয়ে ভাই, পলোনিয়াম এর কি আসলেই এই গুণ আছে??
ভালো থাকবেন।

২০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪

মুসাফির নামা বলেছেন: পলোনিয়াম হাড্রোজেন সায়ানাইড অপেক্ষা কয়েক হাজারগুণ খুবই বিষাক্ত। খুবই সামান্য পরিমান পুসে আপনার মৃত্যু ঘটবে।

ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর অনেক পরে ফ্রান্সের সবচেয়ে সেরা ল্যাবে তার ব্রাশ এবং কাপড়ে এর অস্তিত্ব মেলে,তবে সেটা ছিল পলোনিয়াম ২১০।আমারটা কাল্পনিক।

১৩| ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০৪

নীলপরি বলেছেন: ভালো লাগলো ।

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:২৫

মুসাফির নামা বলেছেন: এমনদিনে আপনাকেই বেশি মনে পড়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.