![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দ্রুত পড়ছিলাম। না। গোগ্রাসে গিলছিলাম। ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে এ কাজে আমার সঙ্গী ছিল হজরত আলী। মাসুদ রানা ধার দিয়েছে কামাল। ওর গল্পের বইয়ের বিশাল কয়েকটা ট্রাংক ছিল। লেখাপড়ায় ভাল নয় । সিনেমা দেখায় ওস্তাদ। ওস্তাদ গল্পের বই পড়ায়। বইটা এক দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে ওকে। তাই আজ এতো তাড়াহুড়া।
হঠাৎ খেয়াল করলাম পুরো ক্লাস স্তব্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপার কি? না। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। হক স্যার চুপিসারে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। অংক ক্লাস ফাঁকি দিয়ে গল্পের বই পড়া! তাও মাসুদ রানা! ধরা খেলাম। সাথে সাথেই বই বাজেয়াপ্ত। পাঠ্য বই ঘেঁটে পাওয়া গেল আরেকটা ডিটেকটিভ বই। জাপানী ভূত। তাও বাজেয়াপ্ত । গোটা দুয়েক বেতের বাড়ি জুটল কপালে। ওটা তেমন কিছু নয়। মামুলি। -কাদের স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে বইগুলো। হুমকি দিলেন হক স্যার।
হেড মাস্টার কাদের স্যার ওগুলো সরাসরি আব্বার কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। তা হলেই ফুল ধরা খাবো। ভয় সেখানেই। আতংকে কাটল দিন কয়েক। স্কুলের দফতরি ভুবন দা'কে আসতে দেখলেই হৃদকম্পন বেড়ে যেতো। হয়ত তলব করেছে কাদের স্যার। না তেমন কিছু ঘটল না। বইগুলোর জন্য দাম চুকাতে হয়েছিল কামালকে। সাকুল্যে হয়ত তিন বা পাঁচ টাকা হবে। তখনকার হিসেবে নেহাত কম নয়। ও টাকা জোটাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল আমার আর হজরত আলীর।
বাজেয়াপ্ত করা বই হক স্যার নিজের টেবিলে ড্রয়ারে রেখেছিলেন। ক্লাস সিক্স বা সেভেনের ঘটনা এটা। সে বই উদ্ধার করেছিলাম ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষার পর। স্যার প্রথমে ফেরত দিতে চাননি। অনুনয় বিননোয় করতেই রাজি হলেন। এই হলেন হক বিএসসি স্যার। পুরো নাম মনে নেই। চাঁদপুর গণি মডেল হাই স্কুলের বিজ্ঞান ও অংকের ছাত্রপ্রিয় জ্ঞানী শিক্ষক।
চাঁদপুর বড় স্টেশনের একটা রেলওয়ে কোয়ার্টারে হয়ত সাবলেট থেকেছেন কিছু দিন। স্যারের মেয়ের বয়স তখন কয়েক মাস। ওই বাসার সাথেই ছিল আম গাছ। কাঁচা আম চুরির চেষ্টা করছি। আমিসহ কয়েকজন ছিলাম। দূর থেকে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। রেললাইনে পাথরের অভাব নেই। দলের কয়েকজনের টিপ নির্ভুল। কিন্তু আম পড়লেও তা বরাতে জুটল না।
কুড়ানোর আগেই ঝড়ের বেগে সে সব আম কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন খালাম্মা। (স্যারের স্ত্রীকে তখন ও নামে ডাকার চল ছিল।) আর দূরে আড়াল থেকে তা আমরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখলাম। খালাম্মা যে আমাদের চিনে রেখেছেন সে কথা টের পেলাম কয়েক দিন পর।
দুপুরের দিকে আমরা কয়েকজন স্যারের বাসায় হঠাৎ করে ঢুঁ মারতে যাই। সে সময় খালাম্মা ফিস ফিস করে আমাদের দেখিয়ে সে দিনের ঘটনা বলে দেন। -কিরে তোরা নাকি আম চুরি করছস? – না স্যার। আমরা আম পাড়ছি। আর খালাম্মা সব আম নিয়া গেছে। কে এ উত্তর দিয়েছিল মনে নেই। আম নেয়ার কথা স্বীকার করলেন খালাম্মা। - তোগো পাড়া আম ও নিয়া গেছে। যা তোরা আম পাইড়া নে। রায় দিলেন হক স্যার। -আর শোন আমার মেয়ে এখনো ছোট। একটু বড় হোক তখন দুপুরের দিকে বাসায় আছিস। এ ঘোষণাও দিলেন। ছুটির দুপুরে স্যারের বিশ্রাম যেন নষ্ট না করি সে কথা মজা করে বললেন তিনি।
ফিজিক্স প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় প্রথম দফায় লটারি টানতেই যে এক্সপেরিমেন্ট উঠে এলো তা দেখে মাথা ঘুরে গেল। করাতো দূরের কথা ওটার নামও এর আগে শুনিনি। হক স্যার সে সময় তেড়ে এলেন। হাত থেকে কাগজটা ছিনিয়ে নিতে নিতে বললেন- সোজা এক্সপেরিমেন্ট পাইয়া খুব মজা লাগতাসে। এতো হাসি কিসের! নে গর্দভ এই পরীক্ষা কর। কারো সাথে কোনও কথা না। কথা কবি তো দশ নম্বর মাইমাস করুম।
কাগজটা হাতে নিয়ে দেখি দোলকের ত্বরণ নির্ণয় করতে হবে। চোখ বন্ধ করে ওটা করতে পারবো। এদিকে এক্সটারনাল এক্সজামিনার বলছেন- আহা হক সাহেব। ছাত্রদের সঙ্গে একটু ভাল ব্যবহার করুন। ওরা তো পরীক্ষা দিচ্ছে। - রাখেন স্যার ওই সব কথা। এ গুলো যে কতো বড় বান্দর তা আপনে জানেন না।
ফিজিক্স প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় তিন দফা প্রশ্ন টানা যেতো সে কালে। কিন্তু তাতে প্রতিবারেই নম্বর কমতো নিশ্চিত ভাবেই। হক স্যার দারুণ ভাবে সে ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। কিন্তু ভাব দেখালেন যে শাসন করছেন।
হক স্যারকে পছন্দ করতো এমন ছাত্র সে যুগের গণি স্কুলে একজনও পাওয়া যাবে না। স্যারকে নিয়ে আরও অনেক ঘটনাই বলা যাবে। তাতে লেখার কলেবর বাড়বে। পরে হয়ত ভিন্ন ভাব বলবো সে সব।
স্যার এককালে পাকিস্তান আর্মিতে ছিলেন। সে চাকরি ছেড়ে মাস্টারিতে ঢুকেছিলেন স্রেফ সময় কাটানোর জন্য। মানে অন্য কোনও চাকরি না পাওয়া মার্ক টাইম করা। এই ছিল নিয়ত । এ কথা আমাদের বলেছেন অনেকবার। কিন্তু মাস্টারি করার সুবাদে রাস্তা ঘাটে ছাত্রদের সালাম পেতে পেতে মনে হলো এরচেয়ে বড় কোনও চাকরি নেই। এমন সালাম রোজ রোজ প্রেসিডেন্টও পায় না। তাই আর চাকরির খোঁজ করেন নি । চাকরিও বোধহয় পেয়েছিলেন। তাতেও যোগ দেন নি হক স্যার ।
স্যার নেই। আজও আমরা তাকে সালাম জানিয়ে চলেছি। তার রূহের শান্তি কামনা করে দরূদ পাঠ করি। স্যারের ছাত্ররা কেউ তাকে ভুলে যান নি। চাইলেও পারবে না ভুলতে ।
১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৬
সৈয়দ মূসা রেজা বলেছেন: প্রকাশ করুন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমারও স্কুল জীবনে এরকম বহু গল্প আছে।