নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মূসা রেজা

সৈয়দ মূসা রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রস কানেকশন…

০৫ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫১





এখন কি ফোনে ক্রস কানেকশন হয়! সে কথা ভাবতে যেয়ে সত্তর দশকের বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পী নাজমা জামানের 'দূর আলাপনি দ্বারা হলো নব পরিচয়' গানের কথা মনে এলো। ক্রস কানেকশনকে উপজীব্য করে এককালের দুর্দান্ত জনপ্রিয় গানটি রচিত হয়েছে সে কথা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা নয়। কারণ গানের পরবর্তী কলিতেই বলা হয়েছে, 'নাম ধাম ঠিকানা তার জানা হলো না! কবে আবার কথা হবে শোনা হলো না।' জিঙ্গা শিল্প গোষ্ঠীর সে গান হয়ত এ কালে অনেকেই শোনেন নি। তবে আগ্রহীরা ইউটিউবে 'DUR ALAPONI…' দিয়ে অনুসন্ধান করলেই পেয়ে যাবেন।

ক্রস কানেকশন ফলে হৃদয় বিনিময় বা হৃদয় বিদারক বা ভাঙ্গার অনেক ঘটনা পুরানো গল্প-উপন্যাসে পাওয়া যাবে। সে সব গল্প বা কাহিনী এখানে তুলে ধরতে চাই না। তবে ক্রস কানেকশন করার সহজ একটা উপায় শেখানো হয়েছিল। সেটা হলো, ফোনের ক্রাডেলে আস্তে টোকা দিলে লাইন ক্রস হয়ে যেত! সত্যি মিথ্যা যাচাই করেনি। কিন্তু ক্রাডেলে টোকা দিয়ে ফোন করতে যেয়ে অনেকবারই ক্রস কানেকশনে পড়েছি।

ক্রাডেলে টোকা দিয়ে ফোন করার কথা শুনে অবাক হতে পারেন অনেকেই। পদ্ধতি তেমন জটিল নয়, প্রতি নম্বরের জন্য এক টোকা। যেমন পাঁচের জন্য দ্রুত পাঁচটি টোকা দিতে হবে। আটের জন্য আটটি। কিন্তু '০' হলে কি করতে হবে? হ্যাঁ সে জন্য পরপর ১০ টোকা দিতে হবে। এভাবে ফোন করলে নাকি বিল উঠত না। ফোনে তালা দেয়া থাকলেও এ ভাবে ফোন করা সম্ভব হতো। অবশ্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার আগের কথা এগুলো।

ক্রস কানেকশনের পাশাপাশি আরেক যন্ত্রণা ছিল 'রং' বা 'ভুল নাম্বার' ফোন যাওয়া। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কি ধরণের যান্ত্রিক গোলযোগে এমনটি হতো তা জানিনা। তবে জানি যে ভুল নাম্বার বা ক্রস কানেকশনের ফলে সুফলও ঘটছে।

এরশাদের মার্শাল ল আসার আগেভাগের এমন এক ঘটনার কথা জানি। তৎকালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ক্রস কানেকশনে শুনতে পেলেন, পারমিট বের করে দেবে বলে কে যেন মোটা টাকা দাবি করছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজের পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে নিজ মন্ত্রণালয়ে আসার কথা বললেন। আরও জানালেন, পারমিটের জন্য কোনও টাকাপয়সা লাগবে না। ভদ্রলোক দোটানায় পড়ে গেলেন। পরে সত্যিই মন্ত্রণালয় এলেন এবং বিনাঘুষে পারমিট পেলেন। পারমিটটা চিনির না সিমেন্টের ছিল সে কথা এতদিন পরে আর মনে নেই।

দীর্ঘ দিন নারায়ণগঞ্জে কাটিয়েছি। ৮০ এবং ৯০ দশকে পণ করেছিলাম, ঢাকার কোনও লাইন যদি একবারে পাই তা হলে সে দিনই একটা প্রাইজবন্ড কিনবো! সে দিনের মতো শুভ আর কিছুই হতে পারে না! এবং প্রাইজবন্ড কিনলে প্রথম পুরষ্কার শিকা ভাগ্যে ছিঁড়বে! সত্যি কথা কি জানেন, প্রাইজবন্ড কেনার সে চান্স শত শত বা হাজারো চেষ্টা করেও পাইনি!

বরং ঢাকার এক দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম আর ফোন যাচ্ছিল মহখালির আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতালে। ফোনটি ধরছিলেন এক অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। কয়েক দফা রং নম্বর হওয়ার পর তিনি বললেন, আচ্ছা ও দূতাবাসের কারো কাছে যদি আমি আপনার হয়ে মেসেজ দিয়ে দেই তাতে কি কাজ হবে? –না তাতে কাজ হবে না। কথা বলতে আমাকেই।

এ রকম সজ্জন ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছিলাম তেহরান এসেও। কবি আল মুজাহিদীর সাক্ষাৎকার নিতে হবে। যতবারই তার বাসায় ফোন করছি ততবারই রং নম্বর হচ্ছে। প্রতিবারই ওপাশ থেকে সাড়া দিচ্ছেন এক তরুণী। সুকণ্ঠী সে তরুণী এক সময়ে বললেন, কবি আল মুজাহিদী ভাই আমাদের বাসার কাছেই থাকেন। খুব জরুরি দরকার হলে আমি তাকে মেসেজ দিয়ে আসতে পারি। কিংবা তাকে এসে এ বাসায় ফোন ধরতে বলতে পারি। - আরও কয়েকবার চেষ্টা করে দেখি। যদি না পাই তা হলে আপনার সাহায্য নেবো। তবে এরপরই কবির বাসার লাইন পাওয়া গিয়েছিল।

ঢাকায় একবার ক্রস কানেকশন থেকেই জানতে পেরেছিলাম, মার্কিন দূতাবাসের গাড়ির সঙ্গে গাড়ির টক্কর খাওয়াতে পারলে কেল্লা ফতে! মার্কিন দূতাবাস থানায় মামলা করতে দেয় না। গাড়ি টেনে নিয়ে যায় মগবাজারের জিএসও কম্পপাউন্ডে। টক্কর খাওয়া গাড়ির যাবতীয় যান্ত্রিক গোলযোগ সারিয়ে গাড়িকে রঙ করে প্রায় নতুন বানিয়ে ফেরত দেয়। আমার লেখার ওপর ভিত্তি করে কেউ মার্কিন দূতাবাসের গাড়ির সঙ্গে টক্কর খাওয়াতে যাবেন না। আর যদি যান তবে নিজ দায়িত্বে যাবেন।

জাহাজের বাংলাদেশি এক ক্যাপ্টেনকে এ কথা বলতে তিনি জানালেন, বাংলার মুখ বা অন্য কোনও নামের বাংলাদেশি জাহাজ মার্কিন নৌবহরের একটি যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে গুঁতো খেয়েছিল। দ্রুত জাহাজকে টো করে নিয়ে সব রকম মেরামত করে দেয়া হয়েছিল। খরচ দিয়েছিল নৌবহর। ক্যাপ্টেন এবং ক্রুদের উপঢৌকন দেয়ার কথা বলেছিলেন কিনা – না আমার মনে নেই।
ভাস্তে বউ চাচাকে ধমকাচ্ছেন- ক্রস কানেকশনের দৌলতে তাও শুনেছিলাম।

বউটি বলেছে- এটা কেমন কথা চাচা, নিজের মেয়ে বলেই আপনি নাজমার বাসা কেনও উঠবেন! ওর ছেলের ভর্তি পরীক্ষা আর আমার ছেলের হলো বার্ষিক পরীক্ষা। আপনাকের পেয়ে ছেলে তো পড়বে না। আর নাজমাও কিছু বলতে পারবে না। আমার ছেলেও আপনাকে পেলে বান্দর নাচ নাচবে। তা নাচুক। একবার বার্ষিক পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড না হলে অসুবিধা নাই।

চাচা বেচারা একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু 'হাড় দজ্জাল' বউ তাকে থামিয়ে দেয়। বলে- আপনার 'ভাইস্তা' এখনো বাসায় আসেনি। ও আসলে যা করার করবে। আপনাদের মতোই পাগলতো। নাজমাকে দুই ধমক দিয়ে আপনাকে বস্তা-বান্ডিলসহ নিয়ে আসবে। তখন বুঝবেন ঠ্যালা!

এ ঘটনা আমাদের প্রিয় এক খালাম্মাকে বলতেই তিনি বললেন, -বাবা দোয়া করো, এমন বউ যেন তোমাদের ভাগ্যে জোটে।#

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২

রিফাত হোসেন বলেছেন: পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তবে ওয়েব কলে মাঝে মাঝে হয়।

০৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:১৭

সৈয়দ মূসা রেজা বলেছেন: আন্তর্জাতিক কলে অনেকবার হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় কল করার সময় এমন অবস্থায় পড়েছি। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.