নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান

মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রোমান্সের তিরোধান

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

অলক বেশ ভাবুক ছেলে। এটা অলকের নিজের ধারনা। কেউ কখনো অলককে এসে বলেনি যে, 'এত কি ভাবো অলক?' তারপরও অলোকের নিজের সম্পর্কিত ধারনাটা বদলায় না। সে বিশ্বাস করে, সবার জীবনের ধরন যেমন আলাদা ঠিক তেমনি চিন্তার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট পার্থক্য আছে সবার মধ্যে। এছাড়া এই ব্যাবসা কেন্দ্রীক পৃথিবীতে কেউই আর লাভহীন কাজ করে না। যেখানে লাভ নেই সেখানেই লস। এমন ধারনাই অধিকাংশ মানুষ পোষণ করেন। এই যেমন নাস্তিকেরা বলে যে, সৃষ্টিকর্তার যদি কোন কিছুর অভাবই না থেকে থাকে তবে মানুষকে কেন তার পূজা অর্চনা করতে হবে? আবার কেউ যদি সৃষ্টি কর্তার নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে তবে তাকে তিনি শাস্তির ভয় দেখান কেন? আবার ভালো কাজ করার জন্য লোভই বা দেখান কেন? তাহলে সৃষ্টি আর সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কই যেখানে লাভ ক্ষতির হিসেব চক্রে আবর্তিত সেখানে পুরো দুনিয়াটা ব্যাবসা চক্রে ঘুরবে না তা কি করে সম্ভব? এরকম কতকিছুই অলকের মনে উকিঝুকি দেয়। অলক আস্তিক। তার মানে এই না, সে গোড়া। সে তার আস্তিক্যবাদের পেছনে নাস্তিকদের সকল প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তরও খুঁজে নিয়েছে।
অলক নিজেকে নিয়ে কত কিছুই ভাবে। এসব ভাবনায় কখনো নিজেকে নিয়ে গর্ববোধও করে। এই যেমন এতসব চিন্তা অলক করছে এটা কি কম কিছু? পারিবারিক সীমাবদ্ধতা হোক, আর অন্য যে কারনেই হোক অলকের সায়েন্স নিয়ে পড়া হয়নি। গ্রামের ছেলে সে। হত-দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা আর্টস নিয়ে পড়বে এটাইতো স্বাভাবিক। বড় কথা অলকের যে পড়াশুনা করা হয়েছে এটাইতো বড় কথা। কত কাছের মানুষেরা অলকের বাবা মাকে কত পরামর্শ দিলো। ছেলেকে পড়াবে কি দিয়ে। ছেলে বড় হয়েছে এখন কাজে লাগিয়ে দাও। তোমরাও দুটো ভালো মন্দ খেতে পাবে, ছেলেও কাজ শিখবে। অলকের বাবার একটাই কথা, আর কিছু চাইনা আমাদের, ছেলে শিক্ষিত হবে, এম, এ, পাশ করবে, এটাই হবে আমাদের বড় প্রাপ্তি। অলক এখন এম, এ, পড়ে। সে তার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আক্ষেপ যে নেই তা নয়। বরং যত দিন যাচ্ছে বাস্তবতার চিকন রশি অলকের গলায় আরো শক্ত হয়ে আটকে যাচ্ছে। অলক জানে এই ফাঁস থেকে নিস্তার নেই তার। অলকের আবার তার ধার্মিক বাবা মায়ের মতো অলৌকিকত্বে বিশ্বাস নেই। সে সবকিছুই বাস্তবতার নিরিখে ভাবতেই অভ্যস্ত। অলকের বাবা মা অবশ্য বিশ্বাস করেন যে ছেলের অলৌকিক উপায়ে কোন একটা পথ বের হবেই, যে পথের অনতিদূরে ছেলের সাবলম্বী হবার ষ্টেশন। যেখানে তার ছেলের সফলতা নামক সুপারসনিক বিমানটি দাড়িয়ে আছে। কিন্তু অলক কিছু কঠিন বাস্তবতা শিখেছে। অলক ইংরাজী সাহিত্যের ছাত্র হলেও সব বিষয়ে প্রাইমারী লেভেলের স্বশিক্ষিত। সে পুজিবাদী সমাজের অন্ধকার দিকের খবর সামান্য হলেও জানে। অলক জানে এই পুজিবাদী সমাজে নিম্নশ্রেনীর সদস্যদের জন্য কি ভবিষ্যত অপেক্ষা করে। এসব কারণে অলক একটু বেশিই হতাশ। অলক যেদিকেই তাকায়, যেমন আয়নায়ই নিজেকে দেখে, ব্যার্থতা আবিষ্কৃত হয়। পুজিবাদী আয়নার গল্প তো শুনলাম। এবার অলকের রোমান্সের আয়না কি দেখায় দেখা যাক। বাইশ বছর বয়সে প্রথম প্রেমের সাধ পায় অলক। বাইশ বছর প্রেমে পড়ার জন্য একটু দেরিই বটে, যখন প্রেমটা কিনা প্রথম প্রেম। অবশ্য এর আগেও অনেককেই ভালো লেগেছে অলকের। সেটা অবশ্য প্রেমের নদী পর্যন্ত গড়ায়নি। বাইশ বছরে এসে প্রেমের দেখা পাওয়া গেছে অনেকটা অলকের প্রেমিকার জেদের বশেই। এত শত ভাবলে কি কোন কাজ করা যায়। আর বিষয়টা যখন প্রেম, তখন তো কথাই নেই। নিষিদ্ধ জিনিসে মানুষের আকর্ষণ বেশি এটা সর্বজন প্রসিদ্ধ । তাহলে প্রেমের ক্ষেত্রে কেন হবেনা? প্রেমতো এমনিই দুর্বিনীত। হলোও তাই। প্রেমের আয়নাও ভয়ংকর রকম হতাশ করলো অলোককে। অন্য ধর্মের ছিল অলকের প্রেমিকা কাম সাবেক ছাত্রি। এবার সেই সাবেক ছাত্রির জেদের কথা বলা যাক। অতিব লাজুক অলক সর্বদা বই খাতা আর টেবিলের দিকে তাকিয়ে পড়াতো তার শাহা গোষ্ঠীর ছাত্রীটিকে। সুধু লাজুক এই জন্য যে তা নয়। পড়ানোর আগে যেদিন আন্টির কাছে ইন্টারভিউ দিয়েছিল অলক, সেদিন অতিব খোলা মনের আন্টি বলেছিলেন যে তার অতি সুন্দরি মেয়েটির কয়েকজন টিচার বদল করা হয়েছে, তাদের চরিত্রের দুর্বলদিক প্রকাশ হয়ে পড়বার জন্য। আন্টি অলককে নিজের ছেলে মনে করে তার মেয়েকে পড়ানোর গুরু দায়িত্বটি দিলেন। অলকও সজ্জনের মতো দায়িত্বটি কাধে তুলে নিয়েছিলো। তাই সে নিচের দিকে তাকিয়ে পড়াতে বেশি নিরাপদ বোধ করতো। কিন্তু ছাত্রির মনে হলো স্যার তার রূপকে থোরাই কেয়ার করেন। বিষয়টি তো অপমানকর। যেখানে ইতিপূর্বে তার সব কজন মাস্টার মশায় তার রূপের ফাঁদে পড়ে কর্মচ্যুত হয়েছেন। তাই মেয়েটি (পুজা) বলেই বসলো, স্যার আপনি কখনো আমার দিকে তাকান না কেন? অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বললে আমার আনইজি লাগে। তাছাড়া মনে হয় কোন কারনে আপনি আমার ওপর নাখোশ। এরকম আরও অনেক যুক্তি তর্কের পরে অলক সময়ের তালে তালে পুজার চোখে তাকিয়েই কথা বলা শিখে গেলো। একপর্যায়ে মেয়েটির আগ্রহ আর অলকের দুর্বল বাঁধ, কথোপকথন কে সম্পর্কের মাত্রায় নিয়ে যায়। ধর্মশিক্ষা বিষয়টি পড়াতে গিয়ে পুজার অলকের ধর্মের প্রতি আগ্রহের বিষয়টা পুজা প্রকাশ করলো। পূজা মুসলিম হতে চায়। অন্য একদিন অতি গোপনিয় একটা বিষয় পুজা অলককে চিঠি মারফত জানালো। অলক জানতে পারলো যে পুজা তার সৎ মায়ের ঘরে অত্যাচারিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। অলক অবশ্য আন্টির চমৎকার অভিনয় দেখে কখনো এমনটা কল্পনাও করতে পারেনি। যাই হোক নিয়মিত পুজার উপর বিভিন্ন অবিচারের গল্প শুনতে শুনতে পুজার ওপর মায়া পড়ে গেল অলকের। একসময় ফোনেও কথা বলা শুরু। মেয়েটা আসলে অলককে আশ্রয় করে এই অবস্থার অবসান চাইছিলো। অন্যদিকে, অলকের মত সুদর্শন, ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন ছেলেকে পাওয়াটা তো বোনাস। একপর্যায়ে জেনে যায় পুজার পরিবার। অলককে হতে হয় এলাকা ছাড়া। এই ছিল অলকের প্রেমের ইতিহাস। এখন অলক তাকে ঘিরে অতীতের আরও কিছু একপাক্ষিক প্রেমের গল্প জানতে পেরেছে। অলক যখন এলাকা ছাড়া তখনই তার একজন ছাত্রী খুদে বার্তা মারফত প্রেম নিবেদন করেছিলো। ঐ ছাত্রীই পরবর্তীকালে তার পাবলিক পরীক্ষা খারাপ হবার জন্য অলকের প্রতি তার প্রেমকে দায়ি করেছে। অলক তার আর একজন স্বল্পকালীন প্রেমিকার কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, অলকের চেয়ে একবছরের বড় এক সুন্দরী কলিগও খুব পছন্দ করতো অলককে। অথচ অলক তাকে যথেষ্ট সন্মানের সঙ্গে ট্রিট করতো। অলককে এরকম আরও দুএকজন পছন্দ করেছে, গিফট দিয়ে অফারও করেছে। কিন্তু অলক তখন তার নিজের শ্রেনী বিচার করতে ব্যার্থ হয়েছিল। যার দরুণ কাউকে আমলে নেয়নি। এখন অলক তার শ্রেনী অবস্থানের বাস্তবতা সম্পর্কে দারুন ওয়াকেফহাল। কিন্তু সময় খুবই কঠিন। অলকের ঐ ছাত্রীটি যেমন অলককে তার পাবলিক পরীক্ষা খারাপ হবার জন্য দায়ি করেছিলো ঠিক এভাবেই পরবর্তীতে অনেকেই অলকের শত্রু বনে যায়। অথচ ঐ বিষয়গুলো ঘটেছে অলকের অগোচরে। অলক এলাকা ছাড়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই যে স্কুলটিতে পড়াতো সেখানে আর যেতে পারলো না। কিন্তু অলকের প্রস্থানের পর ঐ ব্যাক্তিমালিকানাধীন স্কুলটি নিয়মিতভাবে ছাত্র-ছাত্রী হারাতে লাগলো। যার সম্পূর্ণ দায় বর্তালো অলকের ওপর। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অলকের দারুণ সম্পর্কটি অলকের অজান্তেই শত্রুতায় পর্যবসিত হলো। আগেই বলেছি অলকের ব্যাক্তিত্ব ছিলো দারুণ, বিশেষ করে সবসময় সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতো অলক। সহজেই মন জয় করতো সকলের। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এতবেশি সংখ্যক যে প্রেমে পরবে তা ছিলো কল্পনাতীত। অলক কোনো ক্লাস থেকে একটু দেরি করে বের হলে অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীরা রীতিমতো অভিমান করতো। অথচ যখন অলকের প্রেমের ব্যাপারটি সবাই অল্পস্বল্প আচ করতে পারলো তখন সবাই শত্রু বনে গেল। এরপর থেকে অলকের শুভাকাঙ্ক্ষীরা পথে দেখা হলে নূন্যতম ভদ্রতাও দেখায় না। মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। অলক ভাবে, মানুষের সম্পর্কটা তাহলে এসপার ওসপার সূত্রে আবর্তিত। এখন যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে অলক খুব সতর্ক । এখনও অলক আবেগ তাড়িত হয় কন্তু ভেসে যায় না। কঠিন বাস্তবতা আর দারিদ্রের কষাঘাতে অনেকটাই পাষান পুরুষ। আর পা ফসকাতে চায় না সে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: কোথায় শুরু হয়ে কোথায় শেষ হলো বুঝলাম না।:(

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০৮

মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেছেন: কাচা হাত। চেষ্টা করছি।মূল্যবান সময় ব্যায় করানোর জন্য দুখিঃত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.