নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

We need to be a Perfect Muslim.

মুসলিম উম্মাহ

একজন মুসলিম

মুসলিম উম্মাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন কারণে কারাগারে অনশনে মাহমুদুর রহমান

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৯

স্টাফ রিপোর্টার: আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তথ্য-প্রযুক্তি আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই গতকাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম। এদিকে মায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও ১৯ জন সংবাদকর্মী গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেছেন মাহমুদুর রহমান। গত তিন দিন কোন খাবার গ্রহণ করেননি তিনি। সূত্র মতে, ডিবি পুলিশের হাজতখানায় অনশন শুরু করলে জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েন। পরে অন্য দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ না করে তড়িঘড়ি আদালতে হাজির করা হয় মাহমুদুর রহমানকে। পরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম শহীদুল ইসলাম মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তাকে প্রথম শ্রেণীর বন্দির মর্যাদা এবং চিকিৎসা বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে গিয়েও তিনি অনশন অব্যাহত রেখেছেন। এর আগে দুপুরে মাহমুদুর রহমানকে আদালতে হাজির করার পর শুনানিকালে আইনজীবীরা নানা অভিযোগ করেন। এ সময় শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সানাউল্লাহ, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, ইমরান হোসেন, আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, হোসেন আলী খান হাসান, ওমর ফারুক, তাহেরুল ইসলাম, শামসুজ্জামান, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, আবদুর রহিম মোল্লা ও মহিউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তিন কারণে তিন দিন ধরে অনশন করছেন মাহমুদুর রহমান। তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও সংবাদকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তিনি দানা-পানি মুখে তুলছেন না। আইনজীবীরা আদালতে মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে বলেন, কলম ছিল মাহমুদুর রহমানের একমাত্র অস্ত্র। সরকার সেই কলম (অস্ত্র) কেড়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানা কায়দায় পীড়ন করা হয়েছে। এতে মাহমুদুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আইনজীবীরা আরও বলেন, জালিম সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামের বিধান হচ্ছে প্রতিবাদ করা। সরকার তার কলম কেড়ে নেয়ায় ও নির্যাতন করার কারণে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। তাই তিনি আমরণ অনশনের মাধ্যমে সরকারের অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। একজন আইনজীবী আদালতকে বলেন, একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর- পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে এমন অবস্থা হতো না। কারণ, বিচারকরা উপরের চাপে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এ কথা বলার পরপরই আদালত তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি কথা বলছেন কেন? আপনার নাম ওকালতনামায় নেই। আপনি কথা বলতে পারেন না। তখনই আইনজীবীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। এজলাসের সামনে হৈচৈ ও হট্টগোল শুরু করলে আদালত দ্রুত আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন। এডভোকেট সানাউল্লাহ বলেন, যদি মাহমুদুর রহমানের মায়ের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ১৯ কর্মচারীকে মুক্তি এবং আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দেয়া না হয়, তাহলে তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন। ২০১২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ করার ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে তেজগাঁও থানায় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এরপর গত ১১ই এপ্রিল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত আমার দেশ কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৬ ও ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নেয়।

আদালতে দাঁড়াতে পারছিলেন না: দুপুর ১২টার দিকে ডিবি পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির করে। গাড়ি থেকে নামানোর সময় তার হাতে হ্যান্ডকাফ, পরনে পাঞ্জাবি ও পায়ে এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেল ছিল। এ সময় তাকে খুবই ক্লান্ত ও বিমর্ষ মনে হচ্ছিল। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বসা অবস্থায় থেকে দাঁড়াতে পারছিলেন না। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ তাকে আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে আসে।

দুই মামলায় আরও ৬ দিনের রিমান্ড: তথ্য-প্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরও দু’টি মামলায় তিনদিন করে ৬ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পশ্চিম) মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, একটি মামলায় রিমান্ড শেষ হওয়ায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। জিজ্ঞাসাবাদের নামে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ড মানেই নির্যাতন নয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তদন্তে সহায়ক তথ্য দিয়েছেন। মোটেই নির্যাতন করা হয়নি।

সিপিজে’র উদ্বেগ: দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। একই সঙ্গে দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার এ সংস্থা ১৬ই এপ্রিল তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম ‘বাংলাদেশ হ্যারাজেস স্টাফ, প্রেস অ্যাফিলিয়েটেড উইথ আমার দেশ’। এতে বলা হয়েছে, আমার দেশ পত্রিকার কর্র্মকর্তা ও এর প্রেসের ওপর হয়রানি চালাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এতে আরও বলা হয়, সামপ্রতিক সময়ে দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত দৈনিকে পরিণত হয়। তারা প্রকাশ্যে শাহবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করেছে। শাহবাগ আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধ আদালতে ইসলামী রাজনৈতিক নেতাদের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হচ্ছে। যে দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান সেখানে এই আন্দোলনকারীরা ইসলামী মৌলবাদ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দেশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা যখন উত্তেজনাকর ঠিক সে সময়ে আমার দেশ ওই সব সংবাদ প্রকাশ করেছে। সিপিজে’র প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বব ডিজ বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সংবাদপত্রের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে আরও নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা ওই পত্রিকাটিকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লেষের কারণে টার্গেটে পরিণত করছে না। এতে আরও বলা হয়, শনিবার রাতে পুলিশ আমার দেশ পত্রিকার ১৯ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রেসে পত্রিকা ছাপছিলেন। তবে রিপোর্টে গ্রেপ্তার হওয়া কর্মচারীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ ওই পত্রিকার ছাপা হওয়া ৬ হাজারেরও বেশি কপি জব্দ করেছে। তারা সংগ্রাম সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এ ঘটনায়। এতে আরও বলা হয়, দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও মালিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার সিল করে দিয়েছে এ পত্রিকার প্রেস। রোববারের রিপোর্টে জানা গেছে, মাহমুদুর রহমানের মা ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এ পত্রিকাটি শুক্রবার ও শনিবার অন্য প্রেস ব্যবহার করে সীমিত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ হারুন বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, অন্য প্রেস ব্যবহার করে পত্রিকা ছাপানোর কোন অনুমতি নেই কর্মকর্তাদের। বাংলাদেশের প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, নির্ধারিত প্রেসের বাইরে পত্রিকা ছাপাতে হলে প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের অনুমোদন নিতে হয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়, এটা পরিষ্কার নয় যে, আমার দেশ এ রকম কোন অনুমতি নিয়েছিল কিনা। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই পত্রিকার কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার ঢাকার একটি আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সরকারি এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার বলেছেন, আমার দেশ বন্ধ করা হয়নি। তারা ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে পত্রিকা অন্য প্রেসে ছাপতে পারেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.