নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাকিব মুসতানসির

সাকিব মুসতানসির

সাকিব মুসতানসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইপড়া

১০ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩৭




আপনি কেন বই পড়েন ?আধুনিক প্রজন্মের একজন পাঠক কেন বই পড়েন তা জানার জন্য এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল কয়েকজন বন্ধুকে । তাদের কাছ থেকে যে উত্তর পেয়েছি তাঁর সারমর্ম হল যে এদের অধিকাংশ বই পড়ে মনের আনন্দ লাভ করার জন্য , তত্ব ও তথ্যের অনুসন্ধান , জীবনের অর্থ খোঁজার জন্যও অনেকেই বইয়ের দারস্ত হয় । কারো কাছে বই পড়াটা নেশার মত বলে জানিয়েছে । পাঠের আনন্দ আর উপকারিতা যার সমুখে উদ্ভাসিত হয় সে বই পড়ার জন্য উদগ্রীব হবে এটাই স্বাভাবিক ।পাঠক পাঠ করে জানার জন্য। মনের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য বই একমাত্র মাধ্যম ।মানুষের জীবন, পরিবেশ পরিস্থিতি উপলব্ধি করার জন্য। বই এমন একটা মাধ্যম যার ফলে একজন পাঠক বইকে অবলম্বন করে পৃথিবীর প্রান্তান্তরে হারিয়ে যেতে পারে ।
একটি বই একজন লেখকের চিন্তাধারার ফসল। বইয়ের মধ্যে লিপিবদ্ধ থাকে সভ্যতার ইতিহাস। বই পড়ার অভ্যাস মানুষকে আলোর পথে টেনে নিয়ে যায়। পাঠ অভ্যাস চিন্তা জগতকে প্রসারিত করে। জ্ঞানের মহা সমুদ্রের সন্ধান পেতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই।বই একজন নিঃসঙ্গ ব্যাক্তির জীবনে সবচে ভালো সঙ্গী। বইয়ের দ্বারা মানুষ এক জায়গা বসে অনেক জায়গা ঘুরতে পারে।জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে বইয়ের কোন বিকল্প নেই।জীবনে বইয়ের চে ভালো সঙ্গী আর হয় না । ভাল বই যেমন আপনাকে আলোর সন্ধান দেয় তেমনি মন্দ বই হতে পারে আপনার ধ্বংসের কারন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমের দিকে দৃষ্টি ফিরালে আমরা দেখতে পাই পাঠের গুরত্ব। কুরআনের প্রথম অবতীর্ন বাণী ছিল, ‘ইকরা’ অর্থ-পড়। পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রথমে। আর পড়ার মাধ্যম হচ্ছে বই। শুধুমাত্র পাঠ্যসূচির গুটিকয়েক বই পড়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনে জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন হয় না। এ জন্য প্রয়োজন বহুমুখী প্রতিভা অর্জন ও বিচিত্র জ্ঞানের নানা ধরনের বই পাঠ। জ্ঞানার্জনের নির্দিষ্ট বই এবং নির্ধারিত কোন সময়সীমা নেই। বিখ্যাত ফার্সি কবি শেখ সাদী (রাহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সমস্ত জীবন জ্ঞানের ওপর লেখা-পড়া করে বুঝেছি যে, জ্ঞানের বাতাস গায়ে লেগেছে মাত্র। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারি নাই’।জ্ঞানরাজ্যের তৃপ্তি মেটানোর জন্য পাঠই একমাত্র বিকল্প ।বিশিষ্ট ভাষাবিদ বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বই পড়ার প্রতি এত বেশি আসক্ত ছিলেন যে, লাইব্রেরি কক্ষে কর্মচারীরা তার নির্বিষ্ট পাঠক মনের কারনে অনেক সময় উপস্থিতি পর্যন্ত টের পেত না। ফলে বহুবার তিনি লাইব্রেরি কক্ষে তালাবন্দি হয়েছেন। বই পাঠের প্রতি গুরুত্ব ও আসক্তির কারণেই তিনি হয়ে ওঠেন অগাধ পান্ডিত্য ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী। আমরা যত বড় বড় জ্ঞানী, সাহিত্যিক, কলামিস্টদের নাম শুনি, তাদের জীবনে পড়লে পাওয়া যায় বই পাঠ এবং সংগ্রহের প্রতি ছিল তাদের ভীষণ আগ্রহ।







প্রমথ চৌধুরী তাঁর 'বই পড়া' প্রবন্ধে নানান যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন। একজন শিক্ষার্থীকে মননশীল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই তাকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই, নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। জানার পরিধি বাড়াতে হবে। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে অনলাইন প্রযুক্তির সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্ঞানের ভান্ডারকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করতে হবে।কিন্তু প্রযুক্তির আগমনে বই পড়ার অভ্যাসটা দিন দিন কমে যাচ্ছে।প্রযুক্তির কল্যাণে ই-রিডার সহ অন্যান্য মাধ্যমে বই এখন হাতের দেরগোড়ায়। এতো এতো আয়োজন করার পরও পাঠক খুঁজে পাওয়া রীতিমত দুষ্কর হয়ে পরেছে! ছেলে মেয়েদের পাঠ্য পুস্তকের বাইরে অন্যান্য বই হাতে নিতেও অনীহা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি হতে বই নিয়ে পড়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আশ্চর্য্যজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে যেন লাইব্রেরিতে সারি সারি বই শুধু মাত্র শোভা বর্ধনের জন্যে। সকল শিক্ষার্থী সাজসন্স ভিত্তিক পড়াশুনা করে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড ধরে রাখায় ব্যাস্ত।বাবা মাও চান সন্তান পরীক্ষায় ভাল ফল করে উচ্চ বেতনের চাকুরী করুক। সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। এতেই মা বাবা খুশি। কিন্তু আদর্শ মানুষ হতে হলে তাকে সিলেবাসে নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের বাহিরে জীবন ও জগত সম্পর্কে জানতে হবে। যার একমাত্র পথ হচ্ছে বই পড়া। বিল গেটস বলেছেন " আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। আমার নানা ধরণের স্বপ্নের পেছনে একটা বড় কারণ ছিল বই পড়া। বৈচিত্র্যময় বই পড়ার কারণেই আমি অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতাম।" ।
তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির মাধ্যমে যতটানা বই পাঠের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে তাঁর ডের বেশী আগ্রহী ইন্টানেটের বহুমাত্রিক ব্যাবহারের দিকে । আমাদের সমাজে অনেক শিক্ষিতই এখন বই কেনেন না আবার সংগ্রহে থাকার পরও পড়েন না। আলসেমি করে অবসর সময় কাটান, টিভি, ভিসিআর, ডিশ এন্টিনা এবং ইন্টারনেটের মোহে আসক্ত হয়ে এদিকে সময় ব্যয় করেন।।ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপলোড , সেলফি লাইক কমেন্ট মুভি মিউজিকের পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিচ্ছে ।শুধুমাত্র সাময়িক আনন্দদায়ক এই সকল মাধ্যম কিছুক্ষণের জন্য আনন্দদায়ক হলেও তরুণদের মূল্যবান সময়ের বড় একটা অংশ নষ্ট করে দিচ্ছে । প্রজন্মের কাছে নেশার মত আটকে থাকছে বিভিন্ন গেমস । যার ফলে তরুন্যের স্বাভাবিক বিকাশ প্রকৃয়া মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফলে এরা সহজেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে মাদকদ্রব্য সহ অন্যান্য নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে ।বই পড়ার অভ্যাস হ্রাস পাওয়ার কারণেই আজকের ছেলেমেয়েরা নানা অপরাধ জগতের জড়িয়ে যাচ্ছে। আজকের তরুণ নেশাগ্রস্ত। একাডেমিক পড়াশোনাও ঠিকমত করছে না। মদ-ইয়াবা, হিরোইন, আফিম, গাঁজার প্রতি আসক্ত হয়ে অনৈতিক হয়ে উঠছে।সন্ত্রাসী কার্যকলাপে তরুণ সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ হচ্ছে যা খুবই চিন্তার কারন ।সামাজিক অবক্ষয় , শ্রদ্ধা-সম্মান বোধ ,স্নেহ ভালবাসা হারিয়ে অনেক তরুণ তাদের জীবন ধারণের জন্য বেছে নিচ্ছে সহিংস ও বিকৃত নানান পথ। বই আমাদেরকে পড়তে হবে। ভাল বইকে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো নিত্যসাথী করতে হবে। অশ্লীল বই বর্জন করতে হবে।
প্রযুক্তিকে সঠিক পথে কাজ লাগানোটাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। অনলাইনে পাঠ অভ্যাস করা যেতে পারে।দেশি বিদেশী লক্ষ লক্ষ বই ,জার্নাল এর ই-সংস্করণ সহজেই পাওয়া যায়।এরজন্য প্রয়োজন শুধু মাত্র সদিচ্ছার। এখন তরুন প্রজন্মের উচিত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাঠ অভ্যাসটাকে ধরে রাখা। যার বই পড়ার অভ্যাস যত বেশি তার জানার পরিধিও তত বেশি। তাই বই পড়ার অভ্যাসটা চালু রাখা প্রয়োজন। প্রতিটি মা বাবারই উচিত তার সন্তানদেরকে বয়স অনুযায়ী বই পড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা। এতে তাদের জ্ঞানের জগত প্রসারিত হবে। জীবনে বড় হওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।শুদ্ধ ও সুস্থ মননের জন্য বই হয়ে উঠোক আমাদের সার্বক্ষনিক সঙ্গী ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.