নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংগাল মানব

বাংগাল মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুজবের রাজ্যে ফেসবুক!!

১০ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯

বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটির একটি বড় অংশেরই শধু একটি একাউন্ট আছে যারা মুলতঃ প্রাইমারী ইউজারের পর্যায়ে পড়ে। তারা কেবল ফেসবুকে ইংরেজি হরফে বাংলা ভাষায় সুন্দর, অনেক সুন্দর, ভালো আর ইংরেজিতে নাইস, ভেরি গুড, গুড কমেণ্ট করতে জানে এবং লাইক ও শেয়ার দিতে জানে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ইংরেজীতে লেখা বাংলা ভাষা উচ্ছারন করতে গলদঘর্ম হতে হয়। শব্দের ব্যাবহারিক অর্থ উদ্ধারে হিমশিম খেতে হয়। যার ফলে কখনো কখনো উচ্চারণ গত পার্থক্যের কারনে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয়ে বাক্যের আসত্তি লোপ পায়।

কোন কিছু লেখার চাইতে শেয়ার করা আরও বেশি সহজ বোধকরি। মুখরোচক বা নিজের চিন্তা-চেতনা বা আদর্শের সাথে মিলে এরকম কোন কিছু ফেলে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে তার বন্ধুদের জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেন না এরা। এক্ষেত্রে কোন ইমেজ বা ভিডিও শেয়ারের ক্ষেত্রে তারা যথার্থতা যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না বা যাচাই করতেও জানেন না। কারন তারা চিন্তাও করতে পারেন না ফেসবুকের ওয়ালে বা নিউজফিডে যা আসে তার মধ্যে যে মিথ্যা থাকতে পারে । ফলে তারা এখানে যা দেখেন তাই বিশ্বাস করেন।



ফেসবুকের এই কমিউনিটিকে টার্গেট করেছে একটি গ্রুপ। যারা নিজেদের মত করে গল্প ও ছবি তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করছে, দেখছে তার সব ফ্রেন্ড,তাদের মধ্যে একজন লাইক দিচ্ছে্‌ যাচ্ছে তার সব ফ্রেন্ডের পেজে, তারা শেয়ার করে আরও কয়েকশো মানুষকে জানাচ্ছে। কয়েকমিনিটের মধ্যে একটি পোস্ট পৌঁছে যায় কয়েকহাজার থেকে কয়েকলাখ মানুষের কাছে। কিন্তু ততক্ষনেও জানা যায় না এই পোস্টটি সত্য কি মিথ্যা। এতক্ষনে হয়তো এই শেয়ার কাউন্ট করে শুরু হয়ে গেছে হানাহানি মারামারি। দিনশেষে হয়তো দেখা গেলো নিউজটি মিথ্যে।



গ্রুপ বা পেজের ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফেসবুকের গ্রুপ গুলো বা গ্রুপের অ্যাডমিনরা কিছু কৌশল অবলম্বন করেন। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে “সব মানুষ খাবে” এরকম কিছু ছবি বা ভিডিও খুজে বের করে তা ঐ গ্রুপ বা পেজে শেয়ার করে মানুষকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়। কোন বন্ধুর শেয়ার বা লাইক করা ভিডিও পেজ বা গ্রুপ সহ একসময় ঐ ভিডিও সামনে পড়বে। ভালো লাগবে। লাইক করবেন শেয়ার করবেন। আপানার বন্ধুরাও জানবে। তারাও একই কাজ করবে । এভাবেই পরবর্তীতে একই গ্রুপ থেকে আপনার কাছে উদ্দেশ্যমুলক ভিন্ন ধরনের পোস্ট আসবে। ভালো লাগতে পারে আবার নাও পারে। কিন্তু কারো না কারো কাছে ভালো লাগবে। সে লাইক দিবে শেয়ার করবে কিন্তু সত্যাসত্য যাচাই করার সুযোগ নাই।

মানুষের একটি কমন টেন্ডেন্সী হচ্ছে কোন কিছু নিজের চিন্তা-চেতনা বা আদর্শের সাথে মিলে গেলে খুব কম ক্ষেত্রেই মানুষ তার সত্যাসত্য যাচাই বাচাই করে। কিন্তু নিজের চিন্তা-চেতনা বিরোধী কিছু সামনে আসলে মানুষ বিভিন্ন সোর্স থেকে এর সত্যাসত্য সেটা ভেরীফাই করার চেষ্টা করে। এখানে-ওখানে সার্চ করে দেখে এটার সত্যাতা কতটুকু। সেজন্যই আমার ভাবনা যে অন্যের ভাবনার বিপরীত হতে পারে সেটা আমরা বুঝি কিন্তু সব সময় এর কার্যকরীতা প্রয়োগ করিনা বা প্রয়োগ করার প্রয়জনীয়তা বোধ করি নয়া। এটা হয় মানুষের নিজের চিন্তা-চেতনা বা বিশ্বাসের প্রতি অবচেতন বায়াসনেসের কারনে।



বেশ কিছুদিন থেকে ফেসবুকে র্যায়বের সাথে সিভিল পোষাকের অপারেশনের একটি ছবি শেয়ার হচ্ছে। ঐ ছবিতে কয়েকজনকে মার্ক করে দেখানো হচ্ছে তারা একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। সিভিলিয়ানদের দেখিয়ে তারা প্রশ্ন রাখে এরা কারা? কিন্তু তারা এটা ভাবতে পারেনা যে র্যা ব তার ডিউটি পোশাক ছাড়াও সিভিল পোশাকে থাকতে পারে বা গোয়েন্দা পুলিশও অপারেশনে যেতে পারে প্রয়োজনে। কয়েক হাজার বার শেয়ার হওয়া এই ছবির কথা হয়তো লাখ লাখ লোক জানে। অনেকে হয়তো বিশ্বাস করে আবার অনেকে করে না। যারা করে তাদের অনেকেই তাদের পূর্বসূরিদের ব্যাক্তি বা গ্রুপের একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ার কারনে বিশ্বাস করে। কিন্তু সত্যাসত্য যাচাই করে সময় নষ্ট করার সময় তারা পান নয়া।



গতকিছুদিন থেকে কিছু কথা কানে আসছে এবং ফেসবুকে ছবি শেয়ার আসছে বাংলাদেশে নাকি বিএসএফের অনেক সদস্য ঘরাফেরা করে। এরা নাকি মুলত কিলিং স্কোয়াড হিসেবে কাজ করে। সর্বশেষ ৫ মে'র ঘটনায়ও নাকি এদের উপস্তিতি ছিল। কথা হচ্ছে এই সব যারা পোস্ট করে তাদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই তাদের সবাই চেনে। এটা তাদের এজেন্ডা। তারা এটা করবেই। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল তাদের বিপক্ষে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।



কিছুদিন অন্য কাহিনী প্রথমটি হচ্ছে ডিপার্টমেন্টের এক ছোট ভাই পোষ্ট করেছে এভাবে '' এক ভারতীয় মুসলিম জানিয়েছেন বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্তে নাকি প্রচুর ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ক্যু করতে পারে এবং এ ধরনের পরস্থিতিতে ভারতীয় বাহিনী এসে সরকারকে রক্ষা করবে।“

ফেসবুক ইউজাররা গত কয়েকদিনে বেশকিছু লোককে মেরে ফেলেছেন (আসলে মৃত্যুর সংবাদ শুনে যাচাই বাচাই না করে শেয়ার করে আরও ১০ জনের সাথে শেয়ার করেছেন)। ফেসবুকে খবর এলো জনপ্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জমান আর নেই। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরে খবর এলো নাহ তিনি জীবিত আছেন। একইভাবে ওপার বাংলার বাংলা গানের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী মান্না দে মারা গেছেন বলে গতকাল ফেসবুকে খবর চাউর হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষন পরে আবার দেখা গেলো কিছু লোক মান্না দে’র মৃত্যু সংবাদ শেয়ারকারীদের বকা দিচ্ছেন। দেখা গেলো যারা শেয়ার করছেন তারা কোন নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে খবর না পেয়েই জাচাই-বাচাই না করে শেয়ার করে দিয়েছেন।



কিছুদিন আগে যা শুনলাম তা শুনে কয়েকমিনিট চুপ করে ছিলাম তিনি বলেন ''৫ মে'র অভিযানে পুলিশ/বিডিআরের পোশাকে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অংশগ্রহন করেছে'' তবে এই কথাটি যার কাছ থেকে শুনেছি তিনি আসলে প্রাথমিক ফেসবুক ইউজার যার কারনে আমি তাকে দোষ দেই না। উনি সত্যাসত্য বিচার করতে পারেন না বা বিচার করার মতো ক্ষমতা বা বুদ্ধি কোণটাই তার থাকার কথা না। কিন্তু তার আগের কথাটা যিনি শেয়ার করেছেন তার ডিগ্রির বহর দেখলে চোখ কপালে উঠার কথা। আমি জানিনা উনি কি চিন্তা করে শেয়ার করেছেন কিন্তু আমি কখনই কামনা করি না এরকম কিছু হোক।



এভাবেই প্রচার আর প্রসার লাভ করছে গুজবের ঢালপালা। ফেসবুক হয়ে উঠছে গুজব ছড়ানোর সব চেয়ে বড় মাধ্যম। মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে যারা ফেসবুক ইউজ করছেন তাদের জন্য ফেসবুক ইউজে বিশেষ কম্পিউটার জ্ঞান এর দরকার হয়না। এদের অনেকের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট জ্ঞান নেই বললেই চলে । ফলে কোন বিশেষ প্রক্রিয়া যেমন একাউন্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একাউন্ট খোলা লাগে না। এরা মোটাদাগে প্রাইমারী ইউজার হিসেবে পরিচিত। আই টি জ্ঞানের অপ্রতুলতার কারনে এরা ইন্টারনেটের মাধমে প্রাপ্ত কোন কিছুর সত্যাসত্য যাচাই করতে পারেন না।

পেইড ফেসবুকাররা প্রাইমারী ইউজারের অজান্তে তাদের দ্বারা গুজব চড়াচ্ছেন আর তাদের ইমোশনকে ব্যাবহার করে পেইডের নিজস্ব চিন্তাভাবনা বা রাজনৈতিক মতবাদের পক্ষে জনমত তৈরি করার চেস্টা করছেন। প্রাইমারী ইউজাররা আরও অনেকের ইমোশনকে বিকৃত করতে পেইড ফেসবুকারের হয়ে কাজ করছেন অন্ধকারে থেকেই। গড়ে উঠতে শুরু করে একটি মিথ্যা বিশ্বাস আর এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে চলতে থাকে তাদের পথ চলা। ভাংতে হবে এই নষ্ট চক্র!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.