![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলার চেয়ে লিথতে পছন্দ করি । পড়তে ভীষন ভাল লাগে ।
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/174286/small/?token_id=ce71a1530e68d4c9da3728680677db13
লীলাবতী বাস থেকে নেমে রিকশা ডাক দিলো। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশে সূর্যের কড়াকড়ি শাষন। এম্নিতেই লীলার গরম বেশি। গরম যতটুকু না লাগে তার চেয়ে বেশি ঘেমে যায় এই ব্যাপারটাই তাকে অসস্তিতে ফেলে সব সময়। মাঝে মাঝে তার খুব হিংসে হয় অন্য মেয়েদের দেখে। যে সময়টাতে অন্য মেয়েদের কোনও ঘামই হবে না সেই সময়ে ও সে ঘেমে একাকার অবস্থা হবে। আর এখন তো পুরোপুরি গরম এর উপর গরম। ইদানিং গরমটা ও যেনো বেশি পড়ছে। পড়বে নাই বা কেন বিশ্বায়নের এই যুগে জলবায়ুর যে পরিবর্তন তাতে শীতে বৃষ্টি আর গরমে বৃষ্টির টিকিটি ও পাওয়া যায় না। বাদলের কদম গ্রীষ্মে ,শরৎের শিউলি বর্ষায়! লীলার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাই রোদে সে মোটামুটি কানা টাইপ কারন সে ভাল করে তাকাতে পারে না ইদানিং তাই সে রোদে বের হলেই রোদ চশমা পড়ে নেয়। যদিও সে যতবার ই চোখে দিয়ে বের হয় সে এতটাই বিব্রত থাকে যে তার কাছে মনে হয় সবাই তার দিকে আজব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যদিও তেমনটা হয় না।
প্রবল রোদের কারনে বর্তমানে কমবেশি সবাই রোদ চশমার সাহায্য নেয় তাই আলাদা করে তাকে দেখার কোন কারন নেই। রিকশাওয়ালা তার কাছে আসতেই সে রিকশায় চড়ে বসলো। রিকশাওয়ালা কে নির্দেশ দিলো কোথায় যেতে হবে। রিক্সায় বসেই সে তার যাত্রা পথের একটা নকশা করে ফেলল। কমলাপুর স্টেশনে যাওয়ার পথে সে বাস এর কাউন্টারে একটু দেখে নেবে। যদি বাস পেয়ে যায় তাহলে আর ট্রেনে যাবে না। বাসের কাউন্টারে গিয়ে দেখলো সেখানে ভীষণ ভীর। ভীর ঠেলে ভেতরে যাও ঢুকতে পাড়লো কিন্তু আবারও ট্রেনের দিকেই তাকে ছুটতে হলো। ভীর থাকবেই না কেন সময়টাই তো চরম ভীর থাকার। এম্নিতেই ঈদের ছুটির সময় ভীর বেশি হয় আর এবার তো পূজা এবং ঈদের ছুটি একসাথে তাই এই বাড়তি চাপ। রেল স্টেশনে যখন সে এলো তখন তার খেয়াল হলো সময় কত হয়েছে তা জানে না। তাড়াতাড়ি আগে মোবাইলটা বের করলো ব্যাগ থেকে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তার প্রায় কান্না কান্না ভাব! ঘড়িতে এখন সকাল ৮.৩০ তার ট্রেন স্টেশন ছাড়ার কথা ৮.১০ এ। তার মধ্যে মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ যায় যায় অবস্থা। তাদের এলাকার এই ট্রেনটা মাঝখানে এত সময় মেনে চলতো না কিন্তু এখন একেবারে কাটায় কাটায় ট্রেন ছেড়ে দেয়। যদিও লীলা আশা করছে ঈদ এর কারনে হয়তো পেলেও পেতে পারে। যেই ভাবনা সেই কাজ। ক্ষীণ আশা নিয়ে দৌড়ে গেলো টিকিট কাউন্টারে যদি পেয়ে যায় সেই ভরসায়। ট্রেনের সময় শেষ হওয়া সত্ত্বেও কাউন্টারে লোকের ভীর চোখে পড়ার মতো। যদিও এ ভিড় খুবই স্বাভাবিক কারন এ মানুষগুলো শুধু আজকের জন্য নয় বাড়িতে যাবার আগাম টিকিটও কাটতে এসেছে অনেকে। ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশের মহিলাগুলো ভ্রু কূচকে তার দিকে দেখছে যদিও লীলার সে দিকে নজর নেই। একটি বিশেষ বৈশিষ্টের কারনে খুব সহজেই সে কাউন্টারের ভদ্রমহিলার সাথে আই কন্টাক্ট করতে পারলো।
লীলা যখন ট্রেনের কথা জানতে চাইলো তখন কাউন্টারের ভদ্রমহিলা জানিয়ে দিলো এগারসিন্ধুর নামক কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনটি কিছুক্ষণ আগে স্টেশন ছেড়ে গেছে। লীলাবতী বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে বা তার কি করা উচিৎ?! নির্বিকার এবং অসহায়ের দৃষ্টিতে সে মহিলার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো আর কোন ট্রেন আছে নাকি? যে ট্রেন দুপুর ১২.৩০ এর মধ্যে ভৈরব পৌঁছুবে? ভদ্রমহিলা লীলার কথা বুঝল কিনা লীলা টের পেলো না কারন ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে কিছুটা আজব দৃষ্টিতে একবার তার দিকে এবং অন্যান্য যাত্রিদের দিকে তাকিয়ে আবার মনিটরের দিকে মনোযোগ দিলো, তবে কিছু সময় পর যখন লীলা প্রায় আশা ছেড়ে দিলো তখন ভদ্রমহিলা তাকে জানালো চট্টগ্রামের দুটো ট্রেন আছে যা ভৈরব ১২.৩০ এর কাছাকাছি সময় সেখানে পৌঁছুবে। দুটো ট্রেন যথারীতি ১০.৩০ এবং ১১.৩০ কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে।
লীলার বাড়ী যাওয়া খুব যে জরুরি তা নয়, কিন্তু সে তার মাকে সারপ্রাইজ এবং খুশি করার জন্য যাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই তার মা বলছিল তাকে “অনেক বছর দাদার বাড়ী যাস না এভাবে তো বাড়ীর মানুষ তো ভুলে যাবেই তোরা ও দাদা বাড়ীর রাস্তা ভুলে যাবি?” কিছুদিন আগে এম্নিতেই কথার ছলে মা’কে বলেছিল “এরপর যে ছুটিটা একটু বেশি সময়ের জন্য পাবো তাতেই যাবো বাড়ীতে।” পেয়েছিলও কিন্তু বাবা মা তখন ঢাকাতেই ছিল বলে আর যাওয়া হয়নি। বাবা মা যখন মাঝে সাঝে বাড়ীতে যাই তখনি কেবল সে যেতে পারবে বাড়িতে। তাই ছুটি পেয়ে ইচ্ছে থাকা সত্তেও সময় সুজোগ করে যেতে পারেনি। কিন্তু এবার সব কিছুই কেমন মিলে গেলো! ঈদ আর পুজোর ছুটি পড়েছে একই সাথে। তার উপর এবারেই বাবা মা ও এই সময় বাড়ীতে। ঈদ এর সময় ছাড়া আসলে এত দিনের ছুটি পাওয়া যায় না আর সে সময়টাতে তার বাবা মা সব সময় ঢাকাতেই থাকে তাই তার এর আগে সুজোগ হইনি যাওয়ার। কিন্তু আজকের মধ্যে না যেতে পারলে কোন ফায়দা নেই।
কারন এর পর ঈদ আর তার প্যারেন্টসরা চলে আসবে। সে গিয়ে বাবা মাকে নিয়ে চলে আসবে একদিন থেকে এই তার পরিকল্পনা। মায়ের সাথে কথাও হয়েছে সেই ভাবে যদিও মাকে একটু সারপ্রাইজ করার জন্য কোন পাকা কথা দেয় নি। কাউন্টারের ভদ্র মহিলা যখন জানালো ট্রেনের সিডিউল তখন সে তাকে জিজ্ঞেস করলো কোন ট্রেনটা আগে পৌঁছুবে? মহিলা চিন্তা করে উত্তর দেয়ার আগেই লীলা তাকে ১০.৩০ এর ট্রেনের টিকিট দিতে বলল। যদিও সে জানে না কোন ট্রেনটা আগে পৌঁছুবে। ভদ্র মহিলা লীলার কাছ থেকে টিকিটের টাকাটা বুঝে নিয়ে তাকে টিকিট দিয়ে ট্রেনের সময় সম্পর্কে আবার অবগত করলো। ধন্যবাদ দিয়ে সে সেখান থেকে একজন লোকের কাছে ট্রেনটা কোথায় আছে জেনে ট্রেনের দিকে চলল।
লীলাবতী কিছুটা শঙ্কিত কারন তার এই ট্রেন সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। যাওয়া তো দূর এই ট্রেনের নাম ই সে কখনো শুনেছে বলে মনে পড়ে না। যেহেতু টিকিট কেটেই ফেলেছে আর ডিসিশন নিয়েই ফেলেছে সে যাবে তাই আর বাড়তি কথা ভেবে লাভ নেই। ট্রেনটাকে খুঁজে পেলো অবশেষে। ট্রেনের নাম জেনে নিশ্চিত হয়ে ট্রেনের পাশেই একটা বসার জায়গায় নিজের জন্য একটু জায়গা খুঁজে নিলো যেহেতু তাকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে ট্রেনের জন্য। টিকিট টা চেক করার জন্য ব্যাগ থেকে বের করল। একি!!! সে তো কোন সিট পাই নি ট্রেনে। এতটা পথ সে যাবে কিভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?! টিকিট টা নেয়ার সময় সে টের পাই নাই কারন তখন সে কোন ট্রেনে যাবে সেই চিন্তাতেই ডুবে ছিল। কি আর করা সে স্ট্যান্ডিং টিকিট টা হাতে নিয়ে চারপাশটা একটু দেখে নিলো।
বৃথা বোঝার চেষ্টা করা তার মত বেকুব আশেপাশে আর কতজন আছে। মজার ব্যাপার হলো সে যখন চারপাশে তাকালো তখন সে দেখলো কেউ কেউ খুব অবাক আবার কেউ কেউ খুব উৎসাহী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লীলার দিকে মানুষের এই উৎসাহী এবং অবাক দৃষ্টিটা বরাবরই সে বিরক্ত বা রাগ হওয়ার বদলে উপভোগ করার চেষ্টা করে যদিও বেশির ভাগ সময় সে সেটা পারে না। তার কথা কেন তার দিকে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকবে?!! চিড়িয়াখানার জন্তুর মত দেখতে থাকে। মাঝে মাঝে নিজেকে তার এলিয়ান মনে হয়।
ট্রেনের নাম চট্টলা। আগে সময় ছিল বিকেল চার টায় কয়েক মাস ধরে সময় পরিবর্তন করে বর্তমান সময় মেনে চলছে। চট্টলা নামটা তার পছন্দ হয়েছে আর তাই তো এটা অপেক্ষাকৃত একটু ধীর গতিতে যাবে জেনে ও চট্টলা কেই বেছে নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো আসলে সমস্যা ও না কারন লীলা আজ সময় কে মেনে চলবে না। সময় তাকে মেনে চলবে এই নীতি মেনে চলছে। ঘড়িতে সময় কেবল ৯টা তার ট্রেনের সময় ১০.৩০ তাই তাকে আরও দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা … ব্যাপার লীলার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। যেন বন্ধুত্ব করেছে শব্দটার সাথে। কখনও বন্ধু বান্ধবির জন্য, কখনও ভাল সময়ের অপেক্ষা, কখনও দীর্ঘ নির্ঘুম রাতের প্রহর শেষের প্রতীক্ষা, জীবনের প্রতিটি বাকেই তাকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে মাঝে মাঝে সে ক্লান্ত। তবে আজকে সব কিছু ভিন্ন আজকে সে অপেক্ষা করতে হবে কিন্তু করবে না তাই কোন অপেক্ষা সময়ের। সে বসে স্টেশনের মানুশগুলোকে দেখবে। মানুষ দেখার মাঝে সে এক অদ্ভুধ আনন্দ পাইয়।
এই ভাল লাগার শুরু হয়েছিলো যখন সে স্কুলে পড়ত এবং সে জীবনের প্রথম তার পরিবার ছাড়া একা একা মাসের পর মাস একা ছিল। মোবাইলের যুগ ও ছিলো না যে কারও সাথে যোগাযোগ করবে। তখন তার সময় কাটতো রাস্তায় যাওয়া আসা করা মানুশগুলো দেখে। সারাদিন স্কুল, রান্না-বান্না, পড়ালেখার ফাঁকে তার প্রতিদিনের একমাত্র আনন্দময় সময় ছিল এই মানুষগুলোকে দেখার মধ্যে। এমনকি সে প্রতিক্ষায় থাকতো কখন তার সব কাজ শেষ হবে আর সে রাস্তার ব্যস্ত, উদাসীন, কষ্ট, আনন্দ নিয়ে ছুটে যাওয়া মানুষগুলোর সাথে দূর থেকে একা একায় ভাগ করে নেবে।
তার ঠিক বরাবর সামনের বেঞ্চিটাতে একটা ছেলে বসে আছে। লীলা ধারনা করছে ছেলেটার বয়স আনুমানিক ২৫-২৭ বছর বয়স। সে এই স্টেশনেই থাকে। তার অপরিষ্কার কাপড় চোপড়েই তার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। লীলা তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে বিশেষ এক কারনে, কারনটা হল যেখানে সবাই তাকে ঘুর ঘুরকে দেখছে সেখানে এই ছেলেটা তার একেবারে সামনে বসে থাকা সত্ত্বেও তার দিকে ফিরছে না। শুধু তাই না ছেলেটা নিজের মনে যেনো নিজের এক আলাদা জগতে স্বপ্ন সাজাতে খুব ব্যস্ত। যার কাছে ট্রেনের এই অস্থিরতা বা চারপাশের কোন কিছুই স্পর্শ করছে না। সে তার অপরিষ্কার এবং শতছিন্ন পোশাকটাকে বার বার খুব গুছিয়ে নিচ্ছে। হয়তো ছেলেটা নেশাখোর নয়তো পাগল। কিন্তু কি এসে যাই সুখেই তো আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে মুল্যবান জিনিস সুখ কে নিয়ে। থাকুক বাস্তবতার নাগপাশ থেকে অনেক দূরে।
হটাৎ দূরে ভীরের মাঝে এগারসিন্ধুর শব্দটা শুনে সচেতন হলো লীলা। অভ্যাসবশত এগারসিন্ধুর শব্দটা শুনে তার ট্রেনের ব্যাপারে জানতে চাইলো তার ঠিক পাশে বসে থাকা ভদ্রলোকের কাছে। যদি এটা অন্য কোন দিন হতো নির্ঘাত সে তার চুল টেনে ছিঁড়ত। ছিঁড়বে নাই বা কেন?! ভদ্রলোক তো তাকে পুরোপুরি তাজ্জব করা নিউজ দিয়েছে। এগারসিন্ধুর নামটা সে যে শুনেছে টা ভুল কিছু নয়। কারন ঈদের কারনে ট্রেন আজ লেট ছিলো। তাই ৮.১০ এর ট্রেন ৯.৩০ এ ছাড়ল।
©somewhere in net ltd.