![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলার চেয়ে লিথতে পছন্দ করি । পড়তে ভীষন ভাল লাগে ।
চার বছর আগের কথা। লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় থাকি।
দুপুরে খাবার পর একদিন বিছানায় পিঠ লাগিয়ে চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করছি এরই মধ্যে শুনতে পেলাম ডাকপিয়নের হাক-ডাক। চিঠি, চিঠি করে চেচাচ্ছে।
দরজা খুলে বাইরে এলাম। পিয়ন হলুদ খাম ধরিয়ে দিল হাতে। নাম দেখে বুঝলাম আমার চিঠি। বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে। ভয়ে ভয়ে চিঠিটা পড়লাম। হাপ ছেড়ে বাচলাম। কোনো খারাপ খবর নয়, ছোট চাচার বিয়ে সামনের শুক্রবার।
মেয়ে বিএ পাস। দেখতে সুন্দরী। আমাদের গ্রাম থেকে পাচ কিলোমিটার দূরে। মেয়ের বাবা চেয়ারম্যান বেশ প্রভাবশালী। চাচাও কম নন, লন্ডন ফেরত ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ের চেহারা মিষ্টি। রঙ কালো।
আস্তে আস্তে বিয়ের দিন এগিয়ে এলো। আমিও বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে হাজির। আমাকে দেখে বাড়িতে খুশির এক ধাপ যোগ হলো। কারণ বাড়ির বড় ছেলে আমি। অনেক দূর থেকে অতিথি এসেছে। রাতে ঘুম হলো না। সারা রাত কাটিয়ে দিলাম গল্প করে।
সকালে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিজেদের নিয়ে। বরযাত্রীতে যেতে হবে। মেয়েরা তাদের মতো করে সাজে ব্যস্ত। ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। বয়স্করা চাচাকে নিয়ে ব্যস্ত। ততোক্ষণে মাইক্রোবাস এসে পড়েছে। কেউ কেউ উঠতে শুরু করেছে। চাচাকে সাজানো শেষ। দাদা-দাদিকে সালাম করে বরের নির্দিষ্ট গাড়িতে উঠে পড়লেন চাচা, পাশে ছোট ফুপা ও ছোট ফুপু। আমার ডাক এলো সামনের সিটে বসার। মুরুব্বিদের বিদায় শেষে গাড়ি ছেড়ে দিল।
কনের বাড়িতে পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না। সবাই গাড়ি থেকে নামলাম। গেটে কোনো রকম ঝামেলা হয়নি। মুরুব্বিরা আগেই সব ব্যবস্থা করেছিলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজি এসে পড়লেন। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিয়ের কাজটাও সম্পন্ন হলো। এবার আপ্যায়নের পালা। সবার সঙ্গে আমিও বসে পড়লাম।
এক পর্যায়ে অনুভব করতে লাগলাম পেটের চাপ নিচের দিকে শুরু হয়েছে। চেপে বসে ঠেকানোর চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে চেয়ার থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। ছোট্ট একটা ছেলেকে ডাক দিলাম পানি আনার জন্য। সে দৌড়ে এক বদনা পানি এনে দিল। সেই টয়লেট দেখিয়ে দিল।
সবার সঙ্গে খেতে না পারার দুঃখ নিয়ে প্রকৃতির আমন্ত্রণে ঢুকলাম টয়লেটে। তারপরই ঘটলো মজার ঘটনা।
টয়লেটের ভেতর থেকে বাইরে উচ্চস্বরে আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভাবলাম বিয়েবাড়িতে এটা সামান্য কোনো ব্যাপার। কিন্তু না। আরো মিনিট দুয়েক পর খুব জোরালো গলার আওয়াজ ভেসে এলো।
একজন বলছে, বর আর মহিলা বাদ দিয়ে সব শালারে মার।
পিলে চমকে গেল আমার। দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পেলাম। অনেক মানুষের চিৎকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। টেবিল ভাঙার শব্দ, টিনের শব্দ কানে ভেসে আসছে। পিঠের ওপর লাঠির বাড়ির শব্দ কখনো শুনিনি। তাই বুঝতে পারলাম না। আমার শরীর ঘেমে ভিজে গেল। পানিটুকুর সৎ ব্যবহার করে দাড়িয়ে পড়লাম। বাইরে দেখার চেষ্টা করলাম। ধরা পড়ার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।
হঠাৎ করে কি যেন পড়ার শব্দ পেলাম টয়লেটের সামনে। দ্রুত পায়ে চলে গেল বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষণ পর কড়া নাড়ার শব্দ। আমি তো শেষ। এবার রক্ষা নেই। কিল, ঘুষি কিছুটা কপালে আছে হয়তো। কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে চলে গেল।
ভাবলাম আমাদের কেউ হবে হয়তো। আশ্রয় খুজতে এসেছিল। পুরুষ-মহিলাদের চিৎকারে মনে হলো যুদ্ধের ময়দান। কিন্তু আমি নিরুপায়।
ইতিমধ্যে চিৎকার কমে এসেছে। এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম। খাওয়ার সময় দই দিতে গিয়ে বরযাত্রীর কারো গায়ে সামান্য দই পড়েছিল। যার গায়ে পড়েছিল সে এটো হাতে কষে চড় দিয়েছিল সেই ব্যক্তিকে। সেও দইয়ের মেটে পাতিল তার মাথার ওপর জোরে ছেড়ে দিয়েছিল। সারা গা দইয়ে মাখামাখি। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই।
প্রায় বিশ মিনিট ধরে টয়লেটে দাড়িয়ে ঘামছি। হঠাৎ মসজিদের মাইকের আওয়াজ কানে ভেসে এলো। বরযাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ডাকা হচ্ছে। মনে সাহস এলো। আমাদের কয়েকজনের কথা শুনতে পেলাম। কেউ কেউ আমার নাম ধরে কি যেন বলছে। বুকে ফু দিয়ে বাইরে এলাম।
কিছুটা অবাক হলাম! কারো জামা ছেড়া, কারো গায়ে মাংসের ঝোল। কারো মাথায় দই। কেউ ধুলায় গড়াগড়ি দিয়েছে। মনে হলো আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে পরিষ্কার।
আমাকে দেখে সবাই অবাক! কি ব্যাপার? তোর গায়ে কিছু নেই? বললো আমার কাজিন।
বললাম, টয়লেটে ছিলাম।
এতোক্ষণে হাতে হাত রেখে দুই পক্ষের ক্ষমার পর্ব শেষ। কষ্ট একটাই রয়ে গেল, অনেকেই মাংস-পেলাও খেল। কিন্তু আমি কিছুই খেতে পারলাম না, নিতেও পারলাম না। চারদিকে একবার ঘুরে তাকালাম। চোখ পড়লো মাইক্রোবাসচালকদের ওপর তারাও বাদ পড়েনি।
ছেড়া পাঞ্জাবি, শরীরে মাংস, মাথায় দই নিয়ে ফিরতে হয়েছিল সবার। অবশ্য আমি বাদে।
©somewhere in net ltd.