নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নারী, জগতের সকল অনাসৃষ্টির উৎস...

নবকবি

পৃথিবীর সকল ধ্বংসের মূলে, নারী...

নবকবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা শহীদদের বৈঠক

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪১

তখন অমানিশার মাঝ রাত

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে

বিশৃঙ্খল ভাবে বসা ক'জ যুবক

আর কয়েকজন তরুণ।

সবাই চুপচাপ শান্ত,কেউ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে

কেউ গালে হাত দিয়ে নিমগ্ন।

আশে পাশে সিড়িতে আর চত্বরে

ছিন্নমূল মানুষের সুখের নিদ্রা।

কবি মন বলেই এগিয়ে গেলাম

কেউ একজন বলে উঠল কে?

বললাম আমি কবি,অনাহত এক কবি

কিন্তু মধ্যরাতে এখানে তোমরা কে?

কয়েকজন সমস্বরে বলে উঠল

আমরা বায়ান্নের ভাষা শহীদ।

আমাদের বৈঠক চলছে

আশ্চর্য্য হলাম! কেমনতর কথা

জিজ্ঞেস করলাম এখানে কেন?

তোমরা আমাদের ভাষা দিয়েছ,দেশ দিয়েছ

তোমাদের স্থান এই ম্লান আধারের বেদী নয়,

আলোকজ্জ্বল গালিচায় পাতা ময়ূর সিংহাসনে

আমাদের হৃদয় কোঠায়।

তারা একত্রে হেসে উঠল,বিদ্রুপের হাসি।

শফিউর বলল কবি তুমি সত্যিই উদাসীন

তুমি দেখতে পাওনা কোথাও আর আলো নেই

সর্বত্র কি আধার।

সালাম বলল,ভাই আমরা ত

তোমাদের হৃদয়ে স্থান নেবার লোভ করিনি

আমরা প্রাণ দিয়েছিলাম

মায়ের ভাষার যথাযথ সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্যে।

অথচ তোমাদের উচ্চ আদালত

বাংলায় মামলা পরিচালনা করেনা।

জাতির মহান বিচারপতিরা

বাংলায় কাজ করতে লজ্জা পান হয়তবা!

তোমাদের রিমিক্স গানের যুগে

ডিসকো বান্দরদের জয়জয়কার,রাজত্ব!

সর্বত্র ইংরেজী আর হিন্দির আধিপত্য্

আধুনিক অভিজাত তরুণ-তরুণীরা

বাংলাকে ম্লেছ বলে হেয় করে।

তোমরা এখন থার্টি ফার্ষ্টের জালে নিমজ্জিত

রফিক বলল,কবি শোন

একুশের বইমেলা এখন ভাষার নয়,টাকার!

নারী-পুরুষদের পোষাকি নির্লজ্জতা আর বেহায়াপনার।

যুগলদের অবাধ প্রেমের

বড় বড় সাহিত্যিকেরা লেখেন টাকা আর নামের জন্য।

অজিউল্লাহ বলল,আরও শোন

তোমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি এখন উৎসবের

নেতা নেত্রীরা কে কার আগে ফুল দেবে

তাই নিয়ে হুলস্থুল।

শ্রদ্ধা সেখানে গৌণ!

মিছেই আমাদের বুকের পরে ফুলের বোঝা চাপানো।

সাত্তার বলল,তোমাদের বুদ্ধিজীবীরা

সভা সেমিনারে একুশের মাহাত্ম্য বর্ণনায় অন্তপ্রাণ।

অথচ তাদর বসবার কক্ষে বিদেশী সংস্কৃতির বাহার।

সাদা চামড়ার কর্তারা এলেই

তাদের হুমড়ি খেয়ে পড়া।

সব শুনে লজ্জায় ঘৃণায় আমি মাথা নিচু করতেই

রফিক বলল,কবি এত সহজেই লজ্জা পেয়ে গেলে?

আমরা ত প্রাণ দিয়েছিলাম নিজেদের

স্বতন্ত্র বাঙালি সংস্কৃতির জন্য।

কলকাতার বাঙালিপনার জন্য নয়।

কোথায় বাংলাদেশীদের বাঙালিপনা?

তোমাদের সন্তানেরা ইংরেজী স্কুলে পড়ে

ইংরেজি কথা বলতে না পারাটা তাদের জন্য লজ্জা!

আর তোমরাই ফেব্রুয়ারি এলে দরদের বন্যা দেখাও।

জব্বার বলল,দেশের শহীদ মিনার গুলো সারা বছর

অযত্নে অবহেলায় গুমড়ে মরে

এখানে চলে অসামাজিকতা,কুকর্ম-

একুশ এলেই তা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়।

এই তোমাদের ভাষাপ্রেম, দেশপ্রেম!

স্বার্থের কাছে শিকলবন্দী তোমাদের বুদ্ধিজীবীরা।

ভারতীয় আধিপত্য রক্ষায় ব্যস্ত।

তোমাদের সংবাদপত্র ব্যস্ত

সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষায়-

আর তোমাদের কবিরা

রাজনৈতিক আদর্শের কাছে বিক্রি!

কয়েকজন যুবক সমস্বরে বলে উঠল

আমরা আজকের বেঠকে এসেছি দাবি জানাতে।

যে ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি

সকল স্বপ্ন,সাধ পিছুটানকে কোরবানি দিয়েছি

আজ তার নেই কোন সম্মান,নেই প্রতিষ্ঠা।

তাই আমাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত-

আমরা ভাষা শহীদদের মর্যাদা প্রত্যাখান করব!

প্রত্যাখান করছি।

যে দেশে ভাষার মর্যাদা কেবল সভা আর সেমিনারে-

যে দেশের উচ্চ আদালতে বাংলা অপাংক্তেয়

সেই দেশের ভাষা শহীদের মর্যাদা আমরা চাইনা।

সব শুনে আমি মাথা হেট করে রইলাম-

কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে দেখি-

ভাষা শহীদেরা কেউ নেই

শুধু তাদের সিদ্ধান্ত কাগজে সেটে

দেয়া রয়েছে-

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের লাল বৃত্তের বুকে।



-০৯-১৫.ফেব্রুয়ারী,২০১০ ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.