![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নরাধম অধার্মিক প্রেমিক। প্রেম, রাষ্ট্র , সমাজ, সিসটেম যার কাছে তালগোল পাকিয়ে গোলগাল কিছু একটা হয়ে গেছে
দৃশ্য ১।
বাবাকে কি বলবে কথাগুলো মনে মনে গুছিয়ে নিল রাহাত। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল দিলো।
ওয়েলকাম টিউন কিশোর কুমারের গান সেট করা। বাবার প্রিয় গায়ক।
- হ্যালো, বাবা কেমন আছো
- কিরে কি খবর তোর। আমি ভালো আছি
- মা ভালো আছে
-সবাই ভালো আছে। তোর পড়ালেখার কি অবস্থা। ভার্সিটি যাস তো ঠিকমত
- হুম যাই বাবা। বাবা শোন, আগামি মাসে আমার পরীক্ষা। কিছু বই কিনতে হবে।
১০০০ টাকা লাগবে।
- কিছুদিন আগে না তোর হাত খরচ পাঠালাম?
- এই বইগুলার নাম টিচার নতুন দিয়েছে। আর আমার হাতে বাড়তি টাকাও নাই।
-আজকেই পাঠাতে হবে ?
- হা আজকে।
- আচ্ছা , আমি তোকে বিকাশ করে দেব।
- আচ্ছা ,বাবা। রাখি বাবা। ক্লাস আছে।
-আচ্ছা, ঠিকমত পড়া শোনা করিস।
-আচ্ছা বাবা। খোদা হাফেয।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রাহাত। বাবাকে মিথ্যা কথা বলতে ভালো লাগেনা। কিন্তু কি করবে। ওর
বন্ধুরা সবাই মিলে সীসা লাউঞ্জে সীসা খেতে যাবে। বড় পার্টি হবে।ও কিভাবে না যায়...
দৃশ্য ২।
চিন্তিত মুখে অফিসের ডেস্কে বসে আছেন আফজাল সাহেব। কয়েকদিন ধরে বুকের বাম সাইডে ব্যাথা।
হার্টে ইতিমধ্যে ব্লক ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছে বাইপাস করতে হবে। কিন্তু একটা প্রাইভেট অফিসে অফিস সহকারির চাকরি করেন। বাইপাসের টাকা পাবেন কোথায় ? টানাটানির সংসার। কিন্তু সাধ্য না থাকলেও সাধের অভাব নেই। স্বপ্ন ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। ধার দেনা করে ঢাকার বড় একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করিয়েছেন। রাহাত কে টাকা পাঠাতে গিয়ে গতমাসেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি। এই মাসে আলাদা করে ১৫০০ টাকা রেখেছিলেন দেখাবার জন্য। কিন্তু আজকে আবার ১০০০ টাকা পাঠাতে হবে। যাকগে, যা হবার হবে, ছেলের পড়া লেখা সবার আগে। ডাক্তার আগামি মাসে দেখাবেন। চিন্তা ঝেড়ে দিয়ে কাজে ব্যাস্ত হলেন তিনি...
দৃশ্য ৩।
শুক্রবার।শীতের মিষ্টি রোদে বাড়ির সামনে উঠানে বড় চেয়ার পেতে বসে আছেন আফজাল সাহেব। লম্বা হাতল ওয়ালা কারুকাজ করা খানদানি চেয়ার। এই চেয়ার টা আফজাল সাহেবের দাদা বানিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি রেডিও তে ভয়েস অফ আমেরিকা ধরার চেষ্টা করছেন। রেডিও শোনা অভ্যাসটাও তার দাদার সুত্রে পাওয়া। পাড়ার নাপিত কে ডেকে পাঠিয়েছেন। নাপিত দীর্ঘ সময় নিয়ে তার মাথায় কলপ মেখে দিবে, শেভ করে দিবে। পাশে রেডিও তে চলবে ভয়েস অফ আমেরিকা। এই সময় টা আফজাল সাহেবের খুবই প্রিয়। এই সময় তাকে ডাকাডাকি করা মানা। নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনে এইটুকুই তো বিলাসিতা। সকাল থেকে বুকের ব্যাথাটা আবার চাগিয়ে উঠেছে। হটাত করে ব্যাথাটা তীব্র হল। বুক থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন আফজাল সাহেব। গলা দিয়ে ফিস ফিস আওয়াজ বের হচ্ছে
ওইদিকে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে রাহাতের মা....
দৃশ্য ৪।
সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক। শরীরের এক সাইড প্যারালাইজড। হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে আফজাল সাহেবের নিথর শরীরটা। তাকে ঘিরে বসে আছে আত্মীয় স্বজন। মাথার কাছে বসে আছে রাহাত। বাবার হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনে গতকাল রাতেই চলে এসেছে। আফজাল সাহেব হাত পা নাড়ানর চেষ্টা করছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তিনি। তিনি অকেজো হলে কিভাবে হবে। চোখ থেকে দু ফোঁটা অক্ষমতার জল গরিয়ে পড়ল।
কিন্তু সেই চোখে এখনো একটা স্বপ্ন। ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে...........................
©somewhere in net ltd.