নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়ারিশ আজাদ নাফির উঠোন

আমি একটু থামি। আমি বুঝি, আমি বোঝার চেষ্টা করি। আমার কোন আফসোস নেই, নেই অভিযোগ। আমি শুধু আমার লোক

আহারে বেচারা

আমি নরাধম অধার্মিক প্রেমিক। প্রেম, রাষ্ট্র , সমাজ, সিসটেম যার কাছে তালগোল পাকিয়ে গোলগাল কিছু একটা হয়ে গেছে

আহারে বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগল মুক্তিযোদ্ধা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৭







উপস্তাপকঃ ভালো আছেন।



মুক্তিযোদ্ধাঃ ভালো থাকার কি আছে ? ৭৫ বছর বয়সে একটা মানুষ কত ভালো থাকতে পারে।

বাতের ব্যাথায় রাত দিন কাতর থাকি।



উপস্তাপকঃ না মানে স্যার মানসিক ভাবে ভালো থাকার কথা বলছিলাম।



মুক্তিযোদ্ধাঃ মানসিক ভাবে কিভাবে ভালো থাকবো। সবাই আমাকে হুজুগে পাগল বলে ডাকে। আমিও চুপ

করে থাকি। সামনা সামনি কিছু বলেনা। পিছনে বলে।



উপস্তাপকঃ একটু বুঝিয়ে বলবেন স্যার



মুক্তিযদ্ধাঃ বুঝো নাই ? বুঝবা কিভাবে। দেশের অবস্থা ভালো না। রাজাকারদের রায় হয়েছে ফাঁসি হয়নি। ইচ্ছা ছিল মরণের আগে ফাঁসিটা দেখে যাব। দেখা যাক হয় কিনা

উপস্তাপকঃ স্যার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় তো মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে কাজ করছে ?



মুক্তিযোদ্ধাঃ কি করছে ? এই যে আজকে তোমরা আমাকে এখানে ডেকেছ কারণ আমি একজন ইন্টারেস্টিং কারেক্টারের মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে টিভিতে দেখালে তোমাদের দর্শক বাড়বে। তার উপর আমার আর্থিক অবস্থা একটু ভালো। পরনের পোশাকও ভালো। কিন্তু আমাদের সাথে যে ছেলেটি সবচেয়ে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তাকে এখন সবাই পাগলা ফরিদ বলে ডাকে। একাত্তরে পুরো পরিবার হারিয়েছে সে। তারপর থেকেই মাথায় সমস্যা। রাস্তায় রাস্তায় হাটে। কেউ খাওয়া দিলে খায়। তাকে ডাকনি। কারণ সে দরিদ্র পাগল। গায়ে একটা বস্তা জড়িয়ে ঘুরে। তাকে ক্যামেরার সামনে আনা উপযুক্ত না।



উপস্তাপকঃ আজকে বিজয় দিবসে আপনার অনুভূতি কি ?



মুক্তিযোদ্ধাঃ অনুভূতি কি হবে। দেশ স্বাধীন করে দিয়েছি। তোমরা আনন্দ করো। আমাদের প্রয়োজন ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে ফুরিয়ে গেছে। যুদ্ধ থেকে ফিরলাম। সবাই আমাদের স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারল না। যুদ্ধে বাঙ্কারে থাকতে থাকতে মানসিক অবসাদ ফ্রাসট্রেশনে ধরা স্বাভাবিক। তোমরা উপাধি দিলা পাগল। ঠিক যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মা্ন সৈনিকদের দিয়েছিল। যুদ্ধ শেষ যোদ্ধার প্রয়োজনও শেষ।



উপস্তাপকঃ স্যার যে আশা নিয়ে আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন তা কতটুকু পুরন হয়েছে ?

মুক্তিযোদ্ধাঃ দেখ ছেলে মুখ সামলে কথা বল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কোন কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ

করিনি। আমাদের মাতৃভুমি কে বাঁচান ছিল আমাদের স্বাভাবিক দায়িত্ত। তোমার ঘরে আগুন লাগলে কি তুমি নিভাবানা।



উপস্তাপকঃ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন ?

মুক্তিযোদ্ধাঃ পরের প্রশ্ন

উপস্তাপক : না মানে স্যার একটু আলোকপাত যদি করতেন ?

মুক্তিযোদ্ধাঃ আলোকপাত করার জন্য আলোর দরকার। সেইরকম আলো ছড়ান রাজিনিতীবিদ আজকাল আর নাই

উপস্তাপকঃ স্যার নতুন প্রজন্মের কাছে আপনাদের কি চাওয়া ?

মুক্তিযোদ্ধা: কোন চাওয়া নাই। মুক্তিযোদ্ধারা এই আশায় যুদ্ধ করে নাই যে যুদ্ধের পড়ে তাদের কে

আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে কিংবা সবাই সালাম ঠুকবে। ইতিহাস মনে রাখবে কিনা এটা প্রজন্মের ব্যাপার। শুধু একটা চাওয়া, এই মাটির সাথে যেন কেউ বেইমানি না করে।

উপস্তাপকঃ স্যার আপনাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা এবং আমাদের স্টুডিও তে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ



মুক্তিযোদ্ধাঃ ধন্যবাদের কিছু নাই। বছরে দুই তিনটা দিবস আসবে। তোমরা আমার মত কাওকে ধরে এনে

মানুষকে দেখাবে।মানুষ আমাদের কথা শুনে একটু চোখের পানি ফেলবে। ব্যাস সারা বছরের মোরাল, এথিকাল,

প্যাট্রিওটিক কমিটমেন্ট পালন করা হবে। পাগলা ফরিদ কে সবাই সামনেই পাগল বলবে। আমাকে পিছনে পাগল বলবে। রমা দাসরা পেট চালাতে বই বিক্রি করবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.