নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিজ্ঞান ও ধর্ম বোঝার চেষ্টায় আছি। আর সেই সাথে ভাবি মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে।

আব্দুল হাদী আল নাফী খান

জল সন্ধানী।

আব্দুল হাদী আল নাফী খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদেশ বিভূঁইয়ে

০৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৩৮

পূর্ণিমা,
তুই তো জানিস, আজকাল কেউ কাউকে দাপ্তরিক ব্যাপার ছাড়া চিঠি লিখে না। আমার বোধ হচ্ছে পত্র সাহিত্য বলে যে কিছু একটা রয়েছে, তা নিজেকে জানান দেয়া দরকার। তাই আজ তোকে লিখছি।
জানিস পূর্ণিমা, সেদিন যেনো বিচিত্ররুপে মানুষের জীবনকে দেখলাম। দেখলাম বলতে, খুব কাছ থেকে অনুভব করলাম। এসব জীবনের কাছে আমাদের বিরহ, অভিমান, এমন কী আমার শেষ কবিতায় লিখা ‘ব্যর্থ প্রেমের হাপিত্যেশ’ সব কিছুকেই ফ্যান্টাসি মনে হয়। কিছু কিছু মানুষের জীবনকে দেখলে, যেসব লোক অভিমান কিংবা প্রেমে ব্যর্থতায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তারা বুঝতে পারতো যে তারা কতটা অবাস্তব জগতের বাসিন্দা।

যাই হোক ঘটনায় আসি। সেদিন এক নেপালী ভদ্রমহিলার সাথে দেখা হলো আমার এক পরিচিত বন্ধুর (আবি ভাই) বাসায়। সেখানে ওই নেপালী পরিবার বাসা শেয়ার করে থাকে। এর আগেও নেপালী বেশ কয়েকজনের সাথে আমার দেখা হয়েছে। কেনো জানিনা, তাদের মাঝে আমি পাহাড়ের রুক্ষতার একটা দেখা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন ব্যতিক্রম, প্রায় মাঝ বয়েসী ওই মহিলার মাঝে ছিলো আদ্যোপান্ত হিমালয়ের শুভ্রতা……

বিয়ের পরপরই স্বামীর সাথে ইউরোপে পাড়ি জমায় অনিতা। বিয়ের দু'বছরের মাথায় জন্ম নেয় সুবল। ছেলেটিকে দেখলাম খুব হাসিখুশি। নয়-দশ বছরের বাচ্চাদের তুলনায় বেশ নাদুসনুদুস। ডাকতেই কাছে এসে খুব সুন্দর করে সাড়া দিচ্ছিল। আমার সংগী তাকে নাচতে বলায় হাত পা ছড়িয়ে এক চোট নেচেই দেখাল। এখানে স্কুলে যাওয়ায় ইংরেজিতে কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সুবল। আমরা বেশ খানিক সময় ধরে এসব সব মজা করছি, আর সেই সাথে চেষ্টা করছি আধা হিন্দি আর আধা ইংরেজিতে অনিতার সরল প্রশ্নের জবাব দেবার। প্রশ্নগুলো অনেকটা এরকম, আমি দেশের বাইরে এসেছি, তারপরও কাজ না করলে আমার চলে কিনা? বিয়ে-থা করিনি কেন? আবি ভাই মজা করে বলল, আমার বাবার অনেক টাকা, এজন্য আমায় কিছু করতে হয়না। আর অনিতা সরল মনে সব বিশ্বাস করে নিল।

যখন কথা হচ্ছিল, সে তখন রান্না চড়িয়েছে রাতের খাবারের জন্যে। আর তার স্বামী মহাশয় তাদের রুমে গা এলিয়ে শুয়েছেন, তাই সুবলও কিচেনে গলা একটু নিচে রাখলো, বাপকে ভয় পায় কিনা। সবার রসিকতা আর ছেলের কর্মকান্ডে সবারই খুব ফূর্তির অবস্থা। অনিতাও হাসছিল। তারপরও অনিতার হাসির মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততার একটা অভাব, বিষাদের তোড়ে হঠাৎ যেনো থমকে যায়। আবি ভাইকে জিজ্ঞেস করায় এক করুণ কাহিনী শোনালেন।

এখানে এই ফ্ল্যাটে ওরা থাকা শুরু করেছে বছর খানিক হলো। এর মাঝে প্রায়ই নাকি অনিতার স্বামী অন্য এক মহিলাকে নিয়ে আসে এই ফ্ল্যাটে রাত্রি যাপনের জন্য। ইউরোপীয় রুচি বিবর্জিত উন্মত্ত যৌনতার কাছে এহেন পদস্খলন খুব আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু বিস্ময়, রাগ আর দুখ চরমে উঠলো যখন পাশ থেকে আরেকজন অই নেপালী লোকটাকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য একটা গালি দিয়ে বলেন, “কতটা অমানুষ হলে এমন একটা বউ থাকার পরো ও অন্য মেয়ে মানুষ নিয়ে আসে। হারামিটা আবার সেই মহিলাকে নিয়ে স্ত্রী-পুত্রের সাথে একই বিছানায় শোয়।”

সারাদিনের ঘুরাঘুরি করার আনন্দ নিমেষে গভীরতর বিষাদে পরিণত হয়। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলা যেটাকে নিয়ে আসে, সে কোথাকার? জানতে পারলাম, সেও নেপালী, স্বামী ছাড়া একাকী এসে উদিত হয়েছে পশ্চিম ভূমে।

-অনিতা কি পুলিশের কাছে বিচার চাইতে পারেনা?

আবি ভাই নাকি একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অনিতা ভেবেছে অনেকবার, কিন্তু সে তো ইংরেজি অথবা পর্তুগীজ কোন ভাষাই রপ্ত করে উঠতে পারেনি, এমনকি কাজ চালানোর মতোও না। পুলিশ তো তার কথা বুঝবেনা। আর উপমহাদেশের গড়পড়তা মেয়েদের তো সিংগেল মাদার হওয়ার স্মার্টনেস নেই, তাই ভ্রষ্ট চরিত্রের হোক আর নির্যাতনকারীই হোক, স্বামীকে ছাড়া তার চলবে না। উপরন্তু অনিতার সমস্ত অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র শুরুতেই দখল করে লুকিয়ে রেখেছে।

মনে মনে ভাবি, আত্মহননের পথ কি ভেবেছে অনিতা? হিসেব করে দেখলাম, নাহ সে ভাবেনি। এত অনিন্দ্য সুন্দর এক ছেলে রেখে সে এই কাজ করতে পারেনা। আর হয়তো তাকে শেরপাদের দৈহিক কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা মনের মধ্যেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই হয়তো প্রতিদিন নতুন করে মরতে হয় অনিতাকে। পিশাচের সংসারে নিজের মনকে ক্ষতবিক্ষত করে সুবলকে বড় করছে।

সুবল কি তার মায়ের কষ্টে কোন প্রলেপ দিতে পারবে বড় হয়ে, নাকি তার বাবার চেয়েও বড় জানোয়ার হবে?

আরো একটা জিজ্ঞাসা উঁকি দিল মনে, আমরা অনেকেই হয়তো মনে মনে ইউরোপের অবাধ যৌনতাকে মনে মনে কামনা করি। কিন্তু আমরা কি কখনো নিজেদের সুবল কিংবা অনিতার জায়গায় বসিয়েছি। বন্ধনহীনতার সুখটুকুই দেখেছি আমরা, বিকৃত আচরণের কদর্য ধ্বংসলীলা নিয়ে কেউ কি ভেবেছি কখনো? কখনো কি ভেবেছি আমার বাবা-মাও যদি ইউরোপের মত বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতো তবে আমার কেমন লাগতো?

থাক পূর্ণিমা। খুব একটা জোরালো হয়নি লিখাটা। মন থেকে ঘটনাটা মুছে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
ভালো থাকিস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.