নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তরালে

স্বপ্ন ছুঁয়ে

নাহিয়ান বিন হোসেন

এবং নির্বাসন

নাহিয়ান বিন হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু ,কেমন আছিস?

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২৬

ক্লাস ওয়ানে পড়ি তখন। বাসা থেকে মিনিট পনেরোর মত লাগে স্কুলে হেঁটে যেতে। মফস্বল শহর , সবাই হেঁটেই যাওয়া আসা করে স্কুলে। যাওয়ার সময় রাস্তায় নিজের ক্লাসের অনেককেই দেখি , সুতরাং তাদের সাথে গল্প করতে করতে স্কুলে চলে যাওয়া। কিন্তু স্কুল ছুটি হলে কে যে কোন দিকে যায় তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই! সবাই নিজের ইচ্ছেমত বাসায় দে ছুট! কিন্তু আমি আর আমার এক বন্ধু প্রতিদিনই এক সাথে স্কুল থেকে ফিরি। কেন? তার বাসা কি আমার বাসার পাশেই? না, তা নয়। বন্ধুটির ভয় আমি যদি হারিয়ে যাই! ঠিকমত বাসা চিনতে পারি কিনা! তাইতো প্রতিদিন দেখা যায় কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, দুইটা পিচ্চি মহা চিল্লাপাল্লা করতে করতে আমার বাসার নিচে এসে হাজির হচ্ছে! তারপর একজন চলে যাচ্ছে! এমনই ছিল সেই বন্ধুর আন্তরিকতা। ক্লাস টুতে ওঠার পর পরই কোথায় চলে গেল সে, জানি না আর।





২১ শে ফেব্রুয়ারীর দিন সকালবেলা স্কুলে প্রভাত ফেরী। স্যারেরা বার বার বলার পর ও বেশিরভাগ ছাত্রই সেদিন আসে না। আর ঘুমাকাতুরে আমি সকাল ছয়টার আগে উঠে স্কুলে যাব, তা তো একেবারে অসম্ভব! কিন্তু একবার ইচ্ছে হল, প্রভাত ফেরীতে যেতেই হবে। সুতরাং, শুভ্রদেবকে বলে রাখলাম একদম সকালে এসে আমাকে ডাকবি কিন্তু! আর অবশ্যই খালি পায়ে আসবি! শুভ্রদেব এসেছিল, খালি পায়েই। কিন্তু অনেক ডাকাডাকি করেও আমার ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি আব্বু। শুভ্রদেব সেদিন একটু ও রাগ করেনি। বরং পরের দিনই স্কুলের কড়িডোরে বসে কিভাবে পিকনিক করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি দুইজন! শুভ্রদেবের সাথে আমার বন্ধুত্ব ক্লাস টু থেকে। শান্ত চেহারার , মাথা ভর্তি চুল আর উদাসী চোখ। এই ছিল শুভ্রদেব। ক্লাশ ফোর পর্যন্ত আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। প্রায় দিনই দেখা যেত স্কুলের দপ্তরি ও আসার আগে আমরা দুইজন এসে বসে আছি স্কুল কম্পাউন্ডে! গম্ভীর মুখে দুই বালক বসে ভাবছে স্কুল খুলতে এত দেরি কেন! আজ প্রিন্সি্পালের কাছে নালিশ দিতে হবে দপ্তরির নামে! আসলে স্কুল খুললে যে এক টাকায় মজার নানরুটি টা পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই আমাদের আগ্রহ বেশি! শুভ্রদেবের মা ছিল না। কাজেই এই শান্ত-উদাসী বালকের যে প্রায় দিন সকালেই স্কুলে না খেয়ে আসা হত তা অনেকেই না জানলেও আমি জানতাম। কিন্তু তাকে নাস্তা করার কথা কি জিজ্ঞেস করব, বরং আমি নাস্তা করেছি কিনা তা নিয়েই বেশি বিচলিত ছিল আমার এই বন্ধুটা। হঠাৎ করেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিল শুভ্রদেব। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে ওরা ইন্ডিয়ায়।







"আমি জানতাম তুই স্কলারশীপ পাবি!, তুই না পেলে কিভাবে হবে?", তুমুল উচ্ছ্বাসে যখন আমার সামনে হাত পা নেড়ে কথা বলে যাচ্ছিল সাকিব তখন ও আমার বোঝার মত বয়স হয়নি যে কতটা বড় মনের হলে বন্ধুর সাফল্যে মানুষ এতটা উচ্ছ্বসিত হতে পারে। ক্লাশ ফাইভে পড়ি তখন।সাকিবকে ডাকতাম লম্বু বলে। আমাদের চেয়ে অনেক লম্বা ছিল ও। তিনটা বছর লম্বু ছিল আমার সেরা বন্ধু। বন্ধুর জন্য মানুষ এতখানি আন্তরিক হতে পারে তা সাকিবকে না দেখলে বুঝতাম না। সেভেনের শেষের দিকে এসে সাকিব চলে গেল, ওর বাবা বদলি হয়ে যাওয়ায়। কি না করেছি দুই জন একসাথে! স্কুল পালানো থেকে শুরু করে বাসায় কোন মিথ্যা বলে বাঁচিয়ে দেয়া, ছুটির দিনে এ্কসাথে টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, নদীর পাড়ে গিয়ে ক্রিকেট খেলা সব কিছুতেই লম্বু আর আমি একসাথে! মনে আছে, যাওয়ার আগের দিন লম্বু কেঁদে ফেলেছিল। সুযোগ পেলেই চলে আসার কথা ছিল আমাদের সেই মফস্ব্লে, শান্ত নদীর পাড়ের শহরটাতে। কিন্তু ব্যস্ততা এমনই এক শব্দ যা বাস্তবতার পাশে আবেগকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চায় না।







পিছনের দিন গুলোর দিকে তাকালে খুব অবাক লাগে! এত গুলো ভালো, অসাধারন বন্ধু ছিল আমার? এই লেখায় তো কিছুই বলা হল না। আরো কতজনের কথা বাদ রয়ে গেল! তাতে কি। বন্ধুরা সব আমার প্রতিদিনের গল্প গুলোতে মিশে আছে। ওদের কখনো বলা হয়নি, তোদের মত ভালো বন্ধু ছিল বলেই আমার এরকম একটা সুন্দর শৈশব আছে। কি জানি, বন্ধুদের হয়ত এ কথা বলতে হয় না, ওরা নিজেরাই বুঝে নেয়! কেননা ওরা তো বন্ধু। জানি না তোরা কে এখন কোথায় ,কেমন আছিস। কিন্তু যেখানেই থাক , ভীষন ভালো থাকিস। অসম্ভব ভালো থাকিস। একটা গানের কথা খুব মনে পড়ছে, গানটা তোদের জন্য,















মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৪

অগ্নিলা বলেছেন: নে হল যেন দিপু নাম্বার টু'র দিপুর কথা শুনছি

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:০০

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: সে জন্যই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় আপু!

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:০৯

উণ্মাদ তন্ময় বলেছেন: আপনি বড়ই দুর্ভাগা যে অত ভালো বন্ধু হারিয়েছেন। সে দিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু তাইফুল। সেই কেজি থেকে আমাদের বন্ধুত্ব, এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। ১৩টি বছর ধরে আমাদের একই তালে পথচলা। এত বছর অনেকের সংসারও টিকে না :P :P :P

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:২৪

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: এটা ঠিক যে আমার অনেক বন্ধুরা হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো আমার খুব ভালো বন্ধু আছে, ক্লাস নাইন থেকে আমার বন্ধু সে! এক লেখায় সব কিছু তো বলা হল না! আপনার এই অসাধারন বন্ধুত্ব টিকে থাকুক সারাজীবন!

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৩৮

আলিম আল রাজি বলেছেন: লেখাটা পড়ে মন খারাপ হলো। মনে পড়ে গেলো অনেক বন্ধুর কথা।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৪১

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: সব সময় ভালো থাকুক আমাদের বন্ধুরা।

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:২৭

সহ্চর বলেছেন: সব সময় ভালো থাকুক আমাদের বন্ধুরা।


ভালো লাগলো।


++++++++++++++

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:০০

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!

৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:০৩

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: সত্যি এরকম কত বন্ধু যে হারিয়েছি কে জানে ।

আমি অনেক টা দিপু নাম্বার টু এর মতই আট দশটা স্কুলে পড়েছি । তাই দেখা যেত একজন একজন করে বন্ধু হারিয়ে যেত ।

আসিও মোর ঘরে ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:৫৭

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: আমার অবশ্য একটা স্কুলেই ক্লাশ ওয়ান থেকে এস এস সি পর্যন্ত পড়া হয়েছিল। কিন্তু কত বন্ধু যে হারিয়ে গেল এর মাঝে। সব সময় ভালো থাকুক আমাদের বন্ধুরা।

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১২

ফাইরুজ বলেছেন: পোস্ট পড়ে নস্টালজিক হলাম। নিজের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেল। সময় করে একদিন সব বন্ধুদের কথা লিখে ফেলবেন।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:৫৮

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: আসলেই সত্যিকারের বন্ধুদের কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। ইচ্ছে আছে আপু লিখে ফেলার। ভালো থাকুন!

৭| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:২৯

ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:

মনে করিয়ে দিলেন অনেক অনেক কথা।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:৫৮

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: আপনিও ও লিখে ফেলেন ভাই আপনার সেই বন্ধুদের কথা।

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৫৪

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: কি সুন্দর করে যে লিখেছেন। পড়তে খুব ভাল লাগছিল। ভাগ্যবান আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:০৫

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু! আপনার জন্য ও অনেক শুভকামনা!

৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৪১

রবিন মিলফোর্ড বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই । আমিও শৈশবে হঠাৎ করেই অনেক অসাধারণ বন্ধুকে হারিয়েছি যাদের কথা এখনো মনে পড়ে। আর ক্লাস এইট এ থাকতে খুব ভাল একটা বন্ধু মারা যায় দুর্ঘটনায় । এখন ভাবতে অবাক লাগে কতটা নি:স্বার্থ আর অসাধারণ ছিল সেই বন্ধুগুলি । আসলে শৈশবের বন্ধুগুলো মনে হয় এরকমই হয় ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:১২

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: আপনার কথাটা শুনে মন খারাপ হল। আসলেই শৈশবের বন্ধুরাই সব সময় সেরা বন্ধু হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.