নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Restless

I want to make me as a blog writter.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ

I like to explain the international affiars.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উঃ কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচী ও বর্তমান সংকটঃ একটি মূল্যায়ণ

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

ওয়েস্ট ফেলিয়া চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপাত্তন হয়। তার পূর্বেও রাষ্ট্র ছিল কিন্তু সেটাকে আধুনিক অর্থে রাষ্ট্র বলা যায় না। যখন আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর সৃষ্টি হল তখন থেকেই আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের আর্শিবাদে মানুষ সময়ের সাথে সাথে মরণঘাতি পরমাণু অস্ত্রের সাথে পরিচয় হতে থাকে। আর পরমাণু অস্ত্র বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ভয়ঙ্কর হত্যাযঞ্জের মধ্যে দিয়ে। তারপর থেকেই বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো এই পরমাণু অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে এবং সে প্রচেষ্টা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও তা মাঝে মাঝেই আঞ্চলিক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টিতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।



সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সংকটকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উত্তেজনা ও বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক সংঘাতে রুপ নেয়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৫০ সাল থেকেই উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তিক্ততার সম্পর্ক শুরু হয়। কেননা তখন বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কোরিয়া কে বিভক্ত করেছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানী সৈন্য কে তাড়ানোর লক্ষ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দঃ কোরিয়ায় সৈন্য মোতায়েন করে এবং পরে এই দুই শক্তি দুই প্রান্তে সমাজতন্ত্র ও পুজিঁবাদী ব্যবস্থার জন্ম দেয়। ১৯৪৮ সালে উঃ কোরিয়া নিজেকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে ১৯৫০ সালে দুই কোরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৩ সালে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হওয়ার পর দঃ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর ফলে দঃ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি বৈধতা পায়। অন্যদিকে উঃ কোরিয়া ১৯৬৩ সালে চীনের সাথে একটি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। তখন থেকেই এই অঞ্চলে দুই কোরিয়াকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝেই আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। বর্তমানেও যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য দঃ কোরিয়া ও জাপানে অবস্থান করছে। তাই উত্তর কোরিয়া পাশ্ববর্তী দেশে মার্কিন সৈন্য থাকাকে নিজের জন্য হুমকি বলে মনে করে। ফলে তখন থেকেই উত্তর কোরিয়া সামরিকীকরণ ও পরমাণু ফলে দেশটির উপর জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।



এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়া পরমাণু বোমার বিস্ফারণ ঘটিয়েছিল। গত বছর ডিসেম্বরে উঃ কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ পরীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পূর্বেই জাতিসংঘ দেশটির উপর আবারো অবরোধ আরোপ করলে দেশটি আবারো কিছুদিনের মধ্যেই পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানেরার কথ বলেছে। এছাড়াও উঃ কোরিয়া বলেছে যে, মার্কিন ভু-খন্ডে আঘাত হানার মত অস্ত্র তাদের রয়েছে এবং পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের অপর পারে থাকা যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও তরুন নেতা কিম জং উন বলেছে জাতিসংঘের অবরোধ বৃদ্ধি করা হল ‘যুদ্ধের শামিল।’ ফলে দঃ কোরিয়া ও তার মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।



এখন প্রশ্ন হলো যে, ইরান ও উঃ কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচীতে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এত দৌড় ঝাপ কেন? সচেতন মহল সকলেই জানে যে, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধের জন্য অনেক চুক্তি হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এনপিটি, সিটিবিটি। তাই কোন রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাকে বাধা দেবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। উল্লেখ্য যে, উঃ কোরিয়া ১৯৮৫ সালে এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং পরবর্তীতে এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু বিশ্বে যে সকল দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করেছে তার মধ্যে ইসরাইল, ভারত ও পাকিস্তান এনপিটি অনুসমর্থন করেনি এবং ভারত গত ২৭ জানুয়ারী সমুদ্রের গভীর থেকে নিক্ষেপণযোগ্য পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীনের হাতে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ১৯৮৬ সালে ইসরাইলের হাতে দুই শতাধিক পরমাণু বোমা ছিল এবং বর্তমানেও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্লুটোনিয়াম রয়েছে যা দ্বারা বছরে দশটি পরমাণু বোমা তৈরী করা যাবে। এছাড়াও পাকিস্তান মাঝে মাঝেই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। কিন্তু এসব দেশের উপর পশ্চিমা বিশ্বের কোন অবরোধ নেই কেন? কারণ এসব দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র। অন্যদিকে উঃ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের চির শত্রু। কারণ দেশটি যদি পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করে তাহলে পূর্ব এশিয়ায় একটি শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের স্বার্থের হানি হবে।



এদিকে পূর্ব এশিয়ার কোরিয়া উপদ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ গুরত্ব বহ। এর প্রভাব চীন ও জাপানের উপরও পড়ে। বর্তমানে দুটি কারণে এই অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রথমত, চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এবং উঃ কোরিয়ার প্রতি চীনের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অসুবিধাজনক। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য অনেকটই খর্ব হবে। দ্বিতীয়ত, উঃ কোরিয়ার সাথে দঃ কোরিয়ার পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দঃ কোরিয়ার উপর যে প্রভাব ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। কেননা পূর্বে দুই কোরিয়ার তিক্ত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুব সহজেই উঃ কোরিয়ার উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পেরেছিল এবং সুবিধা আদায় করেছে। কিন্তু বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং জাতিসংঘ উঃ কোরিয়ার উপর যে অবরোধ আরোপ করেছে তাতে দক্ষিণ কোরিয়া এখনও সমর্থন করেনি।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহৎ শক্তিদ্বয়ের স্বার্থের কারণে দুই কোরিয়া বিভক্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দুই কোরিয়াকে একত্রীকরণের অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দঃ কোরিয়ার অবিসংবাদিত নেতা কিম দায়ে জং দুই কোরিয়া কে একত্রকরণের জন্য ‘সানসাইন পলিসি’ গ্রহন করেন। বর্তমানে দঃ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন ক্ষমতায় এসে উঃ কোরিয়ার সাথে পারস্পারিক সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন এবং পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার আচরণে যারা মাঝে মাঝেই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন তাদেরও অভয় দিয়েছেন। কিন্তু পিয়ংইয়ং দুই কোরিয়া একত্রকরণের ক্ষেত্রে দঃ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্যের অবস্থান ও উঃ কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচীতে বাধা দান প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করে। তাই দেখা যায় যদিও অনেক সময় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু বৃহৎ শক্তিগুলোর রাজনীতি এ দুটি দেশকে একত্র হতে দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। কারণ দুই কোরিয়া একত্র হয়ে গেলে এ অঞ্চলে মার্কিন, চীন ও রাশিয়ার রাজনীতি ক্ষুন্ন হবে এবং কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া সহ বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জাপানের জন্য পরবর্তীতে হুমকি হয়ে দাড়াবে।



তাই দেখা যাচ্ছে যে, বৃহৎ শক্তিগুলো কূট-কৌশল ও উঃ কোরিয়ার একগুয়েমির কারণে এ অঞ্চলে মাঝে মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে উঃ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী কে জাপান তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও দঃ কোরিয়া কে নিয়ে একটি নিরাপত্ত বেষ্টনি গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের একের পর এক অবরোধ উত্তর কোরিয়াকে আরও বেপরোয়া করেছে এবং আবারো দেশটি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো সিদ্ধান্ত নিেেয়ছে ও প্রস্তুতি শুরু করেছে। ফলে কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি স্থিতিশীলতা একটি জটিল প্রসঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ সংকট নিরসনে ২০০৬ সালে বেইজিং এ ছয় জাতির মধ্যে আলোচনা হয়েছিল এবং উঃ কোরিয়া দাবি করেছিল যে দেশটির উপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও যুক্তরাষ্ট্র যে তার উপর আগ্রাসন চালাবে না তা লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি না হওয়ায় আলোচনা ভেস্তে যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র একটি সুদূর পসারী উদ্দেশ্য নিয়ে দঃ কোরিয়া ও জাপানে সৈন্য মোতায়েন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল যে, ভবিষ্যতে উঃ কোরিয়ার হুমকি কেটে গেলে এসব সৈন্য এই অঞ্চলে ভারসাম্য শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এদিকে দুঃসাহসী নেতা কিম জং উন বলেছেন, এমনিতেই দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চলছে তাই নতুন করে হারানোর কিছু নেই, তিনি বিশ্বাস করেন ‘বন্দুকের নলের শেষ প্রান্তেই থাকে শান্তি।’



তাই দেখা যাচ্ছে যে উঃ কোরিয়া আরো বেশি বেপরোয়া ভাব দেখালে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর ফলে শুধু পূর্ব এশিয়ায় নয় বরং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এর প্রভাব পড়বে এবং আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট হবে। তাই বৃহৎ শক্তি ও জাতিসংঘের উচিত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞাকে একমাত্র পন্থা না ভেবে আলোচনার মাধ্যমে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সংকট নিরসনে উদ্দ্যোগী হওয়া এবং বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি এনপিটি ও সিটিবিটি কে কার্যকন করতে সকল দেশের সহযোগিতা করা।







মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

অনিক আহসান বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট । ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.