![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I like to explain the international affiars.
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাহায্য, সহযোগিতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতার কোন বিকল্প নেই। আর এই কূটনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আধুনিক বিশ্বে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সফর খুবই গুরত্বপূর্ণ। কেননা এই সফরের মাধ্যমে অনেক দেশের সম্পর্কের মাত্রা অনুধাবন করা যায়। ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সফর একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে কাজ করছে। ভারতের প্রথম বাঙ্গালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রণব মুখার্জি ৩ থেকে ৫ মার্চ দুই দিনের অফিসিয়াল সফরে ঢাকা আসছেন। আর তার সফর প্রস্তুতি নিয়ে দেশের কূটনীতিক মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের নিরাপত্তা দিতে দেশটির বিশেষ নিরাপত্তা দল স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) এর সদস্যরা ঢাকায় এসেছেন।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম কোন বাঙ্গালী প্রেসিডেন্ট। আর এই প্রথম বাঙ্গালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা হবে তার প্রথম ঢাকা সফর। অনেকেই মনে করছেন মুখার্জির এই সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক জোড়দার হবে। প্রেসিডেন্ট প্রণব ঢাকা সফরে অনেক বেশি সম্মান ও মর্যাদা পাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে তা শুধু প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নয় বরং একজন দক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে। কারণ পারিবারিক সূত্রে বাংলাদেশের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। কেননা তার স্ত্রীর বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায়। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি ভারতে একজন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে অনেক বেশি সহযোগিতা করেছিলেন।
২০১১ সালে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতাকারী বন্ধুদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই আলোকে প্রণব মুখার্জি তার সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনাত সম্মাননা’ গ্রহন করবেন। এর আগে ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। আর সেটা গ্রহন করেন ভারতের কংগ্রেসের প্রধান ও গান্ধীর কন্যা সোনিয়া গান্ধী।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামীলিগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরত্ব প্রদান করে। যার ফলে ২০১০ সালের জানুয়ারীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। এর পরেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোড়দার ও অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১১ সালের সেপ্টেমবরে ঢাকা সফর করেন। ২০১২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেীধুরী ভারত সফর করেন এবং সেই সময় প্রণবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ট্রাক টু ডিপলোমেসির অংশ হিসেবে গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল দিল্লি সফর করেন এবং মুখার্জির সাথে সাক্ষাত করেন। এছাড়াও গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতৃ বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেছেন। গত ২৮ জানুয়ারী ঢাকায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাক্ষর করে ‘বন্দিবিনিময়’ ও ‘ভিসা প্রক্রিয়া’ সহজ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি। গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ঢাকা সফর করেন এবং দুই দেশ একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোড়দার, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং বিদ্যুৎ সেক্টরে সহযোগিতার কথা জানান। এছাড়াও বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ১শতাংশ হারে সুদ নিয়ে ভারতের যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের কথা, ভারত তার ৯২ শতাংশ এখন দিতে সমর্থ বলে জানিয়েছেন।
তাই দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক জোড়দার করার জন্য উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা সফর করছেন। প্রণব মুখার্জি বিভিন্ন কাজে পূর্বে অনেকবার ঢাকা সফর করেছেন। তবে গত বছর প্রণব মুখার্জি ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সফর করেছেন। সেই সময় তিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। যার ফলে গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে এসেছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে প্রতিশ্রুত অর্থের ৫০ মিলিয়ন ডলারের চেক হস্তান্তর করেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে,প্রণব মুখার্জির এই ঢাকা সফরে বাংলাদেশের সরকার ভারতের সাথে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ইস্যু ও অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবে। বিশেষ করে তিস্তার পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে। কেননা এই চুক্তি ২০১১ সাল থেকে ঝুলে রয়েছে। সেই সময় মমতা বন্দোপাধ্যায় এর বিরোধীতা করার কারণে। দ্বিতীয়ত সীমান্ত চুক্তি এবং সেই সাথে ছিটমহল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। কেননা বাংলাদেশ ভারতের ছিটমহল বুঝিয়ে দিলেও ভারত এখনও বাংলাদেশের ছিটমহল গুলো বুঝিয়ে দেয় নি। উল্লেখ্য, প্রত্যেক সফরেই সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল সমস্যা ও তিস্তার পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে এবং বল হচ্ছে খুব দ্রুতই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে। এরই মধ্যে দিয়ে দুইটি বছর অতিক্রম হয়ে গেল। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে যে সব চুক্তি জরুরী সেসব বিষয়ে কোন তাড়াহুড়া নেই। বরং প্রত্যেক সফরে অন্যান্য বিষয় গুলোকে ঝুলিয়ে থাকা বিষয়গুলোর চেয়ে বেশি গুরত্ব দেয়া হয়।
তবে আশার কথা হচ্ছে গত মাসের ২১ তারিখে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ছিটমহল ফেরত দেয়ার বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের ছিটমহল ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পেশ করেন এবং এটি ভারতের লওয়ার হাউসে তোলা হয়েছে। যদি ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এটি পাশ করাতে পারে তবে ভারত বাংলাদেশকে ছিটমহল বুঝিয়ে দিতে আর কোন বাঁধা থাকবে না।
তাই এটা সত্য যে, যদি ঝুলিয়ে থাকা বিষয় গুলো ভারত সরকার আন্তরিকতার সাথে সমাধান করতে পারে তবে দুই দেশের মধ্যে বিশ্বস্ততা থাকবে এবং আগামী সেপ্টেমবরে শেখ হাসিনার যে ভারত সফরের কথা রয়েছে তা আরো দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরত্ব বহন করবে। কেননা আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বৈশ্বিক পরিবেশে ভারতের নিকট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের নিকট ভারতের প্রয়োজনীতা অনেক বেশি। তাই আমরা আশা করতে পারি যে, প্রণবের সফরকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে সর্ম্পক আরো জোড়দার হবে এবং সাহায্য- সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে এগিয়ে আসবে। বাণিজ্যিক,সাং¯স্কৃতিক, পারস্পারিক সহযোগিতা ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশ একসাথে কাজ করবে।
©somewhere in net ltd.