নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Restless

I want to make me as a blog writter.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ

I like to explain the international affiars.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিশরে গণতন্ত্রায়ণের পথে বাধা

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১

শৃঙ্খলা





২০১০ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই আরব বসন্তের সুবাতাস বইছে। যা শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়া থেকে। স্বৈরাচারী সরকারের দুর্নীতি ও দমন নিপীড়নে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছিল। ফলে এই ক্ষোভ জন্ম দেয় আরব বসন্তের মত এক গণ আন্দোলন। যে আন্দোলনের গতি মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসকদের ভিত নড়বরে করে দেয়। আর এই আরব বসন্তের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তিউনিশিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও মিশরে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দেশ কয়টিতে গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হয়ছে। কিন্তু এসব দেশে সেকুলার পন্থী দলগুলো ও পাশ্চাত্যের কূট-কৌশল গণতন্ত্রের পথে বাধাঁ হয়ে দাড়িয়েছে।



মিশরে তিন দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর দেশটিতে স্থিতিশীলতা যেন কোনভাবেই আসছে না বরং গণতন্ত্রায়ণের পথে বিরোধী সেকুলার দলগুলোর অযাচিত বিরোধিতা থেমে নেই। এদিকে বিপ্লবের পর দেড় বছরের মত দেশটির কর্তৃত্ব ছিল সামরিক জান্তার হাতে। এখনও দেশটির শাসন ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব রয়েছে এবং সেনাবাহিনী আরো বেশি প্রভাব বিস্তারের সুযোগে রয়েছে। মিশরে গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হয়ছিল সেটিও বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক আদালত। নির্বাচনের পর সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত প্রথম গণপরিষদও বাতিল করা হয়ছিল। অবশেষে নানা জটিলতার মধ্যে দিয়েও ৬৪ শতাংশ ভোটের সমথর্নে সংবিধান অনুমোদিত হয়। আর এসব ক্ষেত্রে বিরোধীতার অন্যতম কারণ হলো মুসলিম ব্রাদাহুডের বিজয় ও মিশর কে ইসলামি রাষ্ট্রে পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।



সংবিধান অনুমোদিত হওয়ার সাথে সাথে আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মিশর। বিপ্লবের দ্বিতীয় বার্ষিকী উদ্যাপন ও পরে পোর্ট সৈয়দে ফুটবল দাঙ্গায় ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২১ জনকে মৃত্যুদন্ড দানের রায়কে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা আরো ব্যাপক রুপ নেয়। গত ৮ মার্চ এই মামলার রায়ে আরো কয়েকজনকে শাস্তি দেয়া হয়। আর এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আবারো সহিংস হয় উঠতে পারে।



মিশরে সেকুলার পন্থী দল ও কিছু মানুষের সহিংস আন্দোলনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত মোবারক সময়ে যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাভোগী ছিল তারা স্ব স্ব কর্তৃত্ব হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। তাই তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে ও অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা করছে। দ্বিতীয়ত যারা তাহরির স্কয়ারে ব্রাদারহুডের পাশাপাশি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তারা নির্বাচনের পর ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পায় নি। তাই তারা মুরসিকে মেনে নিতে পারছে না।



অন্যদিকে সংবিধানে ইসলামি শরীয়া মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। তাই সেকুলারপন্থীদের অভিযোগ যে, এতে নারীদের অধিকার বঞ্চিত হবে, নারীরা সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে না। অন্যান্য ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে। এরই মধ্যে আবার দাবি উঠেছে সেনাবাহিনীর শাসনই ভাল। অবশ্য এরা সংখ্যায় অল্প হলেও আওয়াজটা বরাবরের মতই অনেক বড়। এবার তাদের অভিযোগ মুরসি একনায়কের মতই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিপীড়নমূলক শাসন করছেন এবং ইসলামপন্থীদের গুরত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে বসাচ্ছেন। ফলে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য রীতিমত সেনাবাহিনীকে উসকে দিচ্ছে এসব সেকুলার দল ও কপটিক খ্রীষ্টানদের একটি অংশ।



কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মুরসির বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক সহিংসতা ও আন্দোলন হচ্ছে তাতে সবার ঐক্যবদ্ধ কোন দাবি নেই। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দাবি হলো মুরসিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। নির্বাচনে পরাজিত একটি অংশ দাবি করছে সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। মোবারক পন্থীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাদের অবস্থান নিয়ে। ফলে তারাও এসব পশ্চিমা সমর্থন পুষ্ট সেকুলার দলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যাচ্ছে।



এদিকে প্রেসিডেন্ট ড.মুরসি ২২ এপ্রিল সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ায় মিসরের পরিস্থিতি দৃশ্যত আরো জটিল হচ্ছে। কারণ নির্বচনী আইনে গলদ থাকার ছুতায় সাংবিধানিক আদালত সেটি বাতিল করে দিয়ে ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টিকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করে। তাতে রাজনীতিতে নতুন এই দলটি দিশা হারায়নি। বরং এ পর্যন্ত সাংবিধানিক আদালত ও সামরিক পরিষদের বিভিন্ন জটিলতা মুরসি দক্ষতার সাথে পরাস্ত করেছে। কিন্তু এদিকে মিশরের সাংবিধানিক আদালত নানাভাবে সরকারকে পেছনে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে সরকারের সাথে বিরোধীতার মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে দেশটির ন্যাশনাল সলভেশন ফ্রন্ট ও বামপন্থী দল।



এই সলভেশন ফ্রন্ট দেশটির নির্বাচনের পর থেকে সরকারের বিরোধিতা করে আসছে। অথচ এ দলটির কার্যক্রম অনেকটাই অগণতান্ত্রিক। খসড়া সংবিধান নিয়ে গণভোটের ক্ষেত্রে তারা অযৌক্তিকভাবে বিরোধিতা করেছে। সংবিধানের বিপক্ষে জনমত গঠনের পরিবর্তে গণভোটকে শক্তির জোরে বাতিল করতে চেয়েছে। মুরসি আলোচনার জন্য তাদের আহব্বান করেছিল এবং তিনি গণভোট পেছানোর অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু আলোচনা না করে সহিংস আন্দোলন চালিয়েছে। অথচ জনগনের সমর্থনে দেশটিতে গৃহিত হয়েছে নতুন সংবিধান।



তাই দেখা যাচ্ছে যে, গণভোটের সময় যেভাবে এই দল বিরোধিতা করেছে, এবার ঘোষিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ঠিক একই রকম অবস্থান নিয়েছে সেকুলাররা। আর এর সাথে যোগ দিয়েছে পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট এল বারাদি ও আমর মুসা। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হলে কিছুটা তাদের ঝুড়িতেও আসবে বলে তারা মনে করছিল কিন্তু মুরসির বিজয়ের মধ্যে দিয়ে তাদের সুখসপ্ন ভেঙ্গে যায়। ফলে তারা এখন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এই জোটে যোগ দিয়েছে। অথচ সংবিধান ও নির্বাচন নিয়ে দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল আল নূর পার্টি কোন আপত্তি করেনি। কিন্তু নির্বাচনে দলটি ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।



এদিকে প্রেসিডেন্ট মুরসি আবার তাদের প্রতি আলোচনা ও সমঝোতার আহব্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেকুলাররা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। তারা কোন সমঝোতা ও আলোচনায় আসতে চান না। ফলে সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে আবারো সংকট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কেননা রাস্তার আন্দোলন যে মাত্রা পাচ্ছে তাতে সন্দেহ সংশয় বেড়েই চলছে। মুরসির প্রচেষ্টায় যতটুকু গনতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে তা ব্যহত করতে এসব সেকুলার দল উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ এসব সেকুলার দল জনমতের অতি ক্ষুদ্রাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।



মিশরে মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় সাধারণ জনগণের শ্লোগান ছিল ‘রুটি,স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার। ৩০ বছর স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের মত বিষয়গুলো ভেঙ্গে পড়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই বিপ্লব পরবর্তী এই নবীন ইসলামি রাষ্ট্রটির মানুষের চাওয়া পাওয়া অনেক বেশি। তাই মুরসি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির গণতন্ত্রায়ণের পক্ষে ও মানুষের অধিকারটুকু নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মিশরের রাজনৈতিক অন্ধকারে নিমজ্জিত কিছু মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হলেও সরকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকামীতা মানুষের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি।



একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ক্ষমতা গ্রহনের ৮ মাসের মধ্যেই মুরসি মিশরকে অনেকটাই গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের যাতাকলে থাকা দেশটিতে বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মুরসি সেনাপ্রধান, সেনা গোয়েন্দাপ্রধান ও প্রতিরক্ষমন্ত্রী পদে রদবদলের মতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপও নিয়েছেন। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরও সংবিধান প্রণয়ন ও গণতান্ত্রিক রুপান্তরের পথ থেকে তিনি সরে আসেননি। অর্থনৈতিক স্থিতি ও কর্মসংস্থানের জন্য তিনি আইএমএফ এর সাথে ইতোমধ্যে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং ইসরাইল ইস্যুতে প্রান্তিক অবস্থান না নিয়ে মধ্যবর্তী সমঝোতার পথ নিয়েছেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বিরতিতে রেখেছেন গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থাৎ তিনি পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নমনীয়তার পরিচয় দিয়েছেন।



অন্যদিকে মোবারককে সমর্থনকারী সৌদি আরবে তিনি প্রথম সফর করেছেন। কাতার ও ইরানের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করেছেন। সংবিধান প্রণয়নের সময়ে তিনি আন্দোলনের মুখে তার ডিক্রি প্রত্যাহার করেছেন। পূর্ববর্তী সামরিক পরিষদের মন্ত্রসভার সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। মন্ত্রীসভায় ব্রাদারহুডের সদস্যরা যেমন রয়েছে, তেমনি আছেন বাইরের টেকনোক্র্যাট ব্যক্তিরা। মাদক ব্যবসা বন্ধ করেছেন। নারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নিয়েছেন দায়িত্বশীল ভূমিকা। রাস্তায় নেমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছেন বিরোধী দলকে। চীন ও আমেরিকার শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে তিনি আলোচনা করেন। জার্মান সফর করেছেন এবং তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। আর এ সবই তার ভারসাম্যমূলক নীতিরই প্রকাশ।



ফলে মোবারক আমলের ৩০ বছরের দুর্নীতি যুক্ত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে তিনি প্রশাসনে হয়তো কিছু ক্ষেত্রে ব্রাদারহুডের লোকদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে এখানে আনুগত্যের বিষয়টি হয়তো স্থান পাচ্ছে। কেননা এটি না করলে মুরসির পক্ষে গণতান্ত্রিক রুপান্তর ও প্রশাসন চালানো হয়ে পড়বে অনেক কঠিন। আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সেকুলার দলগুলো সামান্য ছুতা নিয়ে রাস্তায় নেমে সহিংস আন্দোলন চালিয়ে দেশটির গণতন্ত্রায়ণের পথে বাধাঁ সৃষ্টি করছে এবং পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করছে। কেননা সহিংসতা চালালে মানুষ নিহত হবে এবং বিক্ষোভ দেশীয়, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে স্থান পাবে, আর এই সুযোগ নিয়ে পশ্চিমারা এই ইসলামপন্থী দলকে চাপে রেখে ঐসব সেকুলার দলের মাধ্যমে তাদের সুবিধা আদায় করবে। বিনিময়ে মিশরবাসী পাবে সংঘাত ও লাশের মিছিল। অথচ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকা সংগঠন ব্রাদারহুড সরকার গঠনের পূর্বেই মিশরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অনেক অবদান রেখেছে। আর সেই দলের মুরসির দ্বারা গণতন্ত্র রক্ষা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধীরা তা বুঝতে পেরেও নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। যা দেশটির গণতন্ত্রায়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.