নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Restless

I want to make me as a blog writter.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ

I like to explain the international affiars.

রাশিদুল ইসলাম নাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার ট্রাজেডিঃ এর পরে কোথায়?

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭

বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার দাবানলে পড়ে মানুষ দিশেহারা। যেন জরুরি অবস্থা চলছে। বাইরে বের হয়ে স্বাধীন ভাবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম। হরতালের পর হরতাল। থেমে নেই বিরোধীদল। আবার মাঝে মাঝে বিরোধীদলের কর্মসূচীকে প্রতিহত করার জন্য সরকার পক্ষের চলছে পাল্টা কর্মসূচী ও হরতাল। এরই মাঝে তের দফা বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু তাদের দাবি গুলো অনেকটাই মধ্যযুগীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে সরকার ও বামপন্থী অনেক বুদ্ধিজীবী। তাছাড়া তের দফার মধ্যে এমন একটি দাবি রয়েছে যেটা মানা হলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ৪০ লাখ মহিলা শ্রমিককে ঘরে ফিরে যেতে হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে গার্মেন্টস শিল্প। যত সব রাজনীতি ও বড় বড় মুখের বুলি এসব নিরীহ গরিব শ্রমিকদের নিয়ে। কিন্তু তাদের কি হলো, তারা যেখানে কাজ করে তার পরিবেশ কেমন, তাদের যে বেতন দেয়া হয় তা দিয়ে তারা খেয়ে পরে বাচঁতে পারছে কিনা তা দেখার কেউ নেই । শুধু সুযোগ পেলেই তাদের নিয়ে রাজনীতি ও তাদের ঠকিয়ে এক শ্রেনীর পুজিঁপতির পকেট ভর্তি করার পায়ঁতারা। জোর করে তাদের শ্রম আদায় করে নিজেরা বড় বড় ফ্লাটের মালিক হওয়া আরও কত কি? এমনকি কোন দুর্ঘটনা ঘটলেও তাদের দ্রুত উদ্ধার করার মতো সামর্থও আমরা রাখি না।



এমনি একটি ঘটনা ঘটে গেল সাভারে একটি গার্মেন্টস কারখানায়। ৯তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির তিনটি তলায় কাজ করত খেয়ে পরে বাচাঁর আশায় গ্রাম থেকে আসা চার থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক। ২৪ তারিখ সকাল বেলা ঘটনাটি ঘটলেও এখন পর্যন্ত দেশের যতটুকু প্রযুক্তি গত সামর্থ আছে সেটুকু দিয়েই উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে সাধারন মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীরা। জানা যায় ২৩ তারিখেই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রকৌশলি, বিজিএমই, সাভার পৌর মেয়র ও অনেকেই ভবনটি ঝুকিপূর্ণ বলে বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু ২৪ তারিখ ছিল ১৮ দলের ডাকা হরতাল। আর ভবনটির মালিক হচ্ছে সাভারের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। ঐদিন শ্রমিকরা ঝুকিপূর্ণ ভবনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপরও যুবলীগ নেতা ও গার্মেন্টস মালিকরা হরতালের দিন নিজেদের কারখানা খোলা রাখার বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে শ্রমিকদের বেতন কাটার ভয় দেখিয়ে জোর করে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করায়। কি আর করার নিরীহ গরীব শ্রমিক পাঁচ হাজার টাকা পায় তার মধ্যে থেকে যদি কিছু টাকা কেটে নেয় তবে আর কি থাকে? তাই নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজে যোগ দেয় এসব অসহায় মানুষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রমিকদের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে যায় নয় তলা ভবনটি।



২৪ তারিখ সকাল বেলা থেকেই ভবনের নিচে চাপা পড়া এসব অসহায় জীবীত ও মৃত শ্রমিকদের উদ্ধার কাজ চলছে। মানবতার আর্তনাদে প্রকম্পিত হচ্ছে সাভার এলাকা। ভীতরে আটকা পড়া শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি। ভেতর থেকে অনেকেই চিৎকার ও আর্তনাদ করছে বের হওয়ার জন্য। কারো পা আটকে আছে কারো বা হাত। একজন বলছিল আমার পা কেটে আমাকে বের করো। বাহির থেকে অনেকেই বলছে হে আল্লাহ আমার বুকের মানিককে আমার কাছে ফিরে দাও। কেউবা গ্রাম থেকে ফোন করছে বাবা তুই বাড়ি আয়, আমরা না খেয়ে থাকবো কাজ করার দরকার নেই । পাশেই একজন ভাই বলছিল আল্লাহ আমার দুই বোনকে আমার মায়ের কাছে দিয়া দাও। দুই বোনের একজনের নতুন বিয়ে হয়েছে এখনও শশুর বাড়িতে দেয়া হয়নি। ছোট একটি ছেলে বলছিল হায়রে ভাই আমাদের জীবন! অনেকেই ভেতর থেকে ফোনে কথা বলছে এবং তাদের উদ্ধার করার আকুতি জানাচ্ছে। এরকম আরো অনেক কথা ও হ্নদয় কাপাঁনো মানবতার আর্তনাদ। সাভারের মেডিকেল গুলোতে দেখা যাচ্ছে লাশের সারি। ধারণা করা হচ্ছে লাশের সংখ্যা হবে দুই তিন পাচঁশ বা তারও বেশি।



একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, বাংলাদেশে এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০০৫ সালে সাভারের জামগড়ার স্পের্কটার্ম গার্মেন্টস ভবন ধসে ৮০ জন লোক মারা গিয়েছিল এবং গত বছর তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস এ আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় ১৫০ জন শ্রমিকের। সেই সময় বলা হয়েছিল তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু তদন্তও হয়নি দোষীরা শাস্তিও পায়নি। কারণ একটাই ঐসব বুর্জুয়াদের টাকায় তো চলে রাজনীতিবিদ ও তদন্তকারীরা। এবারের ঘটনায় শ্রমিরা মালিক সোহেল রানার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা যে কোন কাজে আসবে না তা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে সহজেই বুঝা যায়। কারণ এই সোহেল রানাও যে একজন প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা। তিনি এখনও ধরা ছোয়ার বাহিরেই রয়েছেন। আর থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ তার পিছনে রয়েছে অদৃশ্য শক্তি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে বলছেন দোষীরা যে দলেরই হোক তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে কিন্তু রাতে বিবিসিকে দেয়া এক মন্তব্যে নিজের স্থান পরিবর্তন করলেন এবং এই ভবন ধসের ঘটনাতেও দায়ি করলেন বিরোধী দলকে বললেন, ফাটল ধরা ভবনটি মৌলবাদিরা ও বিএনপি মিলে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। হায়রে দেশ! একদিকে মানবতার ক্রন্দন অন্যদিকে রাজনীতির এই বিভৎস চিত্র।



বলাই বাহুল্য, আমাদের দেশে খুব প্রচলিত একটি বিষয় যে এরকম কোন ঘটনা ঘটার পর রাজউকের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বা বিজিএমই নেতারা একটি সাধারণ সাদামাটা কথা বলেই পার পেয়ে যান। বলেন যে, ভবনটি পাঁঁচ তলার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানে নয় তলা করা হয়েছে। অথবা ভবনটি সঠিক কোড ব্যবহার করে তৈরী হয়নি। সঠিক উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। আরো অনেক কথা। কিন্তু কথা প্রশ্ন হলো যে, ফার্মগেটের র‌্যাংস ভবন অনুমোদনের চেয়ে যদি বেশি তলা নির্মাণের পর রাজউক তা ভেঙ্গে ফেলতে পারে তবে এই ভবন গুলো খুজেঁ বের করে ভেঙ্গে ফেলতে সমস্যা কোথায়? আপনারা না জানলেও সাধারণ মানুষ জানে সমস্যা কোথায়। শুধু রানা প্লাজা নয় এরকম আরো অনেক ভবনই রয়েছে যেখানে শ্রমিকরা জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছে। অন্যান্য দেশে ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি গুলো অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা তদন্ত করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে কিছু টাকা ঘুষ দিলেই জলাডোবাতেও নয় তলা ভবন নির্মান করা যায় আর নিয়ম অনুসরণ কিংবা তদন্তের তো প্রশ্নই আসে না। প্রকৃত সত্যিটা হলো চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। ঘটনা ঘটেছেতো এখন নানা উপদেশ ও নানা কথা।



২০০৫ সালের ঘটনায় যখন উদ্ধার কমীর্রা কাজ করছিলেন তখনও অনেক সময় লেগেছিল। কারণ বাংলাদেশে কোন উন্নত প্রযুক্তি নেই যে তা দিয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানো যাবে। সেই সময়ে প্রকৌশলী ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এসব দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ও গুরত্বপূর্ণ ডিভাইস প্রয়োজন তার একটি তালিকা দিয়েছিলেন সরকারকে। কিন্তু আজ অবধি এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। যার প্রমাণ সাভারেই দেখা যাচ্ছে। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেই রাশিয়ার সাথে ১০০ কোটি টাকার একটি চুক্তি সই করে এসেছেন সেনাবাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য। আমরা জানি বর্তমান বিশ্বে বাস্তববাদী তত্ত্বের আলোকে প্রত্যেক রাষ্ট্রই তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করছে। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে আগামী কয়েক দশকে কোন রাষ্ট্রের দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা না দিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দিয়ে কি হবে সেটা প্রশ্ন থেকে যায়। আজ একটি ভবন ধসে গেলেই যে অবস্থা হয় সৃষ্টিকর্তা না করুক যদি ভুমিকম্প হয় তবে অবস্থা কি হবে সরকারের পক্ষ থেকে সেটা একবারও কি চিন্তা করা হচ্ছে? আজ যদি আমাদের উন্নত প্রযুক্তি থাকতো তবে দুই তিন দিন দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে এসব নিরীহ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়তোবা লাগতো না। খুব কম সময়ের মধ্যেই অনেককেই জীবিত বের করে আনা সম্ভব হতো।



এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা (বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ডেকে এনে নির্মম হত্যাকান্ড) ঘটার পেছনে যে শুধু উন্নত প্রযুক্তি নেই এর মধ্যেই আমাদের অসামর্থতা পরিলক্ষিত হয়নি বরং আমাদের দেশে দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরও অভাব রয়েছে। এর অবশ্য একটি কারণ রয়েছে আর তা হলো ব্রেইন ড্রেইন। বাংলাদেশের যারা বুয়েটসহ অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা জীবন শেষে বের হচ্ছে তারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বেশির ভাগই দেশের বাহিরে পাড়ি জমাচ্ছে। আর শিক্ষা জীবন শেষে তারা ঐসব দেশের থেকে যাচ্ছেন। কারণ বাংলাদেশে সেভাবে ক্যারিয়ার অপরচ্যুনেটি নেই। ফলে আমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অন্যরা তাদের ইমারতের শক্ত ভিত্তি নির্মাণ করছে আর আমাদের দেশে সাদা মাটা এসব প্রকৌশলির মাধ্যমে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি গুলো চলছে। ফলে তাদের অদক্ষতার জন্যও যে এসব ভবন ধসের ঘটনা ঘটছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়টিও একটু চিন্তা করে দেখা উচিত যাতে দেশের ছেলেরা একটু ভাল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার মাধ্যমে দেশের কাজেই নিয়োজিত থাকতে পারে।



তাজরীন ফ্যাশনের আগুনে পোড়া লাশের গন্ধ শেষ হতে না হতেই সাভারের এই ট্রাজেডি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সাথে আরও একটি নতুন সংকট তৈরী করলো। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে এমনিতেই বাহিরে আমাদের দেশের ইমেজ অনেকটাই খারাপ হয়েছে তার উপর এই লোহমোর্ষক ঘটনা এই মাত্রা আরো একটু বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। লাগাতার হরতালের কারণে গার্মেন্ট শিল্প আজ হুমকির মুখে। অথচ এই গার্মেন্ট শিল্প ভেঙ্গে পড়লে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে তা একবার ভেবে দেখা দরকার। সরকারের অদুর্দশী পরিকল্পনা, সরকার দলীয় লোকদের স্বেচ্ছাচারিতা, একশ্রেনীর পুজিঁপতি ব্যবসায়ী নিজেদের একটু বেশি লাভের আশায় এসব খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমকে চুষে নিচ্ছে। অথচ তারা কি পরিবেশে কাজ করছে তাদের যে বেতন দেয়া হচ্ছে সেটা দিয়ে তারা চলতে পারছে কি না সেদিকে নজর দেয়া হয় না। আবার এরকম ঘটনায় সরকার দোষীদের শাস্তিদানে ব্যর্থ হওয়ায় তাদেরও স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে যাচ্ছে। যার ফল স্বরুপ বাহিরে আমাদের দেশ ইমেজ সংকটে পতিত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস শিল্পের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার জিএসপির মতো গুরত্ব পূর্ণ একটি সুযোগ আরো বাতিলের সম্ভাবনা বেড়ে গেল। সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া গার্মেন্টস শিল্পের বিষয়ে কিছু সংস্কারের শর্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করলেও রিং লিডারদের খুশি করতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে ফলে এরকম নির্মম মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে যার শিকার হচ্ছে পেটের দায়ে গ্রাম থেকে আসা এসব অসহায় মানুষ। বাস্তবতা হলো প্রকৃত পক্ষেই তাদের দেখার কেউ নেই। তাই অনেকেই বলছে সাভারের এই ট্রাজেডির পর পরের মৃত্যুপুরীটি কোথায়?







রাশিদুল ইসলাম নাহিদ

শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.