![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I like to explain the international affiars.
গত ২৭ জুন ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে এবং পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে পোশাক কারখানার কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেয়াসহ বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি কার্যপরিকল্পনার রুপরেখা দেয়া
হয় ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস অফিস থেকে। সে হিসেবে গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য শ্রম আইন সংশোধন ও পাশ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওমেন সলিডারিটি এবং সোশ্যাল একটিভিটিস ফর দ্য ইনভায়রনমেন্ট নিবন্ধন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের চাকরির নিরাপত্তা বিধানসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই রুপরেখা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে এশটি সন্তোষজনক রুপরেখা বাস্তবায়নের কথা ছিল। এছাড়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ার পর আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেনে ‘ছয় মাসেই জিটএসপি ফিরবে’ (সূত্র-প্রথম আলো, ৬ আগষ্ট)। কিন্তু এই শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত হওয়ার চার পাশ অতিক্রম করলেও ফেরত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা এখনো সরকার তৈরি করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আরো বেশি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক দুরত্বের পাশাপাশি রানা প্লাজা ধ্বসে অসংখ্য শ্রমিকের মৃত্যুকে অজুহাত দেখিয়ে মার্কিন প্রশাসন জিএসপি স্থগিত করলেও সাম্প্রতিক সময়ে গাজিপুরের শ্রীপুরে পলমল গ্রুপের আসওয়াদ নিটিংয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নয় জন শ্রমিক নিহতের ঘটনা জিএসপি স্থগিতাদেশের উপর আরেক দফা আগুনে ঘিঁ ঢেলে দেয়ার কাজ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে একজন মন্ত্রীর উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলে সপ্তাহ ব্যাপী চলমান ছিল শ্রমিক অসন্তোষ। যা কিনা বিশ্বমিডিয়ার প্রচারের ফলে বাংলাদশের ইমেজ সংকটের পাশাপাশি ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার উপর নেতিকবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সে ব্যাপারেও তেমন কোন ইতিবাচক সাড়া দেয়নি সরকার। এদিকে জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধারে কলকারখানা পরিদর্শক নিয়োগ, পরিদর্শন কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, পঙ্গু ও আহতদের পুনর্বাসন, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, ইপিজেড আইন প্রণয়ন, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যার বিচারসহ প্রভৃতি বিষয়ে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্ত হিসেবে পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শনের কাজ এ বছর শেষ করতে পারছে না সরকার। অর্থাৎ আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে মার্কিন প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করার মতো কোন তথ্য-উপাত্ত সরকার তৈরি করতে পারেনি। অবশ্য, উদ্যোক্তা এবং রফতানিকারকদের ধারণা শ্রম পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে সরকারের ধ্বংসাতœক কর্মসূচীর উপরই জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করছে। মার্কিন উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাও অর্থহীন উদ্যোগে পরিণত হয়েছে। ফলে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলো দূরে বরং জিএসপি সুবিধা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার বা এর মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি বহুল প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সমঝোতা যদি না হয় তবে বাংলাদেশ থেকে যেসব ক্যাটাগরির তৈরী পোশাক অধিক সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয় সেগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়ার লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে (সূত্র, নয়া দিগন্ত, ২০ অক্টোবর) । যদি এরকম সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে রফতানি বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী তৈরী পোশাকের বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে ২৩ শতাংশ রফতানি হয় তার উপর একটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোর মতো শুল্ক সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে যে লবিস্ট নিয়োগ করে লাখ লাখ ডলার খরচ করা হয়েছে তা অর্থহীন হযে পড়বে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকেও জিএসপি স্থগিতাদেশ আসতে পারে। জিএসপি প্রত্যাহারে আপাত দৃষ্টিতে তৈরি পোশাক খাতের তেমন কোন ক্ষতি না হলেও ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্লাষ্টিক ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিকারকরা। শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও ছয় মাসের বেধে দেয়া আল্টিমেটামের মধ্যে সরকার কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোও যদি যুক্তরাষ্ট্রের দেখানো পথে হাটে তবে ইউরোপের বাজারে প্রাপ্ত ১২ শতাংশের বেশি জিএসপি সুবিধা বন্ধ হতে পারে। যার ফলে দেশের পোশাক খাতের বাজার প্রতিযোগী ভারত ও ভিয়েতনামে চলে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের পোশাক শিল্পে অস্তিরতার সৃষ্টির পেছনে ভারতের ইন্ধন আছে বলেও বেশ কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়েছে।
বাংলাদেশে রফতানি বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী তেরী পোশাক খাত হাটি-হাটি পা-পা করে আজকের পর্যায়ে এসেছে। এছাড়াও প্লাষ্টিক ও চামড়াশিল্পেও আমাদের উদ্যোক্তরা ভাল করছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে আতœপ্রকাশে এদেশের ৪০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিক যে অবদান রাখছে তা বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি প্রশংসার যোগ্য। কেননা বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র দেশ যেখানে পোশাক শ্রমিকরা অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে কম বেতন পায়। তারপরও জনসংখ্যাবহুল দেশ এবং কর্মসংস্থানের অভাবে সাধারন মানুষগুলো এই খাতে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিজ জন্য আন্দোলন করছে, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে শ্রকিমরা রাস্তায় এসে নেমেছে তাদের দাবি আদায়ের জন্য। অথচ তাদের দাবি কে শ্রদ্ধা না করে রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকার একটা নাটক মঞ্চস্থ করলো। বলা হলো যদি আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি তবে আপানাদের কাঙ্খিত বেতন বৃদ্ধি করা হবে। আবার সরকার কমিটি গঠন করে বিভিন্ন দেশের নি¤œ মজুরি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কতিপয় ব্যক্তিকে ভ্রমনে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ একটি হিসেবে দেখানো হয়েছে যে, রফতানিকারকরা প্রতি একশ ডলারের পণ্য রফতানি করে দুই ডলার লাভ করে। যদি তারা প্রতি দুই ডলার থেকে মাত্র পচিঁশ সেন্ট করেও শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ করে তবে শ্রমিকদের দাবিগুলো সহজেই পুরণ করা সম্ভব। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না শিল্প মালিকদের সদিচ্ছা ও সরকারি নীতি প্রয়োগের অভাবে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রক্ষাকারী খাতকে অস্তিরতামুক্ত রাখতেই এটা করা উচিত।
বলাই বাহুল্য, জিএসপি ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে যে ছয় মাস সময় পেয়েছে তার চার মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম হয়েছে। এর মধ্যে পরিদর্শন নিয়োগ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি আমিনুল হত্যার বিচার, তারও অগ্রগতি নেই বললেই চলে। শ্রমিক ছাটাই এখনো চলছে। পঙ্গু ও আহতদের পুনর্বাসনের কোন ফলপ্রসু উদ্যোগ নেই। কেননা এখনো রানা প্লাজার সামনে শ্রমিকদের মানবন্ধন করতে দেখা যায়। কারখানায় ছোটখাট অগ্নিকান্ড ও শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের শ্রমিক অসন্তোষে ঘটনায় শ্রমিকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা জিএসপি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উপর আরেক দফা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ১৯৭৬ সালে প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা কিন্তু হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন আমাদের সুযোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সরকার কোন পদক্ষেপ নিতে না পারলেও যে ছয় মাস পেয়েছে এই সময়েও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবার সরকারের অনেক নীতি নির্ধারক বলেছেন যে, কারখানার কর্মপরিবেশ প্রধান ফ্যাক্টও নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈকিক টানাপোড়েন চলছে। চরম বৈরি পরিবেশ সৃষ্টি না হলে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিত না। যদি তাই হয় এজন্যও সরকার দায়ি, কেননা সরকার ড. ইউনুস ও গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে যে গোয়র্তুমি শুরু করেছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হওয়ারই কথা। এছাড়া বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে তাও সরকার সঠিকভাবে গ্রাহ্য করেনি বরং বিএনপি ও জামায়াতকে বাদ দিয়েই সর্বদলীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। সব মিলিয়ে যদি রাজনৈতিক কারণেই হয়ে থাকে তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অবশ্যই আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করা উচিত ছিল। কেননা চীন ২য় অর্থনীতির দেশ হওয়ার পর আরো বেশি অগ্রগতির জন্য বিভিন্নক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। সেক্ষেত্রে স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে আমাদের আরো বেশি তৎপর হওয়া উচিত নয় কি? যাইহোক, জিএসপি সুবিধা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বেধে দেয়া সময়ের আরো প্রায় দুই মাস রয়েছে। সরকারের উচিত হবে এই সময়ে যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সাথে বাকি শর্তগুলো পুরণের পদক্ষেপ গ্রহন করা পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে দাতা দেশগুলোর প্রস্তাবকে গুরত্ব দিয়ে সব দলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহনযোগ্র নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করা, যাতে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ আমাদেও বন্ধু দেশগুলোর উদ্বেগ প্রশমিত হয়। আর এটা সম্ভব হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে বুঝানো সম্ভব হবে যে, আমাদেও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নেই জিএসপি সুবিধা প্রয়োজন এবং সরকার যে এই বিষয়ে আন্তরিক তার দৃষ্টান্ত দেখাতে।
রাশিদুল ইসলাম নাহিদ
শিক্ষার্থীঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ. জাবি
©somewhere in net ltd.