![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I like to explain the international affiars.
অনেক পরিবেশবাদীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও সরকার ইউনেস্কো ঘোষিত ৫২২ তম বিশ্বঐতিহ্য, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন এবং প্রাণী বৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। পূর্বে রাষ্ট্র বহুজাতিক শেল ও কেয়ার্ন কোম্পানিকে সুন্দরবনে তেল-গ্যাস খনন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে সুন্দরবন প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা প্রকল্পের নামে এক বিনাশী কর্মসূচীর অনুমোদন দিয়ে সুন্দরবনকে এক প্রশ্নাতীত হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। আবারো সরকার বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪ দশমিক দুই ভাগ এবং দেশের মোট বনভূমির ৪৪ ভাগ জুড়ে অবস্থিত জীববৈচিত্রের লীলাভূমি সুন্দরবন ধ্বংসের এক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে পাওয়ার প্লান্ট থেকে নির্গত ক্ষতিকারক রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য ও জীববৈেিত্রর উপর মারাতœক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এমনকি প্রচুর পরিমাণে গরম পানি র্নিগত হবে, যা কিনা ডলফিনসহ অন্যান্য মৎস সম্পদ বিনাশের পথকে প্রশস্ত করবে। সেই সাথে স্থানীয় জনগণ স্থাস্থ্য ঝুকিতে পড়বে মারাতœকভাবে। উল্লেখ্য যে, এ পর্যন্ত অনেক বিশেষজ্ঞের মতামত ও লেখায় এই প্রকল্পের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে।
গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তখন থেকেই পরিবেশবাদীরা,বিভিন্ন সংগঠন, সুশীল সমাজ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানীয় জনগণসহ সচেতন মহল এই প্রকল্পের বিরোধীতা করে আসছে। এমনকি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ২৪-২৮ সেপ্টেমবর ঢাকা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত দীর্ঘ গণপদযাত্রা করেছে এবং তারা সুন্দরবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এতেও সরকারের কর্ণপাত হয়নি বরং সরকার এক প্রেসনোট জারি করে এই সচেতনতাকে ‘অপপ্রচার’ বলে চালিয়ে দিয়েছে। তবে কি সরকার সব ধরনের মতামত, সুন্দরবন ও জনস্বার্থের বিষয়টি উপেক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে? ঠিক আছে বিরোধীতার জায়গাটি বাদই দিলাম, আইন সম্মতভাবেই কি সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অধিকার রাখে?
যদি আমরা বৈধতার দৃষ্টিকোন থেকে দেখি, আইন তৈরি হয়েছে জনস্বার্থ ও জনকল্যাণে। সে হিসেবে কোন প্রকল্প বা কর্মসূচী যদি জনস্বার্থ ও জনকল্যাণের বিরোধী হয় তবে আইনগতভাবে সেটি অবশ্যই বেআইনি। কেননা আইন তৈরির উদ্দেশ্য তাই নির্দেশ করে। পরিবেশ সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৫ সালে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ প্রণয়ন করা হয়। পরে তৈরি হয় ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭’। ওই বিধিমালার ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সময় মানবসতি, প্রাচীন স্মৃতিসৌধ, প্রতœতাত্ত্বিক স্থান, অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, গেম রিজার্ভ, বণ্যপ্রাণির আবাসস্থল, জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, এলাকাভিত্তিক প্রাণবৈচিত্র এবং সংশ্লিষ্ট আরও বিষয়গুলোকে গুরত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। পরে ২০১০ সালে ৫০নং আইন হিসেবে গৃহীত হয় ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০’। ওই আইনের ২নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা মানে এ আইনের দ্বারা ঘোষিত এমন এলাকা যা অন্যান্য জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বা পরিবশেগত বিবেচনায় গুরত্বপূর্ণ হওয়ায় ধ্বংসাতœক কর্মকান্ড হতে রক্ষা করা বা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর এই আইন অনুযায়ী স্ন্দুরবনের মতো সংরক্ষিত বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এরকম সব কার্যক্রমই নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অবরাধ। সে হিসেবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তা পরিবেশের উপর মারাতœকভাবে বিরুপ প্রভাব ফেলবে। যা কিনা স্পষ্টভাবে পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন। আর এই প্রকল্প যদি পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বাস্তবায়ন করা হয় তবে তা সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশনাকেই লঙ্ঘন করা হবে। কেননা পরিবেশ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সংবিধানের অধিনেই। এছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (ক) নং অনুচ্ছেদে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে।” অর্থাৎ এই ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সব ধরনের দায়দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদি তাই হয় তবে প্রশ্ন থেকে যায় যে, রাষ্ট্রকে পরিবেশ ধ্বংসের অধিকার কে দিয়েছে?
এছাড়া সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে যে, এই অধ্যায়ে বর্ণিত অন্য সব নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলে গণ্য হবে এবং ৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে এই নীতি গুলো বলবৎ করার জন্য আদালতে আবেদন করা যাবে না। এখানেই এর উত্তর পাওয়া যাবে, এজন্য সংবিধানের ৮ (২)নং অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা প্রয়োজন। এই ধারায় বলা হয়েছে,“এই অংশে বর্ণিত নীতিগুলো হবে বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র, আইন বানানোর সময় রাষ্ট্র এগুলো প্রয়োগ করবেন। এই সংবিধান ও দেশের অন্যান্য আইন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এই নীতিগুলো আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এগুলো রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাজকর্মের ভিত্তি হবে।” উপরোক্ত ধারায় সুনির্র্দিষ্ট মৌলিক নীতিগুলোর উপর ব্যাপকভাবে গুরত্বারোপ করা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্র এই নীতিগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না। সে হিসেবে সংবিধাবের ১৮ (২)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা, সংরক্ষণ, ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব।
প্রস্তাবিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া এটি জনস্বার্থ, জনকল্যাণ ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী। সেই সাথে এটি মারাতœকভাবে সংবিধান পরিপন্থী। তাই আমরা শুধু রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানাচ্ছি না বরং সুন্দরবনকে ধ্বংস করে এমন সব ধরনের কর্মকান্ড বন্ধের অনুরোধ জানাচ্ছি। এরপরও সরকার যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তবে সরকার ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা আইন (ইসিএ)’ ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি’ ‘বন আইন’ জীববৈচিত্র্য কনভেনশন’ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন করবে বলে প্রতিয়মান হবে। তাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের এবং জনস্বাস্থ্য ও জনকল্যাণের উপর সমূহ ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে সুন্দরবন থেকে দূরে অন্যত্র এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হোক। আমরা আশা করি, সুন্দরবনের প্রতি মানুষের গভীর ভালবাসা ও সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরত্বের সাথে বিবেচনা করে সরকার পরিবেশ আইন ও সংবিধান সম্মতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহন করবে। আর যদি সেটা না হয় বরং সরকার পরিবশেগত আইন, বাংলাদেশ সংবিধান ও জনসচেতনতা বিবেচনা না করে বাহাদুরি দেখিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে, তবে এর দায়ভার একদিন সরকারকেই নিতে হবে।
রাশিদুল ইসলাম নাহিদ
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
©somewhere in net ltd.