নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবহমান ...

নাহিদ তানভীর

সাধারণ বাঙালী।

নাহিদ তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের অসুখ

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫

সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস, পরীক্ষা দিয়ে ক্লান্ত সাইদ বাসায় এসে বিশ্রাম নিতেই মনের অসুখ লাফিয়ে উঠল। সাইদ আর থাকতে পারলনা। ফের ভার্সিটির দিকে যাত্রা কিন্তু পকেটেও টাকা-পয়সার অভাব। পড়াশুনার শেষ প্রান্তে পৌঁছেও বাপের টাকার উপর দিয়ে চলার দৈনতা তাকে মাঝেমাঝে সংগ্রামী করে তোলে। খাবার টেবিলে বাপ এ নিয়ে কখনও কথা বললে তাঁর সামনেই খাবারের প্লেট কখনও ধীরে টেবিলে নামিয়ে আবার কখনও তীব্র বেগে খাবার সহ ছুড়ে ফেলে বাসা থেকে ফের হয়ে যায়। যাবার পূর্বে মাকেও শুনিয়ে যায়, এটাই নাকি ওর শেষ যাত্রা। সাইদ তখন কোন এক বন্ধুর বাসায় চলে যায়। রাত বিরাতে কোন মেসে থাকা বন্ধুর কাছে যাওয়াটাই ওর কাছে উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু মেসে গিয়ে মিলহীন তলানির ডালটুকু দিয়ে ভাত মেখে কোনরকমে ক্ষিদেটাকে চাপা দিতে পারলেও মশার কামড় এড়াতে প্রায়ই ব্যর্থ হয় সাইদ। ফলে পরদিন দুপুরেই বাসায় ফিরে আসে সাইদ। জেদ করে না খেয়ে সে ভাবে, প্রচণ্ড অনুনয় করে মা খেতে না ডাকলে সে খাবেনা। এদিকে মায়েরও বয়স আছে। তাছাড়া কিছুদিন পরপরই একই কাণ্ড দেখতে দেখতে তিনিও বিরক্ত হয়ে দুয়েকবার ডেকেই চলে যান এই ভেবে যে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ক্ষিদে পেলে নিজে এসেই খাবে। এদিকে আহার পরবর্তী নিদ্রার ডাকে মা শুয়ে পড়লেই সাইদের ক্ষিদে অসম্ভব বেড়ে যায় এবং মনের দুঃখ চাপা দিয়ে খেতে খেতে ভাবে, পড়াশুনাটা শেষ হলেই একটা চাকরি নিয়েই এই জ্বলন্ত দোজখ ছেড়ে সে পালিয়ে কোথায় চলে যাবে আর কখনই আসবেনা। কিন্তু সাইদের পড়াশুনাটাও শেষ হচ্ছেনা আর চাকরি করাটাও শুরু হচ্ছেনা, তা নাহলে কবেই ও নিজের আপন বাপের বাসা ছেড়ে চলে যেতো অন্য কারও বাপের ভাড়া বাসায়।



ভার্সিটিতে যেতে যেতে পথেই ও ওর পকেটের টাকা দুভাগে ভাগ করে একভাগ মানিব্যাগে রেখে আরভাগ চোরা পকেটে চালান করে দেয়। বাসে বসে কাজটা করার সময় ও চারপাশে তাকিয়ে নেয় কেউ আবার দেখে ফেলছে কিনা। এসময়ে ওর নিজেকে ডিটেকটিভ উপন্যাসের কোন নায়কের মতো মনে হয়। বাস থেকে নেমে ভার্সিটির হাঁটা পথে সাইদের সিগারেটের নেশা জাগে তখন একটা বেনসন ধরিয়ে বেশ দৃপ্ততা নিয়ে এগুতে থাকে এবং ভাবতে থাকে জীবনটা মন্দ না।



টি এস সি তে জনতা ব্যাংকের সামনে পানসে চা খেতে খেতে যখন ওর মনের অসুখ নিয়ে চিন্তিত তখনই কোন বন্ধুর সাথে দেখা হলে দেশ ও সমাজের নৈতিক উন্নতির পরামর্শে ভরপুর কোন দীর্ঘমেয়াদী আড্ডার সূচনা হয়। আড্ডার মেয়াদ যতই বাড়ে মনের অসুখেও সাইদ ততই জর্জরিত হয়। একপর্যায়ে ফোন না এলেও কানে ফোন ঠেকিয়ে কিঞ্চিৎ সামনে এগিয়ে ঘুরপথে আবর্তন শেষে এসে বন্ধুদের কাছ থেকে জরুরী ফোনের অজুহাতে বিদায় নেবার আর্জি জানায়। বন্ধুরাও ওর চালাকি বুঝে কিংবা না বুঝেই ধরে রাখার চেষ্টা করেও অবশেষে বিদায় জানায়। সাইদ পানসে চায়ের বিল দিয়ে কিংবা না দিয়ে ব্যস্ততার ভঙ্গীতে ওদের চোখের আড়াল হয়।



মাস ছয়েক কিংবা তার চেয়ে বেশিদিন ধরে সাইদের মনের অসুখ। স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার সাথে মিলে যাওয়া বাস্তবের এক রাজকন্যাকে ওর তখন মনে ধরে গিয়েছিল। রাজকন্যাও ওর দিকে কখনও কখনও যেমনি করে তাকায় তাতে সাইদের আত্মার শেষপ্রান্তে গিয়ে কিরকম অদ্ভুত এক শীতল বায়ু কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। রাজকন্যার দেখা পাওয়ার সম্ভাব্য স্থানে এসে উঁকি মেরে কিংবা ব্যস্ত ভঙ্গীতে এসে দেখে যায় সে। রাজকন্যার দেখা মেলে কিংবা মেলে না, যদি মেলে তো হৃদপিণ্ড হঠাৎ সাইদ বাপের সাথে যেরকম করে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিদ্রোহ করে বুকের পাঁজর, মাংস, চামড়া ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম করে। সাইদ প্রাণ বাঁচাতে সটকে পড়ে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্রোহ দমন করে হাসি বিনিময় দ্বারা মনের অসুখ উপশম করে কিংবা আরও বাড়িয়ে দেয়।



একদিন কোন এক মুগ্ধক্ষণে রাজকন্যা নার্ভাস ভঙ্গীতে বলে- কথা আছে। সাইদ অপেক্ষা করে কিন্তু গ্রহ নক্ষত্রের দোলাচলে সাইদ-রাজকন্যার কথোপকথন বাস্তবে রূপ লাভ করেনা। সাইদের অসুখ তীব্র আকার ধারণ করে।



আরেকদিন সাইদ প্রতিজ্ঞা করে যায় আজ এস্পার কি ওস্পার কিছু একটা হবেই। সাইদ অপেক্ষা করছে যেখানে নির্দিষ্ট ক্ষণে পরিচিত অনেকেই চলে আসে কিন্তু রাজকন্যাই দেখি আসছেনা। একটা সময়ে ও বুঝে ফেলে রাজকন্যা আজ অন্তত আসবেনা। মনের অসুখ এবার মারাত্মক যাতনায় রূপান্তরিত হয়। সাইদ তা সহ্য করতে পারে কিংবা না পেরেই একটা পানসে চা ও সিগারেট অর্ডার দেয়। চা পান শেষেই বিলটুকু মিটিয়েই মনের অসুখ চেপেই সিগারেটটুকু টেনে টেনেই বাসার পানে যাত্রা করেই সাইদ ভাবে- জীবনের পথ দীর্ঘ কিংবা কষ্টের অথবা দুটোই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.