| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাজমুল হাসান ০০১
আশা”, ছোট্ট এই শব্দটি আমাদের মনে দারুন দোলা দেয়। স্বভাবগত ভাবেই মানুষ চিরকাল আশাবাদী। মানুষ আশায় বেঁচে থাকে, মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে, আশার মাধ্যমেই মানুষ শত কষ্টের বেলাভূমি পেরিয়ে আগামীর জন্য কাজ করে যেতে পারে। দেখতে পারে অপার সবুজাভ স্বপ্নের, দেখাতে পারে কল্পনায় আকা নির্মল দৃশ্যপট।
রহিম গ্রামের ছেলে পদ্মা নদীর পাড়ে রহিমের বাড়ি, রহিমের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পদ্মার বুকে সাতার কেটে, মাছ ধরে। পদ্মাকে ছাড়া যেই রহিম এক দিনও কিছু ভাবতে পারতো না, সেই পদ্মার ভাঙ্গনে রহিমের গড়-বাড়ি, জমি-জমা সব শেষ হয়ে যায় বছর খানেক আগে। রহিমের পাশের বাড়ির জলিল চাচার গড়-বাড়িও পদ্মা কেড়ে নেয় সেই সর্বনাশা ভাঙ্গনে। জলিল চাচার একটাই মেয়ে ছিল “সুমি” যাকে রহিম সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করত, কিন্তু কোনদিন মুখফুটে কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারেনি। জলিল চাচা গ্রাম ছাড়ার আগে জলিলের কাছে আসে এবং বলে বাবা আমার মেয়েটাকে তুমি বিয়ে কর, আমি বুড়ো মানুষ আজ আছি কাল নেই, আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে বাবা, বলে ঝরঝর করে কাঁদতে থাকে জলিল চাচা। রহিম কি করবে বুঝতে না পেরে জলিল চাচাকে জরিয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে থাকে, পদ্মার সর্বনাশা ভাঙ্গনের পর তার একমাত্র মা ছিল সেই মাও দু-মাসের বেশী বাচেনি। মায়ের খুব অসুখ হয়েছিল ঔশধ কিনে দিতে পারেনি রহিম। এই কথা আবার মনে হতেই রহিমের দু-চোখ দিয়ে অজোর ধারায় জল বইতে থাকে । রহিমের সাথে সুমির বিয়ের পরদিনই জলিল চাচা কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ।
আজ ছয় মাস হলো সুমিকে নিয়ে রহিম ঢাকায় এসেছে, এক বস্তিতে এক হাজার টাকা ভাড়ায় এক খুপরি ভাড়া করে থাকে তারা দুইজন। রহিম ঢাকা শহরে রিকশা চালায়, কামাল মিয়ার কাছ থেকে রিকশা নিয়ে রহিম চালায় প্রতিদিন ২০০ টাকা জমা দিতে হয় কামাল মিয়াকে। রহিম ভালো আছে, মাসে একদিন সুমিকে নিয়ে রিকশায় করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ায় রহিম,ফুচকা-চটপটি খায়। বিয়ে হয়েছে আজ অনেকদিন এখনো রহিম সুমিকে ভালবাসি এই কথাটি বলতে পারেনি, তবে রহিমের মনে হয় সুমি নিশ্চই বুঝে।
আজ প্রায় পনেরদিনের মত সারা দেশ হরতাল-অবরোধে অচল, গত দশ দিন ধরে কামাল মিয়া আর রিকশা বের করতে দেয়না তার গোডাউন থেকে কারন হরতাল চলাকালীন কামাল মিয়ার পাঁচটা রিকশা গত সপ্তাহে ভেঙ্গেচুরে দিয়েছে হামলাকারীরা, তারপর থেকে কামাল মিয়া বলেছে দেশের অবস্থা ভাল না হলে আর রিকশা বের করতে দেবেনা সে, রহিম তারপরও প্রতিদিন কামাল মিয়ার কাছে যায় অনেক অনুনয় করে রিকশা বের করার জন্য, কিন্তু কামাল মিয়া রাজি হয়না। রহিমের কোন জমানো টাকা নেই, যা ইনকাম করে সুমি আর সে মিলে আনন্দে দিন কাটায় কোনদিন টাকা-পয়সা জমানোর কথা ভাবেনি, আজ এক সপ্তাহ হলো ঘরে খাবার কিছু নেই, পাশের বাড়ির ভাবীর কাছ থেকে সুমি দুশ-টাকা ধার এনেছিল তা দিয়ে কদিন চলেছে , আজ দুদিন হল ঘরে খাবার কিছু নেই। আজ খুব ভোরে রহিম কামাল মিয়ার কাছে যায় কিন্তু কামাল মিয়ার সাফ কথা রিকশা বের করা যাবেনা, রহিম দেখছিল দিনমজুরেরা কাজের জন্য সকালবেলা রাস্তার পাশে বসে থাকে সেখানেও রহিম দুপুর পর্যন্ত বসেছিল কিন্তু কোন কাজ পায়নি। রহিম তারপর কাজের জন্য রাস্তায় রাস্তায় অনেকের কাছে যায় কিন্তু কেউ কোন কাজ দিতে পারেনি। খিদেয়- কস্টে সারাদিন রোদে রোদে ঘুরে-বেড়ানোর কারনে ঘরে ফেরার সময় রহিম টের পায় তার জ্বর আসছে প্রচন্ড জ্বর।
ঘরে ফিরে দেখে ঘরের এক কোনায় সুমি বসে আছে পেছন ফিরে, কুপির আলোয় ভালো করে খেয়াল করে দেখে রহিম সুমি কাঁদছে, কাঁদার জন্য সুমির শরীরটা বার বার কেপে কেপে উঠছে, রহিম বুঝতে পারে খিদের জ্বালা বেচারি আর সইতে না পেরে কান্নার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছে। রহিম নিঃশব্দে সুমির সামনে গিয়ে দাড়ায়, নিচু হয়ে বসে বলে কাদছিস কেনরে পাগলি। সুমি আর সইতে পারেনা রহিমের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর বলে “আর পারিনা, খুব কস্ট লাগছে, খুব কস্ট” রহিম টের পায় সুমির শরীর প্রচন্ড গরম, গতকালও সুমির জ্বর ছিলো আজ তা প্রচন্ড বেড়েছে। রহিম দুহাত দিয়ে সুমিকে জড়িয়ে ধরে বলে, কাদিস না পাগলি সব ঠিক হইয়া যাইব দেখিস সব ঠিক হইয়া যাইব, তোরে আমি কত ভালবাসি তুই জানস পাগলি আমার মারে আমি ওষুধ কিনা দিতে পারি নাই, আমার মায় কস্ট পাইয়া মরছে তোরে আমি হারাইতে পারুমনা, একটু কস্ট কর আমি ওষুধ- ডাক্তার লইয়া আইতাছি, সুমিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবার ঘরের বাইরে পা বাড়ায় রহিম।
সুমিকে বাচাতেই হবে, সুমিকে যে বাচাতেই হবে । প্রচন্ড রাগে-কস্টে রহিমের রক্তলাল দুচোখ বেয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। আকাশের দিকে তাকায় রহিম আর নীরবে নালিশ জানায় ,সামনের রাস্তা কেন যেন ঘোলা ঘোলা লাগে রহিমের তারপরও পা বাড়ায় রহিম, সুমিকে যে বাচাতেই হবে।।
©somewhere in net ltd.