![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আশা”, ছোট্ট এই শব্দটি আমাদের মনে দারুন দোলা দেয়। স্বভাবগত ভাবেই মানুষ চিরকাল আশাবাদী। মানুষ আশায় বেঁচে থাকে, মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে, আশার মাধ্যমেই মানুষ শত কষ্টের বেলাভূমি পেরিয়ে আগামীর জন্য কাজ করে যেতে পারে। দেখতে পারে অপার সবুজাভ স্বপ্নের, দেখাতে পারে কল্পনায় আকা নির্মল দৃশ্যপট।
অপু মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, মা-বাবার একমাত্র সন্তান, জীবনে সে অনেক হিসেব কষে বড় হয়েছে, কিন্তু অপু একটা জায়গায় কোন ভাবেই হিসেব মিলাতে পারে না, যতই ইচ্ছে করে হিসেবগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়।।
সেটা হচ্ছে রেনুর কাছে, অপু রেনুকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে, রেনুর কথা মনে হলেই অপুর বুকের বাম পাশটায় প্রচন্ড রকমের শূন্যতার সৃষ্টি হয়, রেনুর মুখটাকে দু-হাতে ধরে অনন্তকাল দু-চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করে।
রেনুর সাথে অপুর দেখা হয়, দুই বছর আগে কেমেস্ট্রি ক্লাসে, ক্লাসের প্রথম দিনই অপুর রেনুকে ভাললাগে যায় প্রচন্ড রকমের, যতই দিন গড়ায় অপু রেনুকে খুব গভীর ভাবে লক্ষ করতে থাকে আর এই ভালোলাগা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রুপ নেয়। রেনু খুব ভদ্র ভাবে ক্লাস করে, তেমন কারো সাথে কথা বলেনা, চুপ-চাপ ক্লাস করে আর চলে যায় আর রেনু সবসময় ক্লাসের সামনের সারিতে গিয়ে বসে আর অপু পিছনের সারিতে বসা ছাত্র, তাই রেনুও কখনো অপুকে ভালো করে খেয়াল করেনি কোনদিন।
এইভাবে দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে, অনেক সাহস নিয়ে অপু পরীক্ষার পর রেনুকে জানায় তার ভালোলাগার কথা, রেনু প্রথমে খুব অবাক হলেও খুশি হয়, কিন্তু সরাসরি কিছু বলেনা, তারপর তাদের মাঝে প্রথমে ফেসবুকে টুকটাক কথা-বার্তা তারপর মোবাইলে কথা এইভাবে চলার পর প্রায় আট মাস পনের দিন পর রেনু অপুকে বলে রেনুর সাথে দেখা করার জন্য।।
আর সেই প্রথম দেখাতেই রেনু অপুকে তার ভালোবাসার কথা জানায়, প্রতিউত্তরে অপু নিস্পলক মিনিট দুয়েক তাকিয়ে থাকে রেনুর দিকে, তারপর অনেক আকুতি নিয়ে রেনুকে শুধায় আমি কি তোমার হাত দুটো একটু ধরতে পারি? একটু মুচকি হেসে রেনু মাথা নাড়ে।।
আজো অপুর সাথে রেনুর দেখা করবার কথা, অপু রেনুকে কথা দিয়েছিলো বর্ষার প্রথম কদম ফুলের গুচ্ছ রেনুকে উপহার দিবে, তাই আজ সকাল বেলাই অপু ঘর হতে বের হয়েছে কদম ফুলের জন্য। অপু বাসা হতে বের হয়ে, খানিক পায়ে হেটে, খানিক বাসে, খানিক সি-এন-জিতে করে, সমগ্র ঢাকা চষে বেড়ায় কদম ফুলের জন্য, কিন্তু সব বৃথা।। অবশেষে এক মাঝবয়সী রিকশাওয়ালা কে ডাক দেয় মামা এদিকে আসো।
মামা কদম গাছের কাছে নিয়ে চলো, রিকশাওয়ালা রহিম প্রথমে বুঝতে পারে না, আবার শুধায় কই যাইবেন কইলেন??
অপু আবার বলে, মামা বিকেলের মধ্যে কদম ফুল লাগবে, ঢাকা শহরে তো কোন ফুলের দোকানে কদম ফুল পাওয়া যায়না, তাই সারা শহর ঘুরেছি, কিন্তু কোন লাভ হয় নাই বলেই অপু রিকশায় উঠে বসে।
রহিম মাথা নাড়ে কই যামু কন মামা, কদম গাছ কই পামু?? অপুর উত্তর যান যেদিকে ইচ্ছা ।।
রহিম প্যাডেল ঘুড়ায়, রিকশা সামনে বাড়ে, কিন্তু কদম গাছের দেখা মেলেনা, অবশেষে টানা তিন ঘন্টা রিকশা চালানোর পর রহিম মিয়া একটি কদম গাছ আবিস্কার করে, ভাড়া মিটিয়ে অপু কদম গাছের নিচে গিয়ে দাড়ায়, অপু নিজে গাছে উঠতে পারেনা, কয়েকজনকে বলার পর মুখের উপর না করে দিয়েছে তারা, দূর থেকে রহিম মিয়া সব দেখতে পায় এবং অবশেষে রহিম মিয়া তার রিকশা নিয়ে এগিয়ে আসে, অপুকে বলে মামা আমার গামছাটা ধরেন তো দেখি। বলে কয়েক লাফে গাছে উঠে যায় রহিম, নিচ থেকে অপু চিৎকার করে বলে –মামা পাতা সহ ফুল গুলো পাইড়ো, এক গোছা ফুল নিয়ে রহিম মিয়া গাছ থেকে নামে, তারপর অপুকে বলে আহেন রিকশায় উইট্টা বহেন।। কন কই যাইবেন ।।
অপু উত্তর করে, মামা নিউমার্কেটের দিকে যান, নিউমার্কেটের দুই নাম্বার গেইটে রেনুর সাথে দেখা হবার কথা, অপু যাবার একটু পরেই রেনু আসে, এসেই অপুকে জিজ্ঞেস করে এই তোমার হাতে পলিথিন মোড়ানো ওইটা কি, অপু উত্তর দেয় বলা যাবেনা, রেনুও মাথা নাড়ে আচ্ছা না বললে নাই।।
নিউমার্কেটে হাটতে হাটতে রেনুর একজোড়া কাচের চুড়ির পছন্দ হয়, একদম লাল দেখে রেনু চুড়ি কিনে, পাশে দাড়িয়ে অপুর সবুজ রঙের চুড়ি পছন্দ হয় এবং লুকিয়ে কিনেও ফেলে। তারপর দুইজন হাটতে হাটতে এক বেঞ্চিতে গিয়ে বসে। বসার পর অপু রেনুর কাছ থেকে রেনুর হাত দুটো চেয়ে নেয় আর রেনুর মুখের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন ।।
এরই মধ্যে রেনু বলে, আমি যাই আজকে।।অপু মাথা নাড়ে আর পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগ হতে কদম ফুলের গুচ্ছ রেনুর হাতে দেয়। রেনু খুব অবাক হয়ে বলে তুমি কই পাইলা কদম ফুল, পাগল একটা বলে রেনু মুচকি হাসে।।
অপু এরপর সবুজ চুড়ি রেনুর হাতে দেয় আর বলে প্লিজ একটু পরো আমি দেখি, হাসতে হাসতে রেনু এক হাতে লাল চুড়ি আরেক হাতে সবুজ চুড়ি পড়ে, উঠে পড়ে আচ্ছা গেলাম তাহলে, রেনু সামনে হাটতে হাটতে একটি কদম ফুল হাতে নিয়ে তার পাপড়ি ছিড়তে ছিড়তে সামনে এগোয়, অপু ঠায় সেই বেঞ্চে বসে থাকে, রেনুর একহাতে সবুজ চুড়ি আরেকহাতে কদম ফুল দেখে অপু বেশিক্ষন রেনুর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা, কেমন যেন কুয়াশায় আদ্র হয়ে আসে দুই চোখ।।
কদম ফুলের পাপড়িগুলোকে পিচডালা রাস্তার বুকে ছিটাতে ছিটাতে এগিয়ে চলে রেনু আর পিছনে পড়ে থাকে ভালোবাসার রঙ্গিন জলছাপ।।
©somewhere in net ltd.