নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজমুল হাসান ০০১

আশা”, ছোট্ট এই শব্দটি আমাদের মনে দারুন দোলা দেয়। স্বভাবগত ভাবেই মানুষ চিরকাল আশাবাদী। মানুষ আশায় বেঁচে থাকে, মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে, আশার মাধ্যমেই মানুষ শত কষ্টের বেলাভূমি পেরিয়ে আগামীর জন্য কাজ করে যেতে পারে। দেখতে পারে অপার সবুজাভ স্বপ্নের, দেখাতে পারে কল্পনায় আকা নির্মল দৃশ্যপট।

নাজমুল হাসান ০০১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজুর সপ্নপুরন

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৩

রাজু এলাকার ত্রাস ক্রিকেট খেলাতে, সে ব্যাটিং করতে নামলেই বোলারদের বুক কাপে। আজ কয়েকটি ম্যাচে রাজু এলোমেলো ব্যাট চালিয়েছে, এইমাত্র আবার বাজেভাবে আউট হয়ে যাবার পর এগিয়ে যায় মিথুন, জিজ্ঞেস করে রাজুকে “কি হইছে তোর, এমনে খেলতাছিস কেন আজকে?



রাজু উত্তর দেয়, “আইজকা এস,এস,সি পরীক্ষার ফিস জমা দেওনের শেষ দিন না জমা দিতে পারলে বোর্ডে পরীক্ষা দিতে পারমু না, কেমন জানি লাগতাছে রে”



মিথুন কিছু শান্তনা দেয় রাজুকে, কিন্তু সবকিছুই কেমন যেন ফাকা বুলি মনে হয় রাজুর কাছে। রাজুর বাবা রিকশা চালায়, রাজুরা দুই ভাই-দুই বোন, রাজুর মা অসুস্থ । সারাদিন যা কামাই করে তার থেকে মহাজনের কাছে রিকশার জন্য প্রতিদিনের টাকা জমা দিয়ে হাতে যা থাকে তা দিয়ে চাল-তরকারীর বেবস্থা করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়, রাজু সবই জানে, গত পনের দিন ধরে রাজু তার বাবাকে পরীক্ষার ফিসের কথা বলে আসছে, দেব-দিচ্ছি করে আজো তার বাবা দিতে পারেনি।



খেলায় আর মন বসাতে পারেনা রাজু, মাঠের পাশে এক কোনায় গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সে, রাজুর সবগুলো বই এর প্রতিটা পড়া মুখস্থ, রাজুর খুব ইচ্ছে ও ডাক্তার হবে, ডাক্তার হয়ে ওর আম্মুর অসুখ ভালো করে তুলবে, অথচ এইবার পরীক্ষা দেয়া হবেনা, ভাবতেই চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।



এভাবে কতক্ষন বসে ছিল রাজুর মনে নেই, হঠাত হেডস্যারের গলা কানে আসে, ধরমর করে উঠে দাড়ায় রাজু, রাজু স্যারকে কথা দিয়েছিলো যেভাবেই হোক পরীক্ষার ফিস জোগাড় করে পরীক্ষা দিতে বসবে সে, রাজু অনেক ভাল ছাত্র স্যার রাজুকে অনেক পছন্দ করেন রাজু তা জানে। মাথা নিচু করে স্যার এর সামনে দাড়ায় রাজু, স্যার জিজ্ঞেস করলেন “কিরে বাবা আছিস কেমন? রাজু অনিশ্চিত ভাবে মাথা নাড়ে, হেডস্যার কাছে এগিয়ে এসে রাজুর মাথায় হাত রাখেন আর বলেন “শোন বাবা, গরীবের ঘড়ে জন্মেছিস এত সহজেই হার মানলে হবে?, আমি স্কুল কমিটির সাথে কথা বলে স্কুল ফান্ড থেকে তোর পরীক্ষার ফিস জমা দিয়ে দিয়েছি, মন দিয়ে পড়ালেখা কর বাবা, রাজু ফুপিয়ে উঠে স্যারকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে। হেডস্যার টের পান তার বুকের পাশের পাঞ্জাবির কাছটা ভিজে যাচ্ছে রাজুর চোখের জলে।



অনেক রাতে নিঃশব্দে বাসায় ফিরে রাজুর বাবা, রাজু সন্ধ্যা থেকেই তৈরি হয়ে বসেছিলো বাবাকে সুখবরটা জানাবে বলে, কিন্তু রাজুর বাবা রহিম মিয়া গত কয়েকদিন ধরে অনেকের কাছে হাত পেতেছিলো কিন্তু কেউ টাকা ধার দেয়নি, আজকে মহাজনের পা-জড়িয়ে ধরেছিলো রহিম মিয়া, কিন্তু মহাজন দুর-দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে রহিম মিয়াকে, তাই ছেলের সাথে যেন দেখা-না হয় এজন্য অনেক রাত করে বাসায় ফেরা। বাসায় ঢুকেই চুপচাপ শুয়ে পরে রহিম মিয়া, কিছুক্ষন পর রাজু এসে ডাক দেয় “বাজান ঘুমাইছো? রহিম মিয়া উত্তর দেয় অনেক চেস্টা করলাম রে বাপ কিন্তু কোনভাবেই টাকাডা জোগাড় করতে পারলাম না। কাছে আয় তো দেখি বাপ বলে রহিম মিয়া রাজুকে বুকে চেপে ধরেন আর বলেন “বাপ দেহিস আগামীবার তোর পরীক্ষার ফিস আমি ঠিক জোগাড় কইরা দিমু আর কোন ভুল হইবো না”

রাজু বলে উঠে “বাজান, হেডস্যার আইছিলো বাড়িতে, স্কুল-কমিটি নাকি আমার পরীক্ষার ফিস দিয়া দিছে।“



রহিম মিয়া মুখ তুলে তাকান রাজুর দিকে আর জিজ্ঞেস করেন “ কস কি বাপ, হাছা?

রাজু উত্তর দেয় “হাছা কইতাছি বাজান”



এইবার আরো শক্ত করে রাজুকে বুকের সাথে চেপে ধরেন রহিম মিয়া, আর কোনরকম ভাবে কান্নাচেপে ফিসফিস করে বলে উঠেন “তুই অনেক বড় হ বাপ, দোয়া করি অনেক বড় হ তুই”।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.