নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন চিত্তমুক্ত শতদল !

নাকিব বাপ্পী

নাকিব বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষা ও ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন !

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২২

"যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ণ’ জানি"
কবি আব্দুল হাকিম দীর্ঘ অনেক বছর আগে যে কথাটি বলেছিলেন, তা আরো প্রকটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে সাম্প্রতিক কিছু সময়ে। কচ্ছপের খোলসে মাথা ঢুকিয়ে রাখার মতো আমরাও সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে আছি। বেড়েই চলছে ভীনদেশী ভাষার দৌরাত্ব্য,আর আমরাও আত্বসমর্পন করছি অনেকটা নিরুপায় হয়ে। প্রথমেই আসা যাক ইংরেজীর ভাষার কথায়। সমগ্র বিশ্বব্যাপী এর গুরুত্ব-গ্রহন যোগ্যতা কিংবা ব্যবহার-প্রয়োজনীয়তা,সব কিছুই যে পরিমাপের উর্ধ্বে তা অকপটে স্বীকার করতে আমি সর্বদাই প্রস্তুত। বিপত্তিটা বাধে তখনই,যখন অতীব প্রয়োজনীয় এই ভাষাটিকে আত্বস্থ করতে গিয়ে এতোটাই আপন করে ফেলা হয় যে, নিজের ভাষাটিই তখন অনেকটা পরদেশী ভাষায় রুপান্তরিত হয়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যখন নিত্যদিন এর ব্যাবহার দেখি, একজন বাঙ্গালি-বাংলাদেশী হিসেবে যারপরনাই তা আমাকে বিব্রত ও ব্যাথিত করে। এর ব্যাবহার প্রয়োজন, কিন্তু এতোটা নগ্নভাবে নিশ্চয় নয়। আর যারা তথাকথিত আধুনিকতা প্রদর্শনের চেষ্টায় মত্ত হয়ে পরদেশী ভাষার এই লাগামহীন চর্চা(অপচর্চা) করে যাচ্ছেন তারা আসলে উলু বনে মুক্তো ছড়াচ্ছেন।প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যাচ্ছেতাই ভাবে এই পরদেশী ভাষার চর্চা কোনভাবেই আধুনিকতা হতে পারেন না বরং ইহা বিরাট রকমের হটকারিতা ও চাটুকারিতা। বলতে লজ্জা হচ্ছে, আমরাই পৃথিবীতে সবচেয় বেশি হীনমন্যতায় ভোগা জাতি,আর কোন এক অজ্ঞাত কারনে এর অন্যতম কারন আমাদের ভাষা। অথচ এর উল্টোটা হওয়াটাই ছিলো সবচেয়ে বেশি স্বাভাবিক। যদি আমাদের গর্ব করার মতো কিছু থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের "বাংলা ভাষাকে" সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখতে হবে। আরেকটা ব্যাপার আমার কাছে বরাবরই এক রহস্য হয়ে থেকেছে, আর তাহলো সাদা চামড়ার উপর আমাদের অগাদ ভক্তি আর দূর্বলতা।
এবার বলবো হিন্দী ভাষার কথা। পার্শ্ববর্তী দেশের এই ভাষাটি অযাচিত ভাবে আমাদের রক্তে ঢুকে যাচ্ছে। আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে আমাদের।অনর্গল হিন্দীতে কথা বলা, কিংবা কথার মাঝে সুনিপুন ভাবে দু-একটি হিন্দী শুব্দ জুড়ে দেয়াটা আজকাল আধুনিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতেও এর অবাধ প্রচলন দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে এ দেশে হিন্দী সংস্কৃতির আগ্রাসন।আবাল,বৃদ্ধ,বনিতা সবাই মজে আছে হিন্দী সংস্কৃতিতে।বুদ হয়ে আছে হিন্দী চলচ্চিত্র আর সিরিয়ালে।
এর প্রভাব সম্পর্কে দু-চারটে কথা না বললেই নয়। বর্তমানে সময়ে অনাকাংখিতভাবে ভাবে বেড়ে যাওয়া পারিবারিক কলহ ও সামাজিক সমস্যার নেপথ্য নায়ক হিসেবে এই হিন্দী সংস্কৃতিকেই অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। আর এ সমস্যা এতোটাই প্রকট আকার ধারন করেছে যা অনেক ক্ষেত্রে মানসিক বিকৃতি ও ভারসম্যহীনতার কারনও হয়ে যাচ্ছে।এর প্রকৃত উদাহারন হতে পাড়ে “পাখি” ড্রেস না পেয়ে তরুনীর আত্বহুত্যা করার ঘটনাটি। আর নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, সাম্প্রতিক সময়ে এমনো অনেক মানুষ দেখেছি যারা গুছিয়ে বাংলাটাও বলতে পারেনা অথচ অনর্গল হিন্দী বলে যাচ্ছে।
আমি বলছি না ভীনদেশী সংস্কৃতি একেবারেই ত্যাগ করতে হবে । কিন্তু এর লাগাম টেনে ধরার সময় হয়েছে।নয়তো যে সমস্যা এখনো ছোট তা একদিন দানবীয় রূপ নিবে। বুনে দেয়া ছোট বীজ ই কিন্তু একদিন মহীরুহ আকার ধারন করে। কথায় বলে নিজের ভালো নাকি পাগলেও বোঝে। আফসোস। আমরাই বুঝি না! একটি কথা প্রচলিত আছে,অনেকটা এমন- “ ছাগলের দুধ পান করার জন্য সিংহ ছাগলের ভাষা শিখলেও হুংকার টা কিন্তু নিজ ভাষাতেই দেয়”! যেই ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে এতো মাতামাতি সে ভারতেই কিন্তু আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো অনেকটা অবাঞ্চিতই বলা চলে।
শেষ করবো যথারীতি কিছু আশা নিয়ে আর কিছু আশার কথা শুনিয়ে। হিন্দী কিংবা ইংরেজী যে যেই ভাষাই বলুক আর চর্চা করুক, আমাদের প্রানের ভাষা,মায়ের ভাষা বাংলাই যেনো প্রতিটি বাঙ্গালীর অন্তরের ধ্বনী হয়ে প্রকাশিত হয়, একজন বাঙ্গালি- বাংলাদেশী হিসেবে এই প্রত্যাশা সব সময় ছিলো, আছে এবং থাকবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৫

বিদেশ পাগলা বলেছেন: আরে ভাই একটি নির্দিষ্ট পার্টি বা দল আছে যারা কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধা , ভাষা ও ১৯৭১ সালের কথা বলে । মনে হয় একটি বায়ু নির্গত (পাঁদ) দিলেও সে সময় ও ৭১ সালের কথা বলে । মজার ব্যাপার প্রকৃত পক্ষে বাংলা ভাষার জন্য তারা কিচ্ছুই করে না । শুধু মানুষ দেখানো চিল্লানো ভারি বড় বড় কথা বলা কাজের নামে আন্ডা ( ডিম/শূন্য) । কাকরাইলে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউট ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এখন ও পর্যন্ত চালু করতে পারে নাই । কোন প্রডাক্টের গায়ে বা উপরে বাংলা লিখা বাধ্যতা মুলক করতে পারে নাই অথচ চীন পেরেছে । দেশের উচ্চ পর্যায়ে যেমন সচিবালয় , সুপ্রীম কোর্ট , শিক্ষা,গবেষনা প্রতিষ্ঠানে, ব্যাংক ,বীমা ,আমদানী-রপ্তানী, ব্যবসা............সহ কোথায় পেরেছে বাংলা ভাষা কে প্রতিষ্ঠা করতে ? আর শুধু পারে ১০ বার পাকিস্তান কে গালি দিতে । অথচ পরবর্তী প্রজন্ম যে হিন্দী শিখে ভারত প্রেমে দিওয়ানা মাতোয়ারা সে দিকে কোন খেয়াল নেই । এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কত গভীর যে উপরে (বাহ্যিক)থাকবে জোব্বা, দাড়ি-টুপি ভিতরে (অন্তরে) থাকবে সম্পূর্ন উল্টো অন্য কিছু । দেহ থাকবে বাংলাদেশে কিন্তু মন থাকবে ভারতে । ঠিক অনুরুপ ভাবে ইংলিশ মিডিয়ামে অধ্যায়নকারীরা ও শিক্ষকেরা খাবে অবস্থান করবে এদেশে গুনগান গাইবে পশ্চিমাদের ..!........একে কি দেশপ্রেম বলে ? মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা নামধারীরা ভাষা ব্যবসায়ী চাটুকার ভন্ড প্রতারক ডাবল স্ট্যান্ডডারদের চিনে রাখুন ধোকা কাকে বলে ? কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী বলে মুখে ফেনা তুলে দম নেওয়ার সময় পায় না ৭ টি গালি দিয়ে.........

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

নাকিব বাপ্পী বলেছেন:
ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া পোলাপান গুলো যে কি জিনিস বলে বোঝাতে পারবো না।ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার একটা ঘটনা শেয়ার করি, কিছুদিন আগে আমি গিয়েছিলাম শাহাবাগ থানায়। আমার এক মামা ওই থানায় কর্মরত। আমি দাড়িয়ে আছি, আসলে মামার জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন পরে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে ৪-৫ জন হানি সিং টাইপ ছেলে এসে ঢুকলো। তাদের মধ্যকার কোন একজনের দামী ফোন হারানো গিয়েছে।কর্মরত অফিসার বললেন, আপনাদের লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। বলেই তিনি তাদের হাতে একটি ফর্ম তোলে দিলেন।এটা পূরন করে দিন। তারা ফর্ম টা হাতে নিয়ে কিছুদূর গিয়ে দড়িয়ে থাকলো। নিজেদের মধ্যেই ফিস-ফাস করছে। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি। হঠাত তাদের মধ্যে একজন এসে বললো, এক্সকিউস মি, একচুয়ালি আমরা কেও বাংলা লিখতে পারি না ভালো মতো, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড যদি এটা পূরন করে দিতেন !
বিশ্বাস করবেন না ভাই,এটা দেখে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিলো আমার। এইসবের জন্যে পরিবারের ভূমিকাও কোন অংশেই কম না। অনে সময় বেশিই বৈকি !এখনকার সময়ে অনেক বাবা মা ই চায় তাদের সন্তান যেনো বাংলা না শিখে। আমি মনগড়া কথা বলছি না।শুনতে খারাপ লাগে, কিন্তু এটা সত্য।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০৬

বিদেশ পাগলা বলেছেন: ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সাধারণত ৩টি বিষয়ে দূর্বলতা থাকে : বাংলা ভাষা, ধর্মীয় বিষয় ও গণিত । কারণ ওদের আচার-আচরণ কথা-বার্তা সবই একটু ভিন্ন ! ভাষা ব্যবসায়ীরা মৌসুমী পহেলা বৈশাখী পান্তা-ইলিশের মত শুধু নির্দিষ্ট দিন চল্লা-চেচামেচি করে শেষ........সময় কৈ ? অনেক ধন্যবাদ ।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

নাকিব বাপ্পী বলেছেন: আমি ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া একটা বাচ্চাকে পড়াই। একটা ব্যাপার দেখে সেদিন হতবম্ভ হয়ে গেলাম। তাদের সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে জাতীয় সংগীত ইংরেজীতে অনুবাদ করে লিখা !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.