নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

তীরন্দাজ

গান ভালোবাসি, সাহিত্য ভলোবাসি, রাজনৈতিক দায় ও দলবদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকতে চাই। সবার উপরে মানুষ, তারপর বাকী যা কিছু।

তীরন্দাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্সিকা ভ্রমন (3): পাহাড়ঘেরা মায়াময় দ্বীপ

২০ শে জুলাই, ২০০৬ সন্ধ্যা ৬:০৭

1300 শতাব্দী থেকে কর্সিকা ইটালীর জেনুয়ার দখলে ছিল। তখন থেকেই কর্সিকানরা তাদের স্বাধীনতা দাবী করে অসছিল। 1755 শতাব্দীদে জেনুয়ানদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হয় তারা। জেনুয়া এ অবস্থাতেই দ্বীপটি ফরাসীদের কাছে বিক্রী করে দেয়। ফরাসীরা 1769 সালে স্বাধীনতাকামীদের পরাজিত করে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ফরাসী বিপ্লবের সময় সামান্য সময়ের জন্যে বৃটিশদের দখল ছাড়া কর্সিকা আজ অবধি ফরাসীদের দখলেই রয়েছে।



পাহাড়ের দ্বীপ কর্সিকা। পুর্ব উপকুলের সামান্য অংশ ছাড়া পুরোটাই পাহাড় আর পাহাড়। সবচে উচু পাহাড়টির উচ্চতা 2800 মিটার প্রায়। কোন কোন এলাকায় বেশ খটখটে আর শুকনো। এরই মঝে বাড়ীঘর করে বাস কর্সিকানদের। প্রতিকুল পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো শক্ত মনেরই হয়ে থাকে। কর্সিকানরাও তাই। এদের রক্তের বদলে রক্ত নেয়ার কাহিনী খুজতে গেলে তাই বেশীদুর পেছনে যেতে হবে না। ছোট ছোট জামিদারের প্রভাবের দখলে পাশাপাশি গ্রামগুলো প্রতিশোধের স্পৃহায় উস্মুখ থাকতো কোন এক পুরোনে অবিচারের সুত্রকে জড়িয়ে ধরে। এ নিয়ে বিভিন্ন উপাখ্যান প্রচলিত আছে। ফরাসী দখলে যাবার পর তারা তাদের দখলভুমিতে নানা আইন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম হয়। মনে হয় ফরাসীরা ভালো শাসকই, নাহলে নেপোলিয়ানের মতো একজন কর্সিকানকে, যার বাবার সরাসরি যোগাযোগ ছিল ফরাসী বিরোধী সংগ্রামের সাথে, কিভাবে নিজেদের সম্রাট হিসেবে মেনে নিতে পেরেছে ? দখলকৃত দেশের মানুষগুলো তো দাসেরই সমতুল্য। এমনি একজন দাসের শাসন মেনে নিতে পারা কি সহজ কথা ? কিন্তু ফরাসীরা তা পেরেছে।



আমরা তাবু খাটালাম দ্বীপের উত্তরাংশে সমুদ্র থেকে প্রায় মাইলখানেক দুরে এক ক্যাম্পিং এলাকায়। এলাকায় সুইমিং পুল, দোকানপাট সবই রয়েছে। ইলেকট্রিসিটিও নিতে পারা যায়, নিলামও। তাবু থেকে কয়েক কদম হাটলেই টয়লেট ও গোসলখানা। প্রতিদিনের ভাড়া কুড়ি ইউরো। সমুদ্রের আরো কাছাকাছিও এমন আরো এলাকা রয়েছে, কিন্তু সেখানে গাছের ছায়া না থাকায় একটু দুরেই জায়গা নিলাম। আনকোরা নতুন তাবু ইন্সট্রাকশান অনুযায়ী গাড়তে সমস্যা হলো বেশ, সেই সাথে বউএর সাথে একটু মতানুবাদও। কিন্তু তা সচরাচরের মতোই বেশীদুর এগুলো না। এক পেটমোটা জার্মান কাছ দিয়ে হেটে যাবার সময় বললো আমাদের তাবু নাকি বাঁকা হয়ে উঠেছে। তাতে এমনি হাসলাম যে দুজনে মিলে, মতপার্থক্য হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো অতি সহজেই। তাছাড়া আমাদের কাছে তাবুটি একেবারেই বাঁকা মনে হলোনা। কান্ত ছিলাম বেশ, তাই রান্না না করে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে আবারো পিজাই খেলাম। তবে যে জায়গায় বসে খেলাম, তার সৌন্দর্যের প্রভাবে অখাদ্য পিজাই দারুন সুখাদ্য হতে দেরী হলোনা। একেবারে সমুদ্রের কাছাকাছি ছোট্ট এক রেষ্টরেন্ট, পাশাপাশি সমুদ্রের দিকে মুখ করে বসলাম দু'জনে। শান্ত সমুদ্র, ঢেউ তেমন বেশী নেই। আকাশের নীলিমায় মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। সারা দিনের কান্তি দুর হয়ে গেলো এক নিমিষে সামুদ্রিক বাতাসের নরম স্পর্শে। তবে বিল দেবার সময় পকেট তাতে যতোটা হাল্কা হলো, তা ভাবতে গিয়ে খাবি খেতে হলো বারবার।



দ্বীপটি 180 কিলোমিটার লম্বা ও সবচে' চওড়া অংশটি প্রায় 80 কিলোমিটার। অধিবাসীর সংখ্যা 2 লাখ 50 হাজার। এর মঝে বেশ বড় একটা অংশ আলজেরিয়া বংশোদ্ভুত ফরাসী নাগরিক। তাদেরকে কলোনিজমের সময় ফরাসী সরকার জায়গা জমি দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে। ট্যুরিজমের মৌসুমে গড়ে প্রায় 4 লাখ ট্যুরিষ্ট এদের সাথে যোগ দেয়। প্রায় পাঁচ লাখ কর্সিকান ফরাসী মুল ভুমিতে বাস করে। অনেক কর্সিকান এখনো স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসী। মাঝে মঝে বোমা ফেলে এরা এদের অস্তিত্বের জানান দেয়। প্রতি শহরে ঢোকার আগেই ফরাসী ও কর্সিকান ভাষায় শহরের নাম লিখা। প্রায় বেশীরভাগ শহরেই ফরাসী নাম লাল কালিতে মুছে ফেলা হয়েছে।



সকালে পাখীর কলকাকলিতে ঘুম ভাংলো। এ গান অনেকদিন শোনা হয়নি যান্ত্রিক সভ্যতার নিষ্পেশনী প্রভাবে। চুপটি করে তাবুর ভেতরে বসে বসে শুনলাম এ গান। মনে হলো সকালের ভৈরবীতে সুর ধরেছে প্রকৃতি। আলাপ শেষ হলেই যেন টোকা পড়বে তবলায়। সুরের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দমকা হাওয়ার মতো নেচে বেড়াবে তাল।



আজকের দিনটি বেলাভুমিতেই সাতার গোছলেই কাটাবো বলে ঠিক করেছিলাম আমরা। বউ ক্যাম্পিং এলাকার দোকানে ফরাসী পাউরুটি "বাগেট" এর অর্ডার দিয়েছিল। গিয়ে নিয়ে এলো, আমি গ্যাসের স্টোভে জল বসিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা শুরু করলাম। একটা বড় প্লাষ্টিকের বাঙ্ উলটে টেবিল বানানো হলো। ন্যাস কফিতে চুমুক, বাগেট আর কর্সিকার পনির দিয়ে সারা হলো প্রাতরাশ:।



চলবে......।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ রাত ১:০৭

অতিথি বলেছেন: এভাবে এডভেনচারপুর্ন ভ্রমনের জন্যে দরকার ফ্লেক্সিবল সঙী/সঙীনি । ভাবীকে সালাম ।

২| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ রাত ২:৩৭

অরূপ বলেছেন: সুখী মানুষ রে সুখী মানুষ!!!
একটা জামা দিয়েন..

৩| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ সকাল ৭:২৫

অতিথি বলেছেন: রেজওয়ান, অরুপ, অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।
অরুপ, ভাইডি, কয়েক বছর আগের জামা দিবার চাইলে, ছাইড়া দে মা, কাইন্দা বাঁচি , কইয়া পালাইতেন...।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ সকাল ৭:৩২

অতিথি বলেছেন: আপনারে আবার হিংসা হচ্ছে ... লাস্ট ক্যাম্পিং-এ গেছিলাম সেই কবে!! সাত বছর আগে ... পুরানা স্মৃতিগুলা মনে পড়ল।

ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী এদের সীমান্তবর্তী এরকম ছোটছোট এলাকাগুলোর ইতিহাস আসলেই ইন্টারেস্টিং!!

৫| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ সকাল ৯:২০

অতিথি বলেছেন: যদি লটারীতে এক কোটি টাকা পেতাম..তবে প্রথমেই তীরনদাজের মতো পৃথিবী ভ্রমণে বের হতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার! জীবনেও লটারীতে কিছু পাইনি।
তীরন্দাজ সৌভাগ্যবান! তার চেয়েও বড়ো কথা- ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দর ক'রে সাজিয়ে লিখতে পারে ও। আর এ ধরনের ভ্রমণকাহিনী আমাকে বেশ টানে। হয়তো বিদেশ ভ্রমণটা তেমন হয়নি, তাই!
ধন্যবাদ তীরনদাজ, কর্সিকার মনভুলানো ছবি আর ভ্রমণকাহিনীর জন্য। আপনার কবিতাগুলোও অবশ্য চমৎকার।

৬| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ দুপুর ২:৪১

অতিথি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জি্বনের বাদশা ও শেখ জলিল ভাই।

আমার এই পাগলা স্বভাব। ঘুরে ঘুরেই জীবন ....। ছন্নছাড়া আরকি!

৭| ২১ শে জুলাই, ২০০৬ বিকাল ৩:৪৯

অতিথি বলেছেন: কোন দিন ক্যাম্পিং এ যাওয়া হয় নাই।

কষ্ট।

৮| ২৬ শে জুলাই, ২০০৬ রাত ৮:০২

অতিথি বলেছেন: পড়ছি ....

ছবিগুলো দেখবো সবার আগে। এই শুরু করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.