নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন জীবনের জন্য, সাহিত্য জীবনের অর্থ বোঝার জন্য৷

নাসিম আহমদ লস্কর

নাসিম আহমদ লস্কর

নাসিম আহমদ লস্কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ \'অদৃশ্যের দৃশ্য\'

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৩

সাহিত্য হচ্ছে মনের খোরাক। তৃতীয় বিশ্বের এ ক্রান্তিলগ্নে মানবসমাজ যত আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে তত হতাশা তাঁর জীবনকে নীরব গ্রাস করছে। মানবজাতির ব্যস্ততা ক্রমেই বাড়ছে; ফলে তাঁরা আর আগের মত সুস্থ বিনোদন পাচ্ছেনা। সাহিত্য হচ্ছে এমনই এক মাধ্যম যা মানুষকে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে সক্ষম। বিনোদনের পাশাপাশি সাহিত্য মানুষকে জীবনের গভীর অর্থ শেখাতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে, সাহিত্য বলতে মানুষের সামগ্রিক জীবনকে বুঝায়।

 

মানবজাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তাঁদের বিমল আনন্দ দেওয়ার লক্ষ্যে; প্রকৃতসত্য উপস্থাপন করার লক্ষ্যে কবি  অনিন্দ্য আনিস দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত সাহিত্যসাধনা করে আসছেন। বিরহ-মিলন; সুখ-দুঃখ; প্রেম-ভালোবাসাময় এই জটিল জীবনের অদৃশ্য চরম সত্যগুলোকে তিনি তাঁর কলমের শৈল্পিক আঁচড়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিষয়, প্রেম ভালোবাসা, আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনা, দেশপ্রেম সহ নানা বিষয়। 


কবির পৈত্রিক নাম মোঃ আনিছুর রহমান। সাহিত্য জগতে তিনি অনিন্দ্য আনিস নামেই পরিচিত। তাঁর স্থায়ী নিবাস খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। ৫৩ বছর বয়সী এই কবি এখনো তরুণমনা। ১৮ বছর বয়সী একজন টগবগে তরুণ যেমন স্বপ্ন দেখে তিনিও তেমন স্বপ্ন দেখেন। তিনি যেন এক চিরতরুণ। সৃষ্টিই যেন তাঁর নেশা। 


একুশে বইমেলা ২০১৮ তে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অদৃশ্যের দৃশ্য’।বইটি প্রকাশিত হয়েছে সিলেটের প্রাকৃত প্রকাশ থেকে। প্রকাশক- আব্দুল্লাহ আল মামুন। বইটিতে সর্বমোট ৫১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। এ বইয়ের উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতার চরণ বিশ্লেষণসহ নিম্নে তুলে ধরা হল:


‘তোমার ওই দৃষ্টি আমাকে দিয়েছে সৃষ্টি

শিল্পীর তুলি দিয়ে এঁকেছি তোমার হৃদয়।’

          (তুমি ঈর্ষা- অর্দশ্যের দৃশ্য-০৯)

যা সরস তা নিয়ে আসে সৃষ্টিতে রস। নিরস কোনকিছুর স্থান সৃষ্টটিজগতে নেই। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেলে প্রতিটি মানুষের মন সরস হয়ে উঠে। কবিতাটির গূঢ়তত্ত্ব হচ্ছে, কবি তাঁর প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেয়েই হয়ে উঠেছেন সৃষ্টিশীল। কোন মানুষই একা কিছু সৃষ্টি করতে পারেনা; প্রয়োজন অণুপ্রেরণার। সভ্যতার বিনির্মাণে অণুপ্রেরণা অনেকাংশেই শক্তি ও সাহস জোগায়। ফলশ্রুতিতে, মানুষ হয়ে উঠে সৃষ্টিশীল। 

 

‘ঈশ্বর আমার সবুজ শ্যমলির ধান ক্ষেতে,

সোনালি নাড়ার ছাওনির কুঁড়ে ঘরে।

ঈশ্বর প্রতিটি মানুষের অন্তরে,

আমার ঈশ্বর কচি শিশুর মিষ্টি হাসির মধ্যে।’

              (ঈশ্বর- অদৃশ্যের দৃশ্য- ১০)

আধ্যাত্মিক এ কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে ঈশ্বরের পরিচয়। ঈশ্বরের বাস আসলে নির্দিষ্ট কোন জায়গায় নয়। ঈশ্বরে বাস করেন মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানে। 


‘উত্তম সৃষ্টির অপূর্ব বাণিতে

অনন্তকাল রচিবো

তোমার আমার মিলন বাসর

আমার বয়স কত তা নিয়ে ভেবো না?’

 (আমার বয়স কত তা নিয়ে ভেবো না? অদৃশ্যের দৃশ্য-১২)


প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষা গ্রহণের যেমন কোন বয়স নাই ঠিক তেমনি ভালোবাসারও কোন বয়স নেই৷ যে কেউ যে কাউকে যেকোন বয়সে ভালোবাসতে পারে। ভালোবাসা মানেনা কোন বাঁধা। পরম ভালোবাসা মানুষকে চরম স্বপ্ন দেখায়৷ ভালোবাসার প্রিয় মানুষটাকে মানুষ যে কোন ভাবেই কাছে পেতে চায়। ভালোবাসার মানুষের চোখে চোখ রেখে মানুষ তাঁর সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে চায়। অনেক সময় নিষ্ঠুর বাস্তবতার কারণে ভালোবাসার মানুষের সাথে সংসার করতে পারেনা। শত বাঁধা বিপত্তির মাঝেও প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওযার চেস্টা চালিয়ে যাওয়ার নামই ভালোবাসা। 


‘মেধাবিরা গ্রামে ফিরে এসো

শহরকে টেনে আনো গ্রামে

লাঙ্গলের ফলা দিয়ে কর্ষণ করো প্রিয় মৃত্তিকার বুক

বপণ করো,

এখানে তোমার মেধার সর্বোচ্চ বীজ

নানা বীজের দম হাত ছড়িয়ে পড়ুক

দশ দিগন্তে।

মাথা উঁচু করে দাঁড়াক তোমার স্বদেশ।’

 (মেধাবিরা গ্রামে ফিরে এসো- অদৃশ্যের দৃশ্য-১৪)

মেধাবিরা হচ্ছে দেশের সম্পদ। এই সম্পদকে যদি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে যেকোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশ এমন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে যে, এখানে মেধাবিরা লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে ফিরতে চায়না। ক্যারিয়ার লাইফে হয় বিদেশে পাড়ি জমায় অথবা শহরে অবস্থান করতে চায়। ফলে গ্রামীণ সমাজ যে অন্ধকারে আছে সে অন্ধকারে থেকে যায়। আমাদের এই মনমানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। মেধাবিরা গ্রামে যেতে হবে। গ্রামের পিছিয়ে পড়া লোকদের আলোর মুখ দেখানোর দায়িত্ব মেধাবিদের উপরই বর্তায়। 


‘একবিংশ শতকে

সমগ্র সভ্যতা হেরে যায়

নোবেল জয়ীর ছায়ায়

নগ্ন সভ্যতা জেগে উঠে

বার্মায়…।’

  (কাটো কচু কাটো- অদৃশ্যের দৃশ্য- ২১)

কবিতাটিতে বার্মার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ভয়ঙ্কর নির্যাতনের কথা ফুটে উঠেছে। সময়সচেতন কবির চোখে এই বিভীষিকাময় বিষয়টি ধরা পড়েছে এবং তার বিবেক এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। শান্তিতে নোবেল প্রকৃতপকক্ষে তাঁদেরই দেওয়া হয় যারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আজীবন সংগ্রাম করে যায়। কিন্তু, অংসান সূচী আসলে শান্তির নোবেল পেয়েও যে অশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন তা আসলেই নিন্দনীয়। জাগ্রত বিবেকের কবি ধিক্কার জানান এই নৃশংস কর্মকাণ্ডটিকে। 


‘হে বিশ্ব মানবতা রুদ্ধ দুয়ার খুলে দাও

পরজিয়া পাখির মতো উড়ে যেতে চাই

বুলেটের আঘাতের মতো মরতে চাইনা

চাবুক লাঠি কাঁচি রডের আঘাতে

রক্তাক্ত হয়ে মরতে চাইনা আর।


সীমান্ত রেখা খুলে দাও

যেখানে খুশি সেখানে যাবো

উড়তে উড়তে শান্তির জমিনে আশ্রয় নেবো।’

          (হে বিশ্ব মানবতা- অদৃশ্যের দৃশ্য-২২)

এই কবিতাটিতেও মূলত রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে জাতিগত নিধন চালিয়েছিল সেটাই ফুটে উঠেছে। মৃত্যু যদিও সবারই একদিন হবে কিন্তু প্রতিটি মানুষই স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করে। অপমৃত্যু কারো কাম্য নয়। তাইতো নির্যাতিত মানুষগুলো ছুটে বেড়ায় দেশ থেকে দেশান্তরে একটু শান্তিতে দিনযাপনের আশায়। বিশ্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা ভৌগলিক সীমান্ত ব্যবস্থার উদ্ভব। বিস্তৃত পরিসরে চিন্তা করলেই এটাই প্রতীয়মান হয় যে,  পুরোবিশ্ব এক বিধাতার সৃষ্টি। তাই মানবতার খাতিরে  নির্যাতিত মানুষগুলোকে প্রয়োজনে সীমান্তরেখা খুলে দিয়ে আশ্রয় দিতে হবে। 


‘আজি একলা ঘরে মনে পড়ে তারে

এইতো সেদিন দাঁড়িয়ে দুয়ারে

দুল দুলিত কানে ইশারা দিলো প্রাণে

প্রথম পরশ শিহরিত অন্তরে।’

                   (ক্লান্তি- অদৃশ্যের দৃশ্য-২৭)

স্মৃতিচারণমূলক এ কবিতাটিতে অতীতের স্মৃতি ফুটে উঠেছে। অতীত স্মৃতি জটিল জীবনে মানুষকে আবেগ তাড়িত করে। আর তা যদি হয় প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো মূহুর্ত তাহলে তো আর কথাই নেই। ফেরারি মানুষ ফিরে যেতে চায় তার অতীত সুখের জীবনে। 


‘গাছের পাখিরা সবাই

নির্ঘুম রাত পার করছে।

নিস্তব্ধ রাত।

…………………………..

আমিও দুই যুগ

পোকার মতো চিৎকার করছি।

কোন উত্তর মেলেনি।’

      (একটি স্বপ্ন ভাঙ্গার রাত; অদৃশ্যের দৃশ্য-৬১)

মানুষের যখন স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় তখন মানুষ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়। সে আর নতুন করে কোনো স্বপ্ন বুনে না। স্বপ্নীল পৃথিবী তাঁর কাছে নরকে পরিণত হয়। এ কবিতায় কবি তাঁর গভীর বোধ দিয়ে সে স্বপ্ন ভাঙ্গার পরিণতিটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। 


বইটির বাকি কবিতাগুলোও জীবনের নানা আঙ্গিক থেকে রচিত। পুরো বইটি পাঠ করলে মানবজীবন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করা যায। আমার বিশ্বাস বইটি বাংলা সাহিত্যকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবে। আমি বইটির পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।


লেখক: নাসিম আহমদ লস্কর

শিক্ষার্থী; ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (১ম বর্ষ)

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

তাং: ০৪.০৯.২০১৮ খ্রি.

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৭

স্বপ্নীল ফিরোজ বলেছেন: আ‌মি আপনার বেদনা বুঝ‌তে পা‌রি। আ‌মি নি‌জেও এমন ঘটনার স্বীকার। আপনার মা‌য়ের আত্নার শা‌ন্তির জন্য দোয়া ক‌রি। আপ‌নি যেন শোক কা‌টি‌য়ে উঠ‌তে পা‌রেন। জীবন এমনই। এভা‌বেই বাঁচ‌তে হ‌বে।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আরও ভালো হতো যদি লেখার সাথে বইয়ের প্রচ্ছদ টা দিতেন।

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর।

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৯

চাঙ্কু বলেছেন: কোবতেগুলা ভালা হইছে বিশেষ করে রোহিংগা নিয়ে কোবতেগুলা। কিন্তু জেডা সারাজীপন সাধনা করে ৫৩ বছর বয়সে এসে কোবতের প্রথম বই বের করলে কেমতে হপে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.