নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চোখের ও জানার আড়ালে পড়ে থাকে অনেককিছু ঘটনা, যা মানুষ জানতে পারেনা কখনো, বলতেও পারেনা মানুষ অন্যের কাছে, কিন্তু লিখে রাখা যায় কাগজের সাদা পৃষ্ঠায় জীবনের যতো গোপন গল্প।

নষ্টজীবন®

আমি অত্যন্ত সাদাসিধে একজন যুবক, পরিচয় দেয়ার মতো কিছুই নেই, আমি মানুষের মতোই দেখতে।

নষ্টজীবন® › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীরব ব্যথায় স্তব্ধ কবি

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪




নাহ! কিছুই যেন ভালো লাগছে না কবির! মধ্যাহ্নর ভোজে বসে কবির থাল থেকে যেনো কমতেই চাইছিল না পেট পূজার উপাদান গুলো! কিছুতেই মুখে চাবাইতে আর মন চাইতে'ছে না আজ। বারবার দুচোখে ভেসে উঠছে ওই'পাড়ার ছালেহা'র মায়ের বুকফাটা আর্তনাদের সময় কতই'না কষ্টের ছাপ ছিলো সেই মুখচ্ছবি জুড়ে! আহারে কি হৃদয়বিদারক ছিলো সেই আর্তনাদ! মনে হচ্ছিল কইলজ্বা'টা বেরিয়ে আসছিল তার! কারোরই কথা শুনছিলেন না তিনি, কেবল চিৎকার করে বুকের উপরে দুইহাতে চাপটাতে ছিলেন অনেক্ষণ। কবির বুকের ভেতরও বেদনার ঝড় বইতে শুরু করেছিল সেই ব্যথাতুর অসহায় আর্তনাদ দেখে দেখে।

সেদিন ও'পথেই আসছিল কবি, হঠাৎ কলিজা ছেঁড়া আত্বচিৎকার শুনে দাড়িয়েছিল। ঘটনার কিছুই ঠাওর করতে পারেনি কবি প্রথম দিকে, কিন্তু পাশ থেকে একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে ছলেহা'র মা'কে ধরে যখন বলতে শুনলো 'সবুর করো ছালেহা'র মাও, সবুর আনো মনে, তোমার ছালেহা'র যে এমন সর্বনাশা ক্ষতি করেছে আল্লাহ্ তার সেই সাজা একদিন ঠিকই দিবেন, এখন তুমি একটু থামো'গো ছালেহা'র মা, ঘটনাটা দশ-গ্রাম জানাজানি হয়ে গেলে তোমার ছালেহা'র কি অইবো একবার ভাবো ছালেহা'র মা- ভাবো, দেখো তোমার চিৎকার আহাজারীতে চারিদিক থেকে লোকজন কিভাবে এসে জড়ো হচ্ছে, যা করনের তা পরে চুপিচুপি করতেই পারবো আমরা কোনভাবে, আমাদের কি ক্বইলজ্বায় আঘাত কম লাগছে'গো ছালেহা'র মাও...! আমাদেরও ক্বইলজ্বাটা পুড়ে যায় যখন তোমার মাইয়ার এমন দশা হইছে মনে আহে...!'
কথাগুলো শুনে কবির মনে খুব কষ্ট লেগেছিল, বুক ফেটে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল কবি'র আত্বচিৎকার, চোখের কোণে জমে উঠেছিল অনেকখানি পানি। কোনরকম চোখ ডলতে ডলতে আর সবকিছু এভাবে নীরবে চেঁপে যাওয়ায় গরীব মানুষদের প্রতি কেমন যেন রাগ নিয়েই কবি সেখান থেকে ফিরছিলো বাড়ি দিকে।

হাঁটতে হাঁটতে কবি ভাবছিল ছালেহা'র কথা আর চোখ মুছতে ছিলো কিছুক্ষণ পর পর। ছালেহা'র মা'কে শান্তনা দেয়া মহিলার কথা ভেবে খুবই আফসোস হচ্ছিল কবির মনে। মানইজ্জত কি কেবল গরীবদের কাছেই এতো মূল্যবান! ধনীদের কাছে যা কোনদিন বিন্দুমাত্রও পায় না সম্মান! অনেকটা রাগও হয়েছিল হয়তো মহিলার প্রতি। তাই সেখানে কোন কথা না বলে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটতে থাকে কবি বাড়ির পথে। মনে মনে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে বলে- মানইজ্জতের মূল্য বুঝবার জন্য কেবল গরীবদের মন'ই দিয়েছ খোদা, বল দিতে পারোনি! কতো গোপনে ধরে রাখবার চেষ্টা তাদের! তবুও মানুষরূপী জানোয়ার গুলোর থেকে কোনভাবেই আর তা ধরে রাখতে পারছেনা তারা! তারা নয় দুর্বল, তুমি তো নও খোদা, এমন নির্মম জঘন্যতা কেন তুমি নিজে প্রতিরোধ করো না খোদা! তুমি তো সবই দেখো, সবই বুঝো, তবুও কেন এতো নির্মম কষ্ট পেতে দাও গরীবদের! মনে মনে এরকম আরো কতরকম প্রশ্ন ছুড়তে ছুড়তে হেঁটে যেতে থাকে কবি। বারবার ছালেহা'র জন্য কেঁদে কেঁদে উঠছিল কবির মন। বয়স তো তেমন বেশি হয়নি দেখলাম মেয়েটির, বড়জোর বারো তেরো হবে হয়তো! তবুও কে করলো তার এমন সর্বনাশ! কোন পরাণে করতে পারলো এত বড় ক্ষতি এই গরীব মায়ের একমাত্র মেয়েটির...! গরীবের ইজ্জত এভাবে আর কতদিন ধনীদের ক্ষণিকের খোরাক হয়ে থাকবে...?? ধর্ষকের কল্লা কাটতে জন্মিবে কবে আরেকজন বীরপুরুষ, যাঁর বীরত্বের নৃশংসতায় কেঁপে উঠবে ধর্ষকের মত জঘন্য ঘৃণিত মানুষরূপী জানোয়ার গুলোর হৃদপিণ্ড.??

মানুষ কতইনা খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনদিন! সভ্যতার এমন স্বর্ণযুগে এসেও মানবিকতা হারা মানুষ অন্তর! মানবতাহীন সমাজব্যবস্থায় বৈষম্যের জাতাকলে কত প্রাণের নির্মম প্রস্থান পৃথিবী থেকে তার হিসেব কে আর রাখি আমরা! দিনদিন কেবল নৃশংস'ই হয়ে উঠছে মানুষ! সত্যের জন্য অংহকারের ছিটেফোটাও খুঁজে পাওয়া যায় না মনুষ্যত্বহীনতার সমারোহে! মিথ্যার জয় জোয়ারে ভেসেই গেছে ন্যায়-নীতি আদর্শের পূঁজি টুকুনও।
এইতো কদিন আগের কথা জসীমের বাবাকে কে বা কারা মেরে ফেলে রেখেছিল পশ্চিম পাড়ার এক ধানক্ষেতে! আহ! সেদিন দেখেছিলাম বাবা হারা কোন ছেলের আহাজারি, সেদিনকার জসীমের আত্বচিৎকার তার কানে এখনও ভেসে আসে মাঝেমধ্যে- 'বাবা'গো...বাবা তুমি কই গেলা'গো আমারে একা ফেলে এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায়! কে বাবা কেড়ে নিলো তোমাকে আমার কাছ থেকে! আল্লাহ'গো... ও আল্লাহ তুমি কেন দেখলা না আমার বাবারে...?' এরকম হৃদয়ে আগুন জ্বালা কত কথাই'না সেদিন জসীম বলে চলছিল আকাশের দিকে দুই হাত তুলে! যেন আল্লাহ'র কাছেই বলছিল জসীম কষ্ট ঝরা কথাগুলো। তার মতো অসহায়ের আল্লাহ ছাড়া কেহ'ই যে নেই আর দেখবার মতো! আপন বলতে কোন ছায়া'ই যে আর রইলোনা জসীমের উপর! কোন জানোয়ার এতো নির্মমভাবে মেরে ফেললো তার বাবাকে! কোন সন্তানই যে মেনে নিতে পারেনা বাবা'র অমন নৃশংস মৃতদেহ! নিষ্ঠুর মানুষগুলো কেড়ে নিলো তার একমাত্র অবলম্বন-ছায়া দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল 'বাপ'কে! পরে যখন জানতে পারে তার মা'ও নাকি কয়েকবছর আগে মারা গেছে কোন অসুখে পড়ে! তখন যেন নীরবে চোখের জলে ভেসে যাচ্ছিল কবির বুক, নীরব কষ্টে স্তব্ধ কবি। আহারে! জসীমের জীবনে আর কিছুই রইলোনা আপন ছায়া বলতে!

জসীমের মতো কবিরও যেন খুব বলতে মন চাইছিল- হাই'রে খোদা তুমি কেমনে গরীবদের প্রতি এতো অবিচার সহ্য করো...? তোমার কি একটুও মায়া লাগেনা খোদা...? গরীব কি কেবল সবলের কাছে এভাবে মাইর খাওয়ার জন্যই জন্মায় পৃথিবীতে..? যুগে যুগে দুনিয়া জুড়ে এলো কতইনা স্বাধীনতা...! তবুও গরীবদের মাথার উপর থেকে নামলো না ধনীর শাসন আর শোষণ...! অত্যাচার- অনাচার- অনিয়ম আর দুর্নীতির যেনো কোন পরিবর্তন নেই পৃথিবীর বুকে...! গরীবদের ভাগ্যের আজও হইলোনা কোনো পরিবর্তন! আল্লাহ সবসময় নিরুত্তর- আইন কেবল টাকাওয়ালা খুঁজে বলেই'তো এখনও মানুষ সকালের কোমল বাতাসে পায় লাশের গন্ধ! জসীমের মতো না জানি আরো কতো সন্তানের এমন বুকফাটা আত্বচিৎকারের নীরব স্বাক্ষী এই পৃথিবীর আলো বাতাসের সাথে সর্বোত্তম-সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত হওয়া আমরা মানুষ নামের প্রাণীগুলো...!!!

[ সম্পূর্ণ লেখাই আমার কল্পনার জগত থেকে উঠে এসেছে, কারো মনো ক্ষুন্ন হওয়ার কিছু নেই, নামগুলোও কাল্পনিক, কোথাও কারো সাথে মিলে গেলে সেটা একেবারেই কাকতালীয় ব্যাপার হবে, কোনকিছু লিখে ব্লগে নিজেকে জিইয়ে রাখাই একমাত্র উদ্দেশ্য ভাবতে পারেন। ছবিটি গুগল থেকে পেয়েছিলাম ]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: কবিদের দুঃখ কষ্ট অনেক বেশি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.