নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তিবাদী

আমরা করবো জয়

নাস্তিক দীপ

আমি দিব্য দীপ

নাস্তিক দীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি নিশ্চই মুসলমান ছিলেনা বাবা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৩

একাত্তরের গল্প



‘মা, আমরা কিন্তু এই সপ্তাহেই দাদু বাড়ি যাবো’।



‘থাম তো। দেশের যা অবস্থা। কখন কি হয় কে জানে। আর মেয়ে বেড়াতে যাবার জন্য অস্থির’।



আপুকে থামিয়ে দিলেন মা।



সত্যই তো আপুটাও জানি কেমন! এটা কি আর বেড়াতে যাবার সময় হল? আর্মিরা নাকি যাকে তাকে মেরে ফেলছে। আমাদের এখানে যদিও আসেনি এখনো। কিন্তু ওরা নাকি সব জায়গায় যাবে, বাবা বলেছে। বাবা আরও বলেছে আমরা মুসলমান তাই আমাদের কিছু বলবেনা। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যদি আমাদেরও মেরে ফেলে? বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তাহলে তো আরও ভালো! ভূত হয়ে ব্যাটাদের ঘাড় মটকায় ভাঙবো!



‘কিরে ছাগল, তুই অমন হা করে কি ভাবছিস’?



আপুর ডাকে হুঁশ ফিরলো আমার। আপুটাও যে কি, আমার কি নাম নেই? কত্ত সুন্দর একটা নাম আমার ‘সাগর’। কিন্তু আপুর যেন আমাকে ‘ছাগল’ বলেই ডাকতে ভালো লাগে।



‘তুমি আমাকে ছাগল বল কেন আপু? আমি আর্মিদের কথা ভাবছিলাম। ওরা দেখতে কেমন আপু?’



‘ধুর গাধা, আমি কি আর দেখেছি নাকি। তবে শুনেছি ওরা দেখতে দানবের মতো। মাথায় দুইটা শিং ও আছে। লম্বা লম্বা হাত আর জানোয়ারের মতো নখ’।



‘সত্যি আপু?’



‘শুধু কি তাই? ওরা যখন আসে দলবেঁধে আসে। যা কিছু পায় তছনছ করে দেয়’। বাবা বললেন।



‘আমাদের এখানেও কি আসবে বাবা? আমরা কই যাবো তাহলে? আমাদেরও মেরে ফেলবে নাতো?’



‘দেখো ছেলে কি বলে! বলেছিনা ওরা মুসলমানদের মারেনা।

আয় তোদের একটা মজার জিনিষ দেখাই। আয় আয়!’



বাবার সাথে সাথে আমরা জানালার কাছে গেলাম।



‘আকাশের ওই সূর্যটা দেখেছিস? ওইটার চারপাশে যদি একটা গাঢ় সবুজ রঙের আয়তকার বাক্সে সূর্যকে বন্দি করে দেই কেমন হবে বলতো?’



‘সূর্যকে আবার বন্দি করা যায় নাকি বাবা?’



‘আমি জানি বাবা, এটা আমাদের স্বাধীন বাংলার পতাকা’।



‘একদম তাই!’



‘কি দেখাচ্ছো ছেলে-মেয়েদের?’



আমাদের কথা শুনে মা-ও চলে এসেছেন।



‘দেখো দেখো, তুমিও দেখে যাও। আমাদের স্বাধীন বাংলার পতাকা’।



‘আকাশ তো কালো হোয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে কালো ধোঁয়া আসছে। এখানে স্বাধীন বাংলার পতাকা কোথায় পেলে তুমি?’

বাবা আকাশের দিকে তাকালের। একটা কালো ধোঁয়া আমাদের লাল সূর্যটাকে যেন গিলে খেয়ে আমাদের দিকেই তেড়ে আসছে।



‘ওর কাছেই কোথাও এসে গেছে। আমাদের এখানেও হয়তো চলে আসবে। কারফিউ দেবে। ঘরে আটকা পরে থাকতে হবে তখন’।



বুঝতে পারছিলামনা কি করবো। বাবা চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। আপুটা যে কি! এটা কি নেইল পালিশ লাগানোর সময় হল? কি জানি! আমিও এমন একটা ভাব করলাম যেন আমারও অনেক টেনশন হচ্ছে।



‘সাগর, তুই তাড়াতাড়ি তোর সালাম কাকুদের বাড়িতে যা তো। এই ফাইলটা দিয়ে আয়। আর শোন, এখন আর আসার দরকার নেই। কাকুর বাসায় থাকিস। আমি সন্ধ্যায় গিয়ে নিয়ে আসবো তোকে’।



‘এই সময় ওকে বাইরে পাঠানোর কি দরকার?’



‘দরকার আছে। আমিই বলেছিলাম ফাইলটা বিকেলে দিয়ে আসবো। সাগর তুই যা’।



বাবার ফাইল নিয়ে আমি দৌড় দিলাম। আকাশ যে অন্ধকার হয়েছে, ভয় লাগছে। ভয়ংকর অন্ধকার।



সালাম কাকুকে ফাইল গুলো দিলাম। কাকি আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। চারদিকে ভয়ংকর শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর থেকে থেকে আগুন জ্বলছে। আমাদের বাসার ওইদিকটা থেকে সবচেয়ে বেশি। কিচ্ছু হবেনা আমাদের। বাবা বলেছে, ওরা মুসলমানদের মারেনা।



কিভাবে সময় গুলো গেল বলতে পারবোনা। সন্ধ্যা হয়েছে সেই কখন। শব্দ আর আলোর ঝলকানিও থেমে গেছে। কিন্তু বাবা আমাকে নিতে আসছেননা। সালাম কাকুই আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে চাইলেন। আমি আসতে দিলামনা। এক দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম।



কিন্তু একি! সারাঘরের উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেছে। ঘরের দেওয়ালে বিশাল বিশাল সব গর্ত। নিশ্চই জানোয়ারেরা আমাদের বাসায় এসেছিল। শিং দিয়ে দেওয়ালে এমন গর্ত করেছে। আপু বলেছে ওদের মাথায় শিং থাকে।



কিন্তু আপুটা ওখানে পরে আছে কেন? ওর কি হয়েছে?



আপু তুই এভাবে জামা কাপড় ছাড়া কেন শুয়ে আছিস? তোর লজ্জা করছেনা? আর তোর সারা গায়ে এতো বড় বড় নখের আঁচর কে দিয়েছে? তুই তো বলেছিলি ওই জানোয়ারদের অনেক বড় বড় নখ থাকে।



সারা ঘরে রক্ত। ওই যে আমার বাবা-মা শুয়ে আছে। মা, তুমি এই সময়ে শুয়ে আছো কেন? আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমাকে খাবার দেবেনা?



বাবা, তোমার সারা বুক ঝাঁঝরা কেন? জানোয়ারেরা কি তোমাকেও মেরে ফেলেছে? তুমিনা বলেছিলে ওরা মুসলমানদের মারেনা? তোমার কথা তো মিথ্যা হতে পারেনা বাবা। তুমি নিশ্চই মুসলমান ছিলেনা বাবা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.