নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের সওয়ার[প্রথম পর্ব]

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫০

পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত চেয়েছে কেন ,বুঝলামনা ।চাকুরীর ফর্ম পূরণে বাবার নাম,মায়ের নাম,চাচা -মামাদের বিবরণ চায় এতো কখনো কেউ দেখেছে বলে মনে পড়ে না।থাক অত চিন্তা না করে ফরম পূরণ করি আগে।পেপারে উল্লেখ করা হয়েছিল ফরম আলিফ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। নিজস্ব ফরমে আবেদন করতে হবে ।এবং প্রার্থীকে অবিবাহিত ও সৎ হতে হবে।আশ্চর্য কাজে কর্মে সততা না হয় থাকল কিন্তু চরিত্র সৎ নাও হতে পারে ।চরিত্রহীন লোক আর কর্মে সৎ এটা কি সৎ প্রার্থীর নমুনা।যাক মানুষের কথা চিন্তা করে লাভ নেই। আমি নিজে বলতে পারি যে আমি চিন্তা চেতনায় একজন সৎ যুবক।আমি অসৎ হয়ে দরখাস্ত করছিনা। তাহলে-তো নিজের সাথেই প্রতারণা করা হবে। এক এক করে সব ঘর পূরণ করে পুনরায় দেখে

তার পর অফিসটির ই-মেইল ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম ।

সারাদিন টিউশনি করে রাতে সাইবারে গিয়ে চাকুরীর ইন্টার্ভিউ দেখে তবেই মেসে ফিরা।আজকাল ল্যাপটব বা কম্পিউটার থাকা অনেকের কাছে মামুলি বিষয় কিন্তু আমার কাছে কঠিন বিষয়।টিউশনি করে ছোট বোনের পড়ার খরচ পাঠাতে হয় গ্রামে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত রেজাল্ট ভাল ছিল। তারপর আর ধরে রাখতে পারিনি।নিজের খরচ,বোনের খরচ জোগাড় করে তবেই পড়াশুনা।কোন রকমে সেকেন্ড ক্লাস জুটেছে কপালে ।অনেক জায়গায় দরখাস্ত করা হয়েছে।দু এক জায়গায় ইন্টার্ভিউ দিয়েছি।পরে জানাবে বলেছে।প্রায় চার চারটে মাস চলে যাচ্ছে এম এর রেজাল্ট হয়েছে ।তবু কোন চাকুরীর জোগাড় করতে পারছি না।ভীষণ মন্দ লাগে এখন টিউশনি করতে।কতটা বছর ধরে টিউশনি করে এবাড়ী ওবাড়ী করছি আর ভাল লাগছে না।

আজ সকালে নতুন এক বাসায় টিউশনিতে যাবার কথা ।শরীরটা খুব একটা ভাল লাগছে না।জ্বরজ্বর বোধ হচ্ছে।এক সপ্তাহ হল বাবা-মার খোঁজ নিতে পারছি না।মোবাইলের ব্যালেন্স অতিক্রম হয়েছে।আর দুদিন আছে মাস শেষ হতে।তারপর খোঁজ নেয়া যাবে। হয়তবা ওরা ভালই আছে তাই আমাকে ফোন করছেনা ।সামনের মাসে ছোট বোন শায়লার এস এস সির ফরম ফিলাপ করতে এক হাজার টাকা বেশী পাঠাতে হবে।চাকরী হওয়াটা জরুরী।যাক আল্লাই এক ব্যবস্থা করবেন।মাঝে মাঝে ভাবতে খারাপ লাগে আমার তৈরি করা নোট পরে হাফছা প্রথম শ্রেণী পেয়েছে আর আমি?শুধু সময়ের অভাবে এমনটি হয়েছে।রাতে রুমে ঢোকে কোন রকমে আধো ঘুম আধো জাগা হয়ে নোটের উপর চোখ বুলিয়ে পরদিন সকালে পরীক্ষা দেয়া। তবু ভাল কখনো ফেল হইনি।মাথাটা মোটামুটি ভাল।বন্ধুরাও তারিফ করে।কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্বে জরাইনা পাছে যদি দুর্বলতা তৈরি হয় তার প্রতি।কারণ আমি আমার পরিবারে ভীষণ ভালবাসি। এখানে টাকার অভাব আছে মানি কিন্তু একে অন্যের প্রতি যে ভালবাসার টান আছে তা বর্ণনাতীত।টাকার অভাবকেও তা হার মানিয়েছে।আমি ইমোশনাল ছেলে নই তাই ভেবে চিন্তে চলি। কোন উটকো ঝামেলায় বা আড্ডায় ডায় মাতি না।পরিবারের মানুষ-গুলোনের শক্ত স্নেহের বাঁধনটিই আমাকে শক্ত ও সাহসী করেছে।

বেলা এগারটায় ফোনের রিংটোন বেজে উঠল আমি রিসিভ করলাম।

-হ্যালো ,সজল সাহেব বলছেন ?

-বলছি।

-আলিফ ইঃ কোম্পানির ম্যানেজার তরীকুল বলছি।

-সালামুআলাইকুম স্যার।

-ওয়ালাইকুম সালাম ।আমাকে এখুনি স্যার বলার দরকার নেই।কাজের কথা হল আপনাকে বিকেল চারটার মধ্যে ঢাকার হেড অফিসে ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করতে বলা হয়েছে। ইয়াং ম্যান বেস্ট লাক অফ ইউ।

-ওকে,থ্যাংকস অফ ইউ।

ফোনটা রেখে তাড়াতাড়ি গোসল-টাসেরে পেপারে ঠিকানাটা খুঁজে ছিঁড়ে পকেটে পুড়লাম।চিন্তা করলাম কাছেই দুইটা টিউশনি আছে তা সেরে নিয়ে মেসে এসে খেয়ে পরে ইন্টার্ভিউয়ের উদ্দেশ্যে বের হব ঠিক আড়াইটায়।একটু আগে পৌঁছানোই ভাল।

যথাসময় ইন্টার্ভিউ শুরু হল।সব প্রশ্নের উত্তর পেরেছি।মোটামোটি ।কিন্তু একটা প্রশ্ন শুনে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ।হঠাৎ কর্তা মহাশয় প্রশ্ন করলেন,

-ধরুন আপনাকে বিয়ের পাত্রী পছন্দ করার কথা বলা হল আপনি কেমন মেয়ে পছন্দ করবেন?

-স্যার আমি এখনো ভাবি নি ,কারণ আমার সেই সময় আসেনি।

-কেন ?

-স্যার প্রথমত আমার নিজেকে গোছাতে সময় লাগবে,দ্বিতীয়ত আমার সংসার খুব সচ্ছল নয়।আমাকে তাদের ভাল মন্দ দেখভাল করতে হয়।

-আচ্ছা,ধরে নিন সবকিছু সামলে আপনার সেই সময়টি হয়েছে তো কেমন মেয়ে পছন্দ করবেন?

-অবশ্যই সৎ এবং সাহসী মেয়ে ,যে সত্যকে বলতে পারে অকপটে ।বিত্ত বৈভব নেই আমার মতন সাধারণ।

-ধরুন তার বাবার বিত্ত বৈভব আছে কিন্তু আপনার অন্য চাওয়া গুলো ঠিক তেমন,তাহলে কি করবেন।

-আমি সেই সর্তে রাজি হতে পারি যদি তার মন মানসিকতায় সেই বিত্ত বৈভবের অহমিকতা না থাকে সে সংসার চালাতে ওগুলোর সাহায্য না চায়।

-ওকে,বেষ্ট লাক অফ ইউ,বয়।

-ধন্যবাদ স্যার,সালামুআলাইকুম।

আমি কক্ষটি ত্যাগ করলাম ঠিকই কিন্তু এসব প্রশ্ন চাকুরীর সাক্ষাতকারে কেন করা হল?তার হিসেব মিলাতে পারছি না কিছুতেই।যাক ধরেনিলাম এটা কর্তার একান্তই নিজের খেয়াল আর পাগলামি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৬

মামুন রশিদ বলেছেন: নিয়োগকর্তা একই সাথে এমপ্লয়ি আর পাত্র দুটোই খুঁজছেন মনে হয় ;)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮

নাসরীন খান বলেছেন: হা ....হা.......হা.....

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩১

আজমান আন্দালিব বলেছেন: বরাবরের মতই সাবলীল গল্প। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২১

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।সুস্হ ,সুন্দর থাকুন।

৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন + :)

শুভেচ্ছা অনেক :)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৩

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক শুকরিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.