নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ পর্যন্ত

২৪ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:১৪

পর্ব-শেষ
লেখায়-নাসরীন খান




ভদ্রমহিলা অসহায়ের মত এখনো কান্নাকাটি করছে।তার স্বামী বেচারা নীচের ওষুধের দোকানে বারবার আসা যাওয়া করছেন।অপারেশন ঘর থেকে যতবার একটি করে কাগজ আসছে ততবারই যাচ্ছেন দোকানে।চোখে মুখে দুজনেরই আতংকের ছাপ স্পষ্ট।তাদের মেয়েটার অবস্থা খুব একটা ভালনা।
মহিলাটি তার জামাইকে ফোন করছে-
-শোভ ,তুমি মেয়েটাকে শেষ বারের মত একটু দেখে যাও।তোমাদের বাসা থেকেতো কেউই এলো না।

ঐপাশ থেকে কি উত্তর আসছে বুঝা যাচ্ছে না ।কিছুক্ষন পর সম্ভবত মেয়েটার শ্বশুর এসেছে ।উনি মহিলাটিকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন
।প্রায় তার আধ ঘণ্টাপর জামাইটি এলেন।কাঁধের ব্যাগটি রেখে বাবাকে বলছে,
-ডাক্তারের সাথে কথা বলেছো?
-না। কাউকেতো পেলাম না।
-আগে ওর অবস্থাটা জানতে চাবে না ?তোমরা আমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছো বাবা।মাকেতো কিছুই বলা যায় না।
শ্বশুরের ধীরস্থির উত্তর
-একটু শান্ত থাক ,এসব কথা পরে হবে ।
শোভ ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য এগোলেন।মিনিটের মধ্যেই বেড়িয়েও এলেন।
সবাই উদগ্রীব তার অবস্থা জানতে।
-রক্তক্ষরন বন্ধ হচ্ছে না ।আরো দুব্যাগ দরকার।
শুনেই মনটা কেমন ভার হয়ে গেল।একটা কষ্ট এসে নাড়া দিল আমাকে।শোভকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম তা নয়।ও পরিস্থিতির শিকার।তবু সে শক্ত হাতে বিষয়টির মোকাবেলা করতে পারত।যেহেতু মেয়েটির দায়িত্বভার পুরোপুরি তার হাতেই ছিল।



এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ব্লাড গ্রুপ ?
আমার সাথে মিলে যাওয়ায় আমি দিব জানালাম।সাথে সাথেই নিয়ে যাওয়া হল ।সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে রক্ত দেয়া হচ্ছে।
একটু বাদেই বাচ্চাটিকে নিয়ে এলো নার্সরা।শোভ এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটি কোলে নিলেন।সাথে সাথেই তার দুচোখ বেয়ে ধরধর করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।বাচ্চাটার মুখের দিকে সে অপলক তাকিয়ে আছে।
শোভর মা এতক্ষনে এলেন।তাকে দেখে আমার রবীন্দ্রনাথের গল্পের চরিত্র ব্রজেশ্বরের কথা মনে হয়ে গেল।চোখে মুখে একটা বিরক্তির ছাপ।
তার স্বামীর উদ্দেশ্যে
-বারবার ফোন দেয়ার কি হল?সময় হলেতো আসবোই।
মেয়ের মা-আপনার সময় হবে কখন?আমার মেয়ে মরে গেলে?
-এভাবে বলছেন কেন?
মেয়ের মাকে তার স্বামীটি ধমক দিয়ে
-হয়েছে রাখ।এখন এসবের সময় নয়।


শ্বাশুড়ীটাকে ইচ্ছে হচ্ছিল কষে দুগালে দুটো চড় বসিয়ে দিতে।কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয়।বাচ্চাটির কথা ভাবছি।যদি মা টাকে বাঁচানো সম্ভব না হয়তো ওকে কে দেখবে ?ওকেও কি বাঁচানো সম্ভব ?যদিওবা শিশুটি বেঁচে থাকে তার জীবনটা কতটা যে কষ্টের হবে!মা ছাড়া একটি শিশু ?জানিনা আসলে কি হবে।
হঠাৎ নার্সের কথায় ভাবনা থেকে ছিটকে পড়লাম।
-৩১১ এর বাচ্চা আনা হয়েছে।
দৌড়ে কাছে গেলাম ।তাকাতেই! কি যে এক ভাল লাগার অনুভূতি দোল দিল আমার মধ্যে ।বাবা হওয়ার প্রথম অনুভূতি।আমাদের দুজনের নির্ভরতা আর ভালবাসার সম্পদ ও।যেখানে কম বেশীর বালাই নেই,লোভের বালাই নেই।জাগতীক সকল সম্পদেই তা থাকে।
কি মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে।পরক্ষনেই মনে হলো আরে!ওতো দেখতেই পারছে না।চোখ ঠিক হতে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সময় নেয়।তবু ওর তাকানোর ধরনে মনে হচ্ছে ও যেন সব দেখছে।
মনে কত রকমের প্রশ্ন জাগছে ।কার মত দেখতে হয়েছে?আমার নাকি নাবিলার মত?হয়ত দুজনের মতই।কি নাম রাখব?এখনো ঠিক করা হয়নি।নাবিলা সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরলেই দুজন মিলে ঠিক করে নিব।

সবাই এর কোল ওর কোল করে নিচ্ছে।রোম্পা আমার কোলে দেয়ার জন্য নিয়ে এলো ।আমি ভয়ে নিলাম না ।যদি হঠাৎ ফেলে দেই হাত ফসকে।
রোম্পা দুষ্টুমির সুরে
-আরে!ভাইয়াতো মেয়েকে নেবে সোনার চেইন গলায় পরিয়ে।
সত্যিইতো ,জিনিসটা ভাল বলেছে।কালই একটা চেইন কিনে বাসায় রেখে আসবো।নাবিলাকেও একটা কিছু কিনে দেয়া উচিৎ ।বেচারা দীর্ঘটা দিন কত কষ্ট ই না সহ্য করেছে।সত্যি কত কষ্টকর যে মা হওয়া!আমার মাওতো এমনি কষ্ট করে আমাকে ধারন করেছিলেন।একমাত্র নারীরাই পারেন এই অসাধ্যটি সাধন করতে দৈর্য্য এবং মমতা দ্বারা।

অথচ পুরুষরা কেউ কেউ কতটা তুচ্ছতার চোখে দেখেন সেই মাকে ,বউকে।শুধু পুরুষ কেন?ঐ শুভর মায়ের মত নারী গুলি তারাওতো দায়ী।

নাবিলাকে দেখতে গেলাম ভেতরে।মুখটা কেমন পাংশু হয়ে গেছে ,চোখ দুটি ভীষন ক্লান্ত।একটু হাসার চেষ্টা করছে।মনে হচ্ছে কোন বিজয়ী যোদ্ধার বিজয়ের পর পরিশ্রান্ত অথচ ক্লান্তি মাখা হাসি এটি।
পরদিন নাবিলাকে ক্যাবিনে আনা হল। আমি সারাক্ষন বাবুর কাছে বসে ।রাতে বাবু খুব কান্নাকাটি করছিল।আমার মা ,নাবিলার মা দুজনই থামানোর চেষ্টা করছিল।নাবিলার শরীর আগের চেয়ে সুস্থ।

পরদিন ভোর না হতেই কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেলাম দূর থেকে।বড় মানুষের কান্না মনে হলো। বের হয়ে শুনলাম সেই মেয়েটি অর্থাৎ শোভর বউটি মারা গেছেন।মেয়েটির বাবা মা কাঁদছে।আমার নিজের চোখে পানি চলে এলো।শেষ পর্যন্ত নবাগত মা টির এই পরিণতি দুঃখকর এবং হতাশাজনক।এ কোন সমাজের বাসিন্দা আমরা?মা হতে না হতেই ঝরে গেলো প্রাণটি।অবুঝ বাচ্চাটি হল মা হারা।প্রতিটি পরিবার যদি বউদের প্রতি একটু উদার আর সহানুভূতিশীল হতো তবেই বন্ধ হয়ে যেত এধরনের মৃত্যুগুলি ।নিজেকে মানুষ হিসাবে তখন ভুল মনে হল। অন্য কোন প্রাণী হলে হয়ত এমন মৃত্যুটি দেখতে হতো না।তখন নিজের সমস্ত মানবিক অনুভূতি গুলো ভোঁতা,অকার্যকর মনে হলো।।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:৪১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর একটা গল্প

২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১১:১৮

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ছোট বাচ্চাদের আমিও কোলে নিতে পারি না।
মনে হয় হাতে নিলেই কোনো না কোনো ভাবে পড়ে যাবেই। ভীষন ভয় করে।

সব মিলিয়ে ভালো লিখেছেন।

২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১১:২০

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.