নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নয়ন কিংবা আসিফ

যতদিন যাচ্ছে নিজের কাছে নিজে ততই অচেনা হচ্ছি | মনটারে কোনো ভাবেই পোষ মানাতে পারছি না ,তল খুঁজে পাচ্ছি না | তাই আপনাদেরও কিছু জানাতে পারছি না।

নয়ন কিংবা আসিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ভুতের গল্প অথবা, আমার সত্যিকারের ভয় পাওয়ার ঘটনা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩১

ঘটনাটা ২০১২-র এক শীতের রাতের, ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির শুরু। আমি তখন এক আইএসপি’র কলসেন্টারে চাকরি করি। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দুপুর হয়ে যায় তাই বিকেল পাঁচটা থেকে রাত একটার শিফটের কমন পাপি আমি। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও বাসার সামনে যখন অফিসের গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেল রাত তখন ১.৫০।



নানা-নানির হার্টের অসুখ, রাতের বেলা বিন্দুমাত্র আওয়াজ করা নিষেধ। প্রায় বিড়ালের মত নিঃশব্দে নিচ তলার কলাপ্সিবল গেট খুলে চারতলায় উঠে গেলাম আমার চিলেকোঠাটায়। টেবিলে ভাত ঢাকা দেয়া, জমে যাওয়া গরুর মাংস আর ঘন মুগডাল। হাপুস-হুপুস করে দুই মিনিটের মধ্যে ভাত শেষ করে জামা-জুতো ছেড়ে একটু চোখে মুখে পানি দিয়ে নিলাম। রাত ২.০৬, অনেকের জন্য মাঝ রাত আর আমার বেলায় রাতের শুরু।



গাড়ি থেকে নেমেই খেয়াল করেছিলাম, ওলটানো রুপার থালার মত ঝকঝকে একটা চাঁদ আকাশে। একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে একটা গোল্ডলিফের মাথায় আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে ছাদে এসে দাড়ালাম। বাসার পাশেই আসিয়ান সিটির বিশাল বালির মাঠ, চাঁদের আলোতে চকচক করছে আর সাথে বোনাস হিসেবে এলোমেলো উত্তুরে হাওয়া। বুকের মাঝে সুখের হুটোপুটি, এমন রাতেই বুঝি মানুষ ফেবুতে পোস্ট দেয়, “Life izz Beautiফুল”। নিজের মধ্যে এতটাই ডুবে ছিলাম, হুঁশ ফিরলো আঙুলে সিগারেটের ছ্যাকায়। “ধুর বা*%৳#%#&%##%৳#” নিজেকে নিজে কয়েকটা কষে গাল দেয়ার পরে মাথাটা একটু ঠান্ডা হল। ঘুরে পা বাড়ালাম ঘরে যাবার জন্য।



জমাট অন্ধকার সাবধানে দু’পা ফেলে সামনে তাকালাম দরজার দিকে আর জমে গেলাম বরফের মত। জীবনে ভয় পেয়েছি প্রচুর, লাইফ এন্ড ডেথ সিচুয়েশনেও দেখেছি আমার মাথা থাকে পরিষ্কার। সবসময় দেখে এসেছি মারাত্মক সিচুয়েশন গুলোতে কিংবা অকল্পনীয় প্রেসারের মধ্যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিভাবে যেন আমার ভিতরের ভয়টা বেমালুম উবে যায়, সে সময়কার নেয়া ডিসিশানগুলো সব দিক থেকেই বেস্ট হয়। কিন্তু এবার উল্টো কাহিনি, শরীরের সাথে সাথে মাথাও জমে গেছে সামনের দৃশ্য দেখে। আমি জানি আমার চোখে প্রব্লেম আছে, চোখের চশমা আজ এগার বছর ধরে সেই প্রব্লেমের সাক্ষি দিয়ে আসছে। কেউ যখন বলে, “নয়ন তুমি ভুল দেখেছ” আমি মৃদু হেসে প্রতিবারই বলেছি, “মানুষ মাত্রই ভুল ... Man is mortal”। কিন্তু সেদিন রাতে যা দেখেছিলাম তা একদম শতভাগ সঠিক দেখেছিলাম, চাঁদের আলো আর দরজার ফাঁক চুইয়ে আসা আলোতে একদম পরিষ্কার দেখেছিলাম।



কি দেখেছিলাম? এই লেখাটা লেখা শুরু করার আগেও অনেকক্ষন ভেবেছি কিভাবে বর্ণনা করা যায় “জিনিসটা”কে। আচ্ছা বর্ণনা দেয়ার আগে একটু অন্য কথা বলে নেই। আমার জন্ম কুমিল্লা সিএমএইচে। বয়স যখন এগার মাস তখন চারপাশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ায় বাবা আমাকে আর মাকে ঢাকাতে নানির কাছে দিয়ে যান, সেই থেকে আমি ঢাকাতেই। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি এই জায়গাতেই আমার নাড়ি পোঁতা। অন্ধকার আমার কাছে অপরিচিত নয়, কিন্তু কখনো স্বাচ্ছন্দ্য বোধও করিনি আঁধারে। ভুত-প্রেত এগুলি সম্পর্কে বরাবরি আমার মনোভাব ছিলো এমন যে কখনো হেসে উড়িয়ে দেইনি কিন্তু এগুলির অস্ত্বিত আছে তার পক্ষে সাফাইও গাইনি। বন্ধুদের প্রশ্নের জবাবে হাসিমুখে বলে এসেছি,“ভুত-পেত্নি থাকলে আছে না থাকলে নাই, না থাকলে তো কথাই নাই কেস ডিসমিস। থাকলে যেন আমার সামনে না পড়ে, আমার হার্ট দুর্বল।”



সেদিন আমার প্রশ্নের জবাব আমি পেয়েছিলাম। জিনিসটা কি ছিলো আমার কোন আইডিয়া নাই। হয়ত মুসুল্লিদের ভাষায় কোন দুষ্ট জিন, হয়ত ছোট বেলার মামদো ভুত, স্কন্ধকাটা কিংবা অতৃপ্ত কোন আত্মা। No f*cking idea and trust me I don’t give a f*uck about that things name!







লম্বায় আমার থেকে হাতখানেক উঁচু হবে। চাঁদের আলোতে সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়া অবয়ব বোঝা যাচ্ছে পরিষ্কার। আগাগোড়া মোড়া, মনে হচ্ছে মাত্রই গোসল শেষে পরিয়ে দেয়া হয়েছে কাফনখানা। মাথার পিছনের চুল জীবনে প্রথমবারের মত সরসর করে দাড়িয়ে গেছে। আমি আমার অবিশ্বাস ভরা দু’চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছি। মাথা কোন দিকেই কাজ করছে বললে ভুল বলা হবে। তখন আমার চিন্তা ভাবনার ৮০ ভাগ হচ্ছে ভয়, বাকি ২০ ভাগ মিশ্রিত মৃত্যু চিন্তা আর রাজ্যের প্রশ্ন আর কোন একটা, যেকোন একটা দোয়াদরুদ মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা। আর দশটা জুম্মা-মুসলিমের মতই গোটা বিশেক সুরাতো আমার মুখস্থ, নামাজের মধ্য অটো চলে আসে; মনে করার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টার প্রয়োজন কখনো হয়নি। কিন্তু সেদিন কোন সুরাতো দূরে থাক, সুরার নাম এমনকি এক আরবি হরফও মনে করতে পারি নাই। মাথার ভিতরে খালি চিন্তার রেলগাড়ি, “এইটা কি! ও আল্লাহ এইটা কি??? কি করমু এহন আমি কি করমু? ছাদের থেকে লাফ দিমু? পূর্ব পাশের বিল্ডিংতো দোতলা, চোখ বন্দ কইরা লাফ দিলে বেশি হইলে হাত-পা ভাঙব, মরমু তো আর না। ইয়া খোদা এইটা কি জিনিস। অন্য দিকে তাকা নয়ন ওইদিকে তাকায়া আছস ক্যান ভোদাই। অন্য দিকে তাকা চোখ নামা ভাই না ভালা। এইট কিছুনা তোর চোখের ভুল। ওই সুরাটা জানি কি ছিলো, ধুর বাল বাল বাল। এইটা এখনো যায় না ক্যান? আমিতো ভয় পাইছি। যা হুঁশ হুঁশ... বোকচো* এইটা কি তোমার মত মুরগি যে খেদাইলে যাইবগা? আল্লাহ ও আল্লাহ এহন আমি কি করমু? যায় না ক্যান!!!” মুখ দিয়া একটা শব্দও বাইর করতে পারি নাই। একটা শব্দও না। হঠাৎ মনে হল জিনিসটা ভাসতে ভাসতে আমার দিকে আসছে। ওইটার নিচের দিকে একবারো খেয়াল করার কথা মনে হয় নাই, মন্ত্রমুগ্ধের মত মাথার দিকেই তাকায় ছিলাম। পরিষ্কার মনে হল আবার অবয়বটা আমার দিকে আসছে!!! “ও আল্লাগো” বইলা আকাশ বাতাস ফাটায়া একটা চিৎকার দিতে চাইছিলাম কসম খোদার! কিন্তু বাস্তবে গোঁ গোঁ কিসিমের একটা আওয়াজ কইরা জ্ঞান হারাইছিলাম।



জ্ঞান ফিরার পরে একবার চোখ খুলে গাঢ় অন্ধকার দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলছি ভয়ে। মাথার বামপাশে টনটন করছে ব্যাথায়। বুকের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান সাম্বা আর ইন্ডিয়ান ঢোলের যুগলবন্দী। একটা বড় শ্বাস নিয়ে ডিসিশান নিলাম চোখ খোলা যাবেনা। যাই হোক না ক্যান চোখ খোলা যাবেনা। বামহাতটা শরীরের নিচে চাপা পড়ে আছে, ইঞ্চি দুয়েক নাড়িয়ে টের পেলাম পকেটে সিগারেটের প্যাকেট জায়গা মতই আছে। ভরসা আরো বাড়ালো ভরসা ম্যাচের উপস্থিতি। বিশ্বাস করেন প্লিজ, আমি ঝুম বৃষ্টির মাঝেও চলন্ত রিকশায় বসে সিগারেট জ্বালাতে পারি। কিন্তু সেদিন যেন অনন্তকাল পার হবার পর নাকে আসল বারুদ পোড়া গন্ধ অনুমানে একটু নাড়ানোর পরে ফুসফুসে ঢুকল নিকোটিন। খুশিতেই বোধ হয় খক খক করে কেশে উঠলাম। মাথা ঠান্ডা হচ্ছে এখন, লজিক ক্লিয়ার। আয়াতুল কুরসিও মনে পড়ে গেছে, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল...” মনে মনে দুইবার পড়ার পরে একটু সাহস আসার পরে একবার একটু জোরে জোরে পড়লাম।



সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ঠিক করলাম এইবার আমি উঠব। প্রথমে ম্যাচের একটা কাঠি জ্বালিয়ে ওই জিনিসটা যেদিকে ছিলো সেদিকে একবার তাকাবো যদি এখনো ওখানে থাকে তাহলে দু কদম দৌড়ে পূর্ব পাশের ছাদে লাফ দিবো আর না থাকলে দৌড় দিবো ঘর বরাবর। হাতে সিগারেটের আগুন আছে তারপরও ম্যাচ জ্বালাব, চান্স নেয়ার কোন মানে হয়না। ভয় এমনি জিনিস বাপ! হুহু...



ম্যাচ জ্বালানো, চোখ খোলা, হুড়মুড়িয়ে উঠে ঘরে ঢুকে দরজা লাগানো সব মিলে সময় লেগেছে পাঁচ সেকেন্ড, ট্রাস্ট মি অনলি পাঁচ সেকেন্ড। ঘুরেই দেখি টেবিলে রাখা আমার মোবাইল ঘুরছে ভয়ের চোটে আবার জ্ঞান হারানোর আগেই মনে পড়ল ভাইব্রেশন মুড নামে একটা জিনিস আছে। রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে একগাদা হুমকিধামকি গালি-প্রশ্ন হযবরল... আরো দুইটা সিগারেট আর অনেক অনেক তোতলামির পরে প্রেমিকাকে পুরো ব্যাপারটা বলার পরে সে যখন মেঘ স্বরে বলল, “আর কত মিছা কথা বলবি তুই, ঢাকার ছেলেদেরকে খুব ভালো মতই চিনি আমি। আরেক ফোনে কার সাথে কথা বলতাসিলি সেইটা ক হারামি” তখন মনের দুঃখে তব্দা খাইয়া গেছিলাম, “হালার এতদিন প্রেম করার পরে নিজের গার্লফ্রেন্ডরেই যদি বিশ্বাস না করাইতে পারলাম তাইলে আর মানুষ বাল বিশ্বাস করব!”



আজান দেয়ার আগ পর্যন্ত কত কিছুর কসম খেতে হয়েছে, কত হাজার শব্দ খরচ করতে হয়েছে সেটা খালি আমি জানি, সেই গল্প আমার কাছেই থাক। আপনাদের উপর কোন প্রেসার নাই। চাইলে বিশ্বাস করেন নাইলে না, আমার কিছু যায় আসে না। তবে মন থেকে বলছি, যদি বিশ্বাস নাই করেন উলটা এই ব্লগ পোস্টে এসে আমারে পচায়া যান তাইলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রার্থনা করব যাতে তিনারা আপনারে একবার হইলেও দর্শন দিয়া যায়। তাইলে বুঝবেন, কত ধানে কত চাল! হুহ!



বি.দ্র.: প্রেমিকার সাথে কথা বলার সময় এক ফাকে ঘড়ির দিকে তাকিয়েছিলাম। রাত তখন তিনটা দশ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০৬

তুষার আহমেদ তুহিন বলেছেন: কমন পাপি আমি......সেই হইছে....!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.