নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহিঙ্গা প্রেম

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

-"তোমার নাম কি?"
-"নাম তো জানেন, তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করছেন কি জন্য?"
-"মনে করো এই মূহুর্থে কিছুই জানিনা আমি তোমার সম্পর্কে"
-"কেন মনে করবো? আমি তো কিছুতেই মনে করতে পারিনা যে, মীনু বেচেঁ আছে!! যেটা সত্যি সেটা তো সত্যিই তাইনা? আর তাছাড়া আমি জানি আপনি আমার নাম জানেন, এবং আপনার কাছে কি জন্য আমাকে আনা হয়েছে তাও জানেন, তাহলে কেন মনে করব যে আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না?"
সারাদিন রুগী দেখতে দেখতে ডক্টর সাব্বির রহমান বেশ ক্লান্ত, এবং এই মূহুর্থে তার সামনে যে বসে আছে এটাই তার শেষ রুগী। তিনি এদেশের সুনামধন্য ৫ জন মনোবিজ্ঞানীদের একজন। এর থেকেও অনেক বড় বড় পাগল তিনি মানুষ করে ছেড়েছেন তার সুদক্ষ চিকিৎসা বিদ্যা দিয়ে। কথায় আছে, পাগলের ডাক্তাররাও এক সময় পাগল হয়ে যায়। যদিও তিনি অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার মানুষ, তারপরেও কিছু কিছু রোগী সামলাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। যেমন একটু আগে একটা মহিলা রুগীকে নিয়ে সে কি নাজেহাল অবস্থা!! রুগী তার রুমে ঢুকেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো -
-"ডাক্তার সাহেব ডাক্তার সাহেব আমি আপনাকে বিয়ে করব"
রুগীর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল -
-"স্যাঁর, আমার মাইয়াডাকি কুনুদিন বালা অইবো না?"
এছাড়াও অনেক ভয়ানক রোগীর মুখোমুখি হতে হয় তাকে প্রতিনিয়তই। কোন কোন রোগীর পায়ে শিকলও বাধা থাকে!
সে যাইহোক, এই মূহুর্থে তার সামনে বসে আছে ২৮ বছরের এক বৃদ্ধ !! বৃদ্ধ বলার কারণ হল- মাত্র ২৮ বছরেই তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট বয়স্কের ছাপ। চোখের নিচে কালি, কপালে গাড়ো ভাজ, উসকোখুসকো চুল এবং চোয়াল জুড়ে খোচা খোচা কাচাপাকা দাড়ি। ছেলেটার নাম নিলয়। তার সাথে যে হৃদয় বিদারক কিছু একটা হয়েছে সেটা তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার চোখ বোলালেই বোঝা যায়। নিলয়ের মা বাইরে ওয়েটিং রুমে বসে আছেন। ছেলের জন্য খুবই উদ্বিগ্ন বেচারি। নিলয়ের সাথে ডক্টর সাব্বির রহমানের এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। কিন্তু কথপকথনের শুরুতেই এই ছেলে যেভাবে বাকা উত্তর দিচ্ছে তাতে তার রোগটা সহজে উদ্ধার করা যাবেনা সেটা মোটামুটি বুজতে পারলেন তিনি। তাই এবার কথা বলার ঢং টা একটু পরিবর্তন করলেন। কেননা রুগী বুঝে সেই মাপে কথা বলতে হয় তাকে-
-"ঠিক আছে তুমিই না হয় বল তোমার কি সমস্যা?"
-"আমি কি বলেছি আমার কোন সমস্যা?"
-"তাহলে তোমাকে আমার কাছে কেন এনেছেন তোমার মা?"
-"সেটা তার কাছেই জিজ্ঞাসা করুন"
-"তিনি আমায় বলেছেন যে - তুমি নাকি ইদানিং আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছো!! কথাটা কি সত্য?"
-"আমার মা মিথ্যা বলেন না"
-"আত্মহত্যা করাটা কি ঠিক বলে মনে হয় তোমার কাছে?"
-"সঠিক বেঠিক বুঝিনা, আমাকে আমি হত্যা করবো, তাতে কার কি?"
-"ok!! তুমি একটু আগে কার কথা যেন বলছিলে?"
-"মীনু"
-"ছেলে নাকি মেয়ে?"
-"মীনু অবশ্যই কোন ছেলের নাম হতে পারে না!"
-"Right!! তো কে এই মীনু? আমি কি জানতে পারি? আর এই মীনু নামের মেয়েটার সাথে তোমার আত্মহত্যা করতে চাওয়ার কোন যোগাযোগ আছে কি?"
-"(নিশ্চুপ)"
-"ঠিক আছে, কে এই মীনু? সেটা কি বলা যায়?"
-"রোহিঙ্গা কন্য"!!!
ডক্টর সাব্বির রহমান এই জায়গায় একটু থামলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন -
-"ঠিক আছে তুমি যাও, বাইরে গিয়ে বোস আর তোমার মা কে ভিতরে পাঠাও"
নিলয় কিছু না বলে উঠে দাড়ালো এবং বেরিয়ে গেল। নিলয়ের মা ইয়াসমিন বেগম একটা সাদা শাড়ি পরে ডক্টরের রুমে প্রবেশ করলেন। নিলয় তার একমাত্র সন্তান হওয়ায় চরম বেহাল ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে তার সমস্ত চোখে মুখে। স্বামী গত হয়েছে আরো বছর পাচেক আগে। এরপর সন্তানটার মুখের দিকে তাকিয়েই তিনি বেঁচে থাকার শেষ প্রহর গুনে চলেছেন। ডক্টর সাহেব হালকা হাসি বিনিময় করে বললেন -
-"বসুন"
নিলয়ের মা বসলেন চেয়ারটাতে, এবং ভীত ও প্রশ্নবিদ্ধ ছলছলে চোখ নিয়ে তাকালেন ডক্টরের দিকে। ডক্টর সাব্বির রহমান তাকে আশ্বস্ত করে খুব সাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন -
-"আপনার ছেলের সাথে যা যা হয়েছে তা খুবই সংক্ষিপ্ত রূপে বর্ননা করুন, কোন রকম দাড়ি কমা ছাড়া।"
ইয়াসমিন বেগম প্রায় ৫ মিনিটের ভিতরেই নিলয়ের সমস্ত সমস্যা ও কার্যকলাপ গুলো ফুটিয়ে তুললেন। ডক্টর সাহেব সেগুলো মন দিয়ে শুনলেন এবং মাঝে মাঝে নোটপ্যাডে কিছু একটা লিখলেন। এরপর একটা প্রেসক্রিপশনে কিছু ওষুধ লিখে সেটা নিলয়ের মায়ের হাতে দিয়ে বললেন -
-"এই ওষুধ গুলো ওকে নিয়মিত খাওয়াবেন, এক সপ্তাহ পর ওকে আবার নিয়ে আসবেন।"
এই জায়গায় ডক্টর কে কিছুটা চিন্তিত দেখালো এবং একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বললেন -
-"ওকে নিয়ে কয়েকবার কাউন্সেলিং করতে হবে, পরের সপ্তাহে আমি আপনাকে এ ব্যপারে বলব"
ইয়াসমিন বেগম পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না, তবুও কিছুটা সস্থি সহকারে ছেলেকে নিয়ে ফিরলেন সেখান থেকে। ছেলেটার মাথা নিজের কাধেঁ চেপে ধরে বসলেন গাড়িতে। একটা মাত্র ছেলের কিছু হলে কি করে তিনি বাঁচবেন, এমনটা মনে হতে চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরতেই নিলয় বলে উঠলো -
-"মা, তুমি আবারো কাঁদছো? চিন্তা করো নাতো সব ঠিক হয়ে যাবে!!"
ইয়াসমিন বেগম মাথা নাড়ালেন। তিনি জানেন কিচ্ছু ঠিক হবেনা!! এর আগেও অনেকবার বলেছে ও কথাটা, ঠিক হয়নি ... আর হবেও না। ও যে মানুষিক বিকারগ্রস্ত!! কিন্তু ওর আচরণে কারো সাধ্যি নেই তা বোঝার। ও ঠিকই সুযোগ পেলে আবারো ছুটে যাবে মীনুর কবরে!! আপ্রাণ চেষ্টা করবে ওই কবর খোচার জন্য ... পাগলের মত ...!!!
---
মীনুর ঘটনাটার জন্ম হয় ৫ মাস আগে। তখনো নিলয় সুস্থ সাভাবিক একটা ছেলে। রোজ সময় মত নামাজ পড়া, খাওয়া, নদীতে গোসল করা সব কিছুই ছিল নিত্য দিনের সাভাবিক কর্মসূচি। ঠিক তেমনই একদিন নিলয় গিয়েছিল নদীতে গোসল করতে। দূর থেকেই নদীর ধারে কিছু মানুষের ভীড় দেখে ছুটে গেল সেদিকে।
অবাক, বিষ্ময় মিশ্রিত আর দুঃখ ভরাক্রান্ত চোখে দেখল গুনে গুনে ১৭ টা লাশ ভাসছে নদীর কোল ঘেষে। ওগুলো রোহিঙ্গাদের লাশ। নাফ নদীর এই দিকটা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সুবিধা হয় তাদের। না, এই সুবিধা তারা এদেশে বেড়াতে আসার জন্য গ্রহণ করেনি। নিজের শরীর টাকে ক্ষত বিক্ষত লাশ হয়ে কুকুর শিয়ালের খাবার হওয়ার হাত থেকে বাচানোর জন্য করেছে...
একে একে লাশ গুলোকে নদী থেকে উপরে তুলছে কয়েকজন স্থানীয়। নিলয় নিজেও ঝাপিয়ে পরলো এই কাজে। প্রতিটা লাশ শক্ত হয়ে ফুলে ভেসে উঠেছে পানির উপর। খুব বেশি পুরোনো না হওয়ায় লাশ গুলো থেকে এখোনো দুর্গন্ধ ছড়ায়নি। এভাবে কয়েকটা লাশ তোলার পর একটা লাশের গায়ে হাত দিতেই নিলয় চমকে উঠলো!!! ১৭-১৮ বছরের একটা মেয়ের লাশ!! উল্টো হয়ে পরে ছিল কিনারায়! মেয়েটার গা অন্য লাশ গুলোর মত শক্ত নয়!! আবার কিছুটা গরম ভাবও আছে শরীরে। সে মেয়েটাকে সোজা করলো। গায়ের রং ভিষণ কালো .. কিন্তু কেমন একটা মায়া মায়া ভাব মেয়েটার চেহারায়! হাতের পালসে টিপ দিয়েই উল্লসিত হয়ে গেল সে!! সুবাহান আল্লাহ্ বলে চিল্লিয়ে উঠলো। বেচেঁ আছে মেয়েটা!! দ্রুত মেয়েটাকে নিজের কাধেঁ তুলে দৌড় দিল বাড়ির দিকে। ....
এরপর গ্রামের এক ডক্টর এনে চিকিৎসা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে তাকে সুস্থ করে তুলল নিলয়। সারারাত মেয়েটার পাশে বসে তার মুখটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভেবেছে -
"এই মেয়েটিকেও তো সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, তথা সমগ্র মানব জাতির সৃষ্টিকর্তাও তিনিই ... আবার যারা এই অসহায় মানুষ গুলোকে এত নৃশংস ভাবে মেরেছে তারাও সেই একই সৃষ্টিকর্তার হাতে তৈরি মাটির পুতুল ... What a game!!! স্রষ্টার রহস্য বোঝা বড় দায় .. "
নিলয় কিন্তু এই মায়াবী মুখটার প্রেমে পরে গেল! যতবারই মুখটার দিকে তাকিয়েছে ততবারই কালো রঙের ওই চামড়ায় মোরা অথচ বিভৎস সুন্দর এক মায়াবী কাঠামো তার কল্পনার জগতকে করেছে আলোড়িত। মুখটার ভিতরে এমন কিছু একটা লুকিয়ে ছিল যা দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। এমন একটা উপাদান তার চোখে মুখে বিদ্যমান যা কিনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মাঝে খুঁজলেও মিলবে না! এটা কোন ধরনের প্রেম জানা নেই তার ...! তবে প্রেম!! ... এটাও একটা প্রেম ...!!! যে প্রেম নিতান্তই হাস্যকর, বিদ্রুপের উপলক্ষ মাত্র। তবুও সে প্রেমে পরেছে মেয়েটার ... ধীরে ধীরে মৃত প্রায় মেয়টি যখন জ্ঞান ফিরে নিলয়ের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠেছিল, সেই চমকানিটাও ছিল দেখার মত!! এত চমৎকার ভাবে কেউ চমকাতে পারে এই প্রথম জানলো সে। নিলয় যেন রাজ্য জয় করেছে এমন একটা প্রফুল্লতা এনে শান্ত করলো মেয়েটিকে। ঈসারা ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করল -
"তুমি ভয় পেওনা গো, তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদে আছো ... এখানে তোমাকে কেউ কিচ্ছু বলবে না ... কিচ্ছু বলবে না ....!!!"
কি অসহায় চাহুনি ওর ... এত সুন্দর চোখ আগে কোনদিন দেখেছে বলে মনে পরল না ...।
১৫ দিন পর মেয়টি মোটামুটি সুস্থ হলে তার সাথে কথপোকথন করার চেষ্টা করে নিলয় ও তার মা। ভাঙা ভাঙা শব্দের ভিতরে বুঝে নিল ওর নাম মীনু। আস্তে আস্তে মেয়েটির সব কিছু মনে পরতে থাকে ... পিউ পিউ করে কাদতেঁ থাকলো ... তারপর পরই হটাৎ পরনের জামাটা খুলে হাউমাউ করে চিল্লিয়ে উঠলো সে ... নিলয় এক ঝলকে যা দেখলো তা দেখার জন্য তৈরি ছিলনা!! দেখল মীনুর স্তন দুটো কি জঘন্য ভাবে কেটে নিয়েছে তার দেশের সন্ত্রাসীরা!! এক পলক দেখেই সেখান থেকে উঠে এলো সে, নিলয়ের মা তার পরনের ওরনা দিয়ে মীনুর শরীর ঢাকলো।
এর পরদিন বিকেলে মীনুর লাশ আবিষ্কৃত হল পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়। ঠিকই আছে!! কেনইবা বেচেঁ থাকবে সে? কিসের আশায়? কার জন্য?, পরিবারের সবাই মরে গেলেও ভাগ্য দোষে সে বেচেঁ গিয়েছিল! কোন দরকার ছিল কি তার এই বেচেঁ থাকার? ... হয়তো ছিল ... হয়তো ছিলনা ... শুধু নিলয়ের এই পাগলামিটাই হয়তো আমাদের কাছে অতিরঞ্জিত মনে হবে ...!! তার অন্তরের যন্ত্রণা বোঝার ক্ষমতা হয়তো নেই আমাদের ... হয়তো কোন যন্ত্রণাই নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.