নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়না

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯

হাটতে হাটতে হঠাৎই হোঁচট খেলাম আমি। সমস্যা হোচট খাওয়াতে না, সমস্যা হল আমার স্যান্ডেল এর একটা ফিতা ছিরে গেছে। ফিতা সব গুলো ছিরলেও যা একটা ছিরলেও তা। প্রচন্ড রাগে শরীর কাঁপছে আমার। দুনিয়াতে এর থেকে বিরক্তিকর কোন কিছু হতেই পারেনা।
কি করব ভাবছিলাম। একটা স্যান্ডেল হাতে আর একটা পায়ে নিয়ে হাটবো? নাকি দুটিই বগলে চেপে ধরে হাটবো? আসে পাশে কোন রিকশাও নেই যাতে করে চেপে এযাত্রা রেহাই পাবো। এসময় যেন সৃষ্টিকর্তার সুদৃষ্টি পরল আমার উপরে। একটা সাদা x corolla এসে থামল আমার পাসে । কয়েকবার হর্ণ দিতেই সেদিকে তাকালাম আমি।
এ্যকি! সনেট না! বলে কাছে গেলাম গাড়িটার। সনেট সেই চিরচেনা হাসি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল - "হা করে দেখছিস কি উঠে আয়।"
আমি কোন কথা না বাড়িয়ে তরিঘরি করে উঠে পরলাম গাড়িতে।
সেই কবেকার কথা, কলেজ জীবন শেষ করে দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেখা সনেট এর সাথে। একসাথে রাজনীতি শুরু করলেও পরে অবশ্য আমি আর তা পেরে দিইনি। কিন্তু সনেটের ভাগ্য তার সাথেই ছিল। রাজনীতি করে গাড়ি বাড়ি সব কিছুই হয়েছে তার। মানুষের টাকাপয়সা হলে যেমন পরিবর্তনের ছাপ ফুটে ওঠে তেমনি সনেটের মুখেও সেটা লক্ষ্য করলাম। যদিও তখনো আঁচ করতে পারিনি যে, কি ঘটতে চলেছে আজ আমার জীবনে!
প্রাথমিক আলোচনাতেই জানতে পারলাম ও বিয়ে করেনি, এবং ওর অভিমত-সংসার নাকি অসামাজিক লোকে করে!! আরো জানলাম - ইদানিং সে চরম ভাবে ভয়ঙ্কর ও হিংস্র পশু প্রাণীর প্রেমে পরেছে। তার প্রকান্ড আলিশান বাড়ির পিছনে একটা ছোট্ট মিনি চিড়িয়াখানা আছে। যেখানে সে বাঘ, সিংহ আর হায়না পালন করে। আমি হাজারো না করা সত্যেও আজি আমাকে তার ওই বিলাসি কর্মকাণ্ড দর্শন করতে হবে! একান্তই নিরুপায় হয়ে একরকম যেতে বাধ্যই হলাম! যাত্রাপথে সে আমাকে শোনালো ওই পশু গুলোর বিভৎস হিংস্রতার গল্প। মজার ব্যাপার হলো এটাই যে প্রাণী গুলো নাকি কখনো মানুষের রক্তের স্বাদ পায়নি। হঠাৎ কেমন যেন রহস্যময় ভাবে ও বলল "আচ্ছা ফয়সাল, নিজের চোখে কখনো হিংস্র প্রাণীকে মানুষ খেতে দেখেছিস?" আমি কিছু বলার আগেই আঙ্গুল উচিয়ে বোঝালো আমরা পৌঁছে গেছি।
প্রায় মিনিট তিরিশ পরেই পৌঁছে গেলাম সনেটের রংমহলে। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ওর সাজানো সাম্রাজ্য। ওর রুচির প্রসংশা না করে পারলাম না। দারুণ একটা ডুপলেক্স বাড়ির সামনে আর পিছনে হরেক রকমের ফুলের গাছে পরিপূর্ণ। শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দুরে অসাধারণ একটা বাংলো টাইপ বাড়ি। যার সামনে রয়েছে দারুণ একটা সুইমিংপুল। বুঝলাম ওর অর্থের প্রাচুর্যতা সম্পর্কে প্রথমে ভুল ধারনাই ছিলো আমার।
গাড়ি থেকে নেমে ওর প্রাসাদে প্রবেশ করতে সময় জানলাম ও সম্পূর্ণ একাই থাকে এখানে। চারদিকে উচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এতবড় জায়গায় কিভাবে একা থাকে ও, ভাবতে ভাবতে সনেট বলল -" চল তোকে আমার প্রিয় প্রাণী গুলোর কাছে আগে নিয়ে যায়। "
আমি কিছু না বলেই অনুসরণ করলাম ওকে। সনেট কিছু কাচাঁ মাংস নিয়ে অগ্রসর হল প্রাণী গুলোর দিকে। প্রথমে বাঘ তারপর, সিংহ একে একে সবার খাবার দিয়ে এরপর হায়নার খাচার সামনে এসে দাড়ালাম আমরা।
খাচার ভিতরে ছোট আরেক খাচা আছে। তার ভিতরে হায়না টা আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। খাচার বাইরে একটা হুইল আছে। যেটা ঘুরালে ভিতরের খাচার দরজা খুলে যায়। অর্থাৎ ভিতরে ঢুকে খাবার দিয়ে বের হয়ে প্রধান দরজা লাগিয়ে তারপর হুইল ঘুরিয়ে ভিতরের দরজা খুলে দেয়া হয় নিজের নিরাপত্তার খাতিরে। এরপর প্রাণীরা বের হয়ে খাবার খেয়ে আবার যখন ছোট খাচায় ফিরে যায় তখন হুইল উল্টো ঘুরিয়ে আবার তা আটকিয়ে দেয়া হয়। সব গুলোর ক্ষেত্রে একই সিস্টেম।
আমরা ঢুকলাম হায়নার খাচার ভিতর। আমি ছোট খাচাটার খুব কাছে গিয়ে হায়নাটাকে খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলাম। সনেট মাংসের ঝুড়ি টা আমার হাতে দিয়ে বলল "তুই এটা ধর, আমি পানি নিয়ে আসি " সনেট খাচা থেকে বের হতেই ঘটাম করে একটা দরজা লাগানো শব্দ পেলাম। ফিরে তাকিয়ে দেখলাম সনেট তড়িঘড়ি করে দরজায় তালা লাগাচ্ছে! আমি ওর দিকে ফিরে হাসতে হাসতে বললাম "কি ছেলেমানুষি করছিস? " দেখলাম সনেট কথার কোন উত্তর না দিয়ে, বাইরের হুইল টা ঘুরাতে লাগল! আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। হায়নার খাচার মুখ খুলতে শুরু করেছে! আমি খাচা ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে চিৎকার করলাম "কি হচ্ছে এসব? এটা কোন ধরনের ফাজলামো?? " কিন্তু সনেট হাসছে কেন? ওর চোখের দৃষ্টি এত ভয়াবহ নিষ্ঠুর কেন? নিরুত্তর সনেট ভাবলেশহীন ভাবে হুইল ঘুরিয়ে চলেছে। আমার চিৎকার, বাঘ আর সিংহের চিৎকারের সাথে পাল্লা দিয়ে এই ভিষণ এলাকা ছারিয়ে উচু প্রাচীর টপকাতে পারছে না, তা সহজেই বোধগম্য। অন্য দুই খাচায় বাঘ আর সিংহ দ্রুত পায়চারী করছে আর আমার খাচার হায়নাকে উদ্দেশ্য করে রক্ত হিম করা গর্জন তুলছে। এত অল্প সময়ের ব্যাবধানে আমার সাথে যা ঘটলো এবং যা ঘটতে চলেছে তা আর ভাবতে পারছি না আমি। যেন দ্রুতই একের পর এক ঘটে চলেছে সবকিছু। খাচা ধরে বসে পরলাম। সনেটের দিকে তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে আর কোনরকমে বললাম "Why!!!"
হুইল ঘোড়ানো শেষ!!! খুলে গেছে হায়নার খাচা! হায়নাটার দিকে তাকানোর ক্ষমতা আর নেই আমার! চোখ বুজে আসছে। অনেক দুর থেকে ভেসে আসছে বাঘ আর সিংহের গর্জন! আর ভেসে আসছে সনেটের অট্টহাসি!! একই খাচায় বন্দী আমি আর হায়না!!

পরিশেষঃ বাঘ আর সিংহ দুটো আসল হলেও হায়না টা নকল ছিলো!জানার পর তখন মনে পরল হায়নাটা স্থির ভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। উত্তেজিত থাকায় ওটার নড়াচড়াও লক্ষ করিনি। আর তাছাড়া হায়নাটা সনেটের ভাই লন্ডন থেকে পাঠিয়েছেন। যেটা কিনা এতই জীবন্ত যে আলাদা করাটা আসলেই কঠিন। ওইদিন রাস্তায় ছেরা স্যান্ডেল নিয়ে বিপাকে পরতে দেখে, আমি যে আাগের মতই বোকা আছি সেটা সহজেই আচঁ করতে পারে সনেট। আর সেটারই সদ্ব্যবহার করল সে। জ্ঞান ফেরার পর সব জেনে শুনেও নিজেকে খুব বেশী বোকা মনে হলোনা! কেননা নেহায়েত ডিটেকটিভ টাইপ লোক ছাড়া যে কেউ সনেটের এই বিপদজনক ফাঁদে পরে ভরকে যেতে বাধ্য।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫০

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: আপনার এ গল্পে মেসেজ আছে.....



শুভা কামনা রইলো ভাই।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৮

কালীদাস বলেছেন: গল্পটা ভাল লাগছে আমার। তবে ঠিক ডিটেকটিভ না, কঠিন মেন্টাল কন্ট্রোলের অধিকারীরা ছাড়া সবাই ঘাবড়ে যাবে।
চালিয়ে যান :)

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৯

কালীদাস বলেছেন: কারেকশন: শব্দটা হায়েনা, হায়না না।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৫

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য। আর ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য সম্মানের সাথে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.