নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেখক_সাহেব

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩

"আপনি তো দেখি সিরিয়াল কিলার!! একের পর এক দুর্দান্ত লেখা দিয়ে খুন করে চলেছেন পাঠকদের!! আবারো খুন হলাম আপনার লেখায় :) "
কমেন্টার দিকে অপলক চেয়ে আছেন জনাব নাঈম ফয়সাল সাহেব । ৪০ বছর বয়সে বুড়ো কালের ভীমরতি জনিত কারণেই ইদানিং লেখালিখি শুরু করেছেন তিনি। এইটা নিয়ে মোট ৮ টা গল্প পোষ্ট করেছেন । কমেন্ট টা করেছে ইরা নামের একটি মেয়ে। এর আগেও যে এরকম প্রশংসা পাননি তা নয়। সেগুলো এখন ইতিহাস। তবে এই কমেন্টসটা একটু অন্যরকম।
৪০ বছরেও এখনো বিয়ে করেননি তিনি! না ভুল বললাম!! করেননি না! বরং কেউ তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। অনেক চেষ্টা তদবির করে তার মা এক পাত্রী যোগাড় করেছিল ঠিকই কিন্তু পাত্রকে দেখার পর মেয়ে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো! আদৌ অজ্ঞান হয়েছিল নাকি ফয়সাল সাহেবের কুৎসিত কদাকার চেহারা দেখে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেছিল সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। এরপর থেকেই মনের কষ্টে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করলেন ধীরে ধীরে। ফেইসবুকে একটা ফেইক একাউন্ট খুললেন। বলাই বাহুল্য তিনি তার ওই মুখ কাউকে দেখাতে চাননা। সে কারনেই নিজের কোনো ছবিও দেননি প্রফাইলে। এমনকি গোপন করে গেছেন তার সমস্ত তথ্য। একজন বন্ধুও নেই তার লিস্টে। বাস্তব জীবনেও হাতে গোনা দুএকজন বন্ধু থাকলেও বিশেষ কোন বন্ধু হয়নি তার। প্রথমে শুধু টাইম লাইনে ঘোরাঘুরি করতেন আর বিভিন্ন গল্প পরে সেখানে লাইক কমেন্ট করতেন। ধীরে ধীরে ভাবলেন তিনিও লেখালিখি শুরু করবেন। তাতে যদি কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়। প্রথম লেখাতেই বেশ সাড়া পান তিনি। বিভিন্ন গ্রুপে লেখা পোষ্ট করতেন আর প্রশংসা কুঁড়াতেন। পুরুষদের থেকে নারীরাই বেশি ভক্ত হয়ে ওঠে তার লেখার। একদিন একটা মেয়ের ইনবক্স পেয়ে খুব আহ্লাদীত হলেন তিনি। মেয়েটার আইডি নাম ছিল "মেঘ বৃষ্টি" দেরি না করে রিপ্লেও দিলেন!
-"হাই"
-"হ্যালো"
-"কেমন আছেন?"
-"জী ভালো"
-"এত দারুণ ভাবে লেখেন কি করে? আমাকে শেখাবেন?"
-"আপনি ভুল বললেন, আমি জানি ওতো ভালো আমি লেখিনা"
-"হাহাহা জ্ঞানীরা এই কথায় বলে। Anyway আপনার নাম জানতে পারি?"
-"নাঈম ফয়সাল"
-"Smart Name :) কি করেন আপনি?"
-"একটা ছোটখাটো জব করি"
-"মহানরা সবসময় নিজেকে ছোট করে কেন বুঝিনা! আসলে আপনার লেখায় মুগ্ধ হয়েই এত প্রশ্ন করছি। বিরক্ত হচ্ছেন নাতো?"
-"নাহ! বিরক্ত কেন হব!!"
-"এভাবে 'নাহ' বললেন যে? কেমন একটা হতাশার গন্ধ পেলাম!!"
-"না না কোন হতাশা নেই আমার"
-"বুঝেছি বলতে চাননা"
-"আপনি ভুল বুঝছেন আসোলেই আমার কোন হতাশা নেই"
এরপর মেয়েটি লেখাটা সিন করে কিন্তু আর কোন রিপ্লে দেয়না। অনেকক্ষণ ফয়সাল তাকিয়ে থাকে উত্তরের আশায়। কিন্তু কোন টেক্সট নাই ...!! কেমন যেনো একটা অস্বস্থি হতে লাগলো। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সব পুরুষেরই এমন হয় কিনা জানেন না, কিন্তু তার হচ্ছে। কি যেন ভাবতে ভাবতেই আবারো লিখে ফেললেন -
"কি রাগ করলেন নাকি?" পরক্ষণেই ভাবলেন ইস্ কি দরকার ছিল হ্যাংলার মত জিজ্ঞাসা করার!! সে রাগ করলেই বা তার কি? ধুর!! টেক্সট উইড্র করার সিস্টেম থাকলে তাই করতেন তিনি!! কিন্তু সাথে সাথেই রিপ্লে আসল!
-"না রাগ করিনি!! আপনার উপরে রাগ করাতে পারবে না কোন মেয়েই" (লজ্জা ইমো)
-"হুম সে জন্যই আজো কোন মেয়ের রাগ কপালে জুটলো না!! আসলে কোন মেয়ের রাগ দেখার জন্যও কপাল লাগে"
-"তাই বুঝি!!"...
এভাবে বেশ কয়েকদিন শুধু চ্যাটিং চলল। নতুন কোন লেখায়ও মন বসাতে পারছেন না তিনি। খুব ভালো করেই জানেন, যেটার পিছনে তিনি ছুটছেন সেটা কখনোই তার নয়!! একদিন ঠিকই ফুরুত করে উড়ে যাবে। কিন্তু তারপরেও একটা মোহ, একটা অলিক চাওয়া ধীরে ধীরে গ্রাস করল তাকে। এটাই মানুষের ধর্ম!! সব বুঝেও নিশ্চিত মরিচিকার পেছনে সারাজীবন ছুটে বেড়ানো। হয়ত এটাই পৃথিবীর মায়া। মরিচিকা না থাকলে, তার পিছনে না ছুটলে মানুষ তার দীর্ঘ জীবনের সময় পার করত কিভাবে?
বেশ কিছুদিন পর মেয়েটি তার ছবি দেখতে চাইলো । ফয়সাল সাহেব কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন ১০ মিনিট ওয়েট করতে। এই ১০ মিনিটে তিনি সেভ করলেন। চুল আচড়ালেন। মুখে ক্রিম লাগালেন। তারপর একটা ছবি তুলে কাপাকাপা হাতে সেন্ড বাটনে চাপ দিলেন। ছবিটা সেন্ড হওয়া মাত্রই ফোনের ডাটা অফ করে দিলেন। মেয়েটার রিপ্লে দেখতে ইচ্ছা করছে না। অজানা আসংঙ্কায় দুরু দুরু করছে বুকের ভিতর। ঘরের ভিতরেই একটু পায়চারী করলেন। তারপর সাহস সঞ্চয় করে অন করলেন ফোনের ডাটা। Messenger অন করলেন। অবাক হয়ে দেখলেন মেয়েটার প্রোফাইল পিকচার Show করছে না!! Hello লিখে সেন্ড করলেন সাথে সাথেই একটা Error msg আসলো - "This person can't receive any message from you"!!!
চোখ দিয়ে যে একদমই কোন পানি পরল না তা নয়। বরং বেশ জোরেই পানি পরছে তার দুচোখ বেয়ে।
এরপর আর কোনো মেয়ের কমেন্টের কোন উত্তর দেননি তিনি। সব কিছু ভুলে গিয়ে লেখালিখিতে মন প্রাণ ঢেলে দিলেন আবারো। কিন্তু ইরা নামের এই মেয়েটার কমেন্ট টা বেশ মনে ধরেছে তার। যদিও লাইক বা রিপ্লে কোনটাই দেননি তিনি। এরপর দেখলেন মেয়েটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ না করে লেখাই মন দিলেন। নতুন একটা লেখা নিয়ে খুব ব্যাস্ত ।
-"কি ব্যাপার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেননা কেন?"
মেসেজ টা দেখে বেশ রাগ হলো ফয়সাল সাহেবের। এই মেয়ে গুলো চায় কি? দুদিন তার ইমোশন নিয়ে খেলা করে কি মজা পায় এরা? তিনি বেশ রাগে রাগে টাইপ করলেন -
"জী কি চান বলুন?"
-"বাবা এত দেমাগ দেখাচ্ছেন কেনো? ভালো লেখেন বলে কি অনেকেই জ্বালায় নাকি আপনাকে?"
-"দেখুন কি বলবেন বলে বিদেয় হন"
-"আশ্চর্য!! এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি আপনার লেখার অনেক বড় ফ্যান!!"
-"লেখার ফ্যান যেহেতু ওটা নিয়েই পরে থাকুননা!! আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?"
-"কেন লেখা পড়েই তো পাঠকরা লেখকের প্রেমে পরে"
-"দেখুন আমার লেখা সুন্দর হতে পারে কিন্তু আমি মোটেও সুন্দর না!! তাই আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হব"
-"আমার কাছে মানুষের চরিত্রটাই আসল তার রূপ নয়"
-"তাই!!! কিন্তু আমাকে দেখলে আপনার এসব নীতি বাক্য চুকে যাবে আর এই যে এতক্ষণ বকবক করলেন সেটা অনর্থক মনে হবে!! So চেপে যান।"
কিছুক্ষণ আর কোন টেক্সট এলোনা। ফয়সাল সাহেব ঘুমিয়ে পরলেন। সকালে ডাটা অন করতেই ইরার একটা টেক্সট এলো -
"আজ বিকেল ৫ টায় পুলিশ প্লাজার পিছনে, হাতিরঝিল এর ১ম বেঞ্চে অপেক্ষা করব। দেখতে চাই আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন ভুল আছে কিনা । দেখতে চাই কতটা কুৎসিত আপনি"
মেয়েটা পাগল নাকি!! কি করবেন বুঝতে পারলেন না। সারাটা দিন কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যেই গেল। বার বার কোন এক অদৃশ্য কারণে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। বড় বেহায়া মনে হল নিজেকে। এত এত অপমানের পরেও কোন বিবেকে আবারো সুখ সুখ অনুভব করছেন তিনি? নিজেকে নিজেরই থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হলো তার!!
ঘড়িতে ৪ টা ১৫ বাজে। কুল কিনারা না ভেবে রওনা দিলেন হাতিরঝিলে। আরোও একবার নাহয় অপমানিত হবেন তিনি।
১০ মিনিট আগেই পৌছালেন সেখানে। কিন্তু যে বেঞ্চটাতে ইরা নামের মেয়েটার থাকার কথা সে নেই!! প্রোফাইলে কোন ছবি ছিলোনা তাই মেয়েটাকে চেনেও না!! বেঞ্চে এসে বসলেন তিনি। বিরক্তি নিয়ে এক বাদামওয়ালাকে ডাক দিয়ে ১০ টাকার বাদাম দিতে বললেন। এসময় পাশ থেকে চমৎকার কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো -
"১০ টাকার বাদামে হবে না!! বাদাম আমার খুব প্রিয়!! ৫০ টাকার দিতে বলেন"
বলেই এক অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে এসে বসল ফয়সাল সাহেবের পাশে। তিনি কি বলবেন কি করবেন বুজলেন না। বাদামওয়ালাকে ৫০ টাকা দিয়ে বাদামের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে বসে থাকলেন। মেয়েটি তার হাত থেকে বাদাম গুলো একরকম কেড়ে নিয়ে বলল -
"আমি ইরা!!"
ফয়সাল সাহেব এখোনো চুপ। ইরা আরো বলল -
"আমরা ৩ বোন এক ভাই, আমি বোনদের ভিতরে মেঝো।"
তাও ফয়সাল সাহেব কিছু বললেন না। ইরা এবার হাসতে হাসতে বলল -
"আচ্ছা আপনি দেখতে আসোলেই তো অনেক কুৎসিত!!"
ওর হাসিটা অনেক সুন্দর .. কিন্তু কথাটা শুনে ফয়সাল সাহেবের খুব কষ্ট হলো। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন -
"এভাবে অপমান করার জন্য ডেকেছেন? খুশি হয়েছেন অনেক?? ধন্যবাদ! এবার তাহলে আমি আসি!!"
বলে চলে যেতে চাইলেন তিনি। কিন্তু ইরা তার হাতটা চেপে ধরলা। এবং বলল -
"বিয়ে করবেন আমাকে?"
কথাটা ফয়সাল সাহেবের মাথার উপর দিয়ে গেলো। ঠাট্টা মনে করে তিনি বললেন -
"আপনি বাড়ি যান, আমার অনেক কাজ আছে!!" বলে হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন। কিন্তু সাথে সাথেই ইরা যেটা করল সেটার জন্য একে বারেই প্রস্তুত ছিলেননা তিনি। ইরা উঠে দাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে আর আস্তে আস্তে বলল -
"তুমি দুনিয়ার সবার কাছে অসুন্দর আর এটাই আমার সার্থকতা!! এই অসুন্দর মানুষটাকে শুধুই আমি একা ভালোবাসতে পারবো !! প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা!! শক্ত করে ধরো আমাকে"
চোখ বন্ধ করে হেসে ফেললেন ফয়সাল। ইরা মুগ্ধ হয়ে দেখে, এত সুন্দর হাসি পৃথিবীতে আর দেখেনি সে।
গল্পটা এখানেই শেষ!! তবে যে কথা না বললেই নয় সেটা হলো ওই "মেঘ বৃষ্টি" আইডি টাও ইরারই ছিলো!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: অকেবারে নিজেকে নিয়ে আধুনিক গল্প উপস্থাপন।

ভাল তয় আরো ভাল করন লাগবো।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৬

ভুয়া মফিজ বলেছেন: সুন্দর গল্প, তবে লেখক কতটা কুৎসিত তার উপর নির্ভর করে গল্পটা কতটা বাস্তবসম্পন্ন!

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১০

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভালো লেগেছে। অসম্ভব কিছুই না এই জগতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.