নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুসুম সমাচার

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১০

রাত তিনটা বাজে। কুসুম ডায়নিং রুমের বেসিনের পানি ছেড়ে হড়হড় করে বমি করছে। জনাব মতিন সাহেবের বাড়িতে বছর খানেক হলো গৃহস্থালি কাজের জন্য নিজ গ্রামের দুস্থ পরিবারের মেয়ে কুসুম কে আমদানি করেন তার স্ত্রী রেহানা বেগম। কুসুমের বয়স ১৬ বছর। মতিন সাহেবের তিন কন্যার নাম যথাক্রমে জুথি, বিথী ও সেজুঁতি। জুথির বিয়ে হয়েছে কল্যাণপুরে এক ব্যবসায়ীর সাথে, বিথীর বিয়ে হয়েছে মেহেরপুরের এক ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে, আর সেজুঁতি প্রেম করে বিয়ে করে এখন লন্ডনে চলে গেছে। বলাই বাহুল্য মেয়ে গুলো সুন্দরী হওয়ায় ভালো ভালো জায়গায় তাদের হিল্লে হয়েছে। বড় মেয়ে জুথির একটা ৩ বছরের ছেলে আছে। বাকি দুই মেয়ের এখোনো ঘন্টা বাজেনি! মতিন সাহেব ও রেহানা বেগম একাই থাকেন মিরপুর১ এ তাদের নিজস্ব বাসভবনে। আর কুসুম রান্না বান্না সহ তাদের সমস্ত কাজ একাই করে। কুসুমের কাজ অনেক পরিষ্কার ও গোছালো হওয়ায় রেহানা বেগম খুব পছন্দও করেন তাকে। কুসুম এতটাই সৎ আর কর্মঠ যে রেহানা বেগম তাকে নিজের মেয়ের মতই ভালবাসেন। মনে মনে তিনি ঠিক করেছেন কুসুমের বয়স যখন ২০ হবে তখন একটা ভালো পাত্র দেখে ওর বিয়ে দিবেন। এবং বিয়ের সমস্ত খরচ সহ বিয়ে পরবর্তী খরচও তিনিই করবেন।
কিন্তু এত রাতে কুসুমের বমির শব্দ শুনে উঠে এলেন রেহানা বেগম। চোখ ডলতে ডলতে তিনি বললেন -
"কি রে শরীর খারাপ নাকি? বমি করছ ক্যান?"
কুসুম চোখে মুখে পানি দিয়ে রেহানার দিকে তাকিয়ে বলল -
"না খালাম্মা, কেমন যেন হঠাৎ পেটের মইদ্যে মোচোর দিয়া উঠলো!!"
রেহানা ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর আছে কিনা। তারপর কুসুম কে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলেন। কুসুমের মুখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা পরিবর্তনের ছাপ লক্ষ্য করলেন তিনি। এই ছাপ তার খুব বেশি অপরিচিত নয়!! তার ৪৬ বছরের অভিজ্ঞ চোখ অন্যকিছু বলছে!! এই বাড়িতে তিনি আর মতিন সাহেব ছাড়া আর কেউ থাকেন না ...!! কথাটা ভাবতেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। কেমন যেন করে উঠলো বুকের ভিতর। কুসুমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি। ঘুমিয়ে গেল কুসুম।
মতিন সাহেব খুব সকালে উঠে নামাজ পরে দৌড়াদৌড়ি করতে বের হন। হজ্ব করে আসার পর পরীক্ষা করে তার ডায়াবেটিস ধরা পরে। ফলে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী রোজ সময় করে এই দৌড় ঝাপ করা। রেহানা বেগম খুব সকালে উঠে ফার্মেসি থেকে বেবিচেক নিয়ে এসেছেন। কুসুমের ইউরিন পরীক্ষা করে নিজ ঘরের বারান্দায় বসে আছেন তিনি। রেজাল্ট পজিটিভ!! কুসুম কে কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করেননি তিনি এ ব্যাপারে। দুই কন্যা জুথি আর বিথী কে যত দ্রুত সম্ভব চলে আসতে বলেছেন বাড়িতে। সেজুঁতি দেশের বাইরে থাকায় তাকে কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিনের মত মতিন সাহেব জগিং শেষে বাড়ি ঢুকেই চা নাস্তা দিতে বললেন কুসুম কে। রেহানা বেগম অন্য দিনের মত কিছুতেই সাভাবিক হতে পারছেননা তার স্বামীর সাথে! মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না লোকটার! যতটা সম্ভব পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। নিজেকে কোন ভাবেই, কিছুতেই শান্তনা দিতে পারছেননা। দাতে দাত চেপে বসে আছেন মেয়েদের অপেক্ষায়। ঘন্টা খানেকের ভিতরেই বড় মেয়ে হাজির হল, কিন্তু বীথির আসতে অনেক দেরী। রেহানা তার মেয়েকে ঘরের লধ্যে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। মায়ের কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে জুথি বলল -
"মা, আমি কুসুমের সাথে কথা বলতে চাই"
রেহানা ক্লান্ত গলায় বললেন -
"আগে বীথি আসুক তারপর ওর সাথে কথা বলিস"
-------------
মতিন সাহেব বাড়িতে নেই। বীথি এসে পৌছেছে দুপুর ৩ টায়। কুসুম কে ঘিরে বসে আছে জুথি আর বিথী। রেহানা তার ঘরের দরজা লাগিয়ে কাঁদছেন। এতক্ষণে অশ্রুসিক্ত হল চোখ দুটো। দীর্ঘ ৩০ বছরের বিশ্বাস, আস্থা সব যেন পানি হয়ে পরছে তার চোখ দিয়ে। এক সাথে হজ্ব করলেন তারা স্বামী স্ত্রী, তিন মেয়ে কে বিয়ে দিলেন, অথচ এই বুড়ো বয়সে এতবড় জঘন্য কাজটা করতে পারল!! তাও আবার অতটুকু মেয়ের সাথে!! ছিঃ... এই সম্মান, নামাজ কালাম, হজ্ব, জাকাত কোথায় গেল ...!!! এই বুড়ো বয়সেও নিকৃষ্ট যৌনতা এতোটাই টাল মাটাল করে ফেলল তাকে?? আর ভাবতে পারছেন না তিনি!!
-"কি হয়েছিল সত্যি করে বল"
চোখ মুখ পাকিয়ে এক রকম হুমকি দিয়েই কুসুম কে বলল জুথি। এদিকে কুসুমও অনেক টা ভয় পেয়ে গেছে। থরথর করে কাঁপছে সে। সহজ সরল গলায় সোজা সাপটা ভাবে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল -
-"সেদিন খালাম্মা মার্কেটে গেছিল, আমি ঘুমাইতাছিলাম দুপুরে আমার ঘরে। এমন সময় খালুজান আমার ঘরে আইসা আমারে জরাইয়া ধইরা কইতাছিল 'কুসুম মা আমার ঘুমাইতাছছ?' হেরপর দ্যাখলাম সে আমার বন ধইরা টান দিল!"
এইটুকু বলে সে মাথা নিচু করে চুপ করে থাকল। এবার বীথি ধমক দিয়ে বলল -
-"তারপর কি হল বল!!"
এবারো সে নিশ্চুপ!! জুথি চোখ ডাগা ডাগা করে বলল -
-"তোর বন ধরে টান দিল আর তুই থামালি না?? কিচ্ছু বললি না??"
এবার কুসুম চাপা আওয়াজ তুলে কাদতেঁ কাদতেঁ বলল -
-"আফামনি গো ... আমি নিষেধ করছিলাম, বাধা দিছিলাম কিন্তু হ্যায় শুনেনাই, অনেক শক্তি খাটাইছিল আমার উপ্রে।"
-"আর তরো অনেক মজা লাগছিল তাইনা রে মাগী কোথাকার??"
প্রচন্ড রাগ নিয়ে ফোঁসফোস করতে করতে বলল বীথি।
এমন সময় লন্ডন থেকে মতিন সাহেবের ছোট মেয়ে সেজুঁতি ভিডিও কল দিল বীথির ফোনে। বীথি ফোনটা রিসিভ করে ক্যামেরা টা কুসুমের দিকে ঘুরিয়ে বলল -
-"এই দেখ ছোট, আমাদের নতুন মা!! পছন্দ হয়েছে তোর?"
ওপাশ থেকে সেজুঁতি ভ্রু কুঁচকে বলল -
-"কি বলছিস আপু এগুলো!!"
এদিকে রেহানা কেদে চলেছেন তার ঘরে। ওদিকে কুসুমও কাঁদছে!! দুজনাই মেয়ে, দুজনাই মায়ের জাত। একজন মা হয়েছে ২৬ বছর আগে আর একজন মা হলো ১৬ বছর বয়সে। একজন বিয়ে করা বৈধ বউ, আর একজন তার নোংরা যৌন চাহিদার হিংস্র থাবার শিকার। এমন অনেক কুসুমের জীবনে এমন ঘটনা গুলো রোজ ঘটছে আমাদের আশেপাশে। এরপর কুসুমের কি হয়েছিল বা তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছিল তা আমার জানা নাই, তবে এই ঘটনা যখন লিখছি তখন মতিন সাহেব সমাজের একজন বিশিষ্ট সম্মানী ব্যাক্তি হিসেবে এলাকার মসজিদের 'সমাজ কল্যাণ' মুলক আলোচনা সভায় মূল্যবান বক্তব্য রাখছেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬

ওমেরা বলেছেন: ছিঃ -- বেসিনে কেউ বমি করে !!!!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.