নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুল চোর

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৯

গ্রামের গন্য মান্য ব্যক্তিবর্গ এবং চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে এক বিরাট সালিশের আয়োজন করা হয়েছে। তাদেরকে ঘিরে আছে গ্রামের অন্যান্য উৎসুক জনতা। আসামী জমির উদ্দিন জড়োসড়ো হয়ে মাটিতে বসে আছে সবার কেন্দ্রবিন্দুতে । তার বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৬৫ বছরের ভিতরে হবে। ভয়ংকর অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই বয়সে এরকম গর্হিত অন্যায় তিনি কিভাবে করলেন তা গ্রামবাসীর কাছে পরিষ্কার নয়। তাদের ভিতরে চলছে চাপা গুঞ্জন। সেই গুঞ্জনের ভিতর দিয়েই মাঝে মাঝে স্পষ্ট হচ্ছে কয়েকটা বাক্য। যেমন -
"শালা লুইচ্চা"
"ব্যাডারে পিছা মারো"
"ওনারে ভিমরতিতে ধরছে"
কেউ কেউ আবার অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করছে। যা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছে কেউ কেউ। এমন সময় চেয়ারম্যান সাহেব একটা হুঙ্কার ছেড়ে সবাই কে থামতে বলে চেয়ারের উপর পা তুলে আরাম করে বসলেন। তার চামচা গোছের একজন একটা পান তার হাতে দিলে তিনি সেটা মুখের মধ্যে গুজতে গুজতে জমির উদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বললেন -
-"কি মিয়া ঘটনা হাছা নি?"
জমির মাথা নিচু করে মাটির দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে। বাম চোখের কাছে কিছুটা রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। এছাড়া চোখ দুটো ফুলেও গেছে। পরনের ছেড়া জামাটা আরো ছিড়ে গেছে। কেননা ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়ে গনধোলাইয়ের শিকার হয় সে!
হাসনা বানু নামের এক মহিলা (৫০) তার ঘরে কাপড় পাল্টাচ্ছিল, এমন সময় নাকি জমির উদ্দিন ওই মহিলার জানালার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তা দেখছিল। এই হল তার অপরাধ। সাথে সাথেই মহিলা চিৎকার করে লোকজন জড়ো করলো, এবং গ্রামের দামাল ছেলেরা কোন কিছু না শুনেই ষাটোর্দ্ধ বয়সের মানুষটাকে উদোম পাদোম পিটিয়ে শরীরের রক্ত ঠান্ডা করল। কেউ কিন্তু ওই সময় খেয়াল করেনি যে জমির মার খেতে খেতেই কি যেন একটা খুজছিলো মাটিতে!!!
-"ওই মিয়া কি কইতাছি তোমারে? কথা কি কান দিয়া ঢুকে না?"
চোখ মুখ রাঙিয়ে আবারো হুঙ্কার ছাড়লেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। কিন্তু এবারো জমির নিশ্চুপ! এসময় চেয়ারম্যানের পাশে বসে থাকা এক মুরুব্বী বললেন -
-"কে আছো ওর পিডে আরো একখান লাডি ভাংগো!!"
শুনেই ১৮ -১৯ বছরের এক ছেলে একটা লাঠি নিয়ে এগিয়ে গেল জমিরের দিকে। তখন চেয়ারম্যান উঠে দাঁড়ালেন এবং তাকে থামিয়ে এগিয়ে গেলেন জমিরের দিকে। জমিরের পাশে কড়া করে পানের পিক ফেলে গলা খাকারি দিয়ে বললেন -
-"ওই তোমারে যা জিগাইতাছি তার ঠিক ঠিক জবাব দাও, নইলে কইলাম ফল ভালা হইবো না"
এবার জমির মুখ খুলল -
-"জী হুজুর, জিগান কি জিগাইবেন"
চেয়ারম্যান ভ্রুকুটি করে বললেন -
-"তুমি হাসনা বানুর জানালায় খাড়াইয়া ছিলা, ঘটনা সত্য?"
-"জী হুজুর! খাড়াইয়া ছিলাম"
কথাটা শুনেই আবার চারিদিকে চাপা শোরগোল শুরু হয়ে গেল। মুরুব্বীদের ভিতরে আরেকজন বলে উঠলো -
-"দেখছেন হালায় কতবড় বিয়াদ্দব? নাউজুবিল্লাহ! এই বয়সে এই কাম!! চেয়ারম্যান সাব ওরে এমনি এমনি ছাড়বেন না"
অনেকেই আবার মুরুব্বীর কথায় সম্মতিও জানালো। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান আবারো জমির কে বললেন -
-"তুমি হাসনা বানুর জানালায় কি করছিলা?"
-"একটা ফুল ছিড়তে নিছিলাম হুজুর"!!
কথাটা শুনেই চেয়ারম্যান একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। সাথে সাথেই হাসনা বানুকে ডাকলেন তিনি। ভিড়ের ভিতর থেকেই পরিমরি করে হাজির হল হাসনা বানু। চেয়ারম্যান তাকে জিজ্ঞাসা করলেন -
-"তোমার জানালার কাছে কোন ফুল গাছ আছে?"
-"জী সাহেব, একটা গোলাপ ফুলের গাছ আছে।"
-"ঠিক আছে তুমি যাও"
বলে আবার জমিরের দিকে ফিরলেন তিনি, এক গাল পানের পিক ফেলতে ফেলতে বললেন -
-"ছিঃছিঃ থুহ!! ফুল ছেড়োনের উচিলাই মাইয়া লোকের জানালায় ফুসকুলি মারতে সরম করে না???"
চেয়ারম্যান ফিরে এসে তার চেয়ারে বসলেন। পাশের মুরুব্বী গুলোর সাথে কানাঘুষা করে সবাইকে উদ্যেশ্য করে বললেন -
-"গ্রামের সকলের সামনে, এই লোকরে হাসনা বানু নিজে তার সেন্ডেল দিয়া ৫০ ঘা মারবে, এই হল তার বিচার"
ব্যস ... সাথে সাথেই চারিদিকে হাততালি পরে গেল। সাদাকালো দাত গুলো ঝিকমিক করে উঠলো চারিপাশ। এদিকে হাসনা বানুও নির্দিধায় তার উপরে অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করলো। জমির উদ্দিন হাসি মুখেই গুনে শুনে ৫০ টা সেন্ডেলের বারি খেল। এবং তার পরপরই উঠে গেলো চেয়ারম্যানের কাছে, এবং কাকুতি মিনতি করে বলল -
-"হুজুর আমায় একটা ফুল দেবেন?"
-"কেন আসে পাশে এত ফুলের গাছ একটা ছিড়ে নিলেই তো পারো!!"
-"না হুজুর, আবার যদি এমনটি হয়?"
বেশ উৎকন্ঠিত হয়ে বলল জমির উদ্দিন। সাথে সাথে সবাই খিলখিলিয়ে উঠলো। একজন বলেই ফেলল -
-"ব্যাটা বিশ্ব ভন্ড!! ভেক ধরেছে"
চেয়ারম্যান তাকে থামিয়ে টিটকারী মূলক হাসি দিয়ে জমির কে উদ্যেশ্য করে বলল -
-"ফুল দিয়ে কি করবা তুমি?"
জমির মাথা নিচু করে রইলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চেয়ারম্যান তার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে একজনকে বললেন জমির কে একটা ফুল এনে দিতে এবং গোপনে লক্ষ্য করতে, জমির ওই ফুল নিয়ে কি করে তা দেখার জন্য।
যাকে এই দ্বায়িত্ব দেয়া হল সে অনেক দুর থেকে জমিরের পিছু নিল। দেখতে দেখতে একটা সময় দেখা গেল জমির ফুলটা নিয়ে একটা কবরস্থানের ভিতরে ঢুকলো, এবং একটা নির্দিষ্ট কবরে ওই ফুলটা রাখলো!! সেখানে আরো অনেক হাজার হাজার ফুল পরে আছে। কিছু কিছু শুকনো মরা, কিছু কিছু মলিন। বিভিন্ন ফুলে ভরা কবরটি। পুরো ব্যাপারটা ওই গুপ্তচর দুর থেকে দেখে চলে গেলো ... কিন্তু জেনে গেলনা এর রহস্য .... জেনে গেলনা কেন সে রোজ ওই কবরে ফুল দেয় ... কেন সে এই বুড়ো বয়সে সামান্য ফুলের জন্য এতবড় লাঞ্ছনা সহ্য করল ... জেনে গেলনা কার কবর ওটা!!!
কিভাবে জানবে? জমির আর ফুলির জীবনে তো আর কেও ছিলনা। দীর্ঘ ৩০ বছরের সংসারে একটা সন্তান জন্ম নেয়নি যে কিনা এই ভালবাসার গল্প শোনাবে। ফুলির যখন ১৫ বছর বয়স, তখন তাকে ভালোবেসে বউ করে ঘরে এনেছিল জমির। ৩০ বছরের এই সংসারে কখনোই তারা একে অপরের প্রতি বিরক্ত হয়নি, এমনকি ফুলির বন্ধাত্বও কখোনো বাধা হয়ে দাঁড়াইনি তাদের সম্পর্কের মাঝখানে। নাম না জানা দুরারোগ্য রোগে ফুলি যখন শয্যাশায়ী তখন তার স্বামীর হাত ধরে ফুলির বলা শেষ কথাটুকু সব সময় মাথায় বাজে জমিরের।
"আমি মরে গেলে রোজ একটা ফুল নিয়ে এসো আমার কবরে, আমি ভিতরে শুয়ে শুয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন ফুলের গন্ধ শুকবো... আর তোমায় অনুভব করবো আমার হৃদ মাঝারে"

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হৃদয় স্পর্শী লেখা !

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্য..

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

আবদুল মমিন বলেছেন:
আমি মরে গেলে রোজ একটা ফুল নিয়ে এসো আমার কবরে, আমি ভিতরে শুয়ে শুয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন ফুলের গন্ধ শুকবো... আর তোমায় অনুভব করবো আমার হৃদ মাঝারে"ভিতরে শুয়ে শুয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন ফুলের গন্ধ শুকবো... আর তোমায় অনুভব করবো আমার হৃদ মাঝারে"

হৃদয় স্পর্শী

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬

ময়না বঙ্গাল বলেছেন: ভালোই একটি গল্প সাজিয়েছেন । সামনে আরও লেখা চাই ভাই ।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৫০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: চেষ্টা চলবে ভাই, আর ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২৯

ওমেরা বলেছেন: গল্প হিসাবে ভাল তবে ভুল একটা শিক্ষা প্রচার করলেন। কবরে ফুল দেয়া কোন ভাল কাজ না ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৩০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: আপনার সাথে শতভাগ একমত পোষণ করেই বলছি ভুল কিছু প্রচার করা আমার উদ্দেশ্য নয়, বরং একটা হৃদয় স্পর্শী ঘটনা তুলে ধরাই লেখকের মূল উদ্দেশ্য। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.