নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বকুলের ভুত

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৯

সারাদিন কিছুতেই অফিসে মন বসাতে পারলাম না। লাঞ্চ টাইমেও ক্যান্টিনে বসে কাটা চামচ দিয়ে কিছুক্ষণ প্লেটের সাথে টুংটাং আওয়াজ তুলে বেরিয়ে পরলাম। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকা স্বত্বেও মুখ অব্দি কোন খাবার তুলতেই পারছিনা। যেন মুখের জ্বীভ আর দাত গুলো অনশন কর্মসূচি পালন করছে!! তাদের সাথে আবার নাসিকা সুর মিলিয়ে বলছে "উহ.. কি বাজে গন্ধ .. এগুলো মুখে তোলা যায়"!! যে খাবার গুলো অন্য সময় গবগব করে গিলেছে সেগুলো নাকি অখাদ্য!! আর ওদিকে পেট মহাশয় ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে।
নাক, জ্বীভ আর দাতের দোষ দিয়ে লাভ কি! ওরা তো মস্তিষ্ক, তথা মন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। মনের ভিতরে অশান্তি থাকলে কোন খাবারই মুখে রোচে না। কিন্তু পেট তো আর মনের কথায় চলে না, কার মন ভালো কার মন খারাপ সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, বরং পেট খালি হওয়া মাত্রই তা যেকোন উপায়ে আবারো ভরতে হবে। যদি মুখে না খেয়ে পেট ভরানোর কোন উপায় থাকতো তবে জ্বীভ, দাত আর নাকের অনশন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঠিকই পেট পুজো করে ছাড়তাম।
সে যাগ্গে, আমার মনে গতকাল থেকে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে তাকে কেন্দ্র করেই যে কিছু খেতে ভালো লাগছে না তা পরিষ্কার। রাত ১২ টার সময় ইরার আবদার, সে খুব দ্রুতই কনসিভ করতে চায়!! এটা কোন কথা? বিয়ে করলাম এখোনো বছর পেরুল না অথচ এখনই নাকি তার বাচ্চা দরকার!! তাও যদি কথাটা অন্য সময় ঠান্ডা মাথায় বলত তবুও মানাতো ... তখন আবার তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সে বলে কিনা -
-"বাচ্চা পেটে ধরবো আমি, মানুষ করবো আমি তোমার কি সমস্যা??"
আমিও রেগে মেগে ভ্রু কুঁচকে বললাম -
-"মূর্খ নাকি তুমি! বোঝনা কি সমস্যা?"
-"হ্যাঁ বুঝি তো ...! বুঝবো না কেন?"
-"কি বোঝ তুমি হ্যাঁ? কি বোঝ?"
-"বাচ্চা কাচ্চা হলে তোমার যে রোমাঞ্চ এ বড্ড অসুবিধা হবে সেকথা বুঝিনা ভেবেছ?"
-"তো অতই যখন বোঝ তবে এখুনি বাচ্চা নেয়ার জন্য এত লাফাচ্ছো কেন??"
-"এখন নিবনা তো কখন নিব? বাচ্চা কাচ্চা যত তাড়াতাড়ি নেয়া যায় ততই ভালো"
এরপর আমি আর একটি কথাও না বলে কানের মধ্যে তুলো গুঁজে শুয়ে পরলাম। হালকা হালকা শুনতে পেলাম তখনো সে আপন মনে বকবক করে যাচ্ছে হালকা কাদোঁ কাদোঁ সুরে -
-"আমার কি কোন মূল্য আছে এই সংসারে! কে আমি? আমার কোন চাওয়া পাওয়ার কোন দাম নেই!! কালই আমি চলে যাব বাপের বাড়ি!! তখন বুঝবা কত ধানে কত চাল"
আমার কোন প্রতিউত্তর বা নড়াচড়া না পেয়ে সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকাল। তারপর আমার কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তুলো বের করে চিৎকার করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিল!!-
-"শুনছো!!!"
-"ধ্যাৎ!! এত জোরে চিল্লায় কেউ? কি হয়েছে বল?"
-"আমি কাল বাপের বাড়ি চলে যাব"
-"তো যাও না .. কে নিষেধ করেছে?"
-"ঠিক আছে তুই থাক এখানে পরে .. আমি ভোরেই চলে যাব!!"
-"যাও, আমি বরং কটাদিন আরামেই থাকবো"
হাই তুলে কোল বালিশ টা কাছে টেনে আরাম করে শুয়ে পরলাম আমি।
সকালে ঘুম ভেঙে উঠতেই দেখি ইরা নেই!! সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এভাবে সত্যি সত্যি চলে গেল দেখে বেসম্ভব মেজাজ খারাপ হলো। আমিও জিদ করলাম -ও নিজে থেকে না আসলে আমিও যাবনা ওকে আনতে।
কিন্তু সারাদিন অফিসে কেমন একটা ছটফটানির ভিতর দিয়েই গেল। কিছু খেতেও পারলাম না। আচ্ছা মনে দুঃখ কষ্ট থাকলে মানুষের এত জায়গা থুয়ে ক্ষুধার উপরে কেন প্রভাব পরে? অন্য কিছুও তো হতে পারে, এই যেমন - পাতলা পায়খানা হওয়া, মাথার চুল পরে যাওয়া, ঘনঘন হাচি হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাসায় ফিরে হয়তো দেখবো ইরা ফিরে এসেছে! মনের গহীনে এমন একটা সুপ্ত বাসনা নিয়েই বের হলাম অফিস থেকে। ইরার খুব বাদাম পছন্দ, তাই ৩০ টাকার বাদামও কিনে নিলাম বাসায় যাওয়ার পথে। বাসায় ফিরে ইরা কে দেখতে পেলাম না, কিন্তু ইরার পরিবর্তে যাকে দেখতে পেলাম তাকে দেখতে হবে জানলে আজ আর বাসায়ই ফিরতাম না!!
দুর থেকে বন্ধ জানালা দেখেই বুঝেছিলাম ইরা ফেরেনি। বাসায় ঢুকে নিজ হাতে চাবি দিয়ে দরজা খুললাম। ভিতরে ঢুকে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে ঘরের আলো জ্বালাতেই ধক্ করে একটা ধাক্কা খেলাম বুকের ঠিক বাম পাশ টায়। ডায়নিং টেবিলের একটা চেয়ারে আনুমানিক ২০-২২ বছরের কালো কুচকুচে একটা গোল গাল চেহারার ছেলে বসে আছে!! তাও আবার সম্পূর্ণ বিবস্ত্র!! আমি সম্পূর্ণ জমে গেলাম! অপলক তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে, এবং সেও যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাবলাম - এ যদি চোর হবে তবে চাবি ছাড়া ঢুকলো কিভাবে? আর এরকম নেংটা চোর এর আগে না কোনদিন দেখেছি .. না শুনেছি!! আমি তৎক্ষণাৎ বেশি না ভেবে বললাম -
-"এই কে তুমি? আর কিভাবে ঢুকলে এই ঘরে?"
দেখলাম ছেলেটা একটু ভয়ভয় নিয়ে বলল -
-"আজ্ঞে হুজুর আমার নাম বাবুল"
-"বুঝলাম তুমি বকুল কিন্তু তুমি কিভাবে ঢুকলে এখানে?"
-"হুজুর আমি ভুল করে আত্মহত্যা করে ফেলেছি!! এখন ভুত হয়ে ফাকাঁ বাড়ি গুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছি!!"
এবার একটু রাগ হলো আমার ! নিশ্চয়ই এটা ইরার কোন খেল .. কেননা বাড়ির আরেক গুচ্ছ চাবি তার কাছেও আছে। আমিও একটু মজা করার ছুতোয় বললাম -
-"ও আচ্ছা! তো তুমি এভাবে নেংটু হয়ে ঘুরছো কেন? ভুতেরা কাপর পরেনা বুঝি?"
-"জী, মানে .. পরে তো .. কিন্তু আমি ভাবলাম ফাকাঁ বাড়ি একটু আলগা হয়ে থাকি .. কিন্তু আপনি এভাবে হঠাৎ ঢুকে পরবেন ভাবিনি!"
-"তো ভুত মশাই, তোমার কাপড় কই?"
সে পাশের একটা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে বলল -
-"ওই যে সাদা কাপড় টা দেখছেন ওটাই আমার"
-"বেশ খুব ভালো তো" বলে পাশের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে আবারো বললাম -
-"তুমি কবে আত্মহত্যা করেছ ভাই, আর কেনইবা আত্মহত্যা করতে গেলে?"
-"ধুর মশাই আর বলছেন কেন? আমি কি আর জানতাম আত্মহত্যা করলে এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে? হঠাৎ ইচ্ছে হল মরে গিয়ে ভুত হবার, তাই ট্রেনের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম, আর তারপর থেকেই শুরু হল যত বিপত্তি!!"
-"কেমন বিপত্তি?"
-"এই যে থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার জায়গা নেই, ঘুমানোর জায়গা নেই!!"
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম -
-"বাব্বাহ! ভুতদের আবার থাকা খাওয়ার জায়গাও লাগে নাকি?"
-"সেটা নিয়েও তো পরেছিলাম বিরাট বিপদে!! প্রথম প্রথম ভাবলাম মানুষের মত ভাত তরকারি খেয়েই ভুতেরা বাঁচে! তাই মানুষের রান্নাঘরে ঢুকে খাবার চুরি করে খেলাম, কিন্তু কি বলব সে খাবারের কথা! ছ্যা ছ্যা .. ওই খাবার মানুষ খায় কিভাবে? যাই খেতাম তাতেই বদ হজম হত আর পিছন দিয়ে সরাসরি আস্ত খাবার বের হয়ে যেত!! তারপর একদিন এক পায়খানার ভিতরের চরম সুগন্ধ নাকে ভেসে এলো, সেখান থেকে টাটকা গুয়ের গন্ধে মন ভরে উঠলো, লোভ সামলাতে না পেরে গু তুলে খাওয়া শুরু করলাম। আহা সেকি স্বাদ!! সেদিন থেকেই বুঝলাম গু হল ভুতেদের একমাত্র খাদ্য!!"
আমি নাক সিটকানোর মত করে বললাম-
-" ছি ছি তোমরা গু খাও?"
-"জী, তবে বাঁশি পচা গু খাইনা, সব সময় টাটকা গু খাই"
মনে মনে বললাম অনেক হয়েছে তোমার ইতরামি! এবার দেখাচ্ছি মজা। আমি বললাম -
-"আচ্ছা, তুমি যদি সত্যি ভুত হয়ে থাকো তো আমি ঘরে ঢুকার সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেলে না কেন?"
-"সে সময় টা আর দিলেন কই? ওই সাদা পোশাক ছাড়া আমাদের তো কোন ক্ষমতায় থাকে না!! সবেমাত্র পোশাক টা খুলে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছিলাম, আর অমনি আপনি এসে হাজির!!"
-"ঠিক আছে এখন ওটা পরে আমাকে অদৃশ্য হয়ে দেখাও, তবেই বিশ্বাস করবো তুমি ভুত"
-"ঠিক আছে হুজুর, যথা আজ্ঞা"
বলেই সে তার পোশাক টা পরে সত্যি সত্যি অদৃশ্য হয়ে গেল!!!
আমি তাজ্জব বনে গেলাম!! কিভাবে সম্ভব!! এই প্রথম আমার শিরদারা দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল!! পকেট হাতরে ফোনটা খুজছি ... ইরা কে ফোন করা দরকার ... প্রচন্ড ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ... হাতরাচ্ছি ... হাতরাচ্ছি ... কিন্তু ফোনটা খুজেঁ পাচ্ছি না। এমন সময় চোখে মুখে পানির ছিটা অনুভব করলাম ... চোখ মেলে চাইলাম ... দেখি ইরা ভ্রুকুটি করে বলছে -
-"কি? একটা বাচ্চা চেয়েছি বলে কি আমার গলা টিপে খুন করতে চাচ্ছো নাকি?"!!!
বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বুঝলাম ইরার সাথে ঝগড়া করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছিলাম এবং আমি এতক্ষন সপ্ন দেখছিলাম .... আর ফোন হাতরাতে গিয়ে মূলত ইরার গলার কাছে হাত দিয়ে থাবরাচ্ছিলাম!!!
পুরোপুরি সেন্স আসার পর একটু হেসে ইরা কে বললাম -
-"ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে ... আমি বাবা হতে রাজি"

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়লাম, যেসব গল্প পড়লে ভালো লাগে না, সেই দলে আছে লেখাটি

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৫

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: সেম টু ইউ ভাই । যাদের কমেন্ট পরলে ভালো লাগেনা আপনিও আছেন সেই দলে। ভালো লেখা দুয়েকটা থাকলেও সেখানে হারিকেন জালিয়েও খুজে পাওয়া যাবেনা আপনাকে। আপনার মত এত বড় মাপের একজন মানুষ যদি সব সময় উৎসাহিত না করে শুধু নিন্দায় জানায় তবে তো আমরা নতুন লেখক রা প্রান হারাবো।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৬

ওমেরা বলেছেন: গল্পটা ভালই ছিল শুধু পচাঁ -বাসি ছারা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.