নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিস হিস

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

"গত তিনমাস যাবৎ আমি একটা বিষধর সাপের সাথে বসবাস করছি ডাক্তার সাহেব!! গভীর রাতে ভয়ংকর হিসহিস শব্দ করে!!"
"মানে?"
"মানে আজ তিন মাস হল আমি আবিষ্কার করেছি আমার বিছানায় একটা বিষাক্ত সাপ আমার পাশে ঘুমিয়ে থাকে!!"
"ও আচ্ছা"
"ও আচ্ছা মানে!! আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না?"
"জী বিশ্বাস করেছি। তবে আপনার চেহারা দেখে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক অনুমান করতে পারছিনা!!"
"কেন? সাপের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক কি!! আর তাছাড়া আমাকে দেখে কি আপনার মূর্খ মনে হয়?"
"আছে!! সম্পর্ক আছে!! তার আগে বলুন আপনার নাম কি?"
"আ.খ.ম. রশীদ হাসান"
"আচ্ছা মিঃ রশীদ, আপনি কি জানেন আপনি কার কাছে এসেছেন?"
"কেন জানবো না!! আপনি প্রখ্যাত ডাক্তার ইয়াকুব আলী"
"ধন্যবাদ। তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানেন আমি কিসের ডাক্তার?"
"জী জানি। আপনি একজন বড় সাইকিয়াট্রিস, মানসিক রোগের ডাক্তার"
"বাহ চমৎকার!! তাহলে এবার আমাকে এটা বলুন আপনি ওঝার কাছে না গিয়ে আমার কাছে কেন এসেছেন?"
"কারণ সাপ'টার অত্যাচারে আমি মানসিক রুগী হয়ে গেছি"
"কোনটা বেশি জরুরী, সাপটাকে তাড়ানো নাকি আপনার মানসিক চিকিৎসা?"
"মানসিক চিকিৎসা"
"কেন?"
"শুরু থেকে সব শুনলে আপনিও বলবেন সাপটাকে তাড়ানোর থেকে আমার মেন্টাল ট্রিটমেন্ট বেশি জরুরী।"
"ঠিক আছে মিঃ রশীদ। বাইরে আমার আরো রোগী অপেক্ষায় আছে। আপনাকে ৫ মিনিট সময় দিলাম, দয়াকরে কোন ভনিতা না করে অতি সংক্ষেপে বলুন"

টেবিলের সামনে রাখা এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে লম্বা একটা দম নিয়ে একটু ইতস্তত করে বলতে শুরু করলেন রশীদ সাহেব।

"কিছু মনে করবেন না, আমি একটু খোলামেলা ভাবে বলতে চাই! এতে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। আমার স্ত্রীর নাম রাজিকা। আজ তিন মাস হল ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের ভিতরে ভালোবাসা যতটা না ছিল তারচে বেশি ছিল আসক্তি! বিয়ের অনেক আগে থেকেই আমরা বিছানা সম্পর্কে আবদ্ধ হই শুধুমাত্র ওই আসক্তির কারনে। তখন ও আমার উপরে উঠে ঠিক একইভাবে হিসহিস শব্দ করতো!! সেই হিসহিসানি মধুর লাগলেও এখন ভয় লাগে। তখন বুঝতাম না এটা কি শুধুই আসক্তি নাকি ভালোবাসা।"

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটু থেমে খানিকটা গর্জনের সাথে আবারও বললেন রশীদ সাহেব,
"এখন আর ওকে আমার বিছানা সঙ্গী ভাবতে ইচ্ছা হয়না!! মনে হয় একটা কালনাগিনী শুয়ে আছে আমার পাশে!! আমি জানিনা কিসের এত ঘৃণা ওর প্রতি আমার!! আমি জানিনা কেন আর ওকে এক বিন্দু সহ্য হয়না আমার!! আমি জানিনা!! প্লিজ হেল্প মি ডাক্টর সাহেব ... প্লিজ হেল্প মি"

এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলেন ডক্টর লিয়াকত। তিনি এমন একটা ভঙ্গিতে বললেন "নিন আরেক গ্লাস পানি খান" যেন এটা কোন রোগই না। তারপর চোখ দুটো কিঞ্চিৎ সরু করে বললেন,
"আপনার আসল রোগ হল সন্দেহ!!"
"সন্দেহ?"
"জী সন্দেহ। আপনি নিশ্চয়ই চাকরি অথবা ব্যবসা বানিজ্যের খাতিরে বাড়ির বাইরেই বেশি থাকেন?"
"জী ঠিক" বেশ আগ্রহ এবং উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন জনাব রশীদ।
"বাড়িতে ফেরার পর আপনার ওয়াইফের আপনার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ লক্ষ্য করেননা!"
"জী তাও ঠিক"
"এবং আপনি আপনার শোবার বিছানা সহ ঘরের বায়ুমন্ডলে ছুচোঁর মত নাক ঘষে ঘষে বেশ নিশ্চিত ভাবেই অন্য পুরুষের গন্ধ খুজেঁ পান তাইতো?"
"জী? জী হ্যাঁ ... কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?"
"আসলে বিয়ের আগের শারীরিক সম্পর্কই এর জন্য দ্বায়ী!"
"কিভাবে?"
"সৃষ্টিকর্তা আমাদের মানসিক ও জৈবিক চাহিদাকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন যা ভাবতে পারবেন না। পুরুষ মানুষ যখন তার শারীরিক চাহিদা পূরনের উদ্যেশ্যে কোন মেয়ের দিকে পা বাড়ায় তখন তার স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি অনেকাংশে লোপ পায়। সব কিছুই তার কাছে সঠিক মনে হয়। কিন্তু এরপর যখন সে তার মেয়ে সঙ্গীর উপরে চরম উত্তেজনা ঢেলে দিয়ে শান্ত হয়ে যায় ঠিক তখনই তার লোপ পাওয়া সেই বিচার বুদ্ধি ফিরতে শুরু করে, এবং তার সাবকন্সাস মাইন্ড নিজেকে সহ সঙ্গীনিকেও অপরাধী মনে করতে থাকে। ঠিক যেমনটা হস্তমৈথুনের আগে এবং পরে ঘটে"

রশীদ সাহেব হা করে ডক্টরের কথা গুলো শুনছেন। ডক্টর সাহেব সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলেন।
"শুধু পুরুষ নয়, নারীটির ক্ষেত্রেও একই অনুশোচনা বোধ তৈরী হয়। কোন এক সময় পুরুষের সেই অবচেতন মন তার কন্সাস মাইন্ডের কাছে নেতিবাচক তথ্য পাঠাতে শুরু করে। সে ভাবতে শুরু করে, যে মেয়েটি শুধুমাত্র শরীরের ক্ষুধা মেটানোর জন্য বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে সে অন্য যেকোনো পুরুষের সাথেই তা করতে পারে। একইভাবে ওই মেয়েটিও ভাবতে শুরু করে, যে ছেলে বিয়ের আগেই এমন কাজ করতে পারে সে ঘরের বাইরে নাজানি কত মেয়ের সাথেই তা করছে। ফলাফল বিয়ের পরে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস দানা বাধে এবং তা প্রবল সন্দেহে রূপ নেয় এবং পাশে শুয়ে থাকা সঙ্গিনী কে সাপ মনে হতে থাকে!!"

একটু থেমে,

"কে জানে আপনার স্ত্রী রাজিকাও হয়তো আপনাকে বিষধর কোন সাপ ভাবতে শুরু করেছে, এবং সেও তার বিছানার পাশে হিসহিস শব্দ পায়!!"

রশীদ সাহেব ক্লান্ত এবং অবসন্ন মনে জিজ্ঞাসা করলেন, "এর থেকে বাচাঁর কি কোন উপায় নেই ডাক্তার সাহেব? আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালবাসতে চাই, সম্মান করতে চাই সেই আগের মত!!"
"হ্যাঁ উপায় আছে। আপনি আপনার স্ত্রী কে ডিভোর্স দিয়ে দিন!! এরপর দুজন দুজনের থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখুন একজন আরেকজনের অভাব অনুভব করা পর্যন্ত। তারপর হঠাৎ একদিন তাকে আবার প্রপোজ করুন, তাকে জড়িয়ে ধরুন, মন খুলে কাঁদুন, এবং পুনরায় বিয়ে করুন!! ব্যাস ... আমার মনে হয় এতে সমস্যার সমাধান হবে"
"ধন্যবাদ ডক্টর সাহেব" বলে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন রশীদ সাহেব। চেম্বার ছেড়ে তিনি চলে যেতেই কম্পাউন্ডারের উদ্যেশ্যে ডক্টর সাহেব জোরে হাক পারলেন -
"NEXT"

কিছুক্ষণের মধ্যেই এক সুন্দরী মেয়ের আগমন ঘটলো -
"আসসালামু আলাইকুম"
"ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসুন"
"ধন্যবাদ"
"আপনার নাম?"
"রাজিকা... মিসেস রাজিকা রশীদ!! "

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: একুশ শতক রাজনীতির নয়,
আবিষ্কারের, উদ্ভাবনের এবং সৃজনশীলতার।
বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: দেখতে দেখায় সোনা আসলে কিন্তু এমিটি সোনা ।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শেষটায়ে এসে মজাটা পূর্ণ হল।

উভয়ে একই রোগের রোগী!

ভাল লাগল গল্প :)

+++

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আল্লাহর বিধানের বাইরে গেলে
তার পরিণতি এমনই হয়।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: চলুক।

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনিতো সুন্দর গল্প লিখেন নয়ন ভাই !!!

৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

রসায়ন বলেছেন: মজা পেলাম । গল্পে প্লাস ।

৮| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:০৪

সোহানী বলেছেন: খুব অল্প কথায় সমাজের অনেক গভীরের সমস্যা তুলে ধরেছাে নয়ন। ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.