নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“আমৃত্যু যে ডরেনি মৃত্যু সে তো মহান আরাফাত
আবু আম্মর রইবে অমর ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ।
আল আকসার উর্ধ্বে উড়াব বিজয় নিশান অবশ্যই
প্রাণ যদি যায় যাক তবু ভাই ন্যায়ের বিজয় সুনিশ্চয়।।”
আরাফাতের মৃত্যুর পর অত্যন্ত্য মূমুর্ষ আবেগে এই পংক্তিমালা রচনা করি। ২০০৪ সালের ১০ই নভেম্বর আমার 2nd Year Final Exam.. শেষ হয়। পরদিন সকালে অর্থাৎ ১১ই নভেম্বর যখন আমার এক আতœীয় বাসায় যাই তখন সময় অতিবাহনের জন্য TV On করি। Channel বদল করতে করতে যখনBBC তে যাই তখন সেখানে আরাফাতের মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল `Arafat Dead’’। খবরটি দেখা মাএই অনুভূতিগুলি Automatically শিথিল হয়ে গেল। সত্যি বলছি বুক ফেটে কান্না আসার অনুভূতি অনুভব করছিলাম। নিস্তব্ধ এক গম্ভীরতা আমাকে ছেয়ে ফেলল। মনে হল একান্ত আপনার কাকে জানি হারালাম।এই ইয়াছির আরাফাতের সাথে আমাদের যাত্রা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। সে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের, সেই থেকে সে ছিল আমাদের বন্ধু। এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে তা পরিণত হল ভ্রাতৃত্বে, সেই থেকে সে ছিল আমাদের ভাই, আতœার আতœীয়।
তখন রমজান মাস চলছিল। আমার সাথে ১৫০০ টাকা ছিল ঈদের কেনাকাটা করার জন্য, কিন্তু সে টাকা নিয়ে আমি শাহবাগের রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি। মনে হচ্ছিল আরাফাতের মৃত্যু আমার ঈদ আনন্দেরও মৃত্যু ঘটাল। একরকম বিবেকের তাড়না অনুভব করছিলাম। রমজানের সে ঈদ আমি নতুন বস্ত্র ছাড়াই পাড় করে দেই।
এ হল সেই আরাফাত যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য আমৃত্যু সংগ্রামের পণ করেছিল; এ হল সেই আরাফাত যে দানবীয় শক্তির কাছে মাথা নত না করে আমৃত্যু তার সংগ্রাম চালিত করেছিল; এ হল সেই আরাফাত যে ছিল শুধু ফিলিস্তিন নয়, বিশ্বে মুক্তিকামী জনগনের অন্যতম প্রেরণা ও প্রতীক; এ হল সেই আরাফাত যে জাতিসংঘে গিয়ে বলেছিল,‘আমার এক হাতে জয়তুনের শাখা অন্য হাতে কালাসনিকভ, দয়া করে আমার হাত থেকে জয়তুনের শাখা ফেলে দিবেন না’; এ হল সেই আরাফাত যে কোনদিন মদ্য স্পর্শ করেনি, অন্যান্য আরব শাসকদের মত ভোগবিলাসের জীবন বেছে না নিয়ে শয্যা পেতেছিল বাঙ্কারে বাঙ্কারে; এ হল সেই আরাফাত যাকে আমি অন্তর দিযে অনুভব করতাম;সেই আরাফাত সেদিন দুনিয়া থেকে বিদায় নিল তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটিয়ে।
আরাফাতের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয় না। মনে হয় সূক্ষ্ম কৌশলের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হতে পারে । যে আরাফাতকে আমরা ফিলিস্তিন থেকে হাসিমুখে প্যারিসের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে দেখলাম সে আরাফাতের মৃত্যু ঘোষিত হল তার ২/৩ দিন পরই! কেমন জানি রহস্য মনে হয় !!
মূলত আরাফাত ছিল ফিলিস্তিনি ঐক্যের প্রতীক। আরাফাতের জীবদ্দশায় সেখানে হামাসসহ আরো কিছু স্বাধীনতাকামী সংগঠনের উদ্ভব হয়েছিল, কিন্তু ফিলিস্তিনি জনতার মাঝে আরাফাতের সর্বঅবিসংবাদিতাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস কোনদিন দেখায়নি। আর তাই ফিলিস্তিনি ঐক্যে ফাটল ধরাতে ইহুদি মার্কিন চক্র বহুদিন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু আরাফাত জীবিত থাকাকালীন তা সম্ভব নয় বুঝতে পেরেই তারা কৌশলে তাকে হত্যার পথ বেছে নেয় বলে আমার মনে হয়। কারন আরাফাতের মৃত্যুর পর ফিলিস্তিনের সা¤প্রতিক অনৈক্যই তার প্রমান। যে ফাতাহ্ বা হামাসের বন্দুক তাক করা থাকত ইসরাইলি হায়েনাদের দিকে, সে বন্দুক আজ তাঁক করা একে অন্যের দিকে; যা ফিলিস্তিনি অনৈক্যকেই দীর্ঘায়িত করছে। আর ঐক্য ছাড়া স্বাধীনতা অসম্ভব। আমার স্বদেশভূমিই তার প্রমান।
‘ফিলিস্তিন’ নামক একটি কবিতায় আমি বলেছি যে স্বাধীনতার শর্ত হল " রক্ত-অশ্র“-ত্যাগ ”,আলোচনার টেবিলে স্বাধীনতা ভন্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আলোচনার টেবিলে আসেনি। যদি আসত তবে ১৮৫৭’র প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ক্ষুদিরাম,ভগৎসিং,সূর্যসেন হয়ে সর্বশেষ নেতাজী সুভাষের আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার বীর সেনানীর আতœত্যাগের প্রয়োজন হত না; আন্দামান, নিকোবারের নাম ইতিহাসে উচ্চারিত হত না। ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় না। কোন শান্তিই শান্তির পথ দিয়ে আসেনি। আরাফাত তা জানত। সে কারনেই আমৃত্যু স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পণ করেছিলেন, কিন্তু বিশ্ব একমেরুকেন্দ্রিক হওয়ার পর বিশেষত ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পরাজয় এবং এই যুদ্ধে সাদ্দামকে সরাসরি সমর্থনের জন্য পরবর্তীতে আরাফাতকে বাস্তব কারনেই নমনীয় হতে হয়। যার কারনে আমরা তাকে ১৯৯৩ সালে আলোচনার টেবিলে অসলো শান্তি চুক্তি মেনে নিতে দেখি। আর আলোচনার এই টেবিলই ফিলিস্তিনের ন্যায্য স্বাধীনতাকে আরো দীর্ঘায়িত করল। পরবর্তীতে ইন্তিফাদা হল, ফিলিস্তিনিরা আবার রক্ত দিল, রাজপথে ট্যাঙ্কের সামনে ফিলিস্তিনি শিশু পাথর হাতে দাড়াল, পিতার কাঁধে উঠল পুত্রের ভারী লাশ, মাতার চোখে ঝরল অশ্র“; কিন্তু জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনের সেই ন্যায্য স্বাধীনতা আজো আসল না। তারপরেও ফিলিস্তিনি জনতার ঐক্য টিকে ছিল। আর আরাফাত ছিল এ ঐক্যের প্রতীক, কিন্তু আরাফাতের মৃত্যু এ ঐক্যেরও মৃত্যু ঘটাল। তাই আরাফাতের চলে যাওয়াতে যত না মর্মাহত হলাম, তারচেয়ে বেশী শঙ্কিত আজ আমি ফিলিস্তিনের ন্যায্য স্বাধীনতাকে নিয়ে।
তারপরেও স্বপ্ন থাকে, আর এ স্বপ্ন হল দানবের বিরুদ্ধে মানবের বিজয়ের স্বপ্ন। ইতিহাস তাইতো বলে ((Thereafter we have a dream. This dream is the victory of mankind against demon. History says it)
ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ!
ইন্তিফাদা জিন্দাবাদ!
২০০৫ ইং আরাফাত অমর হোক !!
©somewhere in net ltd.